In this Article
- SIDS কি?
- শিশুদের মধ্যে SIDS এর কারণ
- কোন শিশুদের SIDS-এর ঝুঁকি বেশি থাকে?
- সদ্যজাতদের সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোমের লক্ষণগুলি
- কিভাবে শিশুর SIDS এবং অন্যান্য ঘুম-সম্পর্কিত বিপদের ঝুঁকি কমানো যায়?
- আপনার ঘুমন্ত শিশুকে কিভাবে নিরাপদ রাখবেন
- শিশুর ঘুমের সময়কার নিরাপত্তার জন্য কিছু সুপারিশ
- SIDS থেকে শিশুকে রক্ষা করতে মায়েরা কি করতে পারেন
- শিশুদের ঘুমের জন্য নিরাপদ পরিবেশ
- শিশুদের নিরাপদ ঘুমের জন্য কিছু দ্রুত পরামর্শ
প্রত্যেক মা যে কোনো মূল্যে তাঁর সন্তানের কল্যাণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন । কিন্তু শিশুর যত্ন নেওয়া একটি কঠিন কাজ । এমনকি অতি সাধারণ সাংসারিক বিষয়গুলিও একটি সংবেদনশীল সদ্যজাত শিশুর গুরুতর বিপদ সৃষ্টি করতে পারে । এরকম একটি বিপদ হল SIDS । SIDS সম্পর্কে তথ্যগুলি জানার জন্য প্রবন্ধটি পড়ুন, যেগুলি আপনাকে এই বিপদ আটকাতে জানা কারণগুলি এড়াতে সাহায্য করবে ।
SIDS কি?
সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম, নাম থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এটি হলো ঘুমের সময় একটি শিশুর আকস্মিক, অপ্রত্যাশিত মৃত্যু । একটি স্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর শিশুরও অস্পষ্ট কারনে SIDS ঘটতে পারে । SIDS সাথে যুক্ত সম্ভাবনার মধ্যে একটি হল, মস্তিষ্কের যেকোনো অংশে হঠাৎ কোনো ত্রুটি, যেটি শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে । সেই সঙ্গে বাহ্যিক কারণও রয়েছে, যেগুলি থেকেও SIDS হতে পারে । তাই ঘুমানোর সময় শিশুদের নিরাপত্তার দিকটি বেশি করে দেখা প্রয়োজন ।
শিশুদের মধ্যে SIDS এর কারণ
SIDS-এর নির্দিষ্ট কারণ কি তা এখনও একটি রহস্য হয়েই রয়েছে । তবে ভাল খবর হল, সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি যে, SIDS থেকে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে । এটি মূলত এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিশুদের ঘুমের সময় নিরাপত্তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এবং এই বিষয়ে ব্যাপক জোর দেওয়ার কারণে । যাই হোক, SIDS এখনও শিশুদের মৃত্যুর একটি কারণ, যেহেতু এটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মিলিত কারণে ঘটে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগে থেকে বোঝা যায় না । SIDS সম্পর্কে আপনি যত জানবেন তত এটির ঝুঁকি এড়াতে সহায়তা হবে ।
একটি বিষয়ে আমরা নিশ্চিত যে SIDS শুধু মনস্তাত্ত্বিক কারণে হয় না, ঘুমের অবস্থার মতো বাহ্যিক কারণও SIDS ঘটার সম্ভাবনা বাড়ায় ।
১) মস্তিষ্কের কিছু অংশ এখনও অপরিণত
সাধারণত, জন্মের সময় মস্তিষ্ক পরিণত হয়ে যায় এবং সাধারণ অনৈচ্ছিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । জন্মের পর প্রথম কয়েক মাসে এটি আরও বিকশিত হয় । যদিও, কিছু শিশুদের ক্ষেত্রে, জন্মের পরেও মস্তিষ্কের কিছু অংশের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয় না । যে শিশুরা সময়ের আগে জন্ম নেয় বা একাধিক সন্তানের একসাথে জন্ম হলে (যেমন, যমজ, ত্রয়ী ইত্যাদি), সেই শিশুদের এটি ঘটতে পারে । জন্মের সময় খুব কম ওজন থাকলেও ঝুঁকির কারণ হয় । এই ক্ষেত্রে শিশুর মস্তিষ্কের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর খুব কম নিয়ন্ত্রণ থাকার সম্ভাবনা থাকে । এর অর্থ, মস্তিষ্ক শিশুর শ্বাসকে নিয়মিত করতে পারে না এবং পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পারে না। এর ফলে ঘুমের সময় শিশুর ঝুঁকি থেকে যায়, এবং শিশুর জেগে ওঠার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় । দেহে অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে, শরীরের প্রতিক্রিয়া জানানোর স্বাভাবিক প্রবণতাটি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে ।
