গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্ক (ঘোল) পান করা

গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্ক (ঘোল) পান করা

মাখন হল এমন এক অবশেষ পদার্থ যা দুধ মন্থনের সময় পৃথক করা হয়।দুধকে সন্ধান প্রক্রিয়ার দ্বারা গাঁজানোর মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বাটারমিল্ক প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।দুধে ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস নামে একটি প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াম যুক্ত করে এই সন্ধান প্রক্রিয়াটি করা হয়, যা দুধকে অ্যাসিডিক করে তোলে এবং একটা টক স্বাদ এনে দেয়।বাজারে উপলভ্য অন্য যেকোনও সফট ড্রিঙ্ক এবং স্পোর্টস ড্রিঙ্কগুলি সাধারণত প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম স্বাদ যুক্ত হওয়ায় সেগুলির তুলনায় বাটারমিল্ক অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্ক খাওয়াটা কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্ক খাওয়াটা নিরাপদ, যদি সেটা পাস্তুরাইজড দুধ থেকে তৈরী হয়ে থাকে।তবে রাত্রিবেলায় বাটারমিল্ক খাওয়ার পরামর্শ আপনাকে দেওয়া হয় না কারণ এটা আপনার ঘুমের সময় রিফ্লাক্স ও শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা এবং ক্রনিক কাশির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আদর্শগতভাবে আপনার বাটারমিল্ক সেবন করা উচিত আপনার প্রাতঃরাশ কিম্বা মধ্যাহ্নভোজের সাথে যেহেতু এটি হজমে সাহায্য করে।

বিঃদ্রঃ আপনার যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে অথবা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে বাটারমিল্ক থেকে দূরে থাকুন।এটি থেকে আপনার মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্ক বা ঘোল খাওয়ার আগে আপনি আপনার ডাক্তারবাবুর সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলে নিতে পারেন।

বাটারমিল্ক বা ঘোলের পুষ্টি মূল্য

বাটারমিল্ক বা ঘোলের পুষ্টি মূল্য

প্রশমনকারী গুণাবলী এবং নানাবিধ উপকারিতাগুলির জন্য বাটারমিল্ক বেশ সুপরিচিত।আজকাল কম ফ্যাট যুক্ত বাটারমিল্কগুলিও সহজেই উপলভ্য এবং নিজেদের ওজন বৃদ্ধির ব্যাপারে অতি সচেতন ব্যক্তিরাও এটি সেবন করতে পারেন।বাটারমিল্ক থেকে পাওয়া বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলি নিম্নে তালিকাবিদ্ধ করা হলঃ

ক্যালোরি এবং ফ্যাট সামগ্রী

মাখনের ক্যালোরি সামগ্রীটি সাধারণত দুধের ফ্যাট জাতীয় উপাদানগুলির উপর নির্ভর করে থাকেডেয়ারী বা দুগ্ধ উৎপাদকরা সাধারণত বাটারমিল্ক প্রস্তুত করার জন্য লোফ্যাট (1%) কিম্বা রিডিউসড ফ্যাট (2%)-এর দুধ ব্যবহার করেন।লোফ্যাটের বাটারমিল্কে প্রায় 1 গ্রাম মত ফ্যাট এবং প্রতি 100 মিলিলিটারে 62 ক্যালোরি থাকে, যখন আবার রিডিউসড ফ্যাট বাটারমিল্কের মধ্যে থাকে প্রায় 2 গ্রাম মত ফ্যাট এবং প্রতি 100 মিলিলিটারে 140 ক্যালোরি

ক্যালসিয়াম

বাটারমিল্ককে ক্যালসিয়ামের একটা সমৃদ্ধ উৎস বলা হয়ে থাকে।কম ফ্যাট যুক্ত দুধ থেকে তৈরী বাটারমিল্কে প্রায় 116 মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে আবার রিডিউসড ফ্যাটের দুধ থেকে প্রস্তুত বাটারমিল্কের মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে মোটামুটি প্রায় 275 মিলিগ্রাম মত।

রাইবোফ্লাভিন

বাটারমিল্ক আবার ভিটামিন B এর একটি উপাদান, রাইবোফ্লাভিন দ্বারাও সমৃদ্ধ যা খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয়।স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দুধ থেকে তৈরী বাটারমিল্কের প্রতি কাপে প্রায় 0.4 গ্রাম রাইবোফ্লাভিন থাকে, তবে রিডিউসড ফ্যাটের দুধ থেকে তৈরী বাটার মিল্কের প্রতি কাপে প্রায় 0.5 গ্রাম মত রাইবোফ্লাভিন থাকে। FDA দ্বারা প্রস্তাবিত রাইবোফ্লাভিনের দৈনিক মান হল 1.7 গ্রাম

প্রোটিন

কম ফ্যাটযুক্ত বাটারমিল্কে প্রতি 100 গ্রামে প্রায় 1 গ্রাম মত প্রোটিন থাকে, তেমনই আবার রিডিউসড ফ্যাট যুক্ত বাটারমিল্কে প্রতি কাপে প্রোটিন থাকে 10 গ্রাম।প্রোটিনের জন্য FDA দ্বারা প্রস্তাবিত দৈনিক মানটি হল দেহের প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য 1 গ্রাম।

গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্কের উপকারিতাগুলি

বিভিন্ন পুষ্টিকর উপকারিতাগুলির কারণে বাটারমিল্ক প্রায় সবার জন্যই উপকারী।গর্ভাবস্থায় বাটারমিল্ক পান করার বেশ কিছু উপকারিতাগুলি এখানে উল্লেখ করা হলঃ

  • বাটারমিল্ক বা ঘোল হল একটা সন্ধান করা দুগ্ধজাত পণ্য।এই প্রোবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে জীবিত মাইক্রোঅর্গানিজম বা অণুজীবগুলি এবং ব্যাকটেরিয়া, যেগুলির অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।বাটারমিল্ক পান করলে তা স্বাস্থ্য উন্নতিকারক মাইক্রোঅর্গানিজম বা অণুজীবগুলির বংশবৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার অন্ত্রের উন্নতি করতে সহায়তা করে, যা আপনার রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করে এবং ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
  • ঘোল বা বাটারমিল্ক পান করলে তা আপনার দেহকে হাইড্রেট রাখবে।
  • গর্ভাবস্থায় বেড়ে ওঠা গ্যাস্ট্রিক সমস্যাগুলি হ্রাস করতে বাটারমিল্ক সাহায্য করে।
  • বাটারমিল্ক ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ, আর ক্যালসিয়াম শিশুর হাড়ের বিকাশের জন্য জরুরি।এছাড়াও এটি শিশুদের মধ্যে হাইপারটেনশনের ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • বাটারমিল্ক পান করলে তা অল্প সময়ের জন্য আপনার রক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের বাটারমিল্ক গ্রহণ করার পরিমাণ

গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের বাটারমিল্ক গ্রহণ করার পরিমাণ

সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে বাটারমিল্ক পান করা আপনার গর্ভাবস্থার জন্য উপকারী।কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় সেটি সেবন করলে নানা ধরণের সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে।বাটার মিল্কের অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন আপনার শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে।গবেষণা অনুসারে, আপনার পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য আপনি প্রতিদিন দুই গ্লাস মত বাটার মিল্ক পান করতে পারেন

বাটারমিল্ক তৈরীর রেসিপি

বাটারমিল্কের মধ্যে প্রচুর পুষ্টি উপাদান এবং অসংখ্য উপকারিতা থাকায় আপনি হয়ত এটাকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করতে চাইতে পারেন, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়। ভারতে ঘোলবা লস্যিনামে বহুল পরিচিত বাটারমিল্কটি মিষ্টি স্বাদের এবং বেশ সুস্বাদু হয়ে থাকে।এই সুস্বাদু বাটারমিল্কবা মসলাদার লস্যিএবং মিষ্টি বাটারমিল্ক‘- এর রেসিপিগুলি এখানে দেওয়া হলঃ

মসলাদার লস্যি

উপকরণ

  • সাদা দই-1 কাপ
  • ঠাণ্ডা জল– 2 কাপ
  • লবণ– 1/2 চাচামচ
  • বিট নুন– 1/2 চাচামচ
  • জিরা গুঁড়ো– 1/2 চাচামচ
  • ধনে এবং পুদিনা পাতাগার্নিশের জন্য

প্রস্তুত প্রণালী

দই এবং সকল মসলার উপকরণগুলি একটা বড় বাটি বা পাত্রের মধ্যে নিয়ে সব একসাথে ভালকরে ফেটিয়ে নিন।এর সাথে ঠাণ্ডা জল যোগ করে মিশিয়ে নিন।এবার গ্লাসের মধ্যে বাটারমিল্ক বা মসলাদার লস্যিটি ঢেলে নিয়ে সেটিকে ধনে ও পুদিনা পাতা দিয়ে গার্নিশ করে ফেলুন।

মিষ্টি বাটারমিল্ক

উপকরণ

  • সাদা দই-2 কাপ
  • ঠাণ্ডা জল– 2 কাপ
  • চিনি গুঁড়ো– 3 টেবিলচামচ)
  • বরফের কিউব (ঐচ্ছিক)
  • আমন্ড বাদাম কুঁচিগার্নিশের জন্য

প্রস্তুত প্রণালী

একটা পাত্রে দই নিয়ে সেটিকে ভালমত ফেটিয়ে নিন।এর সাথে ঠাণ্ডা জল এবং চিনি গুঁড়ো যোগ করে খুব ভাল করে তা মিশিয়ে নিন।এবার মিষ্টি ঘোলটা গ্লাসের মধ্যে ঢেলে তার ওপর আমন্ড বাদামের কুঁচিগুলি ছড়িয়ে দিয়ে সুন্দর করে গার্নিশ করে নিনযদি পছন্দ করেন তবে অতিরিক্তভাবে এর সাথে আপনি বরফের কিউবও যোগ করতে পারেন।

বাটারমিল্ক হল একটা অসাধারণ সুস্বাদু পানীয়, যার স্বাদ আপনি গর্ভাবস্থায় নিতে পারেন।এই পানীয়টি সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে একাধিক উপকারিতা নিয়ে আসে।আপনার ডায়েটে বাটারমিল্ক যোগ করার ব্যাপারে যদি আপনার মনে কোনও সংশয় থাকে তবে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আপনার যোগাযোগ করা উচিত।