প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হল এমন একটি রোগ যা গর্ভবতী মহিলাদের প্রভাবিত করে এবং দুর্বল লিভারের কার্যকারিতা ও ফুসফুসের মধ্যে তরলের মত সমস্যাগুলির কারণ হিসেবে পরিচিত।মাকে প্রভাবিত করা ছাড়াও,এটি থেকে আবার শিশুদের মধ্যে সেরিব্রাল পালসি বা মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত,অন্ধত্ব এবং বধিরতার মত দুর্বল জটিলতাগুলি সৃষ্টিরও সম্ভাবনা থাকে।
পূর্বে টক্সিমিয়া গর্ভাবস্থা নামে অভিহিত,প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হল গর্ভাবস্থাকালীন একটি সমস্যা যা দেখা যায় সর্ব শেষ ত্রৈমাসিকে এবং কিডনি ড্যামেজ ও উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যাগুলি পরিচালিত করতে পারে।হবু মায়েরা যদি প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার দ্বরা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে তাদের মধ্যে হয়ত এর কোনওরকম লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে,আর সেই কারণেই অধিকাংশ ডাক্তারেরাই ক্লিনিকে আপনার প্রতিবার আসার সময় আপনাকে রক্তচাপ পরীক্ষা করানোর উপর জোর দিয়ে থাকেন।রক্তচাপ যদি উচ্চ থাকে,তখন আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে একটি প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর প্রস্তাব দেবেন আপনার প্রস্রাব মধ্যস্থ প্রোটিনের মাত্রা নিরীক্ষণের জন্য।
এটি হতে পারে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে কিম্বা প্রসবের পরবর্তী ছয় সপ্তাহের মধ্যে যেকোনও সময়ে।একবার সনাক্ত করা গেলেই তা অবিলম্বে চিকিৎসা করা প্রয়োজন কারণ তা না হলে এটি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ইক্ল্যাম্পসিয়া এবং HELLP সিন্ড্রোমের (যেখানে HELLP এর দ্বারা হিমোলাইসিস,লিভারের উৎসেচক বেড়ে যাওয়া এবং কম সংখ্যক প্লেটলে্টের উপস্থিতি বোঝায়)দিকে পরিচালিত করতে পারে।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার অন্যতম একটি প্রাথমিক কারণ হল অমরার দিকে রক্ত প্রবাহের মাত্রা কমে যাওয়া এবং এক্ষেত্রে কোনওরূপ দৃশ্যমান উপসর্গ বা লক্ষণ থাকে না।এটি ঘটে যখন অমরা নিজেকে জরায়ুর আস্তরণের মধ্যে ঠিকমত প্রতিস্থাপন করতে পারে না এবং সেই অঞ্চলে ধমনীলির প্রসারণ যথেষ্ট হয় না।গর্ভাবস্থা প্রাক বিদ্যমান ডায়াবেটিস এবং দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপও আবার অমরায় কম রক্ত প্রবাহের কারণ হতে পারে।
আবার এটিও দেখা গেছে যে,অমরায় রক্ত প্রবাহের মধ্যে একটা পার্থক্য থাকে,যেখানে অমরার কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিন রক্ত প্রবাহের মধ্যে বেশি পরিমাণে মুক্ত হয়।আর এই কারণের জন্যই,নিম্নলিখিত প্রতিক্রিয়াগুলি আপনার শরীরের মধ্যে দেখা দেয়ঃ
প্রিক্ল্যাম্পসিয়া আবার স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধ ব্যাধি,বংশগত কারণ সমূহ,খাদ্যাভ্যাস এবং রক্তবাহ সম্পর্কিত সমস্যাগুলির মত আরও অন্যান্য কারণেও হয়ে থাকতে পারে। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়াও আবার প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার কারণগুলির মধ্যে একটি অন্যতম হিসেবে মনে করা হয়।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায় কোনও লক্ষ্যণীয় উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যেতে অথবা দেখা নাও যেতে পারে,আবার এমনকি যদি বা সেটি দেখা যায় সেক্ষেত্রে এক মহিলার থেকে অন্য মহিলার ক্ষেত্রে সেই সকল লক্ষণগুলি পৃথকও হতে পারে।অনেক সময় প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণগুলি বমি বমি ভাব,ওজন বৃদ্ধি এবং ফুলে যাওয়ার মত গর্ভাবস্থায় দেখা দেওয়া সাধারণ লক্ষণগুলির অনুরূপ হওয়ায় মানুষ এ ব্যাপারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার প্রাথমিক পর্যায়টি অনেক সময় লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠতে নাও পারে,তাই ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার সময় এ ব্যাপারে সতর্কতাপূর্ণ নজরদারি রাখা প্রয়োজন।
