মা–বাবা হতে পারাটা হল এই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির এক অন্যতম বৃহৎ আনন্দ লাভ করা।কিন্তু সকল দম্পতির কপালেই সেই সৌভাগ্য থাকে না,একটি শিশুর জন্ম দিয়ে নিজ হাতে করে তাদের নিজ সন্তানকে লালন পালন করে বড় করে তোলার মাধ্যমে তাদের জৈবিক মা–বাবা হয়ে উঠতে তারা অনেক ক্ষেত্রেই সক্ষম হন না।কিন্তু আপনারা যদি প্রকৃতই মা–বাবা হয়ে উঠতে চান,আপনি সর্বদাই দত্তক গ্রহণ করাকে বেছে নিতে পারেন।দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে যেগুলির ব্যাপারে আপনি বিবেচনা করে দেখতে পারেন।এখানে নিম্নলিখিত নিবন্ধটিতে আমরা আলোচনা করতে চলেছি ভারতবর্ষে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং সেগুলির সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি সম্পর্কে।
ভারতবর্ষে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদগুলি কি কি?
দত্তক গ্রহণ করা হল একটি দত্তক সংস্থা থেকে একটি শিশুকে পাওয়ার আইনী পন্থা এবং সেই শিশুটির সকল দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে আপনার নিজের মত করে প্রদত্ত শিশুটিকে বড় করে তোলার অধিকার পাওয়া।কিন্তু একটি শিশুকে দত্তক গ্রহণ করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই দত্তক গ্রহণের প্রকারভেদগুলি সম্পর্কে অবগত হতে হবে।দত্তক গ্রহণকারী মা–বাবা এবং শিশুর জন্মদাত্রী মায়ের উপর দত্তক গ্রহণের প্রভাবের ভিত্তিতে ভারতবর্ষে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে।দত্তক গ্রহণ আবার উভয় পক্ষের অবস্থানের উপরেও নির্ভর করতে পারে।নিম্নলিখিতগুলি হল ভারতে দত্তক গ্রহণের বিভিন্ন প্রকারভেদঃ
1. খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণ
নামানুসারেই বোঝা যাচ্ছে যে,এই ধরণের দত্তক গ্রহণ খোলাখুলিভাবেই হয়ে থাকে,যার মানে হল দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতা এবং শিশুর জন্মদানকারী পিতামাতারা একে অপরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন।
এই ব্যাপারটি ঠিক কি?
খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে তা ভেবে আপনি হয়ত অবাক হতে পারেন,বেশ,আসুন তবে আপনার মনের ভিতরে এ ব্যাপারে হয়ে চলা সকল প্রশ্নের দ্বার উদঘাটন করার চেষ্টা করা যাক,এই প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সরাসরি যোগাযোগ বজায় থাকে।এক্ষেত্রে বাচ্চার জন্মদাত্রী মা বা মা–বাবা উভইয়েই চিঠিপত্র,ই–মেইল অথবা টেলিফোন কলের মাধ্যমে হয়ত যোগাযোগের মধ্যে থাকতে পারেন,আবার এমনকি উভয় পক্ষের মা–বাবারাই একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন এবং শিশুটির জন্মদাত্রী মা আবার এমনকি মাঝে মধ্যে তার সন্তানের সাথে দেখা করতেও পারেন।এই ধরনের দত্তক গ্রহণের সাথে এমন এক পরিকল্পনা জড়িত থাকে যা প্রত্যেকের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তার সাথে খাপ খায়।সন্তানের উপর অধিকারের ক্ষমতাটি এক্ষেত্রে সাধারণত শিশুটির বয়স 18 (অধিকাংশ দেশে)হলেই সেটি মঞ্জুর হয়।এছাড়াও আবার এক্ষেত্রে শিশুটির জন্মদাত্রী মা দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার সাথে দেখা করতে পারেন এবং শিশুটির কোন দম্পতির কাছে যাওয়া উচিত তার সিদ্ধান্তও হয়ত স্থির করতে পারেন।
সুবিধাগুলি
খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধার কথা এখানে উল্লেখ করা হলঃ
- এক্ষেত্রে দত্তক নেওয়া শিশুটির চিকিৎসাজনিত প্রকৃত তথ্যগুলি পাওয়া সম্ভব হয়,যেগুলি কিছু জিনগত ব্যাধি এবং অন্যান্য চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মূল্যায়ন করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- দত্তক নেওয়া শিশুটি তার জন্মদাতা বা দাত্রী বাবা–মায়ের কাছে যেতে পারে যদি কখনও কোনও সময়ে সে জানতে ইচ্ছা প্রকাশ করে যে কেন তারা তার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
- গ্রহণকারী শিশুটি এমন এক বর্ধিত পরিবারের মধ্যে বেড়ে উঠতে পারে যেখানে অনেক মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং সমর্থন করে।
- দত্তক গ্রহণকারী শিশুটি তার প্রকৃত পিতৃকুলের আত্মীয় পরিজনদের কাছে যেতে পারে।
অসুবিধাগুলি
এখানে খোলাখুলিভাবে সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
- এক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণকারী বা জন্মদানকারী পিতামাতার থেকে প্রত্যাশার মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকতে পারে।
- সীমানা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে,যেখানে উভয় পক্ষই সীমারেখা টানার ক্ষেত্রে লড়াই করতে পারেন।
- উভয় পরিবারের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধগুলি নাও মিলতে পারে এবং তা বিভ্রান্তির কারণ হয়ে ওঠে।
2. আংশিক–খোলাখুলি দত্তক গ্রহণ
এটি হল এমন এক প্রকার দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি যেখানে দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতা এবং জন্মদানকারী পিতামাতার মধ্যে কোনও সরাসরি যোগসূত্র থাকে না।
এই ব্যাপারটি ঠিক কি?
