শিশুর শ্লেষ্মা বমন- কারণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শগুলি

শিশুর শ্লেষ্মা বমন

একটি শিশুকে কাশতে এবং বমি করে শ্লেষ্মা অথবা দুধ (যার গঠণটি শ্লেষ্মার আকার নেয়)তুলতে দেখা বাবামায়েদের জন্য বেশ বিরক্তিকর হতে পারে।বাচ্চাদের থুতু ফেলা একেবারেই স্বাভাবিক তবে যখন শ্লেষ্মা অথবা প্রক্ষিপ্ত বমিটি পুনরাবৃত্ত ঘটনা বলে মনে হতে পারে,সেটি কোনও বিপদের সঙ্কেত হতে পারে।এটি হওয়ার পিছনে বিবিধ কারণ থাকতে পারে এবং আপনার বাচ্চার ক্ষেত্রে কেন সেটি হয়ে থাকে তার প্রকৃত কারণটিকে খুঁজে বের করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

একটি শিশুর পক্ষে শ্লেষ্মা তোলাটা কি স্বাভাবিক?

একটি শিশুর দুধ অথবা শ্লেষ্মা বমন করাটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়।অনেক বাবামাই তাদের সন্তানদের শৈশবকালে শ্লেষ্মা বা দুধ বমি করে মুখ দিয়ে তুলে ফেলতে দেখে থাকেন।যদিও এটি বেশ স্বাভাবিক,তবে বারবার ঘটার ফলে সেটি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।এর মধ্যে রক্তের উপস্থিতি কিম্বা আপনার বাচ্চার মধ্যে কোনও অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ তার কোনওরকম ব্যথা বা সমস্যার ঈঙ্গিত করে তাৎক্ষণিক মনোনিবেশের জন্য।

এটি কখন ঘটে?

এ ধরনের ঘটনা সাধারণত শিশুদের মধ্যে প্রথম দিকে ঘটে থাকে তাদের অপরিণত পাচন তন্ত্রের ফল হিসেবে।এর সম্পূর্ণ বিস্তারটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল গলা থেকে পেট পর্যন্ত অঞ্চলটি।এই অংশটির সম্পূর্ণ রূপে বিকাশ পেতে এবং দেহের মধ্যে খাবার ধরে রাখার জন্য প্রস্তুত হতে বেশ ভাল পরিমাণ সময়ের প্রয়োজন হয়।শিশুকে খাওয়ানো দুধ এবং তার গিলে ফেলা থুতু সবকিছুই ঐ পথেই তার মুখের মধ্যে সহজেই ফিরে আসতে দেখা যায় হলুদ বর্ণের বমি আকারে।

বেশির ভাগ শিশুরাই সোজা হয়ে উঠে বসতে শেখার পর থুতু অথবা দুধ উগরে ফেলাটা বন্ধ করে দেয়।যদিও অনেক বাচ্চাই তাদের প্রায় 7-8 মাস বয়স পার করার পরেও এরকম কিছু ঘটিয়ে থাকে,এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে,শিশুরা তাদের এক বছর বয়স সম্পূর্ণ করার পরেও এগুলি করা চালিয়ে যায়।

ছোট শিশুদের শ্লেষ্মা বমি করে তোলার সাধারণ কারণগুলি কি?

শিশুরা যখন তাদের মুখ দিয়ে দুধ উগরে ফেলে কিম্বা শ্লেষ্মা বমন শেষ করে,সেটি কেবল একটি কারণের জন্যই হতে পারে না।এর পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে,যা অসুস্থতা থেকে অতিরিক্ত খাওয়ানো পর্যন্ত পরিসরের মধ্যে বিস্তৃত হতে পারে।

1. শিশুটির মধ্যে কোনও সংক্রমণ বা অসুস্থতা থাকতে পারে

একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি তার জন্মের পরবর্তী প্রাথমিক মাসগুলিতে ক্রম বিকাশের পর্যায়ে থাকার কারণে বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের দ্বারা একটি সংক্রমণ অথবা অসুস্থতা হয়ে থাকার ক্ষেত্রে সে একটি সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে।এগুলি সাধারণত শ্বসনতন্ত্রে প্রভাব ফেলতে পারে,ফলে মারাত্মক কাশি হতে পারে,যা সবিরাম বমি করার কারণ হয়ে ওঠে।অনুরূপভাবে,কিছু নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া পাচন তন্ত্রে অথবা অন্ত্রকে আক্রমণ করতে পারে,যার ফলস্বরূপ বদহজম এবং ডায়রিয়া বমি করার সহিত যুক্ত হতে পারে।

