সি সেকশনের পরে প্রথম পিরিয়ড – কী আশা করতে পারেন

সি সেকশনের পরে প্রথম পিরিয়ড - কী আশা করতে পারেন

সি-সেকশন বা সিজারিয়ান সেকশন একটি পদ্ধতি যেটিতে অস্ত্রোপচারের দ্বারা সন্তান প্রসব করানো হয়। যোনির মাধ্যমে সন্তান জন্মের বদলে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মায়ের জরায়ুতে ও উদরে ছেদ করে প্রসব করানো হয়। এখন, চিকিৎসা প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে, সি-সেকশন নিরাপদ, কিন্তু তারা মায়ের জন্য অনেক বিপদের সৃষ্টি করে।

সিজারিয়ন সেকশন কি আপনার মাসিক চক্রকে বিলম্বিত করবে?

সি-সেকশন কি পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলবে? এটি এমন একটি প্রশ্ন যা অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলাদের মনে আসে। সি-সেকশনের পরে মাসিক চক্রের বিলম্ব হয় না।তবে, এটি পিরিয়ডের স্বাভাবিক বৈশিষ্টের উপর একটি প্রভাব ফেলে। পিরিয়ড আপনার হরমোন, স্বাস্থ্যের অবস্থা, এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর উপর নির্ভর করে কিছু সময় পর ফিরে আসে। যেভাবে আপনার পিরিয়ড হবে, বিশেষ করে প্রথম পিরিয়ড, সি-সেকশনের পরে, তা ভিন্ন হতে পারে।

আপনার পিরিয়ড সি-সেকশনের পর কখন শুরু হবে?

সি-সেকশনের পরে আপনার প্রথম পিরিয়ড আসতে কত সময় নেবে তা প্রাথমিকভাবে আপনার হরমোনগুলির উপর নির্ভর করে। শিশুর প্রসবের পর, এইচসিজি বা হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রপিন হরমোন, এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরোনের মাত্রা কম থাকে। একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটা ঠিক করে কবে পিরিয়ড আবার শুরু হবে সিজারিয়ান সেকশনের পর সেটা হলো বুকের দুগ্ধ পান করানো।

1. যদি আপনি বুকের দুধ খাওয়ান

যদি আপনি বুকের দুধ খাওয়ান

সিজারের মাধ্যমে প্রসবের পর আপনার পিরিয়ডের উপর বুকের দুধ খাওয়ানোর একটি  প্রভাব আছে, কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে হরমোন মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে। প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা ডিম্বস্ফুটনের বিলম্ব ঘটায়। সুতরাং, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড ফিরে আসতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানো যদি অনিয়মিত হয়, তবে পিরিয়ড আগেই হয়ে যেতে পারে।

2. আপনি যদি বুকের দুধ না খাওয়ান

আপনি যদি বুকের দুধ না খাওয়ান

যখন আপনি বুকের দুধ খাওয়ান না, তখন প্রোল্যাক্টিন মাত্রা হ্রাসের কারণে পিরিয়ড তাড়াতাড়ি হয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, প্রথম পিরিয়ড, সি-সেকশনের ছয় সপ্তাহ পরেই হতে পারে। তিন মাস পরেও যদি পিরিয়ড না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সময় এসে গেছে।

সি-সেকশনের পর কী কী কারণে আপনার মাসিক চক্র প্রভাবিত হয়?

কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে:

  • মানসিক চাপ
  • বিশ্রামের অভাব
  • ওজন সমস্যা
  • স্বাস্থ্যের অবস্থা
  • জটিলতা, যদি থাকে

সিজারের মাধ্যমে প্রসবের পর পিরিয়ডের কিরকম পরিবর্তন ঘটে?

সিজারিয়ান প্রসব একটি অস্ত্রোপচার এবং জরায়ুর উপর ছেদ করা হয়, শরীরের আরোগ্য হতে নিজস্ব সময়ের প্রয়োজন। হরমোন মাত্রাকেও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে হবে। সুতরাং, প্রথম পিরিয়ডটি হরমোনের ওঠানামা এবং শরীরের আরোগ্য হওয়ার সময়ের মধ্যে ঘটে।

সি-সেকশন প্রসবের পরে আপনার প্রথম পিরিয়ডটি কেমন হবে?

আপনার সি-সেকশন প্রসবের পরে প্রথম পিরিয়ডটি বিলম্বিত হবে না কারণ আপনার পিরিয়ডের সময়টি আপনার প্রসব করার ধরনের চেয়ে, আপনার হরমোনগুলির উপর বেশি নির্ভর করে। এটি উল্লেখ্য যে রক্তক্ষরণ গুরুতর হতে পারে জরায়ুতে ছেদ করার কারণে।

1. পিরিয়ড বেদনাদায়ক হতে পারে

হরমোন ঘটিত পরিবর্তন বিভিন্ন মহিলাদের ভিন্ন হতে পারে। সি-সেকশনের পরে কেউ কেউ পিরিয়ডের সময় তীব্র খিঁচুনি অনুভব করতে পারেন এবং এভাবে একটি বেদনাদায়ক পিরিয়ডের অভিজ্ঞতা হতে পারে।

2. ভারী পিরিয়ড হতে পারে

কিছু মহিলা সি-সেকশনের পরে ভারী পিরিয়ড ভোগ করতে পারেন এবং এইটি জরায়ুতে অস্ত্রোপচারের ফলে ও জরায়ুর দেওয়ালের চারপাশে ক্ষয় ক্ষতির ফলে হতে পারে। এটি শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য হবার কথা, তবে এটি যদি চলতে থাকে তবে ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