আপনার দেহের কোনও অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে লক্ষ্য করলে,আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে সে ব্যাপারে কথা বলুন কারণ সেটি অনেক ক্ষেত্রেই প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার ফুলে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলির ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুনঃ
এটি লক্ষ্যণীয় যে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিম্বা ফুলে গিয়ে থাকা গর্ভবতী মহিলাদের প্রত্যেকেই কিন্তু প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার দ্বারা প্রভাবিত নাও হতে পারে এবং তাদের ক্ষেত্রে এগুলির কারণ বিভিন্ন হতে পারে।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার দ্বারা আক্রান্ত অনেক গর্ভবতী মহিলার মধ্যে আবার এমন ধরণের মাথা ব্যথার লক্ষণ অনুভূত হয়ে থাকে যেগুলি দেখে মনে হয় না যে সেগুলি হ্রাস পাবে বা পরিবর্তিত হবে বলে।এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আবার আপনার প্রস্রাবে প্রোটিনের মাত্রা,প্লেটলেটের স্তর এবং লিভার উৎসেচকগুলিতে কোনওরকম অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আপনাকে প্রস্রাব এবং রক্ত পরীক্ষা করানোর প্রস্তাব দেবেন।
তলপেটে ব্যথা,ধীর প্রতিবর্তক্রিয়া,স্বল্প অথবা কোনওরকম প্রস্রাব না হওয়া,গা গুলানো,বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া ও মাথা ঘোরাও হল প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার সাথে যুক্ত কিছু সাধারণ উপসর্গ বা লক্ষণ।আপনার রক্তচাপ 140/90 পরিসরের মধ্যে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন এবং পরিমাপের এই মাত্রার কোনওরকম বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটলে তা দ্রুত ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎকারের সতর্কীকরণ করে।নিয়মিত ব্যবধানে রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর দ্বারা আপনার এই ব্যাপারে আপডেটেড থাকা উচিত।
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি হল সতর্কীকরণের চিহ্ন যা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার সংকেত দিতে পারেঃ
যে সকল মহিলারা মধ্যে তাদের প্রথম গর্ভাবস্থায় প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন,তাদের পরবর্তী গর্ভাবস্থাগুলির ক্ষেত্রেও তাদের মধ্যে এটি পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বিকাশের ঝুঁকি বেড়ে যায় অবস্থার তীব্রতার উপর এবং গর্ভাবস্থায় কখন দেখা দিচ্ছে তার উপর নির্ভর করে।এর অর্থ হতে পারে এই যে,আপনার গর্ভদশার 29 সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে আপনার মধ্যে যদি প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার পরবর্তী গর্ভাবস্থাতেও এটি হওয়ার সম্ভাবনা 40% এর বেশি থাকে।
গর্ভবতী কিশোরীদের মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়ায হওয়ার একটি উচ্চ প্রবণতা রয়েছে বলে মনে করা হয়,যদিও এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব রয়েছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে,অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের ক্ষেত্রে প্রসব পূর্ববর্তীকালীন যত্নের অভাব থেকে গর্ভবতী কিশোরীদের এটির প্রতি ঝুঁকিবহুল করে তোলে।
40 উর্দ্ধ গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকি উচ্চ মাত্রায় থাকে যেহেতু এতটা বয়সে গর্ভধারণ কারণে তাদের দেহে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং সম্ভবত তারা অন্তর্নিহিত চিকিৎসাজনিত শর্তগুলির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে থাকতে পারেন।
সাধারণত,30 এর বেশি বডি মাস ইনডেক্সের(BMI) সহিত থাকা স্থূলকায় মহিলাদের মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে কারণ স্থূলতা রক্তচাপকে বাড়িয়ে তোলে।
আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে নির্ধারিত সাক্ষাৎকারের সময়গুলিতে আপনার রক্তচাপ এবং প্রস্রাব অনেকগুলি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিপুল বিচার-বিবেচনার অধীনে থাকবে।রক্তচাপের মাত্রা এবং প্রস্রাবের মধ্যে প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া সম্ভবত প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার উপস্থিতি প্রদর্শিত করতে পারে।প্রিক্ল্যাম্পসিয়ানির্ণয়েরক্ষেত্রে, গর্ভদশার 20 তমসপ্তাহেরপরেনিম্নলিখিতজটিলতাগুলিরমধ্যেযেকোনওটিউপস্থিতথেকে থাকেঃ
আগেকার সময়ে,এটি বিবেচনা করা হত যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া কেবল তখনই হয় যদি রোগীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে এবং প্রস্রাবের মধ্যে যদি প্রোটিন সনাক্ত করা যায়।তবে,আধুনিক চিকিৎসকরা এখন এ ব্যাপারে অবগত যে এর সাধারণ লক্ষণগুলির কোনও একটি সনাক্ত না করা সত্ত্বেও প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হতে পারে।
আপনার ডাক্তারবাবু যদি প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার আশঙ্কা করে থাকেন,সেক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলি করানোর প্রয়োজন হতে পারেঃ
আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে একটি প্রস্রাব পরীক্ষা করানোর কথা বলবেন যার সাহায্যে আপনার প্রস্রাবের নমুনায় প্রোটিনের উপস্থিতি চিহ্নিত করা যেতে পারে। এই প্রাথমিক পরীক্ষাটি যদি ইতিবাচক হয়,তবে আপনাকে 24 ঘন্টা পরে মূত্র সংগ্রহ করার পরামর্শ দেওয়া হবে যাতে এটি পরীক্ষার জন্য পাঠানো যায়। প্রস্রাবে 300 মিলিগ্রাম এবং তার চেয়ে বেশি প্রোটিনের উপস্থিতি হল প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার একটি নিশ্চিত লক্ষণ আর এটি প্রিক্ল্যাম্পসিয়া নির্ধারণের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক পরীক্ষা হিসাবে পরিচিত।
আপনার সিস্টোলিক বা হৃদ-সংকোচনের পাঠ যদি 140 এর বেশি হয় কিম্বা ডায়াস্টোলিক বা প্রসারণের পাঠ যদি 90 এর কম হয়,সেক্ষেত্রে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হিসেবে বিবেচিত।দিনের বিভিন্ন সময় অনুযায়ী রক্তচাপের মাত্রা ওঠানামা করার কারণে,আপনার রক্তচাপ উচ্চ কিনা তা নিশ্চিতকরণের জন্য আপনার ডাক্তারবাবু বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার করে সেটি পরীক্ষা করার কথা বলবেন।প্রিক্ল্যাম্পসিয়া নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য এটিও আবার একটি নির্ভরযোগ্য উপায়।
ক্রিয়েটিনিন হল শরীরের একটি বর্জ্য পদার্থ যেটি অন্যান্য বর্জ্যের সাথে কিডনির দ্বারা পরিস্রাবিত হয়ে থাকে।প্রোটিন-ক্রিয়েটিনিন অনুপাত হল একটি প্রস্রাব পরীক্ষা যা এই বর্জ্য পদার্থটির উপস্থিতি পরীক্ষা করে আর এর দ্বারা কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক আছে কিনা তা ডাক্তারবাবু বুঝতে পারেন।এই পরীক্ষার জন্য কোনও উদ্দেশ্যজনিত কারণ ছাড়াই এলোমেলোভাবে প্রস্রাবের একটি নমুনার প্রয়োজন হয়,যা প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য 24 ঘন্টা প্রস্রাব সংগ্রহের চেয়ে ভাল।যদি আপনার পরীক্ষাটিতে 0.3 মিলিগ্রাম / ডিসি লিটার উপস্থিতি দেখা যায়, তবে সেক্ষেত্রে আপনি প্রিক্ল্যাম্পিয়া দ্বারা আক্রান্ত,এই সিদ্ধান্তে আসা যায়।
এই পরীক্ষাটি করানোর সুপারিশ সাধারণত করা হয় একটি আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতি ব্যবহারের দ্বারা আপনার শিশুর বৃদ্ধিটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য।এই পদ্ধতিতে, ডাক্তারবাবু জরায়ুর মধ্যে ভ্রূণের ওজনের একটি অনুমান করতে এবং অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রার পরিমাপ নিরূপণ করতে পারেন।
এই পরীক্ষাটিতে একটি সাধারণ পদ্ধতি জড়িত যা শিশুর হৃদস্পন্দনের হার এবং সঞ্চালনায় এর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করতে সহায়তা করে।
এই পরীক্ষাটিতে,মায়ের জরায়ুর মধ্যে ভ্রূণের শ্বাস-প্রশ্বাস,সঞ্চালনা,পেশীর টান ও দৃঢ়তা এবং অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ পরিমাপের জন্য একটি আলট্রাসাউন্ড পরিচালনা করা হয়।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার জটিলতাগুলি দেখা দেওয়াটা যদিও খুবই বিরল,কিন্তু এটি খুব দ্রুত বিকাশ পেয়ে জীবনহানীকারক সমস্যায় পরিণত হতে পারে,যেমন প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং লোহিত রক্তকণিকার ভাঙন।নিয়মিত নিরীক্ষণ এবং এটিকে দ্রুত নির্ণয়করণের দ্বারা জটিলতাগুলিকে আর বেশি বেড়ে না যাওয়াকে নিশ্চিত করা যেতে পারে এবং সময়ের মধ্যে পরিস্থিতিটিকে ধরে ফেলে সামাল দেওয়া যেতে পারে।
যদি কোনও মায়ের মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া ধরা পড়ে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি তাকে প্রভাবিত করতে পারেঃ
ইক্ল্যাম্পসিয়াঃ এটি মহিলাদের অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনি হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে।এটি হতে পারে 20 তম সপ্তাহ পরে অথবা প্রসবের পরপরই।জ্ঞান হারাবার সময়,যেটি এক মিনিটেরও কম সময়ার জন্য হয়ে থাকে,তখন মা বাহুগুলিতে,পাগুলিতে কিম্বা ঘাড়ে পুনরাবৃত্তি আন্দোলন অনুভব করতে পারেন এমনকি তিনি আবার তার সংজ্ঞাও হারাতে পারেন।
স্ট্রোকঃ যখন উচ্চরক্তচাপের জন্যে মস্তিষ্কে রক্ত কম পরিমাণে পৌঁছায়,তখন সেরিব্রাল হেমারেজের সৃষ্টি হয়,যা সাধারণভাবে স্ট্রোক নামে পরিচিত।এই ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন রক্ত থেকে পায় না তার ফলে মস্তিষ্কের কোষ গুলির মৃত্যু ঘটে এবং এর ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয় এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আবার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
রক্ত তঞ্চনঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম হল ডীসমিনেটেড ইনট্রাভাস্কুলার কোয়াগুলেশন।এই ক্ষেত্রে মায়ের রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াটি দারুণ ভাবে প্রভাবিত হয়।এখানে যখন প্রোটিনের পরিমাণ প্রচন্ড কমে যায় তখন প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ বেড়ে যায় আবার যদি অস্বাভাবিক পরিমাণে প্রটিনের ক্রিয়া বৃদ্ধি পায় তাহলে অসংখ্য ব্লাড ক্লট দেখতে পাওয়া যায়।
যদি মায়ের প্রিক্ল্যাম্পসিয়া থাকে তাহলে শিশুটির মধ্যে নিম্নলিখিত জটিলতা গুলো দেখা যেতে পারে।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়া আক্রান্ত মায়েদের গর্ভস্থ শিশুদের কাছে যেহেতু কম পরিমাণে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পদার্থগুলি পৌঁছায় তাই তাদের বাচ্চাদের আকৃতি খুব ছোট হয়ে থাকে।যদি প্রিক্ল্যাম্পসিয়া মায়েদের গর্ভদশার 37 সপ্তাহ বা তার আগে দেখা দেয় তাহলে এই বিষয়টি বিশেষভাবে সত্য প্রতিপন্ন হয়।যদি মারাত্মক প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে ডাক্তারবাবু নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান প্রসবের সিধান্ত নিতে পারেন। শিশুদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেহেতু তাদের ফুসফুস সঠিকভাবে তখনও গঠিত হয় না।অনেক ক্ষেত্রে আবার নির্ধারিত সময়ের পূর্বে প্রসব হওয়ার জন্য মৃত সন্তান প্রসবের মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
HELLP সিন্ড্রোম হল খুব কম দেখতে পাওয়া যায় এমন এক বিরল ব্লাড ক্লটিং বা রক্ত তঞ্চন জনিত সমস্যা এবং যকৃতের ব্যাধি যা গর্ভকালীণ প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ের লক্ষণ।এটা খুব সম্ভবত প্রসব পরবর্তীকালে আঘাত হানে তবে কখনো কখনো এটি 20 সপ্তাহের পরে এবং আবার কিছু ক্ষেত্রে 20 সপ্তাহের আগেও ঘটতে দেখা যায়।যে সকল অবস্থার শব্দগুলি নিয়ে HELLP গঠিত সেগুলি নিম্নরূপ।
যখন আপনার গর্ভাদশা 37 সপ্তাহ কিম্বা তারও বেশি অতিক্রম করে যায় তখন আপনার প্রসব শ্রম সৃষ্টি হবে,বিশেষ করে যখন আপনার সার্ভিক্স যথেষ্ট পরিমাণে বিস্তৃত হয়ে থাকে।আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত C সেকশন অর্থাৎ অস্ত্রোপচারের দ্বারা প্রসব করাতে চাইবেন যদি তিনি বোঝেন যে আপনি বা আপনার গর্ভস্থ সন্তান স্বাভাবিক প্রসবের চাপ সহ্য করতে পারবেন না।