2. শিশুটি পাইলোরিক স্টেনোসিসে ভুগে থাকতে পারে

যদি কোনও শিশুর মধ্যে জোরপূর্বক বমি করার প্রবণতা থাকে,যা প্রক্ষিপ্ত আকারে বহির্গমনের দ্বারা শেষ হয়,সে ক্ষেত্রে শিশুটির পাইলোরিক স্টেনোসিসে ভোগার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।বেশিরভাগ শিশুদের মধ্যে দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি বেশ বিরল একটি অবস্থা,এটি সাধারণত প্রসবের পরের সপ্তাহগুলিতে প্রকাশ পায়।অন্ত্র এবং পাকস্থলীর মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী পেশীটির ফুলে পুরু হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকে,যা যে কোনও খাবারকেই আরও অগ্রসর হতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে।এই অবস্থাটি বেশ বিরল,ভারতে প্রতি বছর 1 মিলিয়নেরও কম ঘটনায় এটি ঘটে থাকে।

3. তার অন্ত্রপথে আরও অন্যান্য বাধা থকতে পারে

যদিও পাইলোরিক স্টেনোসিস পেশীর একটি অসংগতির উপস্থিতির কারণে হয়ে থাকতে পারে,তবে এই পথে এর পাশাপাশি আরও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলিও থাকতে পারে।কখনও কখনও অন্ত্রের একটি অংশ অন্য বিভাগের দিকে পিছলে যেতে পারে এবং এর মধ্যে একটি বাধা তৈরি করতে পারে।কিছু ক্ষেত্রে আবার এমনও দেখা গেছে যেখানে খাবার আটকে থাকে কারণ অন্ত্রগুলি নিজেরাই পেঁচিয়ে যায়।এই ধরনের পরিস্থিতি একটি শিশুর জোর করে বমি করার কারণ হতে পারে।

4. কোনও বিষাক্ত পদার্থ তার পেটে ঢুকে গিয়ে থাকতে পারে

জৈবিক স্তরে,বমন ক্রিয়াটি হয়ে থাকে যখন পেট অথবা পাচন তন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করে থাকা অবাঞ্ছিত উপাদানটি থেকে দেহ নিজেকে মুক্ত করতে চায়যদিও অপাচিত খাদ্যগুলি এই শ্রেণীতে পড়ে,ঠিক একইভাবে শিশুর গ্রাস করে ফেলা এমন কিছু যা সহজাতরূপে বিষাক্ত বা অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে সেগুলিও তার বমি করার কারণ হতে পারে।বিষাক্ত কিছু গ্রাস করে ফেলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট কিছু ওষুধও এমনকি সেটি সরাসরি চিকিৎসা করার পরিবর্তে এই বমি হওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

কোনও বিষাক্ত পদার্থ তার পেটে ঢুকে গিয়ে থাকতে পারে

5. শিশুটি গতি অসুস্থতার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকতে পারে

গতি অসুস্থতাটি বেশ সাধারণ একটি সমস্যা যা শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদেরও জর্জরিত করে তোলে।এটি সাধারণত বেড়ে যায় যখন মস্তিষ্কটি প্রাপ্ত ভিজ্যুয়াল(দৃষ্টি সম্বন্ধীয়)এবং অউরাল(কর্ণ সম্বন্ধীয়)সংকেতগুলির মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে মনে হয়। যদি চোখ এবং শরীর একইভাবে গতি অনুভব না করে বলে মনে হয়, গতি অসুস্থতা বমি হওয়ার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অবদান রাখতে পারে।

