গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে 18 টি সেরা ঘরোয়া প্রতিকার

গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে 18 টি সেরা ঘরোয়া প্রতিকার

অনেক দম্পতিই সন্তান গ্রহণ করতে চান কিন্তু কেবলমাত্র যথাযথ পরিকল্পনার সাথে এবং যখন তারা উভয়েই এ ব্যাপারে প্রস্তুত থাকেন।একটি অযাচিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করতে,বহু মহিলা গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার করে থাকেন,যা দীর্ঘকাল ধরে শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলে।সৌভাগ্যক্রমে,এক্ষেত্রে গর্ভধারণ প্রতিরোধ করতে অসংখ্য ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে।আপনি এগুলি ব্যবহার করতে পারেন যখন আপনি অসুরক্ষিত সঙ্গম করে থাকেন।অবশ্যই এর কোনও পদ্ধতিই 100% কার্যকর নয়,এগুলি সবই কেবল সাবধানবাণী।সুতরাং,যতটা পারেন নিরাপদ সঙ্গম করাই সবসময়ের জন্য আপনার সবচেয়ে ভাল!নিচে আমরা 18 টি উপায় দিয়েছি প্রাকৃতিকভাবে গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলার জন্য,যাতে আপনার যৌন জীবন হয়ে উঠতে পারে আস্বাদনীয়,মুক্ত এবং উদ্বেগ মুক্ত।

বাড়িতে প্রাকৃতিক ভাবে কীভাবে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করা যায়-18 টি সহজ উপায়

গর্ভাবস্থা প্রতিরোধের বহু প্রাকৃতিক উপায় আছে যেগুলি নিরাপদ এবং যৎসামান্য স্বাস্থ্যকর ঝুঁকি সম্পন্ন ।সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হলঃ

১. পেঁপে

যদি আপনার অনিরাপদ সহবাস হয়ে থাকে,তবে পরবর্তী 3-4 দিনের জন্য প্রত্যহ দুবার করে পেঁপে খান অযাচিত গর্ভাবস্থার সম্ভাবনা কমাতে।এটি একটি কার্যকর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এবং যখন এটি পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা গ্রহণ করা হয়,শুক্রাণুর সংখ্যা কমাতে পারে।যখন এটি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় শুক্রাণুর সংখ্যা পুনরায় স্বাভাবিকে ফিরে আসে।

২. আদা

আদা মাসিককে প্ররোচিত করে এবং এইভাবে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করে।এক পাত্র ফোটানো জলের সাথে আদা কোড়ানো যোগ করুন।পাঁচ মিনিট পর স্টোভটি নিভিয়ে দিন এবং মিশ্রণটিকে ছেঁকে নিন।প্রতিদিন 2 কাপ করে শক্তিশালী আদার চা পান করুন।

৩. খুবানি

খুবানি হল এমন একটি ফল যা প্রাকৃতিক উপায়ে ভ্রূণের প্রতিস্থাপন রোধ করে।এক কাপ জলের মধ্যে বড় 2 চামচ মধুর সাথে 100 গ্রাম শুকনো খুবানি যোগ করুন।আপনি আবার যৌন সহবাসের পর পুনরায় মাসিক চালু না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন 5-10টি করে খুবানির শাঁস খেতে পারেন।

৪. শুকনো ডুমুর(আঞ্জির)

ডুমুর হল অন্যতম সেরা একটি জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি এবং এটি রক্ত চলাচলকেও দ্রুত করে তোলে।অনিরাপদ সঙ্গমের পর 2-3 টি করে শুকনো ডুমুর খান।কখনই এটি অতিরিক্ত খাবেন না যেহেতু এটি পেট খারাপের কারণ হতে পারে।

৫. দারুচিনি

দারুচিনি জরায়ুকে উদ্দীপিত করার জন্য এবং গর্ভপাত ও গর্ভস্রাব ঘটানোর কারণ হিসেবে পরিচিত।তবে এটি তৎক্ষণাৎ কাজ করে না,সুতরাং আপনাকে অবশ্যই এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য নিয়মিত খেতে হবে।দারুচিনিকে গর্ভনিরোধক উপায় হিসেবে ব্যবহারের পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেওয়ার পরামর্শই আমরা দিয়ে থাকি।

৬. কালো জাম

জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি কালো জাম বেরিও খেতে পারেন।অন্তরঙ্গের পরবর্তী একটানা তিন দিন ধরে এটি খাওয়া উচিত।

৭. ভিটামিন C

ভিটামিন C হল জন্ম নিয়ন্ত্রণের অন্য এক প্রাকৃতিক উপায়।এটি প্রোজেস্টেরণ হরমোনে হস্তক্ষেপ করে এবং সুতরাং গর্ভধারণ প্রতিহত করে।অনিরাপদ সবাসের পরবর্তী 2-3 দিনের জন্য দিনে দুটি করে 1500 মিলিগ্রামের ভিটামিন C ট্যাবলেট খান।এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কখনই অতিরিক্ত মাত্রায় ভিতামিন C খাবেন না যেহেতু এটি শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।এছাড়াও আপনি যদি অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ঔষধ গ্রহণকারী হন অথবা সিকেল সেল অ্যানিমিয়াতে ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রেও এটি গ্রহণ করবেন না।

৮. হিং

প্রতি মাসে জলের সাথে হিং এর জুস পান করুন।এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে এবং গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলে।

৯. পার্সলে

গর্ভাবস্থাকে ব্যাহত করতে পার্সলেও হল একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার।এটি একটি হালকা ওষধি যা কোনও রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটায় না এবং এটিকে চা হিসেবে খাওয়া সবচেয়ে ভাল।

১০. নিম

নিম হল গর্ভধারণ পরিহারের অন্যতম একটি ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকার।এটি পাতা, তেল এবং পাতার নির্যাস রূপে সহজলভ্য।জরায়ুর মধ্যে যদি নিম তেলের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়ে থাকে তবে তা 30 সেকেন্ডের মধ্যে শুক্রাণুকে মেরে ফেলে,যখন নিম ট্যাবলেটগুলি পুরুষদের মধ্যে সাময়িক বন্ধ্যাত্ব প্ররোচিত করে।

১১. আনারস

আনারস মধ্যস্থ বৈশিষ্ট্যগুলি ভ্রূণের প্রতিস্থাপনকে প্রতিহত করতে পারে এবং গর্ভধারণ রদ করে।সহবাসের পর 2-3 দিনের জন্য প্রত্যহ কাঁচা আনারস খান।

১২. বাজরা

বাজরার মধ্যে থাকে রুতিন যা রোপণ প্রতিরোধ করে।এই ভেষজটি আপনি প্রতিদিন 500 গ্রাম করে খেতে পারেন।এটি অনিরাপদ সহবাসের আগে এবং পরে ভাল ভাবে কাজ করে।বাজরার সব থেকে ভাল বিষয় হল যে এর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

১৩. বন্য রাঙা আলু

যখন অপ্রত্যাশিত গর্ভাবস্থা ঠেকাতে আর অন্য কোনও প্রাকৃতিক উপায় থাকে না, তখন নিয়মিত দিনে দুবার করে বন্য রাঙা আলু খাওয়ার চেষ্টা করুন।একটি জন্ম নিয়ন্ত্রক পদ্ধতি হিসেবে কাজ করার জন্য কোনও এক দিনও বাদ না দেওয়াকে নিশ্চিত করে এটিকে এক অথবা দু মাসের জন্য খান।

১৪. ভারতীয় শালগম

যৌন সঙ্গমের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত এই সবজিটি খাওয়া গর্ভধারণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কার্যকরঅর্ধ কাপ ঠাণ্ডা জলের সাথে এক চা চামচ শুকনো এবং গুঁড়ো মূল মিশিয়ে নিয়ে সেই মিশ্রণটিকে এক সপ্তাহ ধরে পান করুন।

অপ্রত্যাশিত গর্ভাবস্থা রোখার অন্যান্য উপায়

অপ্রত্যাশিত গর্ভাবস্থা রোখার অন্যান্য উপায়

গর্ভধারণ এড়িয়ে চলার জন্য এমন কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলি সহবাসের সময় অনুশীলন করতে হবে।সেগুলি হলঃ

১৫. আপনার নিরাপদ সময়ে সঙ্গম করুন

এই জায়গায় যদি আপনি ইতিমধ্যেই কিছু ধরনের সুরক্ষা নিয়ে থাকেন তবে পদ্ধতিটি সাবধানতার একটি অতিরিক্ত স্তর সরবরাহ করে।নিরাপদ সঙ্গম সাধারণত একটি মহিলার ঋতু চক্রের অষ্টম থেকে কুড়িতম দিনের মধ্যে হয়,যেহেতু এই সময়ের মধ্যে তিনি ওভ্যুলেটেড হবেন না বা তার ডিম্বাণু উৎপাদিত হবে না।সেক্ষেত্রে তখনও অযাচিত গর্ভধারণের ঝুঁকি থেকেই যায়,কিন্তু আপনি এটি করার চেষ্টা করতে পারেন সাবধানতার একটি অতিরিক্ত স্তর হিসেবে।

১৬. স্টার্টস্টপ পদ্ধতির অনুশীলন

পুরুষ সঙ্গীটি তার সঙ্গিনীটির থেকে বাইরে টেনে আনতে পারে, যাতে সে ভিতরে বীর্যপাত না করে এবং তার ফলে তার শুক্রাণুও একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে না।যাইহোক,এই পদ্ধতিটির প্রয়োজন অনুশীলন এবং সেক্ষেত্রে কিছু সময় শুক্রাণু যোনির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যেতে পারে এবং গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলার একটা ঝুঁকি থেকে যায়।পুনরায় বলা হয় যে,এই ক্ষেত্রে অন্য কোনও প্রমানিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি এটি করা ভালো

১৭. আপনার ব্যাসাল বডির তাপমাত্রা ট্র্যাক করুন

একবার আপনার মাসিকের পরিসমাপ্তি হলে,আপনি আপনার ব্যাসাল বডির তাপমাত্রা ট্র্যাক করা শুরু করতে পারেন।যখন ওভ্যুলেশন বা ডিম্বাণু উৎপাদন শুরু হয়,তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে এবং ওভ্যুলেশনের দিন সর্বোচ্চ হয়।আপনি যদি এই অবস্থার মধ্যে গর্ভাবস্থা এড়াতে পারেন তবে আপনি আপনার ধারণাটিকেও এড়িয়ে যেতে পারেন।

১৮.জরায়ুর স্রাবের জন্য প্রস্তুত থাকুন

একটি মহিলার দেহ ওভ্যুলেশনের বা ডিম্ব পরিস্ফুটনের সময় পর্যন্ত একটি স্বচ্ছ,জেলির ন্যায় স্রাব উৎপন্ন করে।এই সময়ে সঙ্গম থেকে বিরত থাকা ওভ্যুলেশন বা ডিম্ব পরিস্ফুটন প্রতিরোধ করতে পারে।

প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধক ব্যবহারের সময় মনে রাখার বিষয়গুলি

গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলতে উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলির যেকোনও একটিও ব্যবহারের সময় যে নির্দিষ্ট বিষয়গুলি আপনার মনে রাখা উচিত সেগুলি হলঃ

  • গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলার জন্য যদি আপনি কোনও কার্যকর উপায়ের খঁজ করেন এবং উপরে বর্ণিত কোনও পদ্ধতিকে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে বিবেচনা করেন,সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে আলোচনা বাধ্যতামূলক।
  • গর্ভনিরোধক হিসেবে তালিকাবদ্ধ বহু ভেষজ এবং খাদ্যই যেমন 100% –ই কার্যকর হয় না ঠিক তেমনই আবার 100%-ই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্তও হয় না।সেগুলি আবার এমন কিছু ঝুঁকি বহন করে যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকারক বলে প্রমাণিত হতে পারে
  • এই প্রতিকারগুলির কোনওটি গ্রহণের পর যদি আপনি স্বাস্থ্যে কোনওরকম অস্বাভাবিকতা অনুভব করেন ,অবিলম্বে সেটির ব্যবহার বন্ধ করুন।
  • আপনার খাদ্যাভ্যাসের যত্ন নিন এবং যেকোনও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের সময় আপনার স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করুন।

নিবন্ধের শুরুতে যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে যে,অযাচিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে 18 টি ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কখনই কন্ডোম,গর্ভনিরোধক বড়ি অথবা অন্যান্য চিকিৎসাগত জন্ম নিরোধক ডিভাইস ব্যবহারের মত অতটা কার্যকর নয়।উপরে উল্লিখিত সমন্বিত পদ্ধতিগুলির মধ্যে সর্বদাই অন্যতম সেরা বিকল্পটি হল নিরাপদ সঙ্গম অনুশীলন করা।কোনও কিছু চেষ্টা করার আগে আপনি আপনার চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন,যাতে কোনও দীর্ঘস্থায়ী সন্দেহ ছাড়াই অযাচিত গর্ভাবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে কি করতে হবে তার সম্পূর্ণ জ্ঞান আপনার থাকতে পারে।সর্বোপরি,দুঃখ প্রকাশের চেয়ে নিরাপদ থাকা সর্বদাই শ্রেষ্ঠ।