আংশিক–খোলাখুলি দত্তক গ্রহণ বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে দত্তক গ্রহণে শিশুর জন্মদানকারী পিতা–মাতা এবং সেই শিশুটিকেই দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার মধ্যে পরস্পরের সাথে সংস্পর্শে থাকার বা যোগাযোগ রাখার কোনও প্রয়োজন পড়ে না।তবে জন্মদাত্রী মা দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার কাছ থেকে চিঠিপত্র বা ছবিগুলি গ্রহণ করতে পারেন এবং দত্তক গ্রহণকারী সংস্থার মাধ্যমে তিনি তাদের সাথে নিবন্ধভূক্ত থাকতে পারেন।আর এটি ততদিন চলতে পারে যতদিন না শিশুটি সাবালক হয় অর্থাৎ 18 বছর না হওয়া পর্যন্ত।আর যেকোনও সময়ের যেকোনও মুহূর্তে আংশিক দত্তকগ্রহণটি উন্মুক্ত বা বদ্ধ দত্তক গ্রহণে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারে।
সুবিধাগুলি
এখানে আংশিক–সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
- দত্তক গ্রহণকারী মা–বাবা শিশুর চিকিৎসাজনিত নথি এবং অন্যান্য তথ্য জন্মদানকারী মা–বাবার কাছ থেকে পেতে পারেন।
- এই প্রকার দত্তক গ্রহণ আপনার গোপনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- শিশুটি কীরকম যত্ন–আত্তিতে আছে তার খোঁজখবর জন্মদানকারী মা–বাবা পেয়ে থাকেন।
- দত্তক গ্রহণকারী শিশুটি ভবিষ্যতে তার জন্মদাতা ও জন্মদাত্রীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
অসুবিধাগুলি
নম্নলিখিতগুলি হল আংশিক–সরাসরি দত্তক গ্রহণের কিছু অসুবিধাসমূহঃ
- উভয় পক্ষকে মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির উপর নির্ভর করতে হয়
- একটি আংশিক–খোলাখুলি দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটি আবার একটি বদ্ধ দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া হয়ে উঠতে পারে যদি কোনও ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণ এজেন্সিটি তাদের ব্যবসার বাইরে চলে যায় অথবা তাদের কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
- উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগটা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যদি কোনও এক পক্ষ এজেন্সির সাথে সযোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলে।
3. বদ্ধ দত্তক গ্রহণ
যেমন নাম,ঠিক সেরকমই এই ধরণের দত্তক গ্রহণে দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতা এবং শিশুর জন্মদানকারী মা–বাবার মধ্যে কোনও রকমই যোগাযোগ থাকে না।
এই ব্যাপারটি ঠিক কি?
