সন্তানের জন্ম এবং গর্ভাবতী মায়েদের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি নিয়ে বেশি আলোচনা করা হয় না তা হল তদের মূত্রত্যাগের অসংযম যা হবু মায়েদের এক সমস্যার সম্মুখীন করে তোলে।যখন তারা কাশতে থাকেন বা হাসতে থাকে্ন কিম্বা হাঁচি দেন মূত্রত্যাগে অসংযম দেখা দেয় বা মূত্র আচমকাই নির্গত হয়ে যায়।তবে এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই,দেখা গেছে 30% থেকে 50% নতুন মায়েদের এটা হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা।
যখন থেকে আপনার গর্ভসঞ্চার হবে তখন থেকেই আপনার মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এক মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠবে।লজ্জা পবেন না,আর ভয় পাওয়ারও কোনো কারণ নেই!এটা খুব খারাপ পর্যায়ে পৌছায় গর্ভাবস্থার শেষ ত্রৈমাসিকে যখন আপনার গর্ভস্থ ক্রমবর্ধিত শিশুটর অতিরিক্ত স্থানের প্রয়োজন হয় আর তার ফলে আপনার মূত্রাশয়ের উপর চাপ বেড়ে যায়।মূত্রাশয়ের অসংযম খুবই বিব্রতকর এবং হতাশাজনক ব্যাপার যদিও এটা গর্ভাবস্থায় খুবই স্বভাবিক বিষয়। আপনি যখন প্রস্রাব ত্যাগ করেন তখন মূত্রনালীর পেশিগুলোর শ্লথন ঘটে এবং দেহ থেকে প্রস্রাব নির্গত হয়ে যায়।প্রস্রাব নির্গত হয়ে যাওয়ার পর পেশীগুলোর সঙ্কোচন ঘটে পুনরায় প্রস্রাব ত্যাগের মাধ্যমে মূত্রাশয় খালি না হওয়া পর্যন্ত।গর্ভাবস্থায় হরমোনের ওঠানামা এবং ক্রমবর্ধমান জরায়ুর চাপ মূত্রনালীর পেশীগুলির স্বাভাবিক সংকোচন এবং প্রসারণ কার্যটিতে হস্তক্ষেপ করে তাই আপনি যখন ব্যায়াম করেন,হাসেন,দৌঁড়ান,হাটেন এমনকি কাশেন তখন আপনার প্রস্রাব নির্গত হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে নানা ধরনের অসংযমের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে।
মূত্রাশয়টি শ্রোণী গহ্বরের ভিতর সুরক্ষিত ভাবে শ্রোণী অস্থির উপর অবস্থান করে। মূত্রাশয়টি প্রসারিত অবস্থায় থাকে এবং সারাদিন ধরে মূত্র পরিপূর্ণ হতে থাকে আর স্ফিংটার পেশীগুলি বন্ধ থাকে যতক্ষন না আপনি শৌচালয় ব্যবহার করছেন।গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের জন্য শ্রোণীর পেশীসমূহের ওপর নানা কারণে অনেক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
স্ট্রেসজনিত অসংযমের ক্ষেত্রে ওজনের একটা বড় ভূমিকা আছে।তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জরায়ুটি মূত্রাশয়ের ওপর অবস্থান করায় এর সাহায্যকারী লিগামেন্ট এবং আশপাশের পেশীগুলিতে টান পড়ে। এরপর কোনো সাধারণ নড়াচড়াও মূত্রাশয়ের উপর অতিরিক্ত চাপ দেয় তার ফলে স্ট্রেস জনিত অসংযম দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন ঘটবেই ঘটবে।এই পরিবর্তনগুলি মূত্রাশয়ের আস্তরণ এবং মূত্রনালীর ওপর প্রভাব ফেলে।হরমোনগুলি আপনার অস্থিসন্ধি এবং কলাগুলিকে আরো বেশি স্থিতিস্থাপক করে প্রসব উপযোগী করে তোলে।এর ফলস্বরূপ যে পেশীগুলি মূত্র বা প্রস্রাব নির্গমণকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ক্রিয়াশীলতা হ্রাস পায়।
গর্ভাবস্থায় প্রায়শই কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রার্দুভাব লক্ষ্য করা যায়।এর ফলে শ্রোণীদেশে চাপ পরে এবং অসংযমের উৎপত্তি হয়।
যে সকল মহিলারা ডায়াবেটিস,মাল্টিপল বা একাধিক স্ক্লেরোসিস অথবা পূর্বে স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে অসংযম লক্ষ্য করা যায়।
প্রায় 40% মহিলা তাদের UTI জনিত সমস্যাগুলির চিকিৎসা করান না।ার সেটিও অসংযমের একটা বড় কারণ।
সন্তানের জন্মের পর, মূলত যোনিপথে প্রসবের সময় দীর্ঘ সময় ধরে চাপ দেওয়ার ফলে স্নায়ুগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয় যা অসংযমের অন্যতম একটি কারণ।
নিচে উল্লেখ করা হল যে সকল মহিলদের গর্ভাবস্থায় মূত্রাশয়ের অসংযমের সম্ভবনা বেশি থাকে;
যখন আপনি গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহে পৌছাবেন তখন অনিয়ন্ত্রিত মূত্রত্যাগ অনেক সময় অ্যামনিওটিক তরলের নির্গমণ ভেবে ভুল হয়ে যায়।একজন ডাক্তারবাবুই হলেন সব থেকে সঠিক ব্যাক্তি যিনি সমস্যার কারণটি ধরতে পারেবেন।যদি সংক্রমণ বা প্রসব শ্রমের কোনো লক্ষণ না দেখতে পান তাহলে তিনি অন্যান্য কয়েকটি পরীক্ষা করতে দিতে পারেন।ডাক্তারবাবু আপনার মূত্রাশয়ের উপর চাপ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কাশির বা শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়ার সময় আপনার মূত্রত্যাগ হয়ে যাচ্ছে কিনা। মূত্রাশয়ের আলট্রা সাউন্ড স্ক্যানের দ্বারা বোঝা যায় যে মূত্রাশয়টি সম্পূর্ণ খালি হয়েছে কিনা।আপনি যদি UTI তে ভোগেন তাহলেও এটা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গর্ভাবস্থায় মূত্রাশয়ের অসংযমের চিকিতসার কার্যকর প্রথম সারিটিই হল জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনয়ন এবং মূত্রাশকে পরিচালনা করা।এর জন্য কয়েকটি কার্যকর টিপসগুলি হলঃ
চেষ্টা করুন পা সেট করে কেগেল ব্যায়াম করতে যা আপনার শ্রোণীদেশকে শক্তিশালী করবে।এর সব থেকে ভাল ব্যাপারটি হল প্রসব এবং প্রসবোত্তর সময়ে এটি আপনার পেলভিস বা শ্রোণীচক্রকে সহায়তা কর।
সময়মত আপনার মূত্রাশয় খালি করার জন্য একটি চার্ট ব্যাবহার করুন এবং আপনার মুত্রত্যাগের সময় এবং তার মধ্যবর্তী অবকাশটি তাতে লিপিবদ্ধ করুন। কিছুদিনের জন্য প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় টয়লেটে যান।তারপর মধ্যবর্তী অবকাশটি বাড়াতে থাকুন।ধীরে ধীরে আপনি একটি সুবিধাজনক সময় সারণী তৈরীতে সক্ষম হবেন আপনার মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি করার জন্য।
কফি এবং ঠাণ্ডা পানীয় আপনাকে বারংবার মূত্রত্যাগে বাধ্য করে।এর বদলে বেশি করে জল বা ক্যাফিন বিহীন পানীয় পান করুন।
বিকালের দিক থেকে তরল পানীয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিন কারন এগুলো রাত্রে বারেবারে মুত্রত্যাগ করতে বাধ্য করে অথবা লিক করে।
তন্তু সমৃদ্ধ খাদ্য কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে তার ফলে শ্রোণীদেশে চাপ হ্রাস পায়।
আপনার উদর অঞ্চলের অতিরিক্ত ওজন আপনার আপনার মুত্রাশয়ের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে।ব্যায়াম এবং সক্রিয় সঠিক জীবন শৈলীর মাধ্যমে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