6. সে দীর্ঘ সময় ধরে অত্যধিকভাবে কাঁদার কারণেও হতে পারে

কান্নাকাটি হল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম যা সম্পর্কে শিশুরা অবগত থাকে, তাই তারা ক্ষুধা, ভয়, ব্যথা এবং এমনকি সাধারণ জ্বালাযন্ত্রণা বোঝাতেও চোখ ফেটে জলের ধারা বইয়ে কাঁদতে পারে।তবে, যদি কোনও শিশু দীর্ঘকাল ধরে তীব্র স্বরে কান্নাকাটি করতে থাকে সেক্ষেত্রে এটি তার গলায় কণ্ঠরোধের প্রতিফলনকে উদ্দীপিত করতে পারে যার ফলস্বরূপ শিশুর প্রচুর কাশি হতে পারে অথবা এমনকি পেট থেকে মুখ দিয়ে উদগীরণ করে ফেলতে পারে।

7. তার গলায় অথবা পেটে কোনও সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে

অনেক সময় গলা কিম্বা পাকস্থলীতে বর্তমান ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াগুলি বমির কারণ হয়।গলার সংক্রমণ সাধারণত সর্দি কাশির জন্য হয়ে থাকে এর ফলে কন্ঠের প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায় আর বমির সম্ভবনা বাড়িয়ে তোলে।পাকস্থলী এবং অন্ত্র দুর্বল হওয়ার কারণে পাচন নালীতে হয়ে থাকা সংক্রমণ শরীর থেকে খাবার বের করে দিতে চায়।

8. সে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার ফলে বমি করতে পারে

বমি হল দেহ থেকে যেকোনও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণের একটি জৈবিক প্রতিক্রিয়া এবং এর পাশাপাশি এটি আবার অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকার ক্ষেত্রেও একইভাবে সত্য।কোনও অ্যালার্জেনের প্রতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির প্রতিক্রিয়া ছাড়া অ্যালার্জি সধারণত আর কিছুই নয়,যা বাদামদুধমাছ এবং আরও অন্যান্য যেকোনও কিছু থেকেই হতে পারে।এই ধরনের অবস্থাগুলি সাধারণত হয়ে থাকে আপনি যদি সম্প্রতি আপনার শিশুকে কোনও নতুন একটি খাবারের ধরণের সাথে পরিচয় করিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে।

সে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার ফলে বমি করতে পারে

9.দ্রুত দুগ্ধ প্রবাহও একটি শিশুর বমি করার কারণ হয়ে উঠতে পারে

কিছু মহিলার স্তনবৃন্ত আবার স্বাভাবিকের থেকে আকারে বড় হয়ে থাকে অথবা তাদের ব্যবহৃত বোতলের নিপলসটি সাধারণত বাজারে উপলভ্য বোতলের নিপলসের তুলনায় বৃহৎ ছিদ্র বিশিষ্ট হয়ে থাকতে পারে।এর ফলে দ্রুত এবং প্রচুর পরিমাণে দুধের প্রবাহ হতে পারে, পরিণতিতে শিশু দ্রুত দুধ পান করে ফেলে।যেহেতু শিশুর পেট এখনও তার বিকাশের পর্যায়ে থাকে,তাই, এই বেশি পরিমাণে দুধ গ্রহণের জন্য সে এখনই প্রস্তুত হতে পারে না এবং স্বাভাবিকভাবেই উদগীরণের মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

10. শিশুর পেট গ্যাসে পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে

এটি খুব কমই বদহজমের কারণে হয়ে থাকে তবে তার থেকেও এটি খাওয়ানোর সময় শিশুদের অতিরিক্ত মাত্রায় বাতাস গ্রাস করে ফেলার সাথে বেশি সম্পর্কিত।বাবা মায়েদের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়াই প্রায়শই চুষিকাঠিগুলি ব্যবহারের অথবা পান করানো ব্যতীতই খালি ফিডিং বোতলগুলির সাথে শিশুদের জড়িয়ে রাখার প্রবণতা থেকে থাকে।এই কারণেও তাদের পেট বাতাসে ভরে ওঠে,যা রিফ্লাক্সের কারণ এবং তার ফলে তাদের মুখ থেকে দুধের উদগীরণ হয়ে থাকে।

