আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ,মাইলস্টোন এবং যত্ন

আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ,মাইলস্টোন এবং যত্ন

46 তম সপ্তাহে, একটা শিশুর ভীষণভাবে উন্নতি ঘটে এবং সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোনগুলি অতিক্রম করেসুতরাং এই বিকাশ এবং মাইলস্টোনগুলি কি? আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনার কি করা উচিত?পড়ুন এবং শিখে নিন আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর জন্য যা কিছু জানার প্রয়োজন সেই সকল বিষয়ে

46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ

একজন শিশু তার প্রথম বছরে খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে,কিন্তু প্রথম বছরের শেষের দিকে, তার বৃদ্ধির গতি কমে যায়হামাগুড়ি দেওয়া থেকে,সে শুরু করে কোনো আসবাব পত্র ধরে উঠে দাঁড়াতেএমনকি কিছু বাচ্চা আবার এই বয়সেই তাদের প্রথম কয়েক ধাপ পা ফেলতে পারে হাঁটার জন্যতাদের সংবেদনশীল এবং জ্ঞানীয় বিকাশের পাশাপাশি, আপনার বাচ্চার দৈহিক বিকাশও ঘটতে থাকেযাইহোক, এই সময়ে আপনাকে আপনার বাচ্চার প্রতি যত্নশীল হয়ে উঠতে হবে এবং আপনার ছোট্ট সোনার দিকে আপনার সজাগ দৃষ্টি বহাল রাখতে হবে যেহেতু সে এখন একজন কৌতুহলী অন্বেষণকারী হয়ে ওঠে তাই যা কিছুই সে দেখতে পায় তুলে নিয়ে মুখে পুরে দেয়

46 সপ্তাহে উন্নয়ণমূলক মাইলস্টোনগুলি

এই সময়ে আপনার সন্তান এক বছর পূর্ণ করার থেকে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহই পিছিয়েসে স্বাধীন হতে থাকে, এবং তার সার্বিক বিকাশের এক লক্ষণীয় উন্নতি ঘটেএই পর্যায়ে,সে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন দ্রুত অর্জন করবে

1.সঞ্চালন দক্ষতা

এই সময় থেকে,বাচ্চা বসতে পারে এবং কোনো কিছুকে ধরে সে উঠে দাঁড়াতেও পারেসারা বাড়ি হামা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো সাধারণ ব্যাপারএমনকি এই বয়সে আপনি আপনার সন্তানকে তার পায়ের প্রথম পদক্ষেপ ফেলতেও দেখতে পারেন

2.হাত ও চোখের সমন্বয় স্থাপন

এই পর্যায় থেকে, আপনার ছোট্ট সোনার হাত ও চোখের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন ও বিকশিত হতে থাকবেসে অঙ্গুলির দ্বারা যে সকল খাবার খাওয়া যায় সেগুলির সব কিছুই খেতে সক্ষম হবে তার নিজের তর্জনী এবং বুড়ো আঙ্গুল ব্যবহার করে তার মাঝে সেই খাবার গুলিকে ধরার মাধ্যমেতার ক্ষুদ্র পেশীগুলো তাকে সাহায্য করবে কোনো বস্তুকে তুলে নিতে যেমন তারা তাদের ব্লক,খেলনাগুলিকে তুলে নিতে পারে ও একহাত থেকে অন্য হাতে সেগুলিকে নিতে পারে,সেগুলিকে চিহ্ণিত করতে পারে এবং তার আঙ্গুলের সাহায্যে খোঁচা দিতেও পারে

3.যোগাযোগ দক্ষতা

এই বয়সে,আপনি তার যোগাযোগ দক্ষতাতেও কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেনসে অঙ্গভঙ্গীগুলোকে বুঝতে সক্ষম হবে,যখন তাকে টাটা বলবেন সে হাত নাড়াবে,কিছু শব্দ যেমনমামা,দাদা,টাটা এগুলি বলতে সমর্থ হবে এবং মুখে অনেক বিড়বিড়ানির শব্দও করবেএছাড়াও সে যখন খেলবে তার মুখ থেকে আপনি অনেক শব্দ স্খলনও শুনতে পেতে পারেন

4.জ্ঞানীয় দক্ষতা

যেহেতু আপনার বাচ্চা তার প্রথম জন্মদিনের মাথায় অবস্থান করে,আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে,সে বস্তুর স্থায়িত্বের ধারণা সম্পর্কে বুঝতে শুরু করবেসে লুকানো বস্তু খুজতে আরো বেশী পারদর্শী হয়ে উঠবেএমনকি সে আপনাকে ও অন্যদেরকে দেখে অনুকরণ করার চেষ্টাও শুরু করতে পারেতার দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হওয়া থেকে সে রঙের প্রতি ও রঙীন ছবি সহযোগে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করবেসে বস্তু এবং খেলনাগুলিকে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়ে উঠবে সেগুলির রঙ,আয়তন এবং আকৃতি অনুযায়ী

