শিশু

শিশু মুখের মধ্যে হাত ঢোকায় – কারণ এবং মোকাবিলা করার উপায়

অনেক শিশুর তাদের মুখের মধ্যে আঙুল পুরে দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে সেটিকে চুষতে থাকার ঝোঁক থাকে। এবং যদি আপনি সেটি টেনে বের করে আনতে চান, তবে তারা আপনাকে খুব রাগ দেখাবে এবং জোর করে আবার পুরে দেওয়ার চেষ্টা করবে বা পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে কাঁদতে থাকবে।

কেন আপনার শিশু মুখের মধ্যে আঙুল রাখে?

Related Post
  • বেশিরভাগ সময় আঙুল চোষা হল তাদের উদ্দীপনা সামলানোর একটা উপায়। নির্দিষ্ট ব্যবস্থায় বা পরিবেশে, তাদের চারপাশে অনেক কিছুই চলতে পারে। সেটা বিভিন্ন মানুষজন হতে পারে, অনেক শব্দ হতে পারে, এবং এই সবই বেশ অভিভূত করতে পারে। কিছু চোষার অনুভূতি শিশুকে যেন একটি নিরাপদ অঞ্চলে ফিরিয়ে আনে, যে কারণে তারা সাধারণত মুখের মধ্যে তাদের আঙুল রাখে। এর সাথে সাধারণত হাই তুলতে থাকে বা মাথা এধার ওধার করে।
  • বাচ্চাদের আঙুল চোষার অন্য জনপ্রিয় কারণটি সুস্পষ্ট। তারা ক্ষুধার্ত। খিদে পেলে সব বাচ্চারা কাঁদে না। তারা বুঝতে পারে না যে শুধু স্তনে দুধ থাকে, এবং ভাবে যে চুষলেই দুধ পাবে। তাই তারা দুধ খাবার জন্য আঙুল চোষার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে, এটা তাদের মায়েদের বোঝানোর উপায় যে তারা ক্ষুধার্ত। বৃদ্ধির বয়সে, এমনকি খাওয়ানোর পরেও, চোষার প্রবণতা থাকতে পারে এবং আঙুল ব্যবহার করেই তারা সন্তুষ্ট হবে।
  • অনেক উদ্দীপনা মোকাবিলা করা ছাড়াও, আঙুল চোষা হয়তো শিশুর নিজেকে কিছুতে ব্যস্ত রাখার একমাত্র উপায়, নাহলে সে উদাস হয়ে যেতে পারে। এমন হতে পারে যে দুপুরে সবাই ঘুমাচ্ছে, যখন শিশু জেগে আছে এবং যোগাযোগ করতে চাইছে। অন্য সময়ে, আপনার সন্তান চুপচাপ আপনি কি করছেন তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে বা কোনো ঝুলন্ত খেলনা দিয়ে খেলার চেষ্টা করতে পারে। সাধারণত সেটা আঙুল চোষার সাথেসাথেই চলতে থাকে, কারণ তারা সেটা দ্রুত আক্ষরিক অর্থেই তাদের হাতে পেতে পারে।
  • বাচ্চা যদি অস্বস্তি বোধ করে, যেমন মা যদি অন্য ঘরে থাকে, অথবা যদি তারা পিছন দিয়ে হাওয়া বের করতে চাইছে অথবা প্রস্রাব করে ফেলেছে, তবে সব শিশু কাঁদতে শুরু করে না। আপনার সন্তান হয়তো সেইসব শিশুদের মধ্যে একজন হতে পারে যারা সব কিছু হাতের বাইরে বেরিয়ে যাবার আগে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। এই সময় আপনি তাকে বুড়ো আঙুল চোষার দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করা অবস্থায় দেখতে পারেন।
  • ঘুমানোর চেষ্টা করার সময় আপনার শিশুর নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করার প্রয়োজন হতে পারে। কখনও কখনও, একটি শিশু এত ক্লান্ত থাকে যে তার ঘুমাতে অসুবিধা হয়। অনেক বাচ্চারা বুকের দুধ খেতে খেতে ঘুমায় এবং ঘুমানোর সময় মুখে স্তনবৃন্ত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে। আপনার সন্তান ঘুমানোর জন্য স্তনবৃন্তের পরিবর্তে আঙুল ব্যবহার করতে পারে এবং কোনও কণ্ঠস্বরের প্রতি বা তাকে ডাকলে সে সাড়া না দিতে পারে।
  • আপনার বাচ্চা বড় হয়ে গেলে, দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সময় মাড়িতে সামান্য ব্যথা সৃষ্টি হয় কারণ দাঁতগুলি তাদের শিকড় পর্যন্ত পৌঁছাতে চেষ্টা করে। প্রথম দাঁত মাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার আগে তখনও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে, তবে প্রক্রিয়াটি শিশু অনুভব করতে শুরু করে। এটি তার মাড়িকে জ্বালাতন করতে পারে, মুখ থেকে প্রচুর লালা পড়তে পারে, এবং শিশুর চিবানোর ইচ্ছা হতে পারে, শুধু মাড়ির উপর কিছুটা চাপ দেওয়ার জন্য, কারণ এটি ব্যথা উপশম করে। মুখের মধ্যে কয়েকটি আঙুল ঢুকিয়ে তাদের উপর চাপ দেওয়া সমস্যাটি সমাধান করার দ্রুততম উপায় এবং আপনার বাচ্চা সেটাই করাই বেছে নেয়।

কিভাবে আপনি বাচ্চাটিকে তার হাত/আঙুল মুখের মধ্যে ঢোকানো থেকে আটকাবেন?

  • আগেরটা আগে। সবচেয়ে স্পষ্ট কারণটি আগে দূর করুন। যদি আপনার বাচ্চা তার আঙুল চোষে, তবে সে ক্ষুধার্ত হতে পারে, বিশেষ করে যদি সে বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে বুকের দুধ খাওয়ান, অথবা যদি আপনার স্তনের কিছুটা বিশ্রাম দরকার হয় তবে বোতলজাত করা বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধ ব্যবহার করুন। এটি জানা আপনার জন্য একটি ভাল চিহ্ন হতে পারে যে তাকে স্বাভাবিকের তুলনায় আপনার স্তনে আরো বেশি সময় ব্যয় করতে হবে অথবা পূর্বের তুলনায় আরো বেশী ফরমূলা-ভিত্তিক খাওয়ানো প্রয়োজন। তার অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারকে জানাতে থাকুন।
  • যদি আপনার শিশু তার মুখের মধ্যে তার সম্পূর্ণ মুষ্টি ঢুকিয়ে দেয় এবং সেটাকে চুষতে ব্যাস্ত থাকে, তাহলে আপনি তাকে একটি খেলনার লোভ দেখিয়ে হাতটি সরিয়ে নিতে পারেন। খেলনা থাকলে সেটা সে দখল করতে চাইবে, যার ফলে মুখ থেকে তার হাত সরে যাবে। আঙুলের পরিবর্তে মুখের মধ্যে খেলনাটি ঢুকিয়ে দেওয়ারও ভালো সম্ভাবনা রয়েছে সুতরাং একটি নরম খেলনা বা পরিষ্কার এবং চর্বণযোগ্য কিছু বেছে নিন। কিছু স্মার্ট বাচ্চা এক হাতে খেলনা ধরে অন্য হাত চোষা চালিয়ে যেতে পারে।
  • এটি প্রথাবিরোধী পরামর্শ বলে মনে হতে পারে তবে শিশুকে তার নিজের মতো থাকতে দেওয়া ভালো। আপনি যে শান্ত সময়টুকু পান সেটা যতই স্বল্প হোক না কেন, উপভোগ করুন। যদি আপনার সন্তান নিজেই শান্ত হয়ে যায়, তবে এটি তার বিকাশ প্রক্রিয়ার জন্য এটি একটি ভালো চিহ্ন, কারণ সে ধীরে ধীরে নির্ভরতাহীন হয়ে উঠছে। তার ডায়াপার ভেজা কিনা বা সে কোনো অস্বস্তিতে আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন।
  • দাঁত ওঠার অনুভূতি আপনার ছোট্টটির জন্য বেশ বিরক্তিকর হতে পারে। দ্রুত আরাম পাওয়ার একটি উপায় হল ঠান্ডা করা হয়েছে এমন একটি টিথিং রিং ব্যবহার করা। কম তাপমাত্রা শিশুর দাঁত ওঠার অনুভূতি অনেকটা প্রশমিত করতে পারে এবং উদ্বেগ ছাড়াই সে রিংটি চিবাতে পারে। আপনার শিশু যদি ঠান্ডা তাপমাত্রা পছন্দ না করে, তাকে সেটি জোর করে দেবেন না। তাকে রিংটি আগে যেমন ছিল সেই অবস্থায় দিন।
  • অনেক শিশু তাদের পেট ভরা থাকাকালীনও চুষতে চাইতে পারে। এই ক্ষেত্রে, তার আঙুল খাওয়ায় অভ্যাস ছাড়াতে, আপনি একটি চুষি নির্বাচন করতে পারেন এবং প্রতিবার বুকের দুধ খাওয়ানোর পরে তাকে সেটি দিতে পারেন। এমন হতে পারে যে আপনার বাচ্চাটি চুষিটিকে পাশে রেখে দিয়ে তার হাত চোষা চালিয়ে যেতে পারে ।
  • ছোট্টটির সাথে নিযুক্ত হোন। তার সাথে কথা বলুন, গান শোনান, বা তার প্রিয় খেলনা দিয়ে খেলুন। একটুখানি উদীপনা তৈরি করে দিলে, সে ক্রমাগত তার আঙুল চোষা থেকে বিক্ষিপ্ত হবে এবং এটি তার অব্যাহত বিকাশে সাহায্য করতে পারে।

শিশুদের মুখে হাত রাখার কারণ সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ থেকে সম্পূর্ণরূপে অদ্ভুত কারণ পর্যন্ত বিভিন্ন হতে পারে। নিজের হাত চোষা তার নিজের তালুকে আরো ভালোভাবে চেনার একটি উপায়ও। কখন এরকম হচ্ছে তার একটি নোট রেখে এবং সেটি বন্ধ করার জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন উপায় বেছে নিলে, আপনার সন্তান বিভিন্ন উপায়ে নিজের চিত্ত বিক্ষিপ্ত করতে শিখবে অথবা অভ্যাসটি সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেবে।

Share
Published by
প্রিয়াংকা কুণ্ডু