In this Article
গর্ভাবস্থা হল জীবনের একটি মুখ্য ঘটনা এবং এর লক্ষণ,উপসর্গ এবং এর সাথে জড়িত শারীরিক পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকলে তা এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সম্ভাব্য অস্বস্তিগুলি হ্রাস করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।একটি গর্ভাবস্থার পরীক্ষা সঞ্চালনার দ্বারা আপনার গর্ভবতী হয়ে ওঠার বিষয়টি জানতে পারাটা সর্বোত্তম উপায় ঠিকই তবে এক্ষেত্রে আরও অন্যান্য কয়েকটি উপায় আছে যার দ্বারা আপনি গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করানোর পূর্বেই আপনার গর্ভে যে ইতিমধ্যেই শিশুর আগমন ঘটেছে সেটি জানতে পারবেন।কীভাবে?-সেটি জানতে হলে পড়ুন।
গর্ভাবস্থার শারীরিক পরিবর্তনগুলি কি কি?
গর্ভবতী মহিলার দেহের শারীরিক পরিবর্তনগুলি হল কোনও মহিলা গর্ভবতী হয়েছেন কিনা তা জানার প্রাথমিক চিহ্ন।গর্ভাবস্থায় শরীরে কি কি পরিবর্তনগুলি হতে পারে তার সাথে সম্পর্কিত কিছু সাধারণ লক্ষণ অথবা উত্তর এখানে দেওয়া হলঃ
- মাসিক বাদ যাওয়া– মাঝেমধ্যে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের মত কিছু বিভ্রান্তিকর লক্ষণ এক্ষেত্রে দেখা যায়,কোনও মাসিক বন্ধ হওয়া বা বাদ যাওয়া প্রায়ই আপনার গর্ভবতী হয়ে ওঠাকে চিহ্নিত করতে পারে।আপনার শেষ বারের ঋতুস্রাবের নির্ধারিত সময় এসে যাওয়া সত্ত্বেও যদি আপনার মাসিক চক্রটি শুরু না হয়,তবে সেক্ষেত্রে আপনি হয়ত গর্ভবতী হয়ে থাকতে পারেন।
- কোমল এবং স্ফীত স্তন– সংবেদনশীল স্তনের সহিত যুক্ত হালকা বেদনা এবং অস্বস্তি গর্ভাবস্থার অপর আরেকটি লক্ষণ।অস্বস্তিটি আপনার শরীরের অভ্যন্তরে হয়ে থাকা হরমোনের পরিবর্তন থেকে হয়ে থাকে এবং সময়ের সাথে ধীরে ধীরে সেটি কমতে থাকে।
- গা গুলানো বমি বমি ভাব– গা গুলানো বমি বমি ভাবটি দিনে অথবা রাত্রের যেকোনও সময়েই আকস্মিক ভাবে হানা দিতে পারে।যদিও ভীষণ স্পষ্ট নয়,তবে গা গুলিয়ে বমি বমি ভাবটি বেড়ে ওঠার সাথে গর্ভাবস্থাকালীন সময়ের মধ্যে একটি সহ-সম্পর্ক রয়েছে।
- ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ– আপনার গর্ভে আপনার শিশুটি ক্রমশ বেড়ে উঠতে শুরু করার কারণে আপনার মূত্রথলি এবং জরায়ুর উপরে চাপ পড়ে।যা আপনাকে অসংখ্য বারের জন্য বাথরুমে যেতে প্রণোদিত করে।
- ক্লান্তি ও অবসাদ বাড়ে– গর্ভাবস্থায় দেহে প্রোজেস্টেরণ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়,যার ফলস্বরূপ আপনার দেহে ক্লান্তি এবং অবসাদ আসে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট– গর্ভাবস্থার অপর আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হল হ্রস্ব শ্বাস অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট,যার ফলে প্রায়শই অবসন্ন ও ক্লান্তি বোধ হয়।
যদিও আপনার অনুভব করা উপরে উল্লিখিত সকল সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলি আপনার গর্ভধারণের উপসর্গ ছাড়াও আপনার দেহের অন্যান্য কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যা বা ব্যাধির সংকেত হতে পারে,তবে একই সাথে এই উভয়ের সংমিশ্রণ হিসেবে উপলব্ধ উপসর্গগুলি আবার আপনার গর্ভবতী হয়ে ওঠাকেও নির্দেশ করতে পারে,আর সেটি নিশ্চিত করতে ঘরেতেই আপনার একটি প্রেগনেন্সি টেস্ট করিয়া নেওয়া প্রয়োজন।
গর্ভবতী মহিলার শারীরিক পরিবর্তনগুলি- প্রতি সপ্তাহ ধরে বিশ্লেষণ
আপনার প্রসবের দিন গণনা করা হয় শেষবারের মাসিক চক্র হওয়ার দিন থেকে।মাত্র 40 সপ্তাহের মধ্যে দেহ প্রসবের জন্য একটি শিশুকে গর্ভের মধ্যে প্রস্তুত করে।
আসুন দেখা যাক গর্ভাবস্থায় প্রতি সপ্তাহ থেকে প্রতি সপ্তাহে,প্রতি মাস থেকে প্রতি মাসের বিভিন্ন পর্যায়ে কি কি শারীরিক পরিবর্তনগুলি হয়ে থাকে!
সপ্তাহ 1
1-2 সপ্তাহের মধ্যেই শুক্রাণু ডিম্বাণুর সহিত মিলিত হয়।সাধারণভাবে বলতে গেলে,সপ্তাহ 1 হল সাধারণত আপনার নির্ধারিত তারিখ থেকে আপনার গর্ভাবস্থার সূচনা বা সূত্রপাত।এই সময়ে দুটি ডিম্বাশয়ের উভয়েই বা যেকোনওটি পরিণত হয় এবং একটি ডিম্বাণু মুক্ত করে।যদি উভয় ডিম্বাশয়ই ডিম্বাণু মুক্ত করে,সেক্ষত্রে আপনাকে আবার দু’টি নন আইডেন্টিক্যাল বা হুবহু প্রায় একই রকম টুইন বা যমজ সন্তান বহন করতে হতে পারে।সপ্তাহ 1 হল আবার সেই সপ্তাহ,যখন থেকে আপনাকে গর্ভাবস্থার ভিটামিনগুলি গ্রহণ করা শুরু করতে হয়।ডিম্বাণুটি ফ্যালোপাইন টিউবের ভিতরে দ্রুত গমন করে এবং ফ্যালোপাইন টিউবের নিচের দিকে ঘুরে বেড়ায় ও শুক্রাণুর আগমনের জন্য অপেক্ষা করে।
সপ্তাহ 2
সপ্তাহ 2 বা দ্বিতীয় সপ্তাহতে ডিম্বোস্ফোটন হয়।গর্ভধারণের সফলতার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় সপ্তাহের 2 অথবা 3 দিন আগে সঙ্গম করা হল সবচেয়ে সেরা সময়।গ্রন্থিগুলি প্রোজেস্টেরণ এবং ইস্ট্রোজেন উৎপন্ন করার কারণে স্তনগুলি এই সময় স্ফুরিত হতে শুরু করে যা হরমোনীয় স্ফীতি এবং কোমল স্তন সৃষ্টি করে।
সপ্তাহ 3
অবশেষে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সহিত মিলিত হয় এবং প্রায় 200 মিলিয়ন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রবেশ করে।এই পর্যায়ে ডিম্বাণুটি জাইগোটে পরিণত হয় এবং অন্যান্য শুক্রাণুগুলির প্রবেশ প্রতিরোধ করার জন্য এটি বন্ধ হয়ে যায়।যদিও এই পর্যায়ে শারীরিক পরিবর্তনগুলি হওয়া অনিবার্য নয় তবে একটি জৈবিক স্তরের পরিবর্তন এই পর্যায়ে অনিবার্যভাবেই হয়ে থাকে।নিউক্লিয়াসটি আপনার জাইগোটের সাথে একীভূত হয়ে যায় এবং এর লিঙ্গ,চোখের রঙ ও চুলের বর্ণের মত জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলি সহ এবং 200 টি অন্যান্য অনুরূপ জিনগত নির্ণীত বৈশিষ্ট্যাবলী নির্ধারণ করে।
সপ্তাহ 4
এই পর্যায়ে গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের শারীরিক পরিবর্তনগুলি উদ্ভাসিত হতে শুরু করে।প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থার কয়েকটি শারীরিক পরিবর্তন হল স্ফীত এবং যন্ত্রণাযুক্ত স্তন,ক্লান্তি,বারংবার প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছে এবং বমি বমি ভাব।সাধারণত,এই উপসর্গগুলি উপরে উল্লিখিত উভয় কারণের মিশ্রণস্বরূপ হয়ে থাকতে পারে।এই সময়ে অমরা এবং নাড়ির গঠণ শুরু হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর মধ্যে খনন চালিয়ে চাপ দিতে পারে যার ফলে কয়েক ফোঁটা রক্তপাত হয়ে থাকতে পারে।মোটামুটি প্রায় এক সপ্তাহ পরে এটি পরীক্ষা করানো উচিত কারণ মাসিক চক্র শেষ হওয়ার একদম প্রথম দিনগুলিতে এই পরীক্ষাটি করানো হলে সেক্ষেত্রে ভ্রান্ত-নেতিবাচক ফলাফল পাওয়াটা খুবই সাধারণ ব্যাপার হয়ে থাকে।
সপ্তাহ 5
ভ্রূণটি গঠিত হতে এবং দানা শস্যের আকারের মত বেড়ে উঠতে শুরু করে।ভ্রূণের মস্তিষ্কের,অঙ্গাণুগুলির,রক্তবাহগুলির বিকাশ এবং পরিবর্তিত হতে থাকে।শিশুর পিঠের দিকে একটা খাঁজ বিকাশ পেতে থাকে যেটি নিউরাল টিউবে বিকাশের জন্য নিজেকে আবদ্ধ করে রাখে,যেটি পরবর্তীতে শিশুর মেরুদন্ডে পরিণত হয়।
সপ্তাহ 6
নিউরাল টিউবটি মেরুদন্ডে পরিণত হয় এবং হৃদিপিন্ডটি ভ্রূণের মধ্যে আরও বেশি রক্ত পাম্প করতে শুরু করে।ভ্রূণের C আকারটি এই সময় থেকে আরও বেশি স্পষ্ট হয় এবং আপনার মধ্যে হয়ত বমি বমি ভাব এবং অবসাদ দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থার হরমোন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে আপনার রক্তচাপ হ্রাস পাবে।ভ্রূণ একটি প্রতিরক্ষামূলক ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত হয় এবং সেটি কুসুম থলির সহিত সংযুক্ত হয়ে যায়।এই সময় যোগ ব্যায়ামের মত কিছু হালকা অনুশীলন আপনাকে মানসিক চাপগুলিকে সামাল দিতে সহায়তা করে স্বস্তি দেয়।
সপ্তাহ 7
এই সময় মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতা আরও খারাপ রূপ নেয়,ভ্রূণের মস্তিষ্ক এবং মুখমন্ডল গঠিত হতে এবং আকার নিতে শুরু করে।চোখের লেন্সগুলি বিকশিত হয়,নাসারন্ধ্রগুলি গড়ে ওঠে এবং বাহুগুলি নৌকা ঠ্যালার দাঁড়ের ন্যায় আকার নিতে শুরু করে।জরায়ুর নিকটস্থ শ্লেষ্মা পুরু ও ঘন হয়ে ওঠে এবং জরায়ুর প্রবেশদ্বারের মুখটি বন্ধ করে দেয়।হাতের এবং পায়ের আঙ্গুলগুলি গড়ে ওঠে এবং ভ্রূণের মস্তিষ্ক তরঙ্গের ক্রিয়াকলাপের লক্ষণগুলি প্রদর্শিত হতে শুরু করে।এই সময় আপনার মধ্যে আবার মেজাজের দোলাচল,খামখেয়ালিপনার অভিজ্ঞতাগুলি হবে এবং আপনি কিছুটা অসুস্থবোধ করবেন,যদিও এগুলি সবই হল একটা ভাল লক্ষণ কারণ এগুলি আপনার গর্ভাবস্থার হরমোনগুলির স্বাভাবিক গতি বজায় থাকারই সুইঙ্গিত দেয়।
