In this Article
যদি আপনার আনন্দের বান্ডিলটি গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেয়, তবে সে হল অকালজন্মা শিশু। আপনার শিশুটি নবজাতকের নেওন্যাটাল কেয়ার ইউনিটে কয়েক দিন অতিবাহিত করবে, তবে শীঘ্রই আপনি তাকে বাড়িতে আনতে পাবেন। আপনি ভাবতে পারেন যে আপনি কিভাবে এই ধরণের ছোট শিশুকে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। তাহলে আর উদ্বিগ্ন হবেন না, নিম্নলিখিত নিবন্ধে আমরা বিভিন্ন টিপস নিয়ে আলোচনা করব যা আপনাকে ঘরে বসে আপনার অকালজন্মা শিশুর যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে।
অকালজন্মা শিশুর বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি?
আপনার অকালজন্মা শিশুর কত তাড়াতাড়ি আগমন হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে বিশেষ যত্ন এবং পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হবে। গর্ভাবস্থায় পূর্ণ সময় ধরে থাকা শিশুর তুলনায় আপনার শিশুর ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকবে, তবে সময়ের সাথে সাথে এই বৈশিষ্ট্যগুলি কম লক্ষণীয় হতে পারে।
- আপনার শিশুর শরীরের ওজন বা মেদ কম হতে পারে। নবজাতক শিশুদের শরীরের তাপ উত্পন্ন করার জন্য ফ্যাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের নীচে থাকা এই ফ্যাট, যা ব্রাউন ফ্যাট নামে পরিচিত, পিঠ, কাঁধ, ঘাড়, বগল এবং কিডনির কাছাকাছি পাওয়া যায়।
- শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের অংশ সঠিকভাবে বিকাশিত হয় না।
- আপনার শিশুর ফুসফুসগুলি পুরোপুরি বিকাশিত হয়নি। সুতরাং, তার শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- আপনার অকালজন্মা শিশুর ল্যানুগো থাকবে না, এগুলি হল খুব সূক্ষ্ম চুল যা আপনার শিশুর দেহকে ঢেকে দেয়। তবে, যদি আপনার শিশুর অকাল জন্ম হয়, প্রসবের তারিখের কাছাকাছি হয়, তবে তার এই সূক্ষ্ম লোম বা চুল থাকতে পারে।
- যদি আপনার শিশু ২৬তম সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে তবে সে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে।
- আপনার শিশু খুব বেশি নাড়াচাড়া করতে পারে কারণ শরীরে বেশি মেদ থাকে না। ২৮তম থেকে ৩২তম সপ্তাহের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুর আকস্মিক বা ঝটকাসহ নড়াচড়া হতে পারে। তবে, ২৯ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরা কোন যথেষ্ট গতিবিধি দেখায় না।
- অকালজন্মা শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল থাকে, যা তাদের সংক্রমণের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
- আপনার অকালজন্মা শিশুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে এবং এভাবে সঠিকভাবে খাওয়ানো নাও যেতে পারে।
অকালজন্মা শিশুদের কেন বিশেষ যত্নের প্রয়োজন?
অকালজন্মা শিশুরা পূর্ণ–মেয়াদী শিশুদের মতো হয় না এবং তাই তাদের বিশেষ যত্ন ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। নিবিড় যত্ন ব্যতীত তাদের দেহ পুরোপুরি বিকাশিত বা সজ্জিত হয় না। চিকিত্সা প্রযুক্তিতে এক অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে এবং এই জাতীয় শিশুদের তাদের মায়ের গর্ভের বাইরে কয়েক দিন বা মাস ধরে বাড়তি যত্ন দেওয়া যেতে পারে অথবা যতক্ষণ না তাদের দেহ অতিরিক্ত সমর্থন ছাড়াই টিকে থাকতে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়, ততক্ষণ বারতি যত্ন নেওয়া হয়।
বাড়িতে অকালজন্মা শিশুর যত্নের জন্য টিপস
এখানে বাবা–মায়েদের জন্য কয়েকটি টিপস রয়েছে যেগুলি তাদের বাড়িতে অকালজন্মা শিশুর যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে:
১. আপনার শিশুকে খাওয়ানো
আপনার আদর্শভাবে আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত, তবে কখনও কখনও আপনার শিশুর ল্যাচিংয়ের সমস্যা হতে পারে বা কোন সময়ই ল্যাচ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। আপনি স্তনের দুধের পাম্প এবং বোতলে খাওয়াতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে, আপনার ডাক্তার আপনাকে আপনার শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিতে পারেন; এটি অকালজন্মা শিশুদের জন্য বিশেষ ফর্মুলা দুধ হতে পারে।
২. আপনার শিশুর খাওয়ানোর সময়সূচীতে থাকুন
একটি অকালজন্মা শিশুর জন্য দিনে ৮–১০ বার খাওয়ানো প্রয়োজন। সুতরাং, আপনি নিয়মিত বিরতিতে আপনার শিশুকে খাওয়ান তা নিশ্চিত করুন। নির্ধারিত সময়ে যে কোন দুইবার খাওয়ানোর মাঝে ৪ ঘন্টার বেশি ব্যবধান রাখবেন না, কারণ এতে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে, যা আপনার শিশুর পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।
৩. আপনার শিশুর বৃদ্ধির রেকর্ড রাখুন
প্রাক–মেয়াদী বা অকালজন্মা শিশুরা পূর্ণ–মেয়াদী শিশুদের চেয়ে আলাদা হয়। যাইহোক, তারা শেষ পর্যন্ত তাদের মাইলফলকে পৌঁছায়। আপনার ডাক্তার আপনার শিশুর বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে আপনাকে আলাদা বৃদ্ধির চার্ট দিতে পারেন।
৪. আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখুন
এমনকি হাসপাতাল ছাড়ার পরেও আপনার নিয়মিতভাবে আপনার শিশুর চিকিত্সকের সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত এবং কিভাবে আপনার সন্তানের যত্ন নেওয়া যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি প্রয়োজন হয় তবে আপনি আপনার ডাক্তারের কাছেও যেতে পারেন।
৫. আপনার শিশুর ঘুমের প্রয়োজনীয়তা যত্ন নিন
আপনার অকালজন্মা শিশুর প্রচুর ঘুম দরকার, এবং সে সম্ভবত বেশিরভাগ সময় কেবল ঘুমিয়েই কাটাবে। নিশ্চিত করুন যে সে দৃঢ় গদিতে শোয় এবং কোন বালিশ ছাড়াই। এছাড়াও, আপনার শিশুকে কখনও তার পেটে ভর দিয়ে শোওয়াবেন না; সর্বদা তাকে চিৎ হয়ে ঘুমাতে দিন।
৬. কঠিন খাবার দেওয়া
আপনার শিশুকে শক্ত খাবার দেওয়ার জন্য আপনাকে আরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে, কারণ অকালজন্মা শিশুদের খাবার গ্রাস করতে অসুবিধা হতে পারে। আপনার ডাক্তার আপনাকে আপনার শিশুর নির্ধারিত প্রসবের তারিখের প্রায় ৪ থেকে ৬ মাস পরে তাকে কঠিন খাবারের সাথে পরিচয় করানোর পরামর্শ দিতে পারেন, তার আসল জন্ম তারিখের পরিবর্তে।
৭. আপনার শিশুর বাড়ির বাইরে যাওয়া সীমাবদ্ধ করুন
ডাক্তারের সাথে দেখা করা ছাড়া, আপনাকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আপনার শিশুকে বাইরে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এটি আপনার শিশুকে সংক্রমণে সংক্রমিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে, এটি তার জন্য মারাত্মক হতে পারে।
৮. বাড়িতে ‘ক্যাঙ্গারু কেয়ার’ অনুশীলন করা
আপনাকে হাসপাতালে ‘ক্যাঙ্গারু কেয়ার’ সম্পর্কে বলা হয়ে থাকবে এবং কয়েক সপ্তাহ বাড়িতে বসে অনুশীলন করা ভাল ধারণা হবে। ত্বকের সাথে ত্বকের যোগাযোগ আপনার শিশুর পক্ষে ভাল।
৯. আপনার শিশুকে টিকা দিন
আপনার শিশুর টিকাদান সময়সূচীর উপর নজর রাখুন এবং তালিকা অনুসারে আপনার শিশুকে টিকা দিন।