উদাহরণস্বরূপ, বিছানাতে তার মুখের অবস্থানের কারণে শিশু যদি শ্বাস নিতে সমস্যায় পড়ে, স্বাভাবিক অবস্থায় শিশুটি ঘুম থেকে জেগে উঠবে, এবং সে নিজেই নিজের মাথা এমনভাবে ঘুরিয়ে নেবে, যাতে সে আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে । কিন্তু শিশুর মস্তিষ্কের কিছু অংশ অবিকশিত থাকলে, এই প্রক্রিয়া বাধা পায় । এর ফলে SIDS হতে পারে ।
২) শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা এবং সংক্রমণ
সর্দি এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্য কিছু ক্ষেত্রে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে । শিশুর ঘুমানোর সময় এই সমস্যা বেড়ে যায় ।
৩) অস্বাভাবিক প্রতিরোধী প্রতিফলন প্রতিক্রিয়া
সুস্পষ্ট কারণে, শরীরের শ্বাসযন্ত্রে কোনও অতিরিক্ত তরল থাকা উচিত নয় (এতে কখনও কখনও দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে) । যখন কোন তরল শ্বাসযন্ত্রের মিউকোসযুক্ত পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসে, তখন একটি প্রতিরোধক প্রতিফলন শুরু হয়, যার ফলে সেই মানুষ তরলটি গিলে ফেলে বা কাশির মাধ্যমে গলা অথবা নাক দিয়ে তরলটি বের করে দেয় । একে ল্যারিংস-এর রিফ্লেক্স বলে । এই প্রতিক্রিয়া শ্বাসনালী থেকে তরল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা শ্বাসে নিতে সমস্যা করতে পারে । যদি শিশুর জন্মের সময় মস্তিষ্কের কিছু অংশ কম বিকশিত অবস্থায় থাকে, তবে এই প্রতিক্রিয়াগুলি কার্যকর হতে পারে না । এর থেকে ঘুম অ্যাপনিয়া এবং সবচেয়ে খারাপ ক্ষেত্রে, SIDS হতে পারে ।
৪) অতিরিক্ত তাপ
গরম অবস্থায় শিশুদের ঘুম ভালো হয় । কিন্তু যদি খুব গরম থাকে, তবে শিশুর শরীর এটি সহ্য নাও করতে পারে । প্রধানত ভুল জামাকাপড় নির্বাচন করার কারণে হাইপারথার্মিয়া বা বেশী-তপ্ত হওয়া ঘটতে পারে । খুব বেশী জামাকাপড় পড়ালে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং SIDS-এর ঝুঁকি বাড়ায় । উচ্চ তাপমাত্রার ফলে বিপাকের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং এর ফলে, শ্বাসের নিয়ন্ত্রণ কমে যেতে পারে ।
৫) ঘুমের ভুল অবস্থান
আপনি কি শুনেছেন, লোকেরা বলে যে, শিশুদেরকে তাদের পিঠের উপর ভর করে ঘুমাতে দেওয়া উচিত? যখন একটি শিশু তার পেটের উপর ভর করে ঘুমায়, তার স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে । এতে গদিতে তার মুখ চেপে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং এইভাবে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বাধা পায় । যখন শিশুকে পাশ ফিরে শোয়ানো হয়, তখন তার ঘুরে গিয়ে পেটে ভর করে শোয়ার সম্ভাবনা থাকে । সুতরাং, এই ঝুঁকি কমাতে সবসময় শিশুকে পিঠে ভর করে শোয়ানো উচিত । এটি বিশেষ করে সেই শিশুদের জন্য করা দরকার, যারা এখনও নিজে নিজে তাদের পেট থেকে পিঠের দিকে ঘুরে শুতে বা উল্টাতে শেখেনি ।
সংক্ষেপে, শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে না দিলে, আবহাওয়া অনুযায়ী উপযুক্ত পোশাক পড়ালে, এবং পিঠে ভর করে শোয়ালে, তা SIDS-এর ঝুঁকি যথেষ্ট পরিমাণে কম করতে সাহায্য করে ।
কোন শিশুদের SIDS-এর ঝুঁকি বেশি থাকে?