সপ্তাহ 8
গর্ভাবস্থার অষ্টম সপ্তাহ থেকেই ভ্রূণের মস্তিষ্ক তরঙ্গের সক্রিয়তা শুরু হওয়া চিহ্নিত হয়।উঠে দাঁড়ালে শ্রোণী অঞ্চলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।এই সময় ডাক্তারবাবু ভ্রূণের সক্রিয়তা অথবা হৃদস্পন্দনের লক্ষণগুলি আলট্রাসাউন্ড ইমেজের দ্বারা পরীক্ষা করেন।
একবার ভ্রূণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেলে, গর্ভপাতের সম্ভাবনা 2% এ নেমে যায় এবং ঠিক এই সময় থেকেই হিসাবানুযায়ী প্রায় নির্দিষ্টভাবে প্রসবের একটি নির্ধারিত তারিখ দেওয়া হয়ে থাকে।আবার গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে আপনার হয়ত রক্তপাতের অভিজ্ঞতাও হতে পারে।
সপ্তাহ 9
ভ্রূণের বিকাশের ফলস্বরূপ এই পর্যায়ে মূত্রথলির উপরে চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকার কারণে সামাণ্য পরিমাণ প্রস্রাব লিক করার মত ঘটনাও ঘটে থাকে।শিশুর হৃদযন্ত্রের বিকাশ হয় এবং চোখের পাতে,চুলের ফলিক্যালগুলি ও স্তনবৃন্ত গঠিত হয়।শিশুর বাহুর হাড়ের বিকাশ ঘটে এবং ভ্রূণের হিক্কা বা হেঁচকি ওঠে।এই সময় আপনি আবার জলশূণ্যতা অনুভব করতে পারেন এবং বেশিরভাগ ডাক্তারদের মতানুযায়ী গর্ভাবস্থায় এই সপ্তাহটিই সবচেয়ে রুক্ষতম এবং শুষ্কতম প্যাচ বা দাগায়িত হওয়া হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণে এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে জল পানের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সপ্তাহ 10
এই সময় যৌনাঙ্গ গঠিত হয়,চোখের পাতা আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে এবং শিশুটিকে এখন “ভ্রূণ”বলে অভিহিত করা হয়।নাড়ির মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ হয় এবং গর্ভের মধ্যে মাঝেমধ্যে হয়ত শ্বাস-প্রশ্বাসের অন্দোলনগুলি লক্ষ্য করা যেতে পারে।
সপ্তাহ 11
প্রথম ত্রৈমাসিকের দেহের পরিবর্তনগুলি এই পর্যায়ে আরও লক্ষণীয় হয়।এই পর্যায়ে ভ্রূণ শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে,বুড়ো আঙ্গুল চুষতে পারে এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলতে পারে।ভ্রূণের মাথাটি তার দেহের তুলনায় বড় হয়।গর্ভাবস্থার 11 তম সপ্তাহে খাদ্যের প্রতি আপনার তীব্র বাসনাগুলি লক্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে এবং খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কিছু জিনিসগুলিকেও আপনার মুখের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলার প্রতিও আপনার তীব্র বাসনা আপনি হয়ত নিজের মধ্যে লক্ষ্য করতে পারেন,যা হয়ত আপনার ডায়েটের কোনও চিহ্ন বা ঘাটতিকেই ইঙ্গিত করতে পারে।এই সময় ফোলেট,ফাইবার এবং আয়রণ গ্রহণ অপরিহার্য এছাড়াও এই সময় পিঁয়াজকলি বা ঐ জাতীয় জিনিসগুলি খেলে তা এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করতে পারে।ক্রোমোজোমের অস্বাভবিকতা পরিক্ষার জন্য গর্ভাবস্থার 11-13 সপ্তাহের মধ্যে প্রথম ত্রৈমাসিক আলট্রাসাউন্ড স্ক্রীনিং টেস্ট করার পাশাপাশি আবার একটি নিউক্যাল ট্রান্সলুসেন্সি পরীক্ষাও করানো হয়।
সপ্তাহ 12
এখন 3 ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের আপনার শিশুটি আরও বেশি বাড়তে শুরু করে। আপনার শিশুর মুখটি আরও বেশি মানুষের মত দেখায় এবং শিশুর ওজন বেড়ে প্রায় আধ আউন্স মত হয়ে যায়। শরীরের বাকি অংশগুলি ভ্রূণের মাথার বৃদ্ধির সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে কিন্তু এর সাথে মানিয়ে শরীরের অন্যান্য অংশের বৃদ্ধি কম অনুপাতে হতে থাকে।শিশুর ভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে কুঁকড়ে এবং সোজা অবস্থানে হয়ে যায়।আপনার পেটের পেশীগুলি ধীর হয়ে যায় এবং আপনার মল আরও কঠিন প্রকৃতির হয়ে ওঠে। আপনি পেটে গ্যাস অনুভব করতে পারেন,হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে এবং আপনার জরায়ুর ক্রমবর্ধমান আকারের সহিত সামঞ্জস্য করার জন্য আপনার পশ্চাৎদেশটি প্রশস্ত হয়ে যেতে লক্ষ্য করতে পারেন।যেহেতু এই সময় শ্রোণির মধ্যে জরায়ুটির সামঞ্জস্য হওয়া কিছুটা কঠিণ হয়ে ওঠে তাই এটি পেটের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সেখানে নিজের জন্য একটা মানানসই স্থান করে নেওয়ার জন্য ঠেলতে থাকে।
সপ্তাহ 13
প্রথম ত্রৈমাসিক শেষ হয় এবং দেহের পরিবর্তনগুলি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পুরোদমে প্রবেশ করে।এই সময় প্রচুর পরিমাণ তরল গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং আপনি দুজনের জন্য খাবার খাওয়া শুরু করতে পারেন। এই সময়ে আপনি আরও বেশি এনার্জি পাবেন,বমি বমি ভাব হ্রাস পাবে এবং এই পর্যায়ে গর্ভবতী মহিলাদের প্রায়ই সাঁতার অনুশীলনের পাশাপাশি কম-প্রভাবের যোগব্যায়ামগুলি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।ডায়াফ্রামের পথগুলিকে পরিষ্কার করতে এবং শ্বাসকার্যকে সহজ করতে শিশুর জন্মপূর্ববর্তী হেঁচকিগুলির অভিজ্ঞতা আপনার হবে।শিশুর অভ্যন্তরে কিডনির কাজ শুরু হয় এবং অস্থি মজ্জা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শ্বেত রক্ত কণিকা উৎপন্ন শুরু করে।এই সপ্তাহের মধ্যে অগ্ন্যাশয়, পিত্তথলি এবং থাইরয়েডও বিকাশ লাভ করবে।
সপ্তাহ 14
শিশুর অঙ্গগুলি কাজ করা শুরু করে এবং আপনি আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানের মাধ্যমে মুখের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে সক্ষম হবেন।অন্ত্রটি শিশুর দেহের মধ্যে সঞ্চালিত হয় এবং শিশুর মধ্যে ইনসুলিন উৎপাদন শুরু হয়। আপনি প্রথমবারের মতো পেটের মধ্যে একটা স্পন্দন অথবা শিশুর পদাঘাতের প্রথম লক্ষণগুলি অনুভব করবেন। আপনার মেজাজেরও উন্নতি হবে এবং কাজের কথা হল আপনি যাতে অন্যের সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারেন তার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাচ্চার মুখের পেশীগুলির বিকাশ হওয়ায় শিশুটি এখন মুখের সূক্ষ্ম ভাবগুলি প্রকাশ করতে পারে।নিউরাল-টিউবের ত্রুটিগুলির জন্য স্পাইনা বিফিডা এবং ট্রাইসমি 18 এর মতো দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের স্ক্রিনিংগুলি এই সপ্তাহে করা হয়ে থাকে।
সপ্তাহ 15
এই পর্যায়ে রক্তের প্রোটিন এবং ডাউন সিন্ড্রোম অথবা জিনগত ত্রূটিগুলির জন্য স্ক্রীনিং টেস্ট করানো হয়।পুং ভ্রূণের তুলনায় স্ত্রী ভ্রূণগুলি মুখের আরও বেশি আন্দোলন দেখায়।এই পর্যায়ে ভ্রূণ দৈর্ঘ্যে প্রায় 5 ইঞ্চি এবং ওজনে প্রায় 2 আউন্স মত হয়।পেটের নাভির কাছে একটি লক্ষ্যনীয় ধাক্কা উপস্থিত হয়।আপনি আবার আপনার তলপেটে ব্রাক্সটন হিক্সের সংকোচনগুলি এই সময় অনুভব করবেন।আপনি যদি এক ঘন্টার মধ্যে চারবারের বেশি সংকোচন অনুভব করেন,এবং যোনিতে অস্বস্তিকর এবং ঘন ঘন শ্লেষ্মা স্রাব হতে লক্ষ্য করেন আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করুন।
সপ্তাহ 16
হাড় গঠনের পরেই বৃদ্ধির দৌড় শুরু হয়। আপনি প্রতি সপ্তাহে এক পাউন্ড করে আপনার ওজন লাভ করা লক্ষ্য করতে পারেন।আপনার শ্রোণী অঞ্চলটি শক্ত এবং দৃঢ় অনুভূত হবে। আপনি আপনার শিশুর আন্দোলনের লক্ষণগুলি আরও স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করতে পারবেন।
সপ্তাহ 17
এই সময় কিছু স্পষ্ট স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে আসতে পারে যা বেশিরভাগ সময়েই উদ্ভট হয়ে থাকে।এগুলি শিশুর জন্ম এবং মাতৃত্বের সহিত সম্পর্কিত ভয় অথবা উদ্বেগের প্রতিফলনস্বরূপ,যা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক।শিশুটির ওজন এখন অমরার থেকে বেশি হবে।শিশুর দেহে তাপ উৎপাদনের জন্য তাপদায়ী ব্রাউন ফ্যাট জমা হতে থাকে।আপনার স্তনগুলি আরও বড় হয় এবং সংবেদনশীল ও কোমল হয়ে ওঠে এবং মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়।আপনি আবার এমনকি “গর্ভাবস্থার ঔজ্জ্বল্য”,আপনার মুখের উপর এক প্রকার ঔজ্জ্বল্যের প্রভা অনুভব করবেন,যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির লক্ষণ।আপনার শিশুর প্রথম পদাঘাতটি এই সপ্তাহ থেকেই সাধারণত শুরু করে 22 তম সপ্তাহ পর্যন্ত অনুভব করতে পারবেন।
অমরা এখন সম্পূর্ণরূপে কাজ করে চলে যেহেতু এই সময় পুষ্টিগুলি শোষণ করে এবং সেগুলিকে ছড়িয়ে দেয় পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণের কাজও করে।