অনেক সময় ডাক্তারবাবু মূত্রনালী এবং শ্রোণীর পেশীগুলি অবরুদ্ধ করার জন্য ডিভাইসগুলি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।মূত্রাশয়ের পেশীগুলির খিঁচুনি বন্ধ করতে অথবা তাদের অতিসক্রিয়তা বন্ধ করার জন্য ডাক্তারবাবু আবার ওষুধও দিতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় মূত্রাশয়ের অসংযম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কেগেল ব্যায়াম এর ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে।এই ব্যায়ামটি শ্রোণীদেশের মাংসপেশীগুলোকে শক্তিশালী এবং আঁটোসাটো করতে সাহায্য করে।শক্তিশালী শ্রোণীদেশের মাংসপেশিগুলি মূত্রনালীর কর্মক্ষমতা এবং মূত্রাশয়ের স্ফিংটার পেশীর কার্যকারীতা বৃদ্ধি করে যা প্রস্রাব নির্গমণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার কেগেল পেশীগুলো চিহ্নিত করতে পারেবেন যখন আপনি মলত্যাগ বা প্রস্রাব ত্যাগ করতে বসবেন।আপনার প্রস্রাব মাঝপথে থামিয়ে দিন,যে পেশিগুলো এইভাবে প্রস্রাব করা থামাবার জন্য কাজ করে সেগুলিই হল কেগেল পেশী। অন্যভাবে,আপনার একটি আঙ্গুল যোণীর মধ্যে প্রবেশ করান এবং চেষ্টা করুন আঙ্গুলের চারপাশের পেশীগুলিকে শক্ত করতে, এবার এই শক্ত করে আঁকড়ে থাকে পেশীগুলিই হল কেগেল পেশি।
কীভাবে ব্যায়ামগুলি করবেনঃ
সকালে,দুপুরে এবং রাত্রে এই ব্যায়ামগুলি 10 বার করে করার পরামর্শ দেওয়া হয়।এটা যেকোনো জায়গা যেমন আপনার কাজের ডেস্কে বসে কিম্বা গাড়িতে বসে যখন আপনি ড্রাইভিং করছেন এমনকি সোফায় বসেও করতে পারেন।
গর্ভবস্থায় মূত্রত্যাগের অসংযম প্রতিরোধ করার মত নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি নেই।যদিও কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা শ্রোণীর পেশিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ এনে মূত্রত্যাগে নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করে।প্রতিদিন কেগেল ব্যায়ামগুলো আপনার মূত্রাশয়কে অভ্যস্থ করে এবং মুত্রের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে।আপনি চেষ্টা করুন আপনার শ্রোণীদেশের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে যা শুধু গর্ভাবস্থাতেই নয় অন্যসময়েও কাজে লাগবে। শ্রোণীদেশের পেশীগুলি ঝুলে যায় যদি সেটির প্রতিদিন ব্যবহার করা না হয়, তাই শ্রোণীর পেশীগুলকে শক্তিশালী করতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা জরুরী।
যদি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই প্রস্রাব ত্যাগে অসংযম দেখা যায় তাহলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে।যদি মূত্রনালীর কোনওরকম সংক্রমণ হয়ে থাকে তবে সেটা জটিল আকার ধারণ করার আগেই চিহ্নিত করে তার ব্যবস্থা করতে হবে।মূত্রাশয়ের অসংযম অবশ্যই গর্ভাবস্থার শেষ দিকে প্রাকাশিত হয় এবং প্রসব হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর পর্যন্ত চলতে থাকে, তবে যদি আপনি প্রসবের ছয় সপ্তাহের পর পর্যন্ত মূত্রের অসংযমে ভুগতে থাকেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।
বেশিরভাগ ভাগ মহিলারা কয়েক ফোঁটা মুত্র অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ত্যাগ করলেও সেটাকে পাত্তা দেন না বা ডাক্তারবাবুকে তা জনাতে লজ্জাবোধ করেন।
যদি প্রসবের সময় বা তার পরবর্তী সময়ে আপনি আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অসংযমের প্রকাশ লক্ষ্য করেন তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেবেন।ইতিমধ্যে আপনি উপরে বলা কৌশলগুলি অবলম্বন করুন অসংযম এবং অনিয়ন্ত্রিত মূত্র ত্যাগের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াবার জন্য।