খাওয়ানো

46 সপ্তাহে আপনার বাচ্চা শক্ত খাবার যেমন ইডলি অথবা প্যান কেক খেতে সক্ষম হয়ে উঠবেতাকে এগুলো নিজেকেই খেতে দেওয়ার অনুমতি দিন কিন্তু বিষম লাগা থেকে তাকে প্রতিরক্ষা করতে সে যাতে খাবারগুলো থেকে একবারে একটাই ছোটো টুকরো মুখে ঢোকায় সেটি নিশ্চিত করবেনএছাড়াও আপনি তাকে আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া যায় এরকম খাবার যেমন সবজিকে লম্বা লম্বা ফিতের মত কেটে সিদ্ধ করে,ফল যেমন কলা,সবেদা,কমলালেবু,মিষ্টি সরবতী লেবু ইত্যাদি দিতে পারেনতবে আপনার বাচ্চাকে খেতে দেওয়ার আগে ফলগুলিকে খোসা ছাড়িয়ে বীজমুক্ত করা নিশ্চিত করুন

আপনার ছোট্ট অণ্বেষণকারীর হামা দেওয়া ও সক্রিয়ভাবে বাড়ির মধ্যে অণ্বেষণ শুরু করা থেকেই সে তার অনেক ক্যালোরি বা শক্তি হারাবেসুতরাং, তাকে খেতে দিন পুষ্টিকর খাবার যেমন চটকানো ফল এবং সবজিআপনি তাকে সবজির খিচুড়িও দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন দুপুরে ও রাত্রের খাবারেএই বয়স থেকেই শিশুরা অনিরামিষ খাবার খাওয়া শুরু করতে পারে, যেমন বিশুদ্ধ রান্না করা চিকেন বা মুরগীর মাংস,সেদ্ধ করা বা ভাজা ডিমও দিতে পারেনএছাড়াও আপনি তাকে দইয়ের লস্যি, ওট ইত্যাদি দিতে পারেনসব কিছুর পাশাপাশি এই সময়ে আপনার বাচ্চার প্রচুর পরিমাণে জল পান করাও অপরিহার্যআপনি এই সময়েও বাচ্চাকে আপনার বুকের দুধ খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে পারেনযাইহোক, তাকে দিনের বেলায় 3-4 বারের বেশী বুকের দুধ খাওয়ানো এড়িয়ে চলুন অন্যথায় সে শক্ত খাবার খেতে পারবে নাআপনি যদি আপনার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে অসমর্থ হন,তবে আপনি তাকে 20-30 আউন্সের মত ফরমূলা দুধ খাওয়াতে পারেন

খাওয়ানো

ঘুমানো

এর আগে হয়ত আপনার শিশু আপনাকে অনেক নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করিয়েছে কিন্তু আর হয়ত সেটি সে করাবে নাসে দিনের বেলায় 1-2 ঘন্টার জন্য 2 টো ঘুম সেরে নিতে পারে এবং রাত্রিবেলায় সে 10-13 ঘন্টা ঘুমাবেযাইহোক,যদি আপনার সন্তান অসুস্থ থাকে,তার ঘুমের সমস্যা হতে পারে

46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের পরামর্শ

আপনার 46 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের কিছু পরামর্শ এখানে উল্লেখ করা হল

  • এখন আপনার শিশু একজন হামাগুড়ি বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে,সে ক্রুজের গতিতে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবে, প্রতিটা ফাটলে এবং কোণে কোণে ও বাড়ির প্রতিটি ছোট ছোট বস্তুতেও সে অণ্বেষণ করে বেড়াবেসুতরাং, বাড়ির প্রতিটা জিনিস ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার ও নির্বীজিত রাখা সুনিশ্চিত করুন
  • আপনার শিশু এই সময়েই তার দাঁত ওঠার পর্বের মধ্য দিয়ে যায় এবং সে সবকিছুই তার মুখে ঢুকিয়ে ফেলতে পারেসুতরাং, তার খেলার সময় অথবা হামা দেওয়ার সময় তার উপর আপনার সজাগ দৃষ্টি রাখা সুনিশ্চিত করুন
  • সে এমনকি উঠে দাঁড়াতেও পারে যখন সে কিছু ধরে থাকে,সুতরাং ভীষণ সতর্ক থাকুন যখন সে এটি করবেযখন সে এরকম কাজে লিপ্ত হবে সেই সময়ে যেন তার মাথায় বা দেহের অন্যান্য অংশে আঘাত না লাগায় সে বিষয়টির দিকে নজর রাখবেন
  • এই বয়সে বাচ্চারা নিজে নিজে খাওয়া শুরু করতে পারে এবং আরো বেশি স্বাধীন হয়ে ওঠেতবে আপনার বাচ্চা খাবার সময় তার খাবারের মধ্যে একেবারে বেশী করে কামড় দিয়ে বসবে না সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন
  • প্রতিদিন আপনার বাচ্চার কাছে বই পড়ুন, এটি তাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে কোনো জিনিসের রঙ,আকার,এবং সেগুলির নাম গুলিকে
  • একটি স্ট্রলারে করে তাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান,যাতে সে নতুন মানুষজনের সাথে মিশতে পারে,যদিও সে তাদেরকে খুব ভালো একটা বুঝতে পারবে না, কিন্তু এটা অন্তত তার সামাজিক দক্ষতার বৃদ্ধি করবে
  • এই সকল রুটিনই নির্দিষ্ট সময় মত অনুসরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণসুতরাং, আপনার ছোট্ট সোনার প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী খাবার খাওয়া ও ঘুমানোটিকে ঠিক রাখা নিশ্চিত করুন

পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকাকরণ

এই 46 সপ্তাহ বয়সে আপনার বাচ্চাকে মূলত তিন ধরণের ভ্যাক্সিন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়

1.মৌখিক পোলিও ভ্যাক্সিন

মৌখিক পোলিও ভ্যাক্সিন ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বাচ্চাকে নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী দেওয়ানো প্রয়োজনশিশুর জন্মের সময় থেকে তার 46 সপ্তাহ বয়সে দেওয়া এই মৌখিক পোলিও ভ্যাক্সিনের মধ্যে এটি তার দ্বিতীয় ডোজ

2.হাম,মাম্প এবং রুবেলা (MMR)

শিশুদের প্রথম এই ভ্যাক্সিনগুলো দেওয়ানো হয় তাদের এই বয়সেনাম প্রস্তাব হিসাবে,এটি শিশুদের তিনটি রোগ যথা মাম্প,হাম এবং রুবেলা থেকে রক্ষা করে

হাম,মাম্প এবং রুবেলা (MMR)

3.টাইফয়েড কঞ্জুগেট ভ্যাক্সিন

এই সময়েই টাইফয়েড CV এর প্রথম ডোজটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে তাকে দেওয়া হয়

4.জাপানিজ এন্সিফেলাইটিস ভ্যাক্সিন (JE)

এটি শুধু মাত্র রোগ প্রবণ অঞ্চলেই প্রয়োগ করা হয়

টিকাকরণ ছাড়াও আপনার শিশুর ডাক্তারবাবু তার চোখ, হৃদস্পন্দন, নাড়ি, নিতম্ব এবং তার সঞ্চালন দক্ষতা পরীক্ষা করে দেখবেনডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চার মাথার আকার,দৈর্ঘ্য এবং ওজন পরিমাপ করবেনএছাড়াও ডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চার রক্ত পরীক্ষা করানোর কথাও বলতে পারেন সীসা ঘটিত বিষক্রিয়া বা অ্যানিমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে সেটি নির্ধারণ করার জন্য

খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ

খেলাধুলা এবং অন্যান্য কিছু ক্রিয়াকলাপগুলি হল বাচ্চাদের কিছু শেখানোর মজাদার একটা পদ্ধতিএগুলি আপনার ও আপনার বাচ্চার মধ্যে বন্ধনকে দৃঢ় করতেও সাহায্য করেএছাড়া আপনার বাচ্চাকে শিক্ষাও দেয়

1.হারিয়ে যাওয়া বস্তুগুলিকে খুঁজে বের করা

একটা খুব উজ্জ্বল বস্তুকে নিয়ে আপনার সন্তানকে দেখানতারপর সেটাকে এমন ভাবে লুকান যাতে সে সহজেই সেটাকে খুঁজে পেতে পারে এবং এটিও লক্ষ্য রাখবেন যে সে যেন আপনাকে নজর করে যখন আপনি সেটা লুকাবেনতারপরেই তার দিকে ফিরে তাকে প্রশ্ন করুন সেটা কোথায়?প্রথম প্রথম তাকে সেটি খুঁজে পেতে সাহায্য করুনএকবার সে খেলাটা বুঝতে শুরু করলে আপনি তাকে সেটি একাই খুঁজতে দিন,এমনকি বস্তুটিকে এমনভাবে লুকান যাতে সে লুকানোর সময় না দেখতে পায়

এই খেলাটি তাকে সাহায্য করবে তার সূক্ষ্ম সঞ্চালন দক্ষতার বিকাশে এবং তার সাথে বস্তুর স্থায়িত্ব সম্পর্কেও একটা ধারণা তৈরী হবে

2.ময়দা নিয়ে খেলা

এটা একটা অপরিষ্কার কার্যকলাপ এবং সেই কারণে আপনার যত্ন নেওয়া উচিত যাতে ময়দার গুঁড়ো আপনার সন্তানের চোