In this Article
অনেক মা বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে চান কারণ তারা মনে করেন যে তারা বাচ্চাদের প্রয়োজনীয়তার জন্য যথেষ্ট দুধ উৎপাদন করছেন না। এই উদ্বেগটি সাধারণ এবং আপনি এটা জেনে নিশ্চিত হন যে এই উদ্বেগ আপনার একার হচ্ছে না। নতুন মা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য ও আরাম সম্পর্কে চিন্তিত হন এবং স্তন পানকারী বাচ্চাদের যথেষ্ট পরিমাণে দুধের প্রয়োজন হয় যেহেতু দুধই তাদের একমাত্র পুষ্টির উৎস।
পরিচর্যার সময়, মায়েদের খাদ্য সম্পর্কিত অনেক যত্ন নেওয়া উচিত কারণ এটি কেবলমাত্র স্তনের দুধের পরিমাণ এবং গুণমানকে প্রভাবিত করে না, মায়ের প্রসব পরবর্তী আরোগ্যলাভকেও প্রভাবিত করে। খাদ্যতালিকা তৈরির সময় একজন নিউট্রিশনিস্টের বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, যাতে তিনি বুকের দুধ বাড়াতে পারে এমন খাদ্যের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলির সামঞ্জস্য রেখে তালিকা প্রস্তুত করতে পারেন।
স্তন্যদুগ্ধের ঘাটতি হলে তার লক্ষণগুলি
বুকের দুধের সরবরাহ কম কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায় হল আপনার বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করা।
স্তন্যদুগ্ধের সঠিক সরবরাহ আছে কিনা তা জানার শ্রেষ্ঠ উপায় আপনার শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা। আপনার শিশুর সঠিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে নিয়মিত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তবে, শিশুর জন্মের পরে পরেই ওজন হ্রাস পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। প্রথম পাঁচ বা ছয় দিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি ঠিক হতে থাকবে এবং চৌদ্দ দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চাটি তার জন্মের সময়কার ওজন ফিরে পাবে।
আপনি যদি আপনার শিশুর ওজনের বিষয়ে নিশ্চিত না হন, তবে আপনার যথেষ্ট স্তন্যদুগ্ধ তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখুন:
- বুকের দুধ খাওয়ানো আপনার জন্য সুখকর এবং যন্ত্রণাহীন।
- আপনার শিশু বারংবার খেতে পছন্দ করবে। স্তন্যদুগ্ধ দ্রুত হজম হয় এবং আপনার শিশু বার বার তা পান করতে চাইবে। এর অর্থ এই নয় যে আপনি পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করছেন না। বেশিরভাগ শিশু 1.5 থেকে 2 ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ খেয়ে থাকে।
- আপনার স্তন প্রতিবার দুধ পান করানোর পর নরম এবং খালি হয়ে যাবে।
- খাওয়ার সময় আপনি আপনার শিশুর গিলতে থাকা লক্ষ্য করতে পারেন।
- খাওয়া শেষ হওয়ার পর আপনার বাচ্চা নিজেই বুকের থেকে সরে আসতে চাইবে
- আপনার শিশুর প্রতিদিন সাতবার মত প্রস্রাব হবে। মল হালকা হলুদ রঙের হবে যাতে কিছু দলা বা পিণ্ডের মতো থাকবে। শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হয় এমন বাচ্চারা দিনে বেশ কয়েকবার বা কখনো কেবল পাঁচ দিনে একবার মলত্যাগও করতে পারে। উভয় ধরনের পরিস্থিতিই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয় এবং আপনার এই সম্পর্কে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
নিম্নে বর্ণিত লক্ষণগুলির অর্থ স্তন্যদুগ্ধ কমে যাওয়া নয়, যদিও আপনার মনে হতে পারে যে সেগুলি কোনো গুরুতর সমস্যার নির্দেশক :
- সন্ধ্যায় তাড়াহুড়ো করে স্তন্যপান
- খাওয়ার সময়কাল হ্রাস পাওয়া
- বারংবার খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া
- আপনার স্তন থেকে দুধ না গড়ানো
- চাপ দিয়ে বের করতে গেলে সামান্য পরিমাণ বা একেবারেই দুধ নেই এমন
কিভাবে স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়?
বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপনি যা করতে পারেন তা এখানে দেওয়া হল:
- আপনার বাচ্চাকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাচ্চা স্তনবৃন্তটি মুখে ধরে রাখতে না পারে বা সেটি ভুল অবস্থানে থাকে তবে তাকে খাওয়ানো কঠিন হবে। অন্য কিছু শারীরবৃত্তীয় সমস্যার কারণে সঠিকভাবে খাওয়ানো ব্যাহত হতে পারে, পর্যাপ্ত স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদিত হওয়ার জন্য স্তন সম্পূর্ণ খালি হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যদি আপনার বাচ্চা সম্পূর্ণ খালি করতে না পারে, তাহলে আপনার দুধ বের করে দেওয়া উচিত।
- ঘন ঘন খাওয়াতে থাকলে স্তনের দুধ খালি করে ফেলা যাবে। 1.5 বা 2 ঘণ্টা অন্তর আপনার বাচ্চা যতক্ষণ চায় তাকে খাওয়ানো উচিৎ।
- আপনার দৈনিক নিয়ম থেকে বিরতি গ্রহণ করলে তা আপনাকে শিশুকে খাওয়ানোর রুটিনটি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। আপনার এবং আপনার শিশুর সুবিধা মতো দুই থেকে তিন দিন সময় দিয়ে একটি খাওয়ানোর নিয়ম তৈরি করুন।
- খাওয়ানোর সময় দুটি স্তনই ব্যবহার করুন। এক পাশেরটি খাওয়া হলে অন্যটি এগিয়ে দিন।
- যথাসম্ভব চুষি এবং দুধ খাওয়ানোর বোতল এড়িয়ে চলতে হবে।
- আপনার শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধই দিতে হবে এবং অন্য যে কোনো ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- নিজের প্রতি যত্ন নিন নিজের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে এবং আপনাকে শিশুর সাথে সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে।
- স্তন সম্পূর্ণ খালি হওয়া নিশ্চিত করতে আপনি একটি পাম্প ব্যবহার করতে পারেন। স্তন থেকে দুধ সম্পূর্ণ বের করে ফেলাই বুকের দুধ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায়।
স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি করে এমন শ্রেষ্ঠ 30 টি ল্যাক্টোজেনিক খাবার
যদিও কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয় নি যে নিম্নোক্ত খাবারগুলি স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবুও এই খাবারগুলি মায়ের স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি করার জন্য বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। এই খাবারগুলি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত এবং এগুলি কখনো পরিপূরক খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
1. মেথির বীজ
সারা পৃথিবীতে স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য বহু প্রজন্ম ধরে মেথি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ওমেগা -3 ফ্যাট সমৃদ্ধ যা আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিটা–ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম এবং লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য হিসাবে আপনি মেথি পাতাও ব্যবহার করতে পারেন। চা বানানোর সময়ও মেথি বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে বা সবজির তরকারীতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মেথি দেওয়া হয় রুটি এবং পুরী বা কচুরিতে।
২. মৌরির বীজ বা মৌরি
বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি, গ্যাস এবং পেটের ব্যাথা কমাতে মৌরি ব্যবহার করা হয়। ধারণা করা হয় যে এইসকল বীজের গুণাগুণ বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে পৌঁছায়। আপনি রাতে এক গ্লাস জলে এক চা চামচ মৌরি ভিজিয়ে রাখতে পারেন এবং সকালে তা পান করতে পারেন অথবা চা–এর মধ্যে দিয়েও পান করতে পারেন।
3. রসুন
রসুন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি, হৃদরোগ প্রতিরোধ, এবং প্রতিষেধক বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য সুপরিচিত। রসুন বুকের দুধের স্বাদ এবং গন্ধকে প্রভাবিত করতে পারে তাই এটি সীমিত ও সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
4. সবুজ পাতা ওয়ালা শাকসবজি
পালংশাক, পাতাকপি, মেথিপাতা, সরষে শাক জাতীয় সবুজ শাক–সবজি লৌহ, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেটের মত খনিজগুলির বড় উৎস। এগুলিতে প্রচুর ভিটামিন থাকে এবং স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বলে মনে করা হয়। দৈনিক ভিত্তিতে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তত এক প্রস্থ সবুজ শাক সবজি থাকা উচিত।
5. জিরা
জিরা স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করার সাথে সাথে হজমে সহায়তা করে এবং এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা, অম্বলের উপশমকারী হিসাবেও পরিচিত এটি ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। উপকার পেতে এটি স্যালাডে ব্যবহার করুন অথবা রাতভর জলে ভিজিয়ে রাখুন এবং ঐ জল পান করুন।
6. তিল বীজ
বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য বহু লোক তিলের বীজ বা তিল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন এই বীজ ক্যালসিয়ামের একটি অসাধারণ দুগ্ধ বর্জিত উৎস যা আপনার শিশুর বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রসবের পরে, মায়ের কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে এবং স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ক্যালসিয়াম বিশেষ প্রয়োজনীয়। আপনি আপনার দৈনন্দিন রান্নার মধ্যে তিল ব্যবহার করতে পারেন বা এটি দিয়ে মিষ্টি খাবার তৈরি করতে পারেন যেমন লাড্ডু এবং প্রতিদিন একটি করে খেতে পারেন।
7. পবিত্র তুলসী
পবিত্র বেসিল বা তুলসি মায়ের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করার সাথে সাথে এটি মন শান্ত রাখার গুণের জন্যও পরিচিত এছাড়া এটি পাচনতন্ত্রের গতি স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। তুলসি চা–এর মাধ্যমে গ্রহণ করলে এটি আপনাকে আরাম এবং স্বস্তি দেবে।
8. ওটমিল
এটি দেহে শক্তি যোগায় ও প্রসব পরবর্তী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য দুর্দান্ত। এটি আঁশযুক্ত বা তন্তু সমৃদ্ধ যা আপনার পাচনতন্ত্রের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আপনি ব্রেকফাস্টে ওটস্ খেতে পারেন বা ওটস্ কুকিজ তৈরি করতে পারেন। নিউট্রিশনিস্টরা বা পুষ্টিবিদরা স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি করতে যে কোনো খাদ্যতালিকাতেই ওটস্ যোগ করার সুপারিশ করে থাকেন।
9. কাঁচা পেঁপে
বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাঁচা পেঁপে মনে প্রশান্তি আনে এবং ভালো ঘুম আনে। আপনি সালাডের মধ্যে গ্রেট করে বা ঘষে নিয়ে কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। কাঁচা পেঁপে বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য অন্যতম সেরা ফল বলে মনে করা হয়।
10. গাজর
গাজর স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে এবং এটি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ যা বুকের দুধের মান উন্নত করে। স্যালাডের আকারে কাঁচা গাজর খান অথবা সকালে এক কাপ রস করে প্রাতরাশের সাথে পান করুন। গাজর বিশ্বের সর্বত্রই পাওয়া যায় এবং এটি বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য সেরা খাবারগুলির মধ্যে একটি।
11. বার্লি
বার্লি স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে এবং আপনাকে হাইড্রেটেড রাখে বা শরীরের জলস্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। আপনি এটা সালাডের সাথে নিতে পারেন অথবা রাতভর জলে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে পান করতে পারেন
12. শতমূলী
শতমূলী একটি উচ্চ তন্তুময় বা আঁশযুক্ত ভিটামিন এ এবং কে সমৃদ্ধ খাদ্য। এটি স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্যকারী হরমোনকে উদ্দীপিত করে। একটি সুস্বাদু খাবার বা জলখাবার বানাতে এটি অন্য সবজির সাথে মিলিতভাবে একটি প্যানে সিদ্ধ করে বা হালকা সাঁতলে নিন।
13. বাদামী চাল
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বাদামী চাল উপকারী। এটি স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমোনকে উদ্দীপিত করে বলে জানা যায়। এটা মায়ের জন্য শক্তিদায়ক এবং সুস্বাস্থ্যের পথনির্দেশকারী। একটি প্রেসারকুকার বা রাইসকুকারে এটি রান্না করুন এবং সবজি সহ খেতে থাকুন।
14. এপ্রিকট বা খুবানি
এপ্রিকট বা খুবানি হরমোন জনিত ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে থাকে এবং এটি প্রসবের আগে ও পরে উভয় সময়েই খাওয়া উচিত। এটি বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ও তন্তুবহুল বা আঁশযুক্ত খাদ্য আপনার সকালের ওটমিল খাদ্যতালিকায় এটি যোগ করুন।
15. স্যালমন মাছ