- একই বয়সের মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের বেশী SIDS-এর ঝুঁকি থাকে বলে দেখা গেছে, যদিও এর জন্য কোনও স্পষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায়নি ।
- এটি এমন একটি অবস্থা যা শিশুদের মধ্যে প্রায়ই ঘটতে দেখা যায় । ২-৪ মাস বয়সের শিশুদের বেশিরভাগ এইরকম ঘটতে দেখা গেছে । কারণ ছোট্ট শিশুদের নিজেদের নড়াচড়ার উপর নিয়ন্ত্রণ কম থাকে এবং বিছানার-কাপড় ইত্যাদিতে তাদের দমবন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
- আরেকটি পর্যবেক্ষণ হল শীতকালে গ্রীষ্মকালের চেয়ে বেশি সংখ্যক SIDS জনিত মৃত্যু ঘটে থাকে, এর একটি বড় কারণ হল অতিরিক্ত কম্বল এবং জামাকাপড় দিয়ে শিশুকে গরম রাখা হয় ।
- যদি শিশুটির ভাইবোন বা পরিবারের অন্যান্য সন্তানদের SIDS-এ মৃত্যু হয়ে থাকে, তবে শিশুটির SIDS এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । সুতরাং, অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
- সঠিক সময়ের কয়েক সপ্তাহ আগে শিশুদের জন্ম হলে, এবং জন্মের সময় ওজন কম থাকলে তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে, যেহেতু তারা কম বিকশিত হতে পারে ।
- যদি বাড়িতে কেউ ধূমপান করেন, তাহলে সিগারেটের ধোঁয়ার স্পর্শে আসার ফলেও শিশুটি SIDS-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতে পারে, কারণ শিশুটি পরোক্ষভাবে ধূমপানে যুক্ত হয়ে পড়ে ।
- খুব অল্পবয়সী মায়েদের সন্তান হলে, বিশেষ করে ২০ বছরের নীচে, সেই শিশুদের ঝুঁকি বেশি থাকে । এই জন্য কোন সঠিক কারণ চিহ্নিত হয়নি, তবে এটি মায়ের পরিপক্বতার অভাব এবং শিশুর যত্ন নেওয়ার অক্ষমতার কারণে হতে পারে ।
- খুব কম প্রসবকালীন যত্ন পাওয়া অস্বাস্থ্যকর মায়ের, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা বেছে নিলে, অ্যালকোহল ও ড্রাগ খেলে, তদের সন্তান হলে, অন্যান্য সাধারণ শিশুদের তুলনায় SIDS-এর ঝুঁকি বেশি থাকে ।
সদ্যজাতদের সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোমের লক্ষণগুলি
SIDS এমন একটি অবস্থা যেটি বেশিরভাগ সময় হঠাৎই ঘটে । এই প্রক্রিয়ায় শিশু কাঁদেও না । এর মানে হল যে, আপনি হয়তো কোনো বিপজ্জনক লক্ষণ ও উপসর্গ দিয়ে সতর্ক হতে পারবেন না । সুতরাং, কখন SIDS ঘটবে এবং এটি প্রতিরোধ করতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন তা জানা কঠিন । সাধারণভাবে, যদি আপনার শিশুর প্রায়ই শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, বা আপনার শিশুর প্রায়ই কণ্ঠরোধ হয়ে থাকে এবং প্রতিবার খাওয়ানোর পরে প্রচুর পরিমাণে বমি করে, তাহলে ডাক্তারের মতামত গ্রহণ করা উচিত । এর ফলে কোনও অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের সমস্যা ধরা পড়বে যা SIDS-এর ঝুঁকি বাড়ায় । কিছু শিশু SIDS-এর কয়েক দিন আগে শ্বাসযন্ত্রের কোনো অসুস্থতাতে ভুগতে পারে । কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু জেগে থাকার সময় সুস্থ ও সক্রিয় থেকেছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে ।
কিভাবে শিশুর SIDS এবং অন্যান্য ঘুম-সম্পর্কিত বিপদের ঝুঁকি কমানো যায়?
