In this Article
যেকোনো কিছুর তুলনায় অভিভাবকত্ব হল সম্পূর্ণ নতুন একটা অভিজ্ঞতা যা এর আগে কখনও অনুভব করেন নি।প্রতিদিন আপনার শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হতে থাকে তার নতুন নতুন বিকাশের ধারা এবং প্রতিটি বিকাশের মাইলস্টোনের সাথে পরবর্তী প্রশ্নটি উঠে আসে শিশুর সার্বিক বৃদ্ধি সম্পর্কে।
যদি আপনার শিশুর বয়স তিন মাস হয়,তবে আপনি স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা করা শুরু করতে পারেন একটি প্রতিষ্ঠিত ঘুমানোর রুটিন সম্পর্কে যা ক্রমবর্ধমান বছরগুলিতে আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরী। প্রতি রাত্রে একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিনের প্যাটার্ন সাহায্য করে শিশুকে নিয়মিত ঘুমের একটি অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে যেতে, যা শিশুর সার্বিক বিকাশে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।এক সেট ঘুমের রুটিনও বাবা–মা কে এনে দেয় অবসরের যথেষ্ট সময় ছোট্ট সোনার সাথে বন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে।এই নিবন্ধটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে ঠিক কত সময়ের জন্য আপনার শিশুর একটি নিশ্ছিদ্র শান্ত ঘুমের রুটিন তৈরি করা দরকার সে বিষয়ে।
কখন থেকে আপনার বাচ্চার জন্য ঘুমের একটি রুটিন শুরু করবেন?
এক্ষেত্রে ঘুমের রুটিনের পিছনে ছোটার কোনও প্রয়োজন নেই।সদ্যজাত শিশু বেশির ভাগ সময়েই যে কোনও ভাবে ঘুমায় এবং সেক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য কোনও রুটিনের প্রয়োজন পড়ে না। যখন আপনার বাচ্চা তিন মাস বয়সে পদার্পন করে,সে একটি ঘুমের রুটিনের জন্য প্রস্তুত হয়। খুব স্বভাবিক,সাধারণ এবং সঙ্গত একটা রুটিনের সাথে পরিচয় ঘটানোর মাধ্যমে,আপনি আপনার বাচ্চার বিকাশে এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যেস গড়ে তুলতে সাহায্য করবেন।সন্ধ্যে 6:30-রাত 8:30 এর মধ্যে নিয়মিত ঘুমের সাথে তাদের পরিচয় করানো–লক্ষ্য হওয়া উচিত।প্রথমে ছোট রুটিন দিয়ে শুরু করুন এবং পরে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে তুলুন।
শিশুদের জন্য ঘুমের রুটিনের সুবিধাগুলি
আমরা প্রত্যেকেই খুব নিশ্চিন্ত এবং খুশি হই যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজগুলি হয় পরিকল্পনা মত। অনুরূপ সত্য আপনার শিশুর জন্যও!ঘুমের সময়ের একটি নির্দিষ্ট রুটিন স্থির করে আপনার বাচ্চার সঠিক সময়ের সঠিক মেজাজটিকে,সে আরাম বোধ করে এবং ভালোভাবে ঘুমাতে পারে।ঘুমের একটি রুটিন অনুসরণ করার সময় যখন কোনও ভ্রমণ করা হয় সেই সময়ে এটি বাচ্চাকে সাহায্য করে তার চারিপাশের নতুন পরিবেশের সঙ্গে আরও সহজভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে। এক সেট ঘুমের রুটিন আবার বাবা–মায়েদের জন্যও খুব উপকারী। এটি তাদের সাহায্য করে এক টুকরো সময় একসাথে কাটাবার।
ঘুমের একটি ভালো রুটিন গঠন
আপনি যদি আপনার শিশুর জন্য ঘুমের একটি ভালো রুটিন নির্ধারণের জন্য প্রস্তুত থাকেন,তবে যে কাজটি আপনার প্রথমেই করা প্রয়োজন সেটি হল রুটিনটি প্রয়োগ করা শুরু করুন সন্ধ্যের প্রথম দিকে।একদম ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে, শুরু করুন বাচ্চাদের পরিষ্কার করার মাধ্যমে,এর পর তাদের ডায়পার পরিবর্তন করে দিন এবং বাচ্চাকে পরিবর্তন করুন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রূপে।একবার পরিষ্কার করানো সমাপ্ত হলে অবশেষে আপনি আপনার হাতের মধ্যে শিশুকে দোলা দিতে পারেন অথবা একটি দোলনার সাহায্যে তাকে দোলা দিতে পারেন ও সেই সঙ্গে তাকে শোনাতে পারেন গান বা গল্প এবং দেখবেন আপনার বাচ্চা ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত। এই রুটিন মেনে চলার সময় আরও মনে রাখবেন আপনার শিশুর ঘর অথবা যে ঘরে আপনার শিশুটি ঘুমায় কেবলমাত্র সেখানেই তাকে ঘুম পাড়াতে হবে এছাড়া বাড়ির অন্য কোথাও নয়।বিশ্রামের জন্য শোয়ার ঘরটিকে চিনতে পারা আপনার বাচ্চার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
একটি সঠিক ও নিখুঁত ঘুমের রুটিনের জন্য ধারণা
এখানে কিছু ধারণা দেওয়া হল যেগুলি আপনার ছোট্ট সোনার জন্য একটি ভালো ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারে।
- দ্রুত কাজ সারুন: এটি অপরিহার্য যে,পরিকল্পিত ঘুমের সময়ের প্রায় 30 মিনিট আগে আপনার বাড়ির ব্যবহারিক সকল কাজ শেষ করুন এবং ধীর স্থির শান্ত কাজে তা পরিবর্তিত করুন।এই ক্রিয়াকলাপ হতে হবে আপনার বাচ্চার সাথে একক ভাবে যাতে ঘুমের সময়টি সঠিকভাবে আসে।
- ঘুমের রুটিনের জন্য নির্দিষ্ট সময় স্থির করুন: আপনার শিশুর বয়স এবং তার মেজাজ আপনাকে সাহায্য করতে পারে একটি আনুমানিক বিশ্রামের সময় নির্ধারণ করতে তার ঘুমাতে যাওয়ার সময়ের।উদাহরণ স্বরূপ,শুতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে একদম ছোট শিশুরা 5 মিনিটের মত সময় নেয় যেখানে টডলার বা তুলনামূলক সামান্য বড় শিশুদের প্রয়োজন হবে আরো বেশি অবসর সময়ের এবং সেই কারণের জন্যই তাদের ঘুমের সময়ের রুটিনটিও একদম ছোট শিশুদের তুলনায় আরও দীর্ঘ সময় জুড়ে হবে।
- সময় বজায় রাখুন: আপনার শিশুর ক্ষেত্রে আপনি যদি প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমের রুটিনটি মেনে চলা শুরু করেন তবে সেটি আপনার সন্তানের জন্য সেরা সাহায্য হবে।এটি আপনার বাচ্চাকে সাহায্য করবে এখন এবং যা দীর্ঘ সময় জুড়ে তাকে ঘুমে আচ্ছন্ন রাখবে।
- ঘুমের আগে স্নান করান: শোয়ানোর আগে হাল্কা গরম জলে ভিজানো বাচ্চাদের আরামের জন্য খুব ভাল একটি উপায়।সুতরাং এটি খুব ভাল একটি ধারণা হতে পারে ঘুমানোর আগে আপনার শিশুটিকে হাল্কা গরম জলের একটি উষ্ণ স্নান দেওয়া,এটি নিশ্চিত করুন যে সে ঘুমিয়ে পড়ার আগে যথেষ্ট শান্ত হবে,পরিষ্কার থাকবে,শুকনো থাকবে এবং সর্বোপরি সকল প্রকার আরাম পাবে।
কিন্তু সেক্ষেত্রে যদি আপনার বাচ্চা স্নান করানোর পরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং খেলার মেজাজে প্রবেশ করে,যা কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়,তাহলে শোয়ানোর সময়ে তাকে স্নান করানো এড়িয়ে চলুন।
- ঘুমের রুটিনের জন্য প্রস্তুত করুন: ঘুমের আগের ক্রিয়াকলাপ গুলি সারুন,যেমন আপনার শিশুর মুখ ধুয়ে দিন,তাদের জামাকাপড় পরিষ্কার রাখুন,তাদের রাতের পোশাক পরিধান করান।যত দ্রুত সম্ভব এই প্রতিটি ক্রিয়াকলাপের সাথে আপনার সোনার পরিচয় ঘটান যাতে এই স্বাস্থ্যকর সুঅভ্যাস গুলি তার জীবনে ঘুমের রুটিনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়।