আপনি যদি তাজা স্যালমন পান তবে আপনার ডায়েটে এটি যোগ করা উচিত। এটি ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড বা ইএফএ সমৃদ্ধ যা একটি মহাখাদ্য বলে মনে করা হয় এবং বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটা দুধকে আরো পুষ্টিকর করে তোলে। আপনি বিভিন্ন উপায়ে সালমন মাছ খেতে পারেন – সিদ্ধ করা, গ্রিল করা, বা প্যানে ভেজে।
16. করলা
এই সবজির উচ্চ মানের পুষ্টিগুণ আছে। এটিতে প্রচুর জল থাকে যা মাকে হাইড্রেটেড রাখে। এটি সহজপাচ্য এবং স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম। যদিও অনেকেই করলার স্বাদ পছন্দ করেন না তথাপি আপনি এর জন্য কোনো সুস্বাদু উপায় খুঁজে বের করতেই পারেন।
17. মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ যা মাকে শক্তি সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভিটামিন–সি, বি–কমপ্লেক্স, এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। আপনি মিষ্টি আলু বিভিন্ন উপায়ে রান্না করতে পারেন যেমন মশলাদার এবং মিষ্টি খাবার।
18. কাজুবাদাম
এই মহাখাদ্য ভিটামিন ই এবং ওমেগা -3-তে সমৃদ্ধ। তার সাথে কাজুবাদামের পুষ্টি গুণ যাতে পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট উপস্থিত থাকে, এই বাদামগুলিকে মহাখাদ্যে পরিণত করে। দুধের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আপনি কাজুবাদাম কাঁচা খেতে পারেন বা এর পরিপূরকও খেতে পারেন। বিশ্বের অনেক অংশে, বাদামগুলিকে প্রচুর স্বাস্থ্যকর সুবিধার কারণে সবচেয়ে ভাল খাবার বলে মনে করা হয়, তাই মায়েদের পরিচর্যার জন্য ডাক্তারেরা কাজুবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন।
19. শুলফা বীজ
আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে বাড়িতেই দ্রুত বুকের দুধ বাড়ানোর কথা ভাবেন তবে উত্তরটি হল শুলফা বীজ। এই উপাদানটি ম্যাগনেসিয়াম, লোহা এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হয়, এটি যে কোনও খাবারের সাথে যুক্ত করার জন্য আদর্শ যেখানে বুকের দুধ উৎপাদনকে লক্ষ্য করা হয়।
20. জল
বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কী খাওয়া উচিত তা বিবেচনা করার সময়, লোকেরা প্রায়ই জলকে উপেক্ষা করে। দুধ উৎপাদন উন্নত করার জন্য সঠিকভাবে হাইড্রেটিং অপরিহার্য, তাই সারা দিন জুড়ে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার কথা মনে রাখবেন।
21. সজনে ডাঁটা
লৌহ এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ উচ্চমানের সবজি, সজনে ডাঁটা গর্ভাবস্থায় দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিচিত, দুপুরের খাবারের সময় বা প্রাতরাশের সময় এই উদ্ভিজ্জ যথেষ্ট পরিমাণে খেলে যথেষ্ট দুধ উৎপাদন নিশ্চিত করতে আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
22. দুধ
দুধ, বিশেষ করে গরুর দুধ ফোলিক এসিড, ক্যালসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়ে ভর্ত্তি থাকে, এটি কেবল দুধের উৎপাদনেই সহায়তা করে তা নয়, এর সাথে দুধকে আপনার শিশুর জন্য সুষমভাবে পুষ্টিকর করে তোলে। বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে দিনের মধ্যে দুবার এক গ্লাস করে দুধ পান করা নিশ্চিত করতে হবে।
23. ছোলা
ছোলা প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ এবং নিজেই একটি দারুণ খাদ্য এবং এটি যে কারোর জন্য স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়, তবে ছোলাতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম থাকায় আপনার বুকের দুধের উৎপাদনকে বাড়িয়ে তোলে।
24. বীট
অন্যতম সেরা একটি পুষ্টিকর সবজি, বীট একটি রক্ত পরিশোধক, ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর খনিজে সমৃদ্ধ যেগুলির মধ্যে সেইসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, এছাড়াও বীট আপনার বুকের দুধে শিশুর রক্ত পরিশোধন বৈশিষ্ট্য থাকাও নিশ্চিত করে।
25. ডাল
প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন এবং প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে ডাল বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত একটি সাধারণ উপাদান, কিছু ডালে থাকা ডায়েটারি ফাইবার আপনার খাদ্যে যোগ করলে আপনি এমন একটি উপাদান পাবেন যা কেবলমাত্র স্বাস্থ্যকরই নয় সেটি বুকের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
26. টোফু