3. পিরিয়ড হালকা এবং কম বেদনাদায়ক হতে পারে

কিছু ক্ষেত্রে, পিরিয়ড স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম হতে পারে এবং এটি বেদনাদায়কও হয় না। এটিও দেখা গেছে যে, এন্ডোমেট্রিওসিস-এ ভোগা মহিলাদের পিরিয়ডের সমস্যাটি শিশুর প্রসবের পরেই সমাধান হয়ে গেছে। প্রজেস্টেরোনের মাত্রার বৃদ্ধিকেই সি-সেকশনের পরে হালকা পিরিয়ডের কারণ বলে মনে করা হয়। এই উচ্চ মাত্রা এস্ট্রোজেনের মাত্রার ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে যা জরায়ুজ কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

4. পিরিয়ড বেশী দিন ধরে চলতে পারে

হরমোনের পরিবর্তন এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে, কিছু মহিলাদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে পিরিয়ড চলতে থাকে। সাধারণত, বেশিরভাগ মহিলাদের স্বাভাবিক পিরিয়ড হয় যা এক সপ্তাহ ধরে চলে থাকে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে, প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে পাঁচ বা বেশি দিনের জন্য এবং অন্তত 12 দিন পর্যন্ত চলতে পারে।

সিজার করার পর অনিয়মিত পিরিয়ড

সাধারনত, যে মহিলাদের সি-সেকশন হয়েছে তাঁদের বেশিরভাগেরই এটি হয়। মাসিক চক্রের আবার স্বাভাবিক হতে বেশি সময় লাগে না। অর্থাৎ, তারা শীঘ্রই 28 দিনের চক্র ফিরে পান। কিন্তু একই সময়ে, কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে, অনিয়মিত পিরিয়ডও হতে পারে। এই অবস্থা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন ধকল, থাইরয়েডের কোনো অবস্থা, ওজন কমে যাওয়া বা এমনকি ওজন বৃদ্ধিও। কিছু মহিলা যারা 30-এর মধ্য কোঠায় রয়েছেন, তাঁদের প্রাক-মেনোপজ অবস্থা আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে, যেটি অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ।

সিজারিয়ান সেকশন এবং টিউবাল বন্ধ্যাকরণের পরে প্রথম পিরিয়ড

অনেক মহিলা সি-সেকশনের পর টিউবাল লাইজেশান বেছে নিতে পছন্দ করেন। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেটিতে ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলিকে কেটে দেওয়া হয় বা অবরোধ করে দেওয়া হয় আরো গর্ভধারণ আটকানোর জন্য। এই প্রক্রিয়াটি টিউবগুলি বেঁধে দেওয়া বা টিউবাল নির্বীজন নামেও পরিচিত।

টিউবাল বন্ধ্যাকরণ, সি-সেকশনের পরে পিরিয়ড বা আরোগ্য হওয়ার উপর কোন প্রভাব ফেলে না। তবুও, এমন কিছু ঘটনা আছে, যেখানে মহিলাদের সি-সেকশন এবং টিউবাল বন্ধ্যাকরণ এই দুটি অস্ত্রোপচার করার পরে, অনেক বেশি রক্তপাত হয়েছে।

কখন চিকিৎসা করতে হবে?

1. কিছু সমস্যা হল

অত্যন্ত বেশী পরিমাণে পিরিয়ড হওয়া: কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে পিরিয়ড হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু তার প্রবাহেরও একটি সীমা থাকে। যদি আপনার প্যাড রক্তে এত ভিজে যায় যে আপনাকে ঘন্টায় ঘন্টায় প্যাড পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে স্ত্রীরোগবিশারদকে দেখানোর সময় এসে গেছে।

2. জ্বর

জ্বর

প্রথম পিরিয়ডের সাথে বা তার পরে যদি আপনার জ্বর হয়, তবে কারণ জানার জন্য আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে কারণ সি-সেকশনের পরে এরকম কোনোকিছু হওয়ার কথা নয়।

3. দীর্ঘ দিন ধরে চলা পিরিয়ড

একটি সাত দিনের পিরিয়ড স্বাভাবিক, কিন্তু তার চেয়েও বেশিদিন হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

4. তীব্র ব্যথা

 তীব্র ব্যথা

পেট ব্যাথা হতে পারে, তবে আপনি যদি অসহ্য ব্যথা ভোগ করেন এবং এটি আপনার খুব বেশি অস্বস্তির কারণ হয়, তবে একজন ডাক্তার তার কারণ খুঁজে বের করার পর সমাধান দিতে পারে।

5. অবসাদ বা ক্লান্তি

শরীর ক্লান্ত হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু প্রচন্ড ক্লান্তি বা রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক নয়। যত তাড়াতাড়ি আপনি ডাক্তার দেখাবেন, তত ভালো।

6. পিরিয়ড না হওয়া

কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের ক্ষেত্রে, প্রথম পিরিয়ড হওয়ার জন্য ছয় মাস বা তারও বেশি সময় নিতে পারে সি-সেকশনের পর। যদি এত মাস পরও পিরিয়ড না হয়, তবে নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে যেটির বিষয়ে আপনার ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিতে পারেন।

অতএব, আপনার জানা দরকার যে সি-সেকশনের পরে আপনার শরীরে ও মাসিক চক্রে পরিবর্তন হবে। মূল উপায় হলো নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া, চাপ মুক্ত থাকা এবং মাতৃত্ব উপভোগ করা। যখনই প্রয়োজন, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিন।