গর্ভাবস্থায় পেস্তা খাওয়া

গর্ভাবস্থায় পেস্তা খাওয়া

গর্ভাবস্থায় আপনার কি করা উচিত এবং কি উচিত নয়, তার একটা লম্বা তালিকা আপনাকে দেওয়া হবে, যার মধ্যে খ্যাদ্যাভ্যাস প্রায়শই একটা বড় স্থান অধিকার করে নেয়।পিস্তাচিও তার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি বিভিন্ন ভাবে মানুষকে সরবরাহ করে থাকে।এগুলি যেমন কাঁচা খাওয়া হয় রেমনি আবার এই সুস্বাদু এবং কুড়মুড়ে বাদামগুলি রান্নার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।এটি সাধারণত পেস্তা নামেও পরিচিত, যা এশিয়া, আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপক্রান্তীয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া ছোট ছোট গাছ এবং গুল্মে বেড়ে ওঠে।এগুলি মানবজাতির কাছে পরিচিত প্রাচীন বাদামগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটির অস্তিত্ব যতদূর সম্ভব 6,000 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে।

গর্ভাবস্থায় পেস্তা বাদাম খাওয়াটা কি নিরাপদ?

গর্ভবস্থায় যংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে পেস্তা বাদাম খাওয়াটা নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত।তবে অন্তঃসত্ত্বাকালে খুব বেশি পরিমাণে এগুলি খেলে তার পরিণতিতে বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।আর সেই কারণেই এটি সংযমের সাথে খাওয়া উচিত।এমন অনেক পুষ্টিগুণ আছে যা এই বাদাম থেকে পাওয়া যায়, আর সেগুলি সম্পর্কে জানলে তা আপনার গর্ভাবস্থাকালীন ডায়েটের মধ্যে এগুলিকে সঠিক ভাবে অন্তর্ভূক্ত করার ক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করবে।

পিস্তাচিও বা পেস্তা বাদামের পুষ্টি মান

শক্তির একটা সমৃদ্ধ উৎস হওয়া সত্ত্বেও, পেস্তা বাদামগুলি কম ক্যালোরি সমন্বিত এবং অন্যান্য পুষ্টি পদার্থে পরিপূর্ণ।এগুলির পুষ্টি মান উচ্চ হওয়ায়, মোটামুটি প্রায় 30 গ্রাম এই বাদামের মধ্যে 6 গ্রাম মত প্রোটিন, 2.8 গ্রাম মত ফাইবার এবং মোট ফ্যাট 12.7 গ্রাম মত থাকতে দেখা যায়।আর প্রতি 100 গ্রাম বাদামের মধ্যে উপস্থিত ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় 500.

গর্ভবতী থাকাকালীন পেস্তা বাদাম খাওয়ার উপকারিতাগুলি

গর্ভবতী থাকাকালীন পেস্তার একটি পরিবেশনই আপনারপ্রতিদিনেরআয়রণ বা লোহা, ক্যালসিয়াম, ফোলেটএবংপটাসিয়ামেরপ্রয়োজনীয়প্রায় সমস্তচাহিদাইপূরণকরতেপারে। অন্তঃসত্ত্বাকালে আপনারগর্ভস্থ শিশুরবৃদ্ধিওবিকাশেরজন্যএগুলিরসমস্তইপ্রয়োজনীয়।পেস্তা সেবনের উপকারিতাগুলি হলঃ

  • পেস্তা বাদামগুলি প্রোটিনের একটা সমৃদ্ধ উৎস যা গর্ভস্থ শিশুর মাংসপেশী এবং কলাগুলির বিকাশের জন্য আবশ্যক।
  • এর মধ্যে থাকে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ভাল কোলেস্টেরল মাত্রাকে বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রাকে হ্রাস করতে সাহায্য করে, ফলে লিপিড স্তরের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  • এর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন E, A, ক্যারোটিন এবং পলিফেনলিক যৌগের মত অ্যান্টঅক্সিডেন্টগুলি আপনার অনাক্রম্যতাকে বাড়িয়ে তোলে।
  • পেস্তা বাদামে থাকা কপার উপাদানটি গর্ভাবস্থায় দেহে লোহিত রক্ত কণিকার সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • এর প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যটি গর্ভাবস্থায় অস্থি সন্ধির যন্ত্রণা এবং ফুলে যাওয়ার সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে খুব সাধারণ একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দেওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে পেস্তা মধ্যস্থ এর ফাইবার বা তন্তু উপাদানটি।
  • পেস্তার মধ্যে থাকা ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভস্থ শিশুর ব্রেনের বিকাশকে সহজতর করে।
  • এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ভিটামিন B-কমপ্লেক্স ভিটামিন থাকে যেমন রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থিয়ামিন, ভিটামিন B6 এবং ফোলেট যা ভ্রূণের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলির পাশাপাশি পেস্তা বাদাম আবার লিভারের অসুখ, জন্ডিস এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধেও সহায়কারী।

পেস্তা বাদাম খাওয়ার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি

পেস্তা খাওয়ার আবার বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, তাই আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে এই বাদামটিকে সংযুক্ত করার আগে আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।

  • পেস্তাকে বাদাম হিসাবেও শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং এতে অ্যানাকার্ডিক অ্যাসিড থাকে যা বাদামে উপস্থিত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী রাসায়নিক যৌগ। সুতরাং, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না, বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কিছু ধরণের বাদামের প্রতি অ্যালার্জি প্রবণ হয়ে থাকেন।
  • পেস্তায় থাকা ফ্রুকট্যানগুলির কারণে হজমের সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে যেমন ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা এবং বাতকর্ম।
  • এই কুড়মুড়ে বাদামগুলি কাঁচা খাওয়াই শ্রেষ্ঠ, কারণ ভাজাগুলির মধ্যে আরও বেশি সোডিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে আর তাই তা গর্ভাবস্থায় গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাবিত নয়।
  • তাছাড়াও আবার এই বাদামগুলির মধ্যে তাপ উৎপাদন বৈশিষ্ট্যগুলি আছে বলে মানা হয় যা একজন গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের উপর একটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনার ডায়েটের মধ্যে কীভাবে পেস্তা বাদাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন

আপনার গর্ভদশার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেস্তা বাদাম অন্তর্ভূক্ত করার নানাবিধ উপায় আছে, যেগুলি আপনি প্রয়োগ করতে পারেন।এখানে তার কয়েকটি কার্যকর টিপস দেওয়া হলঃ

  • একTটা স্ন্যাক্স হিসেবে আপনি সেগুলি কাঁচাই খেতে পারেন অথবা আপনি আপনার রান্নার মধ্যেও সেগুলি যোগ করতে পারেন।
  • আপনার ফ্রুট স্যালাডের স্বাদে একটু ভিন্নতা এবং মুচমুচে ভাব আনতে তার সাথে এই বাদামগুলি যোগ করুন।
  • এছাড়াও আবার আপনি পেস্তা বাদামগুলিকে মিহি না করে একটু অমসৃণ ভাবে দানাদানা মত করে গুঁড়ো করে নিতে পারেন আর সেগুলিকে কাজে লাগাতে পারেন যেভাবে তা হল- কয়েক টুকরো চিকেনের ব্রেস্ট নিয়ে সেগুলিকে আগে থেকে ভালমত ফেটিয়ে রাখা ডিমের মধ্যে ডুবিয়ে তারপর পেস্তা বাদাম গুঁড়োর মধ্যে ভালভাবে মাখিয়ে সেগুলিকে গ্রিল অথবা ভাজা করুন।
  • একটা পুষ্টিকর জলখাবার অথবা আহারের পর খাওয়ার জন্য একটা মিষ্টান্ন তৈরী করতে আপনি পেস্তা বাদামকে কাজে লাগাতে পারেন ঠান্ডায় জমানো দই, লস্যি, ওটমিল অথবা দানা শস্যের উপর ছড়িয়ে দিয়ে।
  • পেস্তা বাদাম, কেশর, এলাচ, এবং আমন্ড বাদাম দিয়ে একটা সুন্দর মিল্ক শেক তৈরী করে নিতে পারেন যা আপনার অত্যন্ত ক্ষুধার সময় আপনাকে পরিপূর্ণ করে তুলবে একটা স্বাস্থ্য পানীয়ের হিসেবে।
  • কেশর পেস্তা কুলফি হল এমন একটা জিনিস যা আপনি এক মুহুর্তে তৈরী করে নিতে পারেন উত্তপ্ত গ্রীষ্মের মাসগুলিতে যখন আপনার ঠাণ্ডা কিছু খাওয়ার বাসনা হবে।

ঠাণ্ডায় জমানো পেস্তা দই রেসিপি

এটি একটি স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট জাতীয় মিষ্টান্ন যা আপনি গ্রীষ্মের মাসগুলিতে উপভোগ করতে পারেন আপনার বা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের সাথে আপোষ করতে হবে এমন ধরণের কোনও চিন্তা ছাড়াই।

উপকরণ

  • 1 কাপ ঠাণ্ডায় জমানো দই
  • 1/2 কাপ পেস্তা বাদাম কুঁচি
  • 2 টি চটকানো কলা
  • 1/2 কাপ মধু
  • 1 চা-চামচ ভ্যানিলা এসেন্স

কীভাবে প্রস্তুত করবেন

  • পেস্তা বাদাম ছাড়া বাকি সকল উপকরণগুলিকে একটা বড় বাটিতে নিয়ে স্মুদ না হওয়া পর্যন্ত সেগুলিকে হুইস্ক করুন।আপনি এর জন্য আবার একটা ব্লেন্ডারও ব্যবহার করতে পারেন, তবে মিশ্রণটিকে হুইস্ক করলে তা ঠাণ্ডায় জমানো দইটিকে ফাঁপিয়ে তুলবে।
  • 3/4 পেস্তা বাদাম কুঁচি এর সাথে যোগ করে ভালমত মিশিয়ে নিন, আর মিশ্রণটি থেকে খুব বেশি বাতাস যাতে বেরিয়ে না যেতে পারে তার জন্য সেটিকে “ইংরাজীর 8” সংখ্যার মত করে মেশাতে থাকুন।
  • একটা পাত্রের মধ্যে মিশ্রণটিকে ঢালুন এবং উপর থেকে অবশিষ্ট পেস্তা কুঁচি ছড়িয়ে দিন।
  • একটা প্লাস্টিক র‍্যাপ বা ক্লিং ফিল্ম দিয়ে পাত্রটিকে শক্ত করে ঢেকে দিন যাতে কোনওরকম আইসিক্যল বা বরফ সূচ্যাকারে গড়ে ওঠা এড়ানো যায়।
  • 3-4 ঘন্টার জন্য কিম্বা পরিবেশনের জন্য যথপোযুক্ত হয়ে ওঠা না পর্যন্ত সেটিকে ফ্রীজারে রাখুন।
  • ফ্রীজার থেকে বের করুন আর এক কি দুই স্কুপ তুলে পরিবেশন করুন।যদি মিশ্রণটি খুব শক্ত হয়ে গেছে বলে মনে হয়, তবে ফ্রীজার থেকে বের করার পর পাত্রটিকে 5-10 মিনিট বাইরে রাখার পর স্কুপ তুলুন।

জীবনের বেশিরভাগ জিনিসগুলির মতই অতি মাত্রায় পেস্তা সেবন করলেও তা ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে।পরিমিত পরিমাণে সেগুলি সেবন করলে, আপনি এই পুষ্টিকর বাদামের সর্বোত্তম উপকারিতা লাভ করতে এবং এর যেকোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলিকেও এড়িয়ে চলতে পারেন।সুতরাং যদি না আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে পেস্তা খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে কিছু বিধি নিষেধ করেন, এগিয়ে যান এবং আপনার প্রতিদিনের পরিবেশনে সেগুলির আস্বাদ নিন।