যদিও এই কারণগুলি বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে, তবে আমরা প্রকৃতপক্ষে শিশুদের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত ঝুঁকির কারণগুলি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে শিশুদের SIDS-এ আক্রান্ত হওয়া কমাতে পারি ।
১) ঘুমের সময় সঠিক অঙ্গবিন্যাস
শিশুর ঘুমের সময়কার অঙ্গবিন্যাস সঠিক করার মাধ্যমে শুরু করুন । জাতীয় শিশু সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সংগঠনগুলির সাথে আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স ২০০৩ সালে ‘ব্যাক টু স্লিপ’ নামে একটি প্রচার শুরু করেছিল । এটিতে মূলত শিশুকে পিঠের উপর ভর করে শোওয়ানোর গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল । এই প্রচারটি SIDS সম্পর্কে আলোচনা বাড়ানোর জন্য এবং শিশুদের ঘুমের নিরাপত্তার বিষয়ে পিতামাতাকে সচেতন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল ।
দিনের হোক বা রাতের ঘুম, যা-ই হোক না কেন, পিঠের উপর ভর করে ঘুমানো, যাকে চিত হয়ে শোয়া বলে, সেটি আপনার বাচ্চার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ । অকালপ্রসবে জন্মানো শিশুরা, যাদের এখনও সদ্যজাতদের পরিচর্যা পাচ্ছে, তাদেরও এই অবস্থানেই রাখা উচিত, কারণ তাদের SIDS-এর বেশি ঝুঁকিতে থাকে ।
২) বিছানা এবং ঘুমের সময়ের অন্যান্য অবস্থাগুলি সংশোধন করুন
বেশিরভাগ ঘুম সংক্রান্ত সমস্যাগুলি মূলত শিশুটিকে প্রদত্ত ভুল ঘুমের পরিবেশের কারণে ঘটে । শিশুর ঘুমের নিরাপত্তার সুপারিশগুলি সম্পর্কে নিজেকে সচেতন করলে SIDS এবং ঘুম সম্পর্কিত বিপদগুলির ঝুঁকি কমানোর প্রথম পদক্ষেপ হবে ।
উদাহরণ থেকে নিজেকে সচেতন করুন । পৃথিবীজুড়ে বাবা-মায়েদের সতর্ক করার জন্য SIDS নিয়ে অনেক দুঃখজনক ঘটনা রয়েছে । এইগুলি বাবা-মায়েদের বুঝতে সাহায্য করে যে, শিশুর ঘুমের নিরাপত্তা সম্পর্কিত অতি ক্ষুদ্র তথ্যও কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
আপনার ঘুমন্ত শিশুকে কিভাবে নিরাপদ রাখবেন
সুতরাং আপনার শিশু ঘুমের সময় নিরাপদে আছে কিনা তা কিভাবে আপনি নিশ্চিত করবেন? আপনি সারা রাত ধরে আপনার শিশুর দিকে তাকিয়ে থাকলেও কখন SIDS ঘটবে তা জানা কঠিন হবে, কারণ এটির কোন বাহ্যিক লক্ষণ দেখায যায় না । তাই ঘুমের সময় শিশু নিরাপদে আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে কিছু উপায় রয়েছে:
১) একই ঘরে শিশুকে রাখুন
জন্মের প্রথম বছরে, আপনার শিশুকে আপনার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমাতে দিন, সেটি সবচেয়ে নিরাপদ উপায় । আপনি আপনার পছন্দের একটি শিশুশয্যা বেছে নিতে পারেন এবং আপনার বিছানার কাছে এটি এমন অবস্থানে রাখতে পারেন যেখানে আপনি রাতে শিশুর দিকে নজর রাখতে পারেন, যদি আবশ্যক হয় । এটি অন্তত প্রথম ৬ মাসের জন্য বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ ।