11. তাকে অতিরিক্ত খাওয়ানো হয়ে গিয়ে থাকতে পারে

একটি শিশুর পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণ রূপে পরিণত হয়ে উঠতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে থাকে।এক্ষেত্রে প্রধান দিকগুলির মধ্যে যেটির বিকাশের প্রয়োজন তা হল ভালভ যা খাবারকে পেটের মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।প্রচুর পরিমাণে দুধ পান করানোর ফলে তা ঐ ভালভের উপর একটা অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে,আর সেই চাপ সহ্য করার ক্ষেত্রে সেটি ব্যর্থ হতে পারে এবং পরিণামে শিশু তার মুখ দিয়ে দুধ উগরে তুলতে পারে যা বমি করাকে প্ররোচিত করে।

তাকে অতিরিক্ত খাওয়ানো হয়ে গিয়ে থাকতে পারে

আপনি আপনার শিশুর বমি করা প্রতিরোধে কীভাবে সহায়তা করতে পারেন

আপনার শিশু যদি হলুদ শ্লেষ্মা বা দুধের বমি করে থাকে,তবে প্রায়শই সেটি হওয়া থেকে প্রতিরোধ করার জন্য সৌভাগ্যক্রমে এমন এক গুচ্ছ উপায় আছে যেগুলি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।এক্ষেত্রে এটির দ্বারা গুরুতর কোনও কিছুর সংকেত নির্দেশ না করার একটা ভাল সম্ভাবনা রয়েছে।

1. বারবার ঢেকুর তোলানো এক্ষেত্রে সহায়তা করে

খাওয়ানোর পর্যায়টি শেষ করার পর শিশুকে ঢেকুর তোলানো একটা সাধারণ বিষয়।ঘন ঘন বমি করা শিশুদের জন্য আপনি আলাদা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।তাকে সম্পূর্ণ রূপে খাওয়ানো সম্পাদন করার পর তার উগরে ফেলার ঝুঁকি হ্রাস করতে তার স্বাভাবিক পান করা দুধের পরিমাণের 1/4 অংশ অথবা এমনকি 1/8 অংশও পান করার পরেই ঢেকুর তোলার জন্য তাকে উৎসাহিত করার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।

বারবার ঢেকুর তোলানো এক্ষেত্রে সহায়তা করে

2. দুধের প্রবাহ হ্রাস করুন

আপনার বাচ্চা যদি বোতলে খাওয়ায় অভ্যস্থ হয়ে থাকে,বোতলের নিপলের ছিদ্রটি ছোট হওয়া নিশ্চিত করুন এবং সেটির কোনওকিছুই এমন বড় হবে না যা থেকে প্রচুর পরিমাণে দুধ বেরিয়ে আসে।এটি দুধের প্রবাহে নিয়ন্ত্রণ আনতে সহায়তা করতে পারে এবং শিশুটি তার নিজের গতিতে স্বাচ্ছন্দে পান করতে সমর্থ হয়।আর যখন স্তন দুধ পান করানোর প্রসঙ্গ আসে,খুব বেশি প্রবাহকে এড়িয়ে চলতে প্রথমে স্তন থেকে কিছুটা দুধ পাম্প করে বের করে দিন এবং তারপর আপনার সন্তানকে পান করতে দিন।

3. নানা ধরনের দুধে পরিবর্তন করুন

আপনার ছোট্টটি যদি গরুর দুধ পান করার পর তা উগরে ফেলে তবে সে সম্ভবত ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকতে পারে।অতএব তাকে সয়া দুধ দেওয়া ভাল হতে পারে এবং লক্ষ্য করুন এক্ষেত্রে তার অবস্থায় কোনও পরিবর্তন আসে কিনা।কিছু বিরল ক্ষেত্রে,যে সকল শিশুদের প্রাকৃতিক বা যে কোনও ধরনের দুধে অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে তাদের জন্য বিশেষ ফরমূলা দুধের প্রয়োজন হতে পারে।

নানা ধরনের দুধে পরিবর্তন করুন

4. অল্প পরিমানে দুধ খাওয়ান কিন্তু বারে বারে

একটি কমজোরী বা দুর্বল পেটের ভালভের কারণে আপনার শিশুর যে পরিমাণ দুধ পান করা উচিত তা সে তার পেটে ধরে রাখার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে।সুতরাং আপনি তাকে খাওয়ানোর সময় সীমিত পরিমাণে দুধ পান করানোর চেষ্টাই করতে পারেন,একই সাথে খাওয়ানোর সংখ্যার ব্যবধান বাড়িয়ে তুলতে পারেন।এটি তার পুষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট ট্র্যাকের মধ্যে ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে এবং কার্যকরভাবে দুধ হজম করতে সহায়তা করতে পারে।