১০. দর্শনার্থীদের সীমাবদ্ধ করা
আপনার শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল। সুতরাং, বাড়িতে তাকে দেখতে আসা মানুষদের সীমাবদ্ধ করা ভাল ধারণা হবে, বিশেষত যদি কেউ অসুস্থ হয় বা ধূমপান করে এমন কেউ হয়। আপনার সন্তানের সাথে যার দেখা হয় বা যে স্পর্শ করে সে তা করার আগে তাদের হাত ধুয়ে নেয়া উচিত, তা নিশ্চিত করুন।
অকালজন্মাদের বাবা–মায়ের জন্য চাপ কমানোর পদ্ধতি
- আপনার ডাক্তার আপনাকে অনুমতি দেওয়ার সাথে সাথেই আপনি আপনার শিশুটিকে স্পর্শ করতে, শান্ত করতে এবং ধরে রাখতে পারেন।
- আপনি আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে আপনার শিশুর যত্ন এবং সুস্থতায় অংশ নিতে বলতে পারেন। যদি তা না হয় তবে আপনি আপনার শিশুর স্বাস্থ্য এবং অগ্রগতি সম্পর্কে শিশু বিশেষজ্ঞকে অবহিত করতে পারেন।
- এমনকি আপনি যদি আপনার শিশুকে ধরে রাখতে পারেন তবে আপনি হাসপাতালের নবজাতকের ইউনিটে আপনার শিশুর সাথে আরও বেশি সময় কাটাতে পারেন, ডাক্তারের কাছে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন।
- যদি আপনার ডাক্তার পরামর্শ দেন তবে আপনি আপনার শিশুকে খাওয়ানো শুরু করতে পারেন।
- যদিও আপনি আপনার শিশুকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইতে পারেন, তবে পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনার ডাক্তার যা বলেছেন তা আপনি মেনে চলেন। আপনার শিশুটি হাসপাতালে একটি প্রতিরক্ষামূলক পরিবেশে থাকে এবং তার যত্ন নেওয়া হয়।
আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করা উচিত এমন প্রশ্নগুলি
এখানে অকালজন্মা শিশুর যত্নের কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে যা আপনার ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করা উচিত:
১. আমার প্রথম শিশুটি যদি অকালজন্মা হয় তবে দ্বিতীয় শিশুর কি অকালজন্মা হওয়ার ঝুঁকি আছে?
যদি আপনার শিশু ৩৭ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে থাকে তবে পরের বারে আপনার একটি পূর্ণ–মেয়াদী শিশু প্রসবের সম্ভাবনা বেশি। তবে, আপনি যদি ২০ থেকে ৩১ সপ্তাহের মধ্যে আপনার শিশু প্রসব করে থাকেন, তবে আপনার আবার অকাল প্রসবের আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
২. আমার অকালজন্মা শিশুকে তার বিকাশমূলক মাইলফলক ধরাতে আমার কি করা উচিত?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, অকালজন্মা শিশুর পূর্ণ–মেয়াদী শিশুদের মতো একই গতিতে বিকাশ হতে পারে যদি সে খুব তাড়াতাড়ি জন্ম না নেয় বা কিছু জটিলতা না থাকে। যথাযথ যত্ন নেওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ক্যাঙ্গারু কেয়ার নিশ্চিত করা আপনার শিশুর আরও উন্নততরূপে বিকাশে সহায়তা করার জন্য বিস্ময়কর কাজ করবে।
৩. কখন আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে আমার অকালজন্মা শিশুকে প্রকাশ করা উচিত?
আপনার অকালজন্মা শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি এবং তাই পরিবারের যে কোন সদস্য যদি সর্দি বা ফ্লু জাতীয় সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাকে শিশু থেকে দূরে রাখা উচিত। যখনই কেউ শিশুকে স্পর্শ করতে চায়, তাকে হাত ভাল করে ধুতে বলুন।
৪. অকালজন্মা হওয়া কি স্বাস্থ্যে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়?
আপনার অকালজন্মা শিশুর অনেকগুলি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা থাকতে পারে, কারণ তার বিকাশের পর্যাপ্ত সময় সে পায়নি। দেখা যায়, আগে জন্ম নেওয়া একটি শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা যেমন শ্বাসকষ্ট, দুর্বল পেশী, শ্রবণশক্তি হ্রাস, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যদিও অকালজন্মা শিশুদের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন, সময়ের সাথে সাথে তারা পূর্ণ–মেয়াদী শিশুদের মতো সমস্ত বিকাশমূলক মাইলফলক অর্জন করতে পারে। আপনার শিশুকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করার জন্য সময়ে সময়ে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে থাকুন।