তীব্র প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার চিকিৎসা
যদি আপনি তীব্র বা মারাত্মক প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার শিকার হন তবে নিয়মিত নিরীক্ষণের মধ্যে রাখার জন্য আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে বলা হতে পারে।আপনাকে এ ব্যাপারে বিশেষ যত্ন দিতে একজন প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বিশেষজ্ঞকে আপনার জন্য নিয়োগ করা হতে পারে যিনি প্রতিনিয়ত আপনার প্রিক্ল্যম্পসিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় সহায়তা করবেন।আপনার উচ্চরক্তচাপ কমাবার জন্য ঔষধ দেওয়া হবে এবং আপনার শিরার মধ্য দিয়ে সরাসরি রক্তে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করা হতে পারে স্যালাইনের দেওয়ার মত করে যা খিঁচুনি রোধ করতে সাহায্য করবে।
যদি প্রসবের সময় বা তার পরবর্তীকালে আপনার মধ্যে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া ধরা পড়ে তাহলে সেটির উপর নজর রাখাই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আপনাকে হয়ত আরও কয়েকটি দিন হাসপাতালে থেকে যেতে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং খিঁচুনির ফলে ভবিষ্যতে যাতে কোনো রকম জটিলতা সৃষ্টি না হয় তার জন্য।খিঁচুনি এড়াতে প্রসবের 24 ঘন্টা পর আপনাকে ম্যাগনেসিয়াম সালফাট দেওয়া হবে।যদি আপনি বাড়ি ফিরেও যান তাহলেও কমপক্ষে এক সপ্তাহের রক্ত চাপের রির্পোট আপনার ডাক্তারবাবুকে জানাতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বা টক্সিমিয়া হল একটি গুরুতর অবস্থা।তবে এর প্রভাবের সাথেই মা বেঁচে থাকেন এবং সেক্ষেত্রে ঝুঁকিও থেকে যায়।আপনার শরীরের অঙ্গাণুগুলির উপর প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার প্রভাব হ্রাস পেতে সময় নেয় প্রসবের পরবর্তীতে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ মত।গবেষণায় এটিও দেখা গেছে যে,এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ,টাইপ 2 ডায়াবেটিস,স্ট্রোক এবং হৃদরোগের মত সমস্যাগুলি বেড়ে যাওয়ারও একটি ঝুঁকি থাকে।গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা টক্সিমিয়া গর্ভস্থ শিশুর দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের ক্ষেত্রে সীমিতকরণের দ্বারা শিশুর মধ্যেও প্রভাব ফেলে,যা তাদের গঠণ এবং বিপাকে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।এটি করোনারি হৃদ রোগের দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং ডায়াবেটিস,স্ট্রোক, এবং উচ্চরক্তচাপের মত ব্যাধিগুলির সাথেও সম্পর্কিত।
জন্মপূর্ববর্তীকালীন যত্ন গ্রহণ এবং ডাক্তারবাবুর সহিত আপনার কোনও একটি সাক্ষাৎকারও বাদ না দেওয়াই হল প্রিক্ল্যাম্পসিয়া প্রতিরোধের চাবিকাঠি।টক্সিমিয়ার মত স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলিকে দূরে ঠেলে রাখার জন্য আপনাকে আপনার রক্তচাপ এবং প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতির উপর নজর রেখে নিবিড় মনোযোগ রাখতে হবে। প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার প্রথম লক্ষণগুলি দেখা দেওয়া মাত্র,আপনার ডাক্তারবাবুকে এ ব্যাপারে সতর্ক করুন যাতে কোনওরকম বিলম্ব ছাড়াই এর চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে।অবস্থার তীব্রতা,সপ্তাহ সংখ্যা এবং শিশুর অবস্থার উপর নির্ভর করে,আপনার ডাক্তারবাবু কোন মাত্রায় চিকিৎসা করবেন তা স্থির করবেন,যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে অসংখ্য প্রস্রাব পরীক্ষা এবং রক্তচাপ নিরীক্ষণ।
প্রিক্ল্যাম্পসিয়া প্রসূতির মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ এবং তার পাশাপাশি এটি আবার ভ্রূণের মৃত্যুর কারণও বটে।তবে উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইপারটেনশনের পূর্ব ইতিহাস থাকা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রিক্ল্যাম্পসিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।