- সঠিক ভাবে আপনার শিশুর জামাকাপড় পড়ান: বেশি জামাকাপড় পরানোর ফল হল আপনার বাচ্চার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা এবং শিশুদের রাত্রে ঘামে ভিজে যাওয়া।তাই আপনার সোনামনিকে আরামদায়ক রাত্রিকালীন পোশাকই পরান।
- ঘুমের সময়ে গল্প শোনার সাথে পরিচয় করান: ঘুমানোর সময় হল আপনার বাচ্চার কাছে গল্প পড়া শুরু করার সঠিক সময়।এটি আপনার বাচ্চাকে সাহায্য করবে দীর্ঘ সময় পড়ার অভ্যাসে নিজেকে প্রতিস্থাপন করতে।
- আকৃষ্টকারী বস্তুর সাথে পরিচয়: শিশুরা সবসময়ে তাদের পাশে কিছু একটা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে ভালবাসে।সেগুলি হতে পারে তাদের প্রিয় খেলনা,একটি বালিশ অথবা অন্য যেকোনও কিছু।এই আকর্ষণকারী বস্তু গুলি দীর্ঘ সময় জুড়ে আপনার বাচ্চাকে আরাম দিতে পারে ও তাকে শান্ত করে রাখতে পারে তার ঘুমের সময়।
- শেষ অবধি ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন: ঘুমের রুটিনটির একটি সু-পরিণাম দিন।উদাহরণ হিসাবে বলা যায়,একটি গল্প পড়ে শোনান,একটি গান গেয়ে শোনান অথবা একটি রাতের আলো জ্বালিয়ে তার পরে ঘর ত্যাগ করুন।যদি আপনি এই একই রুটিন প্রতি রাত্রে নির্দিষ্ট ভাবে শেষ করা অনুসরণ করেন, আপনার বাচ্চা নিজেই নিজেকে ঘুমে আচ্ছন্ন করতে সক্ষম হয়ে উঠবে আপনার শেষ ক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে।আপনার শেষ কর্মটির পরেই আপনার বাচ্চা বুঝতে পারবে যে,সেই সময়টি হল তার শান্ত হয়ে ঘুমানোর সময়।
শিশুর ঘুমের রুটিনে কি কোনও অসুবিধা থাকতে পারে?
অন্যান্য যেকোনও রুটিনের মতই আপনার শিশুর ঘুমের রুটিনটিও হওয়া উচিত নমনীয়।আপনার বাচ্চা যেহেতু বড় হয়ে উঠতে থাকে,তার মেজাজের দোলাচল হবে এবং তার স্বাভাবিক ঘুমের রুটিনে সে বাধা দিতে শুরু করে।এবং সে সেটি পরিবর্তন করতে চায় না তার শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্তও,এবং যদি সে একটু বড় হয় তবে সে তার দাঁত মাজাকেও প্রত্যাখ্যান করতে পারে।এটি অনিবার্য এবং সকল অভিভাবকেরই সেগুলি গ্রহণ করা প্রয়োজন।আপনি অবশ্যই আপনার বাড়ন্ত শিশুর ঘুমের রুটিনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন গুলির জন্যও প্রস্তুত থাকবেন। আপনার বাচ্চা কি বলতে চাইছে তা শুনবেন এবং সেই অনুযায়ী রুটিনের পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হবেন।এই পরিবর্তনটি খুবই সাধারণ ও সহজ হতে পারে রাত্রিকালীন শয়নের ক্রিয়াকলাপের রুটিনের ক্রমানুযায়ী সহজ কিছু পরিবর্তন করে অথবা রুটিনের এক ধাপ অগ্রসর হয়ে।পরিস্থিতির বিচার করে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। অনমনীয় রুটিনের মধ্যে চালিত রেখে আপনার শিশুর আরামের ব্যাপারে কোনও রকম আপস করবেন না।
একটা নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন মানসিক চাপ ও অবসাদের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বাচ্চা ও মা উভয়ের ক্ষেত্রেই।আপনার বাচ্চার জন্য ঘুমের একটা স্বাস্থ্যকর রুটিন স্থির করা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া হবে।শুধু আপনার শিশুর পর্যাপ্ত আরামের মাত্রা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনানুযায়ী তার ঘুমের রুটিনের পরিবর্তন করুন ও যতটা সম্ভব সেটি নমনীয় রাখার চেষ্টা করুন।