সপ্তাহ 18
লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য এই সময় আরও বেশি আল্ট্রাসাউন্ড টেস্টগুলি করানো যেতে পারে।এমনকি এই সময় আরও বেশি করে পদাঘাতের দাপট অনুভূত হতে পারে এবং শিশুটি হয়ত বিশেষ কিছু শব্দের প্রতি তার প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ করতে পারে।শিশুটির চোখের রেটিনা বিকাশ পাবে এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠবে।শিশুটি তার অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে,ডিগবাজি খেতে পারে এবং এমনকি তার পাগুলিকেও মুড়তে পারে।তার দাঁতের গঠণ এবং ফ্য্যাটও জমা হতে শুরু হয়।পা,টেলবোন এবং অন্যান্য পেশীগুলিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
সপ্তাহ 19
আপনার শিশুর আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানগুলি তার অ্যামনিওটিক থলির ঝিল্লি ধারণ করে থাকা,বুড়ো আঙ্গুল চোষা অথবা আপনার গর্ভের মধ্যে তার নড়াচড়া করার চিত্রগুলি প্রকাশ করতে পারে।শিশুটি যদি একটি কন্যা সন্তান হয়ে থাকে,তবে দেহের ভিতরে আপনার অর্ধেক জিনগত উপাদান তৈরী হয়ে যাওয়ার সাথে তার দেহে ফলিক্যালের গঠণ শুরু হয়।যাইহোক,তবে এই সময় ভিটামিন B এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারগুলি খাওয়া নিশ্চিত করুন কারণ এটি আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
সপ্তাহ 20
জরায়ু প্রতি সপ্তাহে 1 সেন্টিমিটার হারে আপনার পাঁজরের খাঁচার দিকে বৃদ্ধি পায়।এটি হল সেই সময়,যখন মায়েরা উদ্বেগ লাঘব করার এবং প্রসব প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে মসৃণভাবে অতিবাহিত হওয়ার কৌশলগুলি শেখার জন্য সন্তান প্রসবের ক্লাসগুলিতে তাদের নাম নথিভূক্ত করে থাকেন।আপনার শিশুকে জন্ম দেওয়ার অর্ধ রাস্তা অতিক্রম করে ফেলার কারণে আপনার মেজাজের প্রভূত উন্নতি ঘটবে।অনাক্রম্যতাগুলি জরায়ু থেকে ভ্রূণের মধ্যে স্থানান্তরিত হবে।
সপ্তাহ 21
আপনার বয়স যদি 35 বা তার বেশি হয়ে থাকে বা আপনার যদি ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থাকে তবে আপনার গর্ভাবস্থায় কীভাবে শরীরের পরিবর্তনগুলি হবে সে সম্পর্কে আপনার এই সময় থেকে কিছুটা চিন্তিত হওয়া উচিত।তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শারীরিক পরিবর্তনগুলি থেকে এক্ল্যাম্পসিয়া হওয়ার ঝুঁকির লক্ষণগুলি এই সময় থেকেই দেখা দিতে শুরু করে।অন্যথায়,দীর্ঘ পদাচারণা এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা এই সময়ের নিয়মিত ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত হওয়া উচিত।
সপ্তাহ 22
এটি হল আপনার সন্তানের পঞ্চম মাস।এই সময় থেকে শিশুর মস্তিষ্ক দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আপনার হয়ত হেমারয়েডস বা কোষ্ঠকাঠিণ্যের অভিজ্ঞতাও হয়ে থাকতে পারে।যোনির চারপাশে ইস্ট সংক্রমণগুলি এবং ঘন ঘন যোনি স্রাব এই সপ্তাহে শরীরের সাধারণ লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই সময় ডুশ দেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয় এবং যোনি চুলকানিযুক্ত এবং স্রাবগুলি লালচে ভাব ও ঈস্টের গন্ধযুক্ত দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
এই সময় থেকে শিশুর অঙ্গাণুগুলি আরও পূর্ণভাবে বিকাশ পেতে থাকে এবং নাড়ির মাধ্যমে বাহিত রক্ত ভ্রূণে অক্সিজেন এবং অন্যান্য প্রচুর পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
সপ্তাহ 23
আপনার শিশুর চোখ গঠিত হয়ে যায় তবে রঞ্জকের অভাবের কারণে আপনি তার বর্ণ বলতে পারবেন না।আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে দীর্ঘ দূরত্বে গাড়ি চালানোর বা ভ্রমণের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিতে পারেন শুধু এটি অনিরাপদ হওয়ার কারণের জন্যই নয়, বরং এটি নিশ্চিত করার জন্য যে যদি কোনও কারণে আপনি প্রসব বেদনার ক্ষেত্রটিতে প্রবেশ করেন তবে সেক্ষেত্রে তাঁরা আপনাকে সব রকম সহায়তা করতে প্রস্তুত।
সপ্তাহ 24
এই সপ্তাহের মধ্যে আপনার দেহে হৃদয় জ্বলন বা গলা-বুক জ্বালা অম্বল অনুভূত হবে।অম্বল হওয়ার এই সংকেতটি আপনার শিশুর মাথার চুলের বৃদ্ধিকে সূচিত করে।যদি আপনি গলা-বুক জ্বালা অম্বল অনুভব না করে থাকেন তবে আপনার শিশুটি সম্ভবত টাক মাথার হয়ে থাকতে পারে।গর্ভাবস্থার এই সপ্তাহের মধ্যে হয়ে থাকা অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে পেশী ব্যথা, পায়ে যন্ত্রণা, ক্লান্তি এবং মাথা ঘোরা বা ঝিম ঝিম করা।