5. আপনার নিজের ডায়েটে পরিবর্তন আনুন

আপনার নিজের ডায়েটে অ্যালার্জিযুক্ত পদার্থের উপস্থিতি আপনার শিশুর উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে যেহেতু তারা আপনার দুধ থেকেই তাদের সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়আপনি যদি সম্প্রতি আপনার ডায়েটে নতুন কিছু সংযোজন অথবা পরিবর্তন করে থাকেন তবে সেগুলিকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন এটি দেখার জন্য যে এগুলি বাদ দেওয়ার ফলে তা আপনার বাচ্চার বমি বন্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে ওঠে কিনা।বচ্চার বমি হওয়ার জন্য দায়ী মূল কারণটিকে যতপক্ষণ না খুঁজে বের করতে পারেন ততক্ষণ আপনার ডায়েটে একটা সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা করুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার ডায়েট পরিকল্পনা করুন।

আপনার নিজের ডায়েটে পরিবর্তন আনুন

6. আরামদায়ক গতিতে খাওয়ানোর জন্য এর সেশনগুলিকে ভাগ করে নিন

আপনি আপনার ছোট্টটিকে খুব হুটোপাটি করে না খাওয়ানোর ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন।একটি শান্ত জায়গায় গিয়ে তাকে ধীরে ধীরে খাওয়ান এবং তার নিজের গতিতে পান করতে দিন।খাওয়ানো হয়ে গেলে তাকে শিথিল হতে দিন এবং ধীরে ধীরে আলতো করে পিঠ চাপড়ে দিয়ে ঢেকুর তোলানএমনকি ঢেকুর তোলানোর পরেও একটা নিয়মিত চলতি রীতি অনুযায়ী তাকে আধ ঘন্টার জন্য শুইয়ে দিন।

আপনার বাচ্চার ঘুমের মধ্যে কি তার বমি হওয়া থেকে শ্বাসরধ হয়ে যাওয়া সম্ভব?

আপনার বাচ্চার যদি বমি করার প্রবণতা থাকে তবে তার ঘুমের মধ্যে বমি থেকেই তার নিজের শ্বাসরোধ হয়ে যেতে পারে কিনা সে বিষয়ে আপনার চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক।সর্বোপরি,বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে যতক্ষণ না আপনার শিশু তার পিঠের উপর ভর দিয়ে চিৎ হয়ে ঘুমাচ্ছে(প্রস্তাবিত অনুযায়ী) ততক্ষণ এর সম্ভাবনা কমএকইভাবে আবার যতক্ষণ না আপনার ছোট্ট ব্যক্তিটির বায়ুপথ পরিষ্কার করতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও নির্দিষ্ট শর্ত না থাকে,যেমন একটি চেড়া তালু(ক্লেফট প্যালেট),ততক্ষণ তার নিজের বমিতেই তার শ্বাসরোধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

কখন এটি চিন্তার হয়ে ওঠে

পূর্বের উল্লেখানুযায়ী,সধারণত অনুপযুক্ত খাওয়ানো এবং বহিরাগত উপাদানগুলির কারণে বমি হয়ে থাকে।এই সমস্যাগুলির সমাধান সহজেই করা যেতে পারে এবং বমি হওয়ার সম্ভাবনাগুলিকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।তবে আপনার লক্ষ্য করা বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষণ কোনও সমস্যার উপস্থিতিকে নির্দেশ করার কারণে আবশ্যিকভাবেই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