বদ্ধ দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটির মধ্যে উভয় পক্ষের বাবা–মায়ের মধ্যে একে অপরের সাথে কোনও রকম যোগাযোগ অথবা খবরাখবর দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার থাকে না।তবে কিছু ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে জন্মদাতা মা–বাবার কিছু চিকিৎসাজনিত তথ্য দত্তক গ্রহণোকারী মা–বাবার সাথে ভাগ করে নিতে হয়ত পারেন।যাইহোক,তবে কখনও কখনও আবার নিয়ন্ত্রণের কঠোর প্রয়োগ করা হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতার সাথে কোনও তথ্যই ভাগ করা হয় না।এধরণের ঘটনা ঘটতে পারে যখন কোনও শিশুকে উদ্ধার করা হয় বা কোনও আপত্তিজনক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
সুবিধাগুলি
বদ্ধ দত্তক দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
- দত্তক গ্রহণকারী শিশুটি দুই পরিবারের মাঝে কোনও টানাপোড়েন অনুভব করেন না।
- উভয় পক্ষের মা–বাবাদের ক্ষেত্রেই সম্পর্কের অবসানের একটি অনুভুতি এসে থাকে।
- দত্তক গ্রহণকারী শিশুটি ক্রমশ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
- এক্ষেত্রে জন্মদানকারী পিতামাতার দিক থেকে কোনও অনধিকারপ্রবেশ থাকবে না।
অসুবিধাগুলি
বদ্ধ দত্তক গ্রহণের কিছু অসুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
- বদ্ধ দত্তক গ্রহণের কোনও ক্ষেত্রে যদি শিশুটি জেনে যায় যে সে দত্তক গ্রহণকারী একটি শিশু তবে সে হয়ত তার জন্মদানকারী বাবা–মায়ের খোঁজে এক ধোঁয়াশায় পড়তে পারে।
- এক্ষেত্রে চিকিৎসাজনিত তথ্যগুলি খুব সীমিতি পাওয়া যায়।
- দত্তক গৃহীত শিশুটি হয়ত পরিচয় সঙ্কটের মুখোমুখি হতে পারে।
4. পরিবারের মধ্য থেকেই দত্তক/আত্মীয়ের মধ্য থেকে দত্তক
এটি এমন এক ধরণের দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি যেটি পরিবারের মধ্য থেকেই ঘটে।
এই ব্যাপারটি ঠিক কি?
যদি শিশুর জৈবিক মা–বাবার মধ্যে কারুর মৃত্যু হয় বা অন্য কাউকে বিয়ে করেন অথবা তাদের সন্তানের ভরণপোষণ করার সামর্থ্য তাদের না থেকে থাকে,সেক্ষেত্রে সেই পরিবারের কোনও সদস্য বা সৎ মা–বাবা আইনত সেই শিশুটির দায়িত্ব নিয়ে তাকে দত্তক গ্রহণ করতে পারেন।
সুবিধাগুলি
পরিবারের মধ্য থেকেই দত্তক গ্রহণের অনেক সুবিধাগুলির মধ্যে কয়েকটি হল নিম্নরূপঃ
- শিশু নিজের জৈবিক পরিবারের মধ্যে থেকেই বড় হতে পারে।
- শিশুটির সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নেওয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দত্তক গ্রহণকারী মা–বাবার থাকে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দত্তক গৃহীত শিশুটি তার আসল নামটিকেই ব্যবহার করতে পারে।
অসুবিধাগুলি
এই ধরণের দত্তক গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত কিছু অসুবিধার মধ্যে রয়েছেঃ
- দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতার সাথে সম্পর্কের পরিচয়ের এরকম হঠাৎ পরিবর্তনে শিশুটি ঘাবড়ে যেতে পারে(যদি শিশুটি বোঝার মত যথেষ্ট বড় হয়ে থাকে)।
- যোগাযোগ এবং দেখা করার সময় নির্ঘন্ট সাধারণত দত্তক গ্রহণকারী পিতা মাতার অনুমোদিত সিদ্ধান্তের উপরেই নির্ভর করে।
5.স্বদেশীয় বা দেশীয় দত্তক গ্রহণ
স্বদেশীয় বা দেশীয় দত্তক গ্রহণ এমন এক ধরনের দত্তক গ্রহণকে নির্দেশ করে যেটি দেশের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এই ব্যাপারটি ঠিক কি?
দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতা এবং জন্মদানকারী পিতামাতা একই দেশের বাসিন্দা হলে যে ধরণের দত্তক গ্রহণ পদ্ধতি অনুসৃত হয় তা দেশীয় দত্তক গ্রহণ বলে পরিচিত।যে সকল দম্পতিরা দত্তক গ্রহণ করতে চান তারা সরকার স্বীকৃত কোন দত্তক গ্রহণ কেন্দ্রে নাম নথিভূক্ত করান।একজন তদন্তকারী অফিসার সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করেন এবং সেই দম্পতি দত্তক গ্রহণ করার যোগ্য নাকি যোগ্য নন তা বিচার করেন।যখন সমস্ত ধরণের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন হয়ে যায় তখন তারা দত্তক নিতে পারেন।
সুবিধাগুলি
দেশীয় বা স্থানীয় শিশু দত্তক গ্রহণের কয়েকটি সুবিধা হল নিম্নরূপঃ
- এই ধরণের দত্তক গ্রহণ আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের থেকে কম খরচের।
- আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের থেকে কম কাগজ পত্র তৈরী করতে হয়।
- যে সমস্ত দম্পতিরা সদ্যজাত শিশুদের দত্তক নিতে চান তারা খুব সহজেই তা করতে পারেন।
- জন্মদাতা পিতামাতার পরিচয় খুব সহজেই দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতারা জানতে পারেন এবং সহজেই তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
- আপনি জন্মদাতা পিতামাতার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন অথবা সেটি নির্ভর করবে দুই পক্ষের অভিভাবকদের অভিমতের উপর।
- এর জন্যে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের প্রয়োজন হয় না।
অসুবিধাগুলি
এখানে দেশীয় বা স্থানীয় দত্তক গ্রহণের কয়েকটি অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
- এক্ষেত্রে অনেক সময় জন্মদাতা পিতামাতার চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস সঠিকভাবে জানা যায় না।
- নয়ম কানুন খুবই কঠিন এবং দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতার যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তাবলী খুব কঠোরভাবে মানা হয়।
- দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতা খুব সীমিত সংখ্যক শিশুদের থেকে তাদের মনমত শিশুটিকে চয়ন করতে পারেন।
- অনেক সময় মা দত্তক নিতে অস্বীকৃত হতে পারেন, এর ফলে দত্তক গ্রহণের পরিসমাপ্তি ঘটে।
6. আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ
আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের বাইরের কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়া হয় অথবা অন্য কথায় বলতে গেলে,এই প্রক্রিয়াটির সাথে এ দেশের অধিবাসী নন এমন মা–বাবা দত্তকগ্রহণকারী মা–বাবাকে তাদের শিশুটিকে দত্তক দিয়ে থাকার বিষয়টি জড়িত।
এই ব্যাপারটি ঠিক কি?
যখন এক দেশের নাগরিক অন্য দেশ থেকে একটি শিশুকে দত্তক গ্রহণ করতে চান তখন সেই প্রক্রিয়াটিকেই বলা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া।আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ আইনটি প্রতিটি দেশেই পৃথক হয়ে থাকে,এবং কিছু দেশে আবার আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটি অনুমোদিত নয়।আমাদের দেশ ভারতবর্ষে স্বদেশীয় বা দেশীয় দত্তক গ্রহণ পদ্ধতিটিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।পরের সারণীতে অনাবাসী ভারতীয়(NRI)বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি (PIO) এবং তারপরে আন্তর্জাতিক নাগরিকদের ভারতে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
সুবিধাগুলি
এখানে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণের কিছু সুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
- আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটিতে সাধারণত অনাথ শিশুদের দত্তক গ্রহণ করা হয় আর সেই কারণে এই প্রক্রিয়ার সাথে শিশুর জন্মদানকারী মা–বাবা কোনওভাবেই জড়িত থাকেন না।
- এই প্রক্রিয়ায় লিঙ্গ,জাতি,স্বাস্থ্য এবং বয়সের দিক থেকে বাছাই করার জন্য বিভিন্ন ধরণের বহু শিশু থাকে।
- এক্ষেত্রে জন্মদানকারী পিতা–মাতার কোনওরকম হস্তক্ষেপ থাকে না।
- একবার বাড়ির অনুমোদন গৃহীত হওয়ার পরে,এটি দত্তক গ্রহণের সম্ভাবনাকে চূড়ান্ত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
অসুবিধাগুলি
এখানে আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়ার কিছু অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হলঃ
- এই ধরণের দত্তক গ্রহণ বেশ ব্যয়বহুল,কারণ এক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণকারী পিতা–মাতাকে শিশুকে দত্তক নেওয়ার জন্য বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
- আন্তর্জাতিক দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়াটিতে জালিয়াতি,প্রতারণা এবং দুর্নীতি কেলেঙ্কারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- এই ধরণের দত্তক গ্রহণটি সম্পন্ন করতে যেহেতু বেশ কিছুটা সময় লাগে,তাই এক্ষেত্রে সদ্যজাত শিশুকে দত্তক নেওয়া সম্ভবপর নাও হয়ে উঠতে পারে।
- যদি দত্তক নেওয়া শিশুটি বেশ কিছুটা বড় হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে সে হয়ত নতুন সেটিং,নতুন দেশ ও নতুন জীবনধারার সাথে নব উপায়ে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে বেশ কিছুটা সময় নিতে পারে।
আপনি কোন ধরণের দত্তক গ্রহণকে বেছে নেবেন সেটি কিছু যায় আসে না,যেটি সবচেয়ে বশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল যেভাবেই আপনি যে শিশুকেই দত্তক নিন না কেন, আপনি আপনার বাড়িতে উষ্ণতা ও ভালবাসার সাথে একটি শিশুকে পাবেন আর সারা বাড়িতে আপনি আপনার সন্তানের উপস্থিতি পরতে পরতে অনুভব করবেন,যা আপনার একরাশ অপার্থিব আকাঙ্খিত আনন্দকে অচিরেই আপনার হাতের মুঠোয় এনে দেবে।