সপ্তাহ 25
প্রসবের পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াটিকে উন্নত করার ক্ষেত্রে এই সময় থেকেই হালকা কিছু অনুশীলন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আপনার শিশুটির নিয়মিত ঘুম চক্রটি বজায় থাকবে এবং তার নাসারন্ধ্রগুলি খুলে যাবে।তার ফুসফুসের “সারফ্যাকট্যান্ট”(এক ধরণের লিপোপ্রোটিন যা ফুসফুসের অ্যালভিওলার কলা থেকে উৎপন্ন হয়)বিকাশ হবে যা ক্ষুদ্র বায়ুথলি গুলিকে স্ফীত করতে এবং ভালোভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ফুসফুসের ভিতরে ক্ষুদ্র বায়ু থলিগুলিকে খুলে রাখতে সহায়তা করে।আপনি পিঠে, নিতম্বে, এবং পায়ে ব্যাথা অনুভব করতে পারেন এছাড়াও অবসাদ এবং ঝিঁমুনি অনুভব করতে পারেন।
সপ্তাহ 26
গর্ভস্থ শিশুটির শ্রবণ ক্ষমতা বিকাশ লাভ করবে এবং সে নানা ধরনের শব্দের প্রতিক্রিয়া জানাবে।আপনি ঘুমের সময় অস্বস্তি অনুভব করবেন।চিৎ হয়ে শোবার থেকে পাশ ফিরে শোয়া ভাল কারণ এই অবস্থানে গর্ভস্থ শিশুটির দেহে ভাল ভাবে রক্ত সংবাহিত হয়।চিৎ হয়ে থাকলে জরায়ুটি আপনার প্রধান ধমনীর উপরে চলে আসে ফলে ভ্রূণে রক্তসংবহণ বাধা পায়।এই সময় থেকেই আবার আপনি আপনার তলপেটে দাগ(স্ট্রেচ মার্ক)লক্ষ্য করতে পারবেন।
সপ্তাহ 27
এই সময়ে আপনার পিঠের উপর তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে।আপনি হয়ত গুলি খাওয়ার মত ব্যথা অনুভব করতে পারেন যা সাইটিকা নামে পরিচিত।কোনও কিছু উত্তলন করা,নিচু হওয়া,হাঁটাচলা করাও এক্ষেত্রে ব্যথাকে আরও খারাপ করে তোলে এবং অ্যামনিওটিক তরলের মাত্রা কমে যায়।শিশু যখন নড়াচড়া করতে থাকে তখন তার পায়ের আঙ্গুলগুলি এবং হাঁটুর বিন্দুগুলি অথবা এমনকি হাড়ের কিনারাগুলিও দেখা যেতে পারে।আপনার হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যাবে এবং আপনি রাঙা হয়ে উঠতে পারেন।
সপ্তাহ 28
এখন থেকে তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শুরু এবং আপনার পেটের নিকটে ব্র্যাক্সটন-হিক্সের সংকোচনগুলি আপনি অনুভব করা শুরু করবেন যা মূলত পেটের মধ্যে পেশীগুলির একটি জোরালো সংবেদন।ওজন বৃদ্ধির হার বাড়ে এবং শিশুর শরীরে ফ্যাটের মাত্রা 2-3 শতাংশ হারে বেড়ে যায়।গরম আবহাওয়ায় কিম্বা খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য একভাবে একটানা দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত হন কারণ এর ফলে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং মাথা ঘুরতে পারে।আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন তবে গরমের সময় স্বস্তি পেতে ছায়ার মধ্যে থাকুন এবং প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।আপনার পেটটি ক্রমশ বড় হতে থাকবে এবং সেটি আপনাকে ভীষণ অস্বস্তিবোধ করাবে।এই সময় আবার পায়ে খিঁচ লেগে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়াটাও খুব সাধারণ।
সপ্তাহ 29
ঘন ঘন বাথরুমে যাওয়া এবং থেকে থেকে দিবা নিদ্রা দিয়ে নেওয়া হল গর্ভাবস্থার 29 তম সপ্তাহের সাধারণ প্রতিক্রিয়া।আপনার শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির ক্রিয়াকলাপগুলি বিকাশ পায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনও সহায়তার প্রয়োজন হয় না।প্রোল্যাকটিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং আপনার স্তন থেকে কোলোস্ট্রাম নিঃসৃত হতে শুরু করে।এই সময়েই আবার শিশুর অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলি এস্ট্রিয়ল উৎপাদন করে।
সপ্তাহ 30
আপনার জরায়ুটি বেড়ে ওঠে এবং আপনার ডায়াফ্রাম ঘ্যাঁষাঘেঁষি হতে শুরু করে। আপনি শ্বাস-প্রশ্বাসের দুর্বলতা অথবা শ্বাস কষ্ট অনুভব করতে পারেন।শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হলে তা আপনার মূত্র থলির উপরে চাপ ফেলে যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।আপনার সন্তান জন্মদানের পর্বগুলি এখনও অবিরত চলতে থাকবে এবং তা প্রায় 36 সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।
সপ্তাহ 31
আপনার শিশুটি আরও বেড়ে ওঠার কারণে আপনার গর্ভের অভ্যন্তরস্থ জায়গা হ্রাস পাবে এবং আপনার পেটটি আরও প্রসারিত হবে।প্রতি ঘন্টায় দশটি পদাঘাত আপনার গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির হারকে চিহ্নিত করে,এবং চিকিৎসকেরা এই কারণেই সম্ভবত মহিলাদের তাদের গর্ভস্থ ভ্রূণটির দ্বারা প্রতি ঘন্টায় কটি করে পদাঘাত অনুভব করে থাকেন তা ট্র্যাক করে নথি রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।আপনি যদি নিষ্ক্রিয়তা অনুভব করেন,সেক্ষেত্রে এক গ্লাস তাজা এবং প্রাকৃতিক ফলের বা সবজির রস পান করুন।
সপ্তাহ 32
এই সময়ের মধ্যে শিশুর পঞ্চ ইন্দ্রিয় সম্পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করে থাকে।ঘুমের সময় আপনার শিশু REM(র্যাপিড আই মুভমেন্ট)চক্রের অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং প্রসবের প্রস্তুতির জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার গর্ভের অভ্যন্তরে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
সপ্তাহ 33
শিশুর মাথা নীচের দিকে থাকার অবস্থানটি ইঙ্গিত দেয় যে সে সন্তান জন্মের বা প্রসবের গতিগুলির মধ্য দিয়ে যেতে প্রস্তুত।এই অবস্থানটি তার মাথায় আরও বেশি রক্ত সরবরাহ করে এবং আপনি হয়ত আপনার পেটে আরও বেশি সংকোচন অনুভব করবেন।
সপ্তাহ 34
আপনার পেটের উপর যখন কোনও উজ্জ্বল আলো ফেলা হয় এবং তা বিস্তৃত ও সঙ্কুচিত করা হয় তখন আপনার গর্ভস্থ শিশুটির চক্ষু তারারন্ধ্রে প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে।এই সময়ে আপনার বাচ্চার ব্রেনের বিকাশের অগ্রগতি হওয়ার কারণে সে আপনার গর্ভের ভিতরে এই সময় প্রচুর ঘুমাবে।শিশুর ঘুমের সময় REM চক্রের অভিজ্ঞতা আরও গভীরভাবে হয় এবং সেগুলি তাকে স্বপ্ন দেখতেও পারে।
সপ্তাহ 35
আপনার গর্ভস্থ শিশুটিকে পরিমাপ করলে তার আকারটি যদি মোটামুটি প্রায় 16-20 ইঞ্চির মত দেখায় তবে সেই পরিমাপটি প্রসবের জন্য যে শিশুটি প্রস্তুত তার সেই নির্দিষ্ট আকারটিকেই চিহ্নিত করে।এই সপ্তাহের মধ্যেই আপনার শিশুর স্নায়ু তন্ত্র এবং অনাক্রম্যতা পরিণত পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং আপনার শরীর সেই সকল অতিরিক্ত পাউন্ডের বর্ধিত ওজন গুলিও অনুভব করবে।এই সময় আপনার প্রতিদিনের নিত্য নৈমিত্তিক কাজ করার ক্ষেত্রে এবং সাধারণভাবে হাঁটাচলা করার সময়েও মাঝে মধ্যেই কিছু সময়ের জন্য বসে পড়তে বা বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হতে পারে।এই 35 তম সপ্তাহ থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহের জন্য আপনাকে গ্রুপ B স্ট্রেপটোকক্কাসের উপস্থিতির জন্য পরীক্ষা করানো হবে,এটি হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা যোনিতে অবস্থান করে এবং শিশুর মধ্যেও সংক্রমণটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষম হয়।এই পরীক্ষাটিতে সাধারণত একটি তুলোর বল বা সুতির মোছা দিয়ে মলদ্বারের মধ্যে ধীরে ধীরে লেপন প্রক্রিয়াটি জড়িত।
সপ্তাহ 36
এই সময় থেকে আপনার শিশুর নড়াচড়াগুলি ধীর হয়ে যাওয়া উচিত এবং আপনি দিনের মধ্যে প্রায় 20 বার মত ভ্রূণের নড়াচড়াগুলি লক্ষ্য করবেন।আপনি যদি উদ্বিগ্ন হন তবে আপনি এক গ্লাস কমলার রস পান করতে পারেন এবং এক পাশ ফিরে কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে বিশ্রাম নিতে পারেন।এটি শিশুটিকে ঘুম থেকে উঠতে এবং তারপর কিছুক্ষণের জন্য নড়াচড়া করতে সহায়তা করে।
সপ্তাহ 37
শিশুর অন্ত্রগুলি মেকনিয়াম(নবজাতকের কালো রঙের প্রথম মল) উৎপাদন করে।প্রসবের দ্বারা গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে এটি তাদের প্রথম অন্ত্রের গতিবিধিতে সহায়তা করবে।ভ্রূণের আকার এখন প্রায় 20 থেকে 21 ইঞ্চি মত হযয়ে যায় এবং শিশুর ওজন বেড়ে 6 থেকে 7 পাউন্ডের মধ্যে হয়।এই সময় থেকেই শিশুর মধ্যে মুখের একটি সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায় এবং প্রসবের জন্য পূর্ব অনুমান করে শিশু শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াও অনুশীলন করে। আপনার স্তনগুলি থেকে কো্লোস্ট্রা্ম নিঃসৃত হয় যা শিশুর পুষ্টির উৎস হয়ে যায়।এই সময় আবার আপনার পেটটি আরও বিশালাকারে ফুলে উঠবে এবং অস্বস্তি বোধ হবে।
সপ্তাহ 38
ল্যানুগো,যা হল শিশুর দেহকে আবৃত করে রাখা লোম বা চুল বিশেষ,এইসময়ে তা অদৃশ্য হয়ে যাবে।শিশুটি পুরোপুরি বিকশিত হয় তবে মস্তিষ্কের সংযোগগুলি এখনও তৈরী হতে থাকে যা এমনকি শিশুর জন্মের পরেও অব্যাহত থাকে।হাত এবং পায়ের নখগুলি পরিণত হয়ে আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছায়।ঘন ঘন ঘাড়ে এবং পিঠে ব্যথা হওয়া এই সময়ে স্বাভাবিক।এই সময় গতিশীলতা কমে যাওয়াটাও স্বাভাবিক এবং ক্লান্ত ও অবসাদ বাড়ার সাথে আপনাকে একটা কঠিণ মুহূর্তের মধ্য দিয়ে কাটাতে হবে।অল্প পরিমাণে কিন্তু বারে বারে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি খেলে তা এক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি আনতে পারে।
সপ্তাহ 39
এই সময় শিশুর ওজন 6-10 পাউন্ডের মধ্যে থাকে এবং সে আকারে 17-23 ইঞ্চির মধ্যে লম্বা হয়।এই সময় আপনার শিশুর স্নায়ুর সংযোগ আরও বেশি পরিমাণে বাড়তে থাকবে এবং তার চুলের বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরে ওজন লাভের মত অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। আপনি শেষ সপ্তাহে প্রবেশ করার আগে কয়েক সপ্তাহের জন্য প্রসূতি বা মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য আরাম করুন,সিনেমা দেখতে যান এবং আপনার হাত এবং হাঁটু প্রসারিত করার পাশাপাশি শ্রোণীর দিকে ঝুঁকে নিয়ে হালকা অনুশীলনগুলি করুন।
সপ্তাহ 40
আপনার শিশুটি জন্মগ্রহণ করার জন্য এই সপ্তাহ থেকেই প্রস্তুত।আপনার শিশুর যদি এখনও জন্ম না হয় অথবা এই সপ্তাহের মধ্যেও যদি আপনার প্রসব বেদনা না উঠে থাকে,ডাক্তারবাবু আরও দুই সপ্তাহের জন্য আপনাকে পর্যবেক্ষণ করবেন।এই পর্যায়েই গর্ভাবস্থার প্রক্রিয়াগুলি বন্ধ হয়ে যায়,তবে যদি এটি অব্যাহত থাকে,তবে সেক্ষেত্রে সেগুলিকে “পোস্ট ডেটেড” বা “পরবর্তী তারিখ” বলে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। আপনার প্রসবের তারিখটি ক্রমশ ধীরে ধীরে শেষের দিকে এগোতে থাকে যা 42 সপ্তাহের শেষে পৌঁছে কোথাও শেষ হয়।
সপ্তাহ 41
আপনার শিশু যদি এর মধ্যে এখনও না জন্মগ্রহণ করে থাকে তবে আপনার ডাক্তারবাবু প্রসব বেদনা ওঠানোর ব্যাপারে কথা বলবেন।কোনও গর্ভবতী মহিলা যদি 42 সপ্তাহের মধ্যে তার প্রসব যন্ত্রণায় না গিয়ে থাকেন তবে তা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই অনিরাপদ বলে মনে করা হয়।
সপ্তাহ 42
এটি হল শিশুর জন্মের এবং নতুন জীবনের সপ্তাহ।এই সপ্তাহের কোনও একটি দিনে প্রসব করানো হয়ে থাকে এবং আপনার সন্তানটি অবশেষে আপনার গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে হয় সিজারিয়ান বা অস্ত্রোপচারের দ্বারা অথবা যোনি থেকে সাধারণ প্রসবের মাধ্যমে। যদি আপনার জরায়ু নরম না হয়ে থাকে তবে আপনার ডাক্তারবাবু সন্তান প্রসব করানোর জন্য জরায়ুকে পরিণত করতে হরমোনগুলি উপস্থাপিত করার দ্বারা যান্ত্রিকভাবে প্রসব বেদনা প্ররোচিত করবেন।প্রসব বেদনা উত্তোলনের জন্য ঝিল্লিগুলির বিচ্যুতিকরণ এবং বিদারণকরণ প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহারের সাথে যোনির সংকচন শুরু করার জন্য অক্সিটোসিনের মত ওষুধগুলি ব্যবহার করা হল সাধারণ পদ্ধতি।হস্তসাধিত প্রসব প্রক্রিয়া পরিচালিত করা সত্বেও যদি যোনির সংকোচন না হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভ থেকে সন্তান প্রসবের জন্য সিজারিয়ান পদ্ধতি বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন।
একবার আপনার সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর,আপনার ডায়েট,অনুশীলন এবং পুষ্টি যথাসম্ভব নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে এনে তার সর্বোচ্চকরণ সাধিত করার দ্বারা আপনার পুনরুদ্ধারের দিকটিকে সহজতর করে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।একটি সফল,ঝামেলা মুক্ত প্রসবের সম্ভাবনাকে উন্নত করে তুলতে গর্ভাবস্থার আগে এমনকি গর্ভধারণের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ধূমপান,মাদক সেবন এবং ড্রাগের ব্যবহারগুলি এড়িয়ে চলার এবং সেগুলি প্রতিরোধ করারই পরামর্শ দেওয়া হয়।আপনি যদি গর্ভধারণ করার পরিকল্পনা করে থাকেন,সেক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে প্রসব পূর্ববর্তী ভিটামিনগুলি এবং ফোলিক অ্যাসিডের জন্য ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধের পরিপূরকগুলি আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করা নিশ্চিত করুন।