  • যদিও বেশিরভাগ শ্লেষ্মা বমির ঘনত্ব বমি করে উগরে তোলা দুধের ঘনত্বের অনুরূপ হয়ে থাকে তবে আবার এমন একটি পরিস্থিতিও হতে পারে যখন শ্লেষ্মা বেশ ঘন হয়ে থাকে।এরপর শ্বাস নেওয়ার সময় এটি দুর্ঘটনাক্রমে শিশুর শ্বাসরোধের কারণ হয়ে উঠতে পারে যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা এবং আরও জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। যদি এটি ফুসফুসে প্রবেশ করে তবে এটি বেশ মারাত্মক হতে পারে এবং কোনও অ্যাসপিরেটর ব্যবহারের দ্বারা অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে।শ্লেষ্মাকে পাতলা করে তুলতে স্যালাইন ড্রপগুলি ব্যবহার করা হয়
  • অনেক সময় আপনি হয়ত শিশুর বমিতে রক্তের চিহ্ন অথবা এমনকি যথেষ্ট পরিমাণে রক্তের উপস্থিতি দেখা যাওয়া লক্ষ্য করতে পারেন।তার মুখের ভিতরের একটি আঘাত থেকেও এই রক্ত এসে থাকতে পারে,।যে কারণে সে প্রথমের দিকে কিছুটা রক্ত গ্রাস করে ফেলতে পারে।কিছু ক্ষেত্রে,জোরাল বমি বা বমির পুনরাবৃত্তি হলে খাদ্যনালীর কলাতে প্রদাহ হতে পারে,এর ফলে অভ্যন্তরীণভাবে রক্তক্ষরণ হতে পারেতবে রক্তটি যদি গাঢ় বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু সেটি পরীক্ষা করতে পাঠানোর জন্য হয়ত আপনার কাছে এর একটি নমুনা চাইতে পারেন।যদি এর মধ্যে পিত্ত পাওয়া যায়,তবে এটি অন্ত্রের মধ্যে একটি বাধার উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে,যার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসাগত মনোনিবেশের প্রয়োজন হবে
  • বেশিরভাগ বাচ্চাদের বমি করে দুধ উগরে তোলার প্রবণতা থাকতে পারে এবং তারা এক্ষেত্রে শান্ত হয়ে থাকে বা এ সম্পর্কে উদাসীন আচরণ করে বলে মনে হয়।তবে আপনার বাচ্চা যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে কান্নাকাটি করে চলে এবং বমি করার পরে ব্যথা হয় বলে মনে হয়,সেক্ষেত্রে অবিলম্বে তাকে ডাক্তারের কাছে আপনার নিয়ে যাওয়া উচিত।বমির পর্বটির পরে গুরুতর ব্যথা অবরুদ্ধ অন্ত্রের উপস্থিতি বা তাৎপর্যপূর্ণ এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন এমন একটি অন্ত্রের পরিস্থিতিকে নির্দেশ করতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে,আপনি হয়ত আপনার শিশুর তলপেটটি বাইরের দিকে ফুলে উঠতে দেখতে পারেন।এমনকি পেটে স্পর্শ করার দ্বারা এটি এর কোমলতা সম্পর্কে আপনাকে সচেতন করতে পারে।পেটে গ্যাস অথবা এমনকি অন্যান্য পদার্থগুলির অস্তিত্বের সাথে এটির বেশ মিল আছে।এটি আবার অন্ত্রের বাধা হজমে বা পাচনতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যারও ইঙ্গিত দিতে পারে।যে কোনও ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসকের দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া সবচেয়ে ভাল হবে।
  • যদি আপনার শিশুটি এর আগে বমি না করে থাকে (নূন্যতম,ঘন ঘন নয়)কিন্তু সে পড়ে যাওয়ার পর অথবা সামাণ্য বলে মনে হওয়া আঘাত পাওয়ার পর বমি করা শুরু করে তবে সেক্ষেত্রে এটি অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।আপনার শিশু সম্ভবত একটি আঘাতে(ছোটখাটো অথবা বড় ধরনের)ভুগতে পারে এবং বমি হওয়ার দ্বারা দেহ এটির প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।যদি নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে আপনার বাচ্চার হয়ে থাকা বমিটি নিয়ন্ত্রণহীন এবং বার বার এর পুনরাবৃত্তি হতে থাকে তবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান

শিশুরা কেন দুধ অথবা শ্লেষ্মা বমির আকারে উদগ্রীব করে তা জানার পাশাপাশি কীভাবে সেটির সমাধান করা যায় সেটি জানাও গুরুত্বপূর্ণ।যেহেতু শর্তটি বেশ স্বাভাবিক,তাই শান্ত থাকা এবং এর পিছনের কারণটি সন্ধান করা সবচেয়ে ভাল,তবে প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে কখনই ইতস্তত বা দ্বিধাবোধ করবেন না।