২) শিশুর মনিটরের উপর নির্ভর করবেন না
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, শিশুর পরিচর্যা চলাকালীন, শিশুর মনিটর দিয়ে আপনি শিশুরউপর নজর রাখতে পারেন । শিশুর মনিটর খুব ভালো জিনিস, কিন্তু আপনি SIDS প্রতিরোধের জন্য একটি শিশুর মনিটরের উপর ভরসা করতে পারেন না । এটি আর একটু বড় শিশুদের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে যাদের বয়স দুই বছর হয়েছে, কিন্তু প্রথম বছরে, আপনার ঘরেই আপনার শিশুর শয্যা রাখা সবচেয়ে নিরাপদ উপায় ।
৩) কার্ডিওরেসপিরেটরি মনিটরের উপর ভরসা করবেন না
আমরা জানি যে, SIDS প্রধানত শ্বাসরোধের কারণে ঘটে । কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কার্ডিওরেসপিরেটরি মনিটর, বা সাধারণভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস মনিটর, এমনকি SIDS শিশু মনিটর হিসাবে চিহ্নিত মনিটরগুলিকেও বিশ্বাস করা যেতে পারে । এগুলি যে SIDS-এর আগে সঠিকভাবে সতর্ক করে দিতে পারে, তার কোন প্রমাণ নেই ।
৪) সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন
রাতে শিশুকে ঘুম পাড়ানোর সময়, তাকে উপযুক্ত পোশাক পড়ান, যাতে সে উষ্ণ এবং আরামদায়ক বোধ করে । যদি না আপনি খুব ঠান্ডার দেশে থাকেন যেখানে চরম শীত পড়ে, পোশাকের উপর পোশাক পড়িয়ে রাখলে শিশু অত্যন্ত গরম অনুভব করতে পারে । শ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত পোশাক যা দমবন্ধ করে না এবং ঠান্ডা থেকে শিশুকে রক্ষা করার জন্য সঠিক স্তরযুক্ত, সেগুলিই সঠিক । এছাড়াও, যখন আপনার শিশু তার শয্যায় ঘুমাচ্ছে, তখন হুড, টান দেওয়ার সুতো ইত্যাদি যুক্ত পোশাক এড়িয়ে চলুন । ঘুমানোর সময় আপনার শিশুর নালপোষটি পড়াবেন না ।
৫) একটি চুষি দিন
যদি আপনার শিশুটি চুষি নেয়, তাহলে তাকে ঘুম পাড়ানোর সময় একটি চুষি দিন । শিশুদের ঘাড়ের চারপাশে পাকিয়ে থাকা স্ট্র্যাপ দেওয়া চুষিগুলি দেবেন না । দেখা গেছে যে, সাধারণ চুষিগুলি SIDS-এর ঝুঁকিকে যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিরোধ করে ।
শিশুর ঘুমের সময়কার নিরাপত্তার জন্য কিছু সুপারিশ
SIDS-এর ঘটনাগুলির একত্রিত রেকর্ডগুলি আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসকে ঘুমের সময়কার নিরাপত্তার জন্য সর্বাধিক সুপারিশ প্রদান করতে সাহায্য করেছে । SIDS সম্পর্কিত নতুন আবিষ্কারগুলি রেকর্ড করার সাথে সাথে এটি অবিরত আপডেট হয় । এখানে সংক্ষেপে সুপারিশগুলি দেওয়া হল:
- SIDS শিশুর ঘুমের সময় পাশ ফেরা প্রতিরোধ করতে শিশুকে পিঠে ভর করে শোওয়ান ।
- খুব নরম এবং বিলাসী বিছানা দেবেন না ।
- আপনি যে ঘরে ঘুমান, সেই ঘরেই শিশুকে রাখুন ।
- শিশুকে ধোঁয়া, ড্রাগ, এবং অ্যালকোহলের স্পর্শে আসতে দেবেন না ।
- শিশুকে একটি চুষি দিন ।
- প্রস্তাবিত ভ্যাকসিনগুলি দিতে ভুলবেন না ।
- বাড়িতে থাকা SIDS মনিটরের উপর ভরসা করবেন না ।
SIDS থেকে শিশুকে রক্ষা করতে মায়েরা কি করতে পারেন
SIDS খুব বেশি সাধারণ নয়, এবং ঝুঁকির কারণগুলি কমালেই SIDS হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম হতে পারে । কিন্তু মা হিসাবে, আপনি আপনার সন্তানের পরম নিরাপত্তা ছাড়া কিছুই চান না । শিশুদের SIDS এড়ানোর জন্য আপনি যেগুলি করতে পারেন:
১) পেটে ভর করে শোয়ানোর সময় শিশুকে একা ছাড়বেন না
পেটে ভর করে শোয়ানো শিশুর পেশীকে শক্তিশালী করার জন্য অপরিহার্য । কিন্তু আপনার তত্ত্বাবধানে শিশুকে এইভাবে শোয়ানোই হল মূলমন্ত্র । শিশুর বয়সের উপর নির্ভর করে এবং শিশুটি পেটে ভর করে শোয়ানো পছন্দ করে কিনা, তার উপর নির্ভর করে এইভাবে শোয়ানোর সময়কাল নির্ধারণ করা উচিত । সে তার পেটে ভর করে যতক্ষণই থাকুক না কেন, আপনি তার উপর সবসময় নজর রাখার জন্য কাছাকাছি থাকবেন । এছাড়াও, নিশ্চিত করুন যে, যখন সে যথেষ্ট জাগ্রত এবং সক্রিয় থাকে তখনই সে তার পেটে ভর করে থাকে, ক্লান্ত এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় নয় ।
২) যখনই বাচ্চার সর্দি হয় বা শ্বাসযন্ত্রের অয়াসুস্থতা দেখা যায়, তখনই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন
হালকা সর্দিও তাদের এই কমনীয় সময়ে মারাত্মক হতে পারে । শিশুর শ্বাসকষ্টের কোন লক্ষণ দেখা দিলে আপনার শিশুরোগ-বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন ।
৩) জীবনশৈলী পরিবর্তন
আপনি গর্ভবতী অবস্থায় এবং এমনকি প্রসবের পরেও ধূমপান এড়িয়ে চলুন । অ্যালকোহল এবং অন্যান্য ড্রাগের ব্যবহার শিশুর জন্মের পরেও তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি তাকে বুকের দুধ খাওয়ান । শিশুর কাছাকাছি কোথাও কাউকে ধূমপান করার অনুমতি দেবেন না । অ্যালকোহল খেয়েছে এমন কারোর কাছাকাছি শিশুকে ঘুমাতে দেবেন না ।
৪) বুকের দুধ খাওয়ানো এবং SIDS
একটি সাধারণ পর্যবেক্ষণ, জন্মের পর থেকেই বুকের দুধ খাচ্ছে এমন শিশুরা SIDS থেকে বেশি প্রতিরোধযোগ্য । জন্মের পর প্রথম কয়েক মাসে ত্বকের স্পর্শের মাধ্যমে যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ । প্রথম ৬ মাসে শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ে । এটি অকাল প্রসবে জন্ম হওয়া শিশুদের মস্তিষ্কের সমস্ত অংশগুলির ভাল বিকাশেও সাহায্য করতে পারে ।
শিশুদের ঘুমের জন্য নিরাপদ পরিবেশ
SIDS ঘটানোর কিছু শারীরিক কারণ এড়ানো যায় না, কিন্তু বাহ্যিক কারণগুলি, যেমন অনিরাপদ ঘুমের পরিবেশ, এগুলির সংশোধন করা যেতে পারে । এর ফলে SIDS এর ঝুঁকি অনেকটা কমতে পারে । প্রথম কয়েক মাসে শিশুদের জন্য নিরাপদ ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল:
১) সঠিক বিছানা বেছে নিন
সমস্ত নিরাপত্তার মান এবং প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে এমন একটি বিছানা বেছে নিন । এটি শিশুর ওজন ধরে রাখার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে । দোলনা কেনার সময়, একটি উঁচু রেলিং যুক্ত দোলনা বেছে নিন, যাতে ঘুমের সময় পড়ে যাওয়া আটকানো যায় । বয়সের উপযুক্ত দোলনা এবং বিছানাই হল সবথেকে ভালো উপায় ।
২) শিশুর ঘুমানোর জন্য সঠিক গদি বেছে নিন
গদি যেন একদম সঠিক শক্ত হয় । আবার, এটি শিশুর ওজনের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা প্রয়োজন । বিছানাতে নিরাপদভাবে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত একটি গদি বেছে নেওয়া উচিত, এবং গদির আকার যেন বিছানার সঙ্গে একদম মাপসই হয় । যে গদিগুলি নিলে বিছানা ও গদির মাঝে ফাঁক থেকে যাবে বা যেগুলি শয্যার বাইরে বেরিয়ে থাকবে, যার ফলে বিছানার প্রান্তে ভাঁজ হয়ে থাকবে, সেগুলি নেওয়া এড়িয়ে যান । শিশুর ওজনের নীচে নিজের আকার ধরে রাখার জন্য গদিটিকে যথেষ্ট মজবুত হতে হবে ।
৩) বালিশ, কুশন, এবং কম্বল এড়িয়ে চলুন
প্রথম কয়েক মাস ধরে, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় বালিশ এবং কুশন এড়িয়ে চলা ভালো । শৌখিন বালিশ, নরম খেলনা এবং কোকড়া কম্বল বিছানায় খুব ভালো লাগতে পারে । কিন্তু এইসব জিনিসগুলি শিশুর নিরাপত্তাতে সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টি করে । এগুলি শিশুর মুখ বা ঘাড়ের সাথে চেপে বসে এবং বায়ু চলাচলকে বাধা দেয়, ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের বাধা তৈরি হয় । বিশেষ করে প্রথম কয়েক মাসে, বিছানায় একটি সাধারণ গদি, তার উপরে একটি চাদর বা একটি প্রতিরক্ষামূলক চাদরই শুধু প্রয়োজন ।
৪) সাবধানে আপনার শিশুকে স্যাডল করুন
স্যাডল করা মানে একটি পোশাক বা কাপড় দিয়ে আপনার শিশুকে মুড়ে ফেলা । আপনার শিশুর ভালো ঘুমের জন্য স্যাডল করা একটি দুর্দান্ত উপায় । কিন্তু স্যাডল করার পরে তাকে বিছানায় পিঠের উপর ভর করে শোয়ান । এছাড়াও, সব প্রান্তগুলি যেন সুন্দর করে গোঁজা হয় তা নিশ্চিত করুন ।
৫) বিছানার চেকলিস্ট
আপনি যখন শিশুটির বিছানাকে সাজান, তখন মনে রাখার মতো কিছু পয়েন্ট এখানে দেওয়া হল:
- বিছানার বাম্পার প্যাড শিশুর ভালোর থেকে ক্ষতি করে বেশি – এগুলিতে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে ।
- বিছানার জন্য নির্দিষ্ট গদি বেছে নেওয়া উচিত । ভালো হয় যদি সেগুলি পাশে ঝুলে না পড়ে বা প্রান্তের দিকে কোনো ফাঁক না থাকে ।
- বিছানা শক্তসমর্থভাবে বানালে সেটি নিরাপদ হবে । টেকসই পোস্ট এবং ফ্রেমের সাথে শক্ত কাঠ দিয়ে তৈরি বিছানা সবচেয়ে নিরাপদ ।
- কোন উগ্র সিনথেটিক গন্ধওয়ালা প্লাস্টিকের তৈরি বা রঙের গন্ধযুক্ত বিছানা এড়িয়ে যান ।
- শিশুর সুরক্ষা মানদণ্ডকে মেনে চলার জন্য খ্যাতিমান কোনো ব্র্যান্ড বেছে নিন; যার বিছানা রদ করার কোনো ইতিহাস নেই ।
- জানালা / খড়খড়ি / খড়খড়ির দড়ি থেকে বিছানাকে দূরে রাখুন । খড়খড়ির দড়িগুলি জড়িয়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটতে পারে ।
- বিছানাটি কোনো বৈদ্যুতিক আউটলেট বা পাওয়ার কেবলের কাছে রাখবেন না ।
- আপনার যদি যমজ বাচ্চা থাকে, তবে সঠিক আকারের বিছানা বেছে নিন এবং নিরাপদ ঘুমের জন্য ও SIDS প্রতিরোধের জন্য সেগুলিকে সুরক্ষিতভাবে দেওয়ালে ঠেসে রাখুন ।
৬) একসাথে ঘুমানো এড়িয়ে যান
বলা হয় যে, একসাথে ঘুমালে SIDS-এর ঝুঁকি অনেকটা বাড়তে পারে । শিশুর সাথে বিছানা ভাগ করে নেওয়া কখনোই উচিত নয়, বিশেষ করে যদি আপনি ধূমপান করেন বা অ্যালকোহল বা মাদক গ্রহণ করেন ।
৭) ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
আপনার শিশুর বিশ্রাম এবং খেলার জন্য একটি বাতাসচলাচলযুক্ত ঘর বাছুন । নিশ্চিত করুন যে, আপনার গরম করার যন্ত্রটি ঠিকভাবে কাজ করছে এবং সেটিকে উষ্ণ তাপমাত্রাতে সেট করুন ও রাতে যাতে খুব গরম না হয়ে যায়, বিশেষ করে যদি আপনার থার্মোস্ট্যাট ত্রুটিপূর্ণ হয় । এটি যেন খুব ঠান্ডাও না হয়ে যায় । চারপাশের সঠিক তাপমাত্রা শিশুটির ঘুমের মানকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
একটি নিরাপদ ঘুমের পরিবেশের জন্য যত্ন সহকারে বিছানা, গদি, গৃহসজ্জার সামগ্রী বেছে নিতে হবে, এবং পাশাপাশি সেগুলিকে সঠিক স্থানে রাখতে হবে । আপনার বাচ্চাকে পালঙ্ক বা চেয়ারে ঘুম পাড়াবেন না ।
শিশুদের নিরাপদ ঘুমের জন্য কিছু দ্রুত পরামর্শ
- ফিতেযুক্ত চাদর এবং গৃহসজ্জার সামগ্রী এড়িয়ে চলুন
- কোকড়ানো এবং পশম দিয়ে তৈরি গদির কভার এবং গৃহসজ্জার সামগ্রী এড়িয়ে যান । লিন্টমুক্ত নরম কাপড়ের তৈরি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সুবিধাকারী জিনিস বেছে নিন, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে শিশু কোনো কোনো ক্ষুদ্র কণাও শ্বাসের সাথে না গ্রহণ করে, যা তার শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে ।
- নিশ্চিত করুন যে ‘শয্যার মোবাইলটি’ যেন সুরক্ষিতভাবে বাঁধা থাকে এবং উঁচু জায়গায় রাখা থাকে যেখানে শিশুটি পৌঁছাতে না পারে ।
- শিশুর খাওয়ানো শেষ হলে বোতল এবং ঢাকনা বিছানা থেকে সরিয়ে রাখুন ।
- সরাসরি কোনও জানালার পাশে বা কোণে যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে, সেখানে গদিটি রাখবেন না ।
- টুপি পড়ে শিশুকে ঘুমাতে দেবেন না ।
- পা দুটির অবস্থান, যদি বাচ্চাদের পা-দুটি বিছানার পা ছুঁতে পারে, সেটা হল সবচেয়ে নিরাপদ । এর ফলে বাচ্চারা চাদরের নীচে পাশ না ফেরে ।
আপনি এই উপকরণগুলি ও সাবধানতাগুলি মনে রাখলে, SIDS সম্পর্কে নিজেকে সচেতন করলে, আপনি এই সমস্যাটির সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করেছেন জেনে একটু শান্তি পেতে পারেন । পরামর্শের জন্য ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে দ্বিধা করবেন না, কারণ আপনার শিশুর স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ সর্বাধিক গুরুত্বের বিষয় ।