টোফু খনিজ, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম এবং প্রচুর প্রোটিন যুক্ত একটি অসাধারণ খাদ্য, এটি সাধারণত বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে পূর্ব এশিয়ায় ব্যবহৃত হয়। টফু, ডাল এবং সবুজ পাতাযুক্ত সবজির সঙ্গে নাড়াচাড়া করে আপনি একটি সুষম এবং স্তন্যদুধ বৃদ্ধিকারী খাদ্য পাবেন যা আপনাকে সুস্থ রাখে এবং অত্যন্ত স্বাস্থবান করে তলে।
27. তরমুজ
তরমুজ ফ্রুকটোজ, ফাইবার, এবং অবশ্যই জল দিয়ে সমৃদ্ধ হয়। এটি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখে, অপরিহার্য খনিজগুলি দিয়ে আপনার শরীরকে ভর্ত্তি করে এবং স্তন্যদুধের সরবরাহ বজায় রাখতে বা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। জল পান করে সঠিকভাবে হাইড্রেটেড থেকে এবং তরমুজের মত খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে মায়েরা বুকের দুধ উৎপাদনের সমস্যাগুলির সাথে লড়াই করতে পারবেন।
28. সবুজ চা
সবুজ চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজগুলি দ্বারা পূর্ণ যা শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করে, প্রতি দিন এক গ্লাস সবুজ চা পান করলে আপনার সিস্টেমকে পরিশুদ্ধ করবে, এটি রক্ত সঞ্চালন এবং কোলেস্টেরল ঠিক রাখতেও সাহায্য করবে এবং কিছু দেশে মনে করা হয় যে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
29. আঙুর
পৃথিবীর কিছু অংশে আঙুরকে একটি মেগা ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এটি ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ, সিট্রিক এসিড, ফ্রুকটোজ এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য ফাইবার সমৃদ্ধ। বুকের দুধ পান করাচ্ছেন, বিশেষত স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন আছে এমন মায়েদের খাদ্যতালিকায় এই ফলটি অন্তর্ভুক্ত করা খুবই স্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়।
30. কারি পাতা
ভারতীয় উপমহাদেশে কারি পাতা একটি খুব রুচিকর বলে মনে করা হয়, কারণ এই সুস্বাদু পাতাটি মেলানিনকে বাড়িয়ে তুলতে, রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে এবং আপনার শরীরে পুষ্টি আত্তীকরণের ক্ষমতা বাড়ায়, সেগুলিতে এমন খনিজও রয়েছে যেগুলি মায়েদের পরিচর্যায় তাদের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।
পরিচর্যার সময় বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি একটি কঠিন বিষয় হতে পারে, এটা বোঝা প্রয়োজন যে খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়, ডাক্তার কমপক্ষে 30 মিনিট ব্যায়াম করার সুপারিশ করেন যা মায়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো করতে সাহায্য করে। এটি দারুণভাবে সুপারিশ করা হয় যে আপনি ধ্যান করুন এবং শান্ত থাকার ক্রিয়াকলাপগুলি খুঁজে বের করুন, মানসিক চাপ কম বুকের দুধ উৎপাদনের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি। আপনার সঙ্গী, সেবা–প্রদানকারী এবং ডাক্তারদের মধ্যে যোগাযোগ থাকলে আপনার জীবনকে অনেক সহজ করে তুলবে।
প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা দুধ সরবরাহ হ্রাস করার জন্য পরিচিত। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য চাইতে পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখবেন, স্তন্যদুধ বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের পরিকল্পনা করার সময়, আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আপনার শরীরের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এটি আপনার জন্য অপরিহার্য যে আপনি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বজায় রাখেন যার মধ্যে স্তন্যদুধ বাড়াতে সহায়তা করে এমন উপাদানগুলিও থাকবে, কিন্তু আপনার পুরো খাদ্যতালিকা যেন কেবলমাত্র বুকের দুধ সরবরাহ বৃদ্ধি করার জন্য ফোকাস করে তৈরি না হয়। নিশ্চিত করুন যে আপনি যেন নিয়মিতভাবে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলেন, সমস্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা সাক্ষাৎকার বজায় রাখুন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের সাহায্য চাইবেন যিনি আপনার প্রয়োজনীয় খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করে দেবেন যা আপনার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করতে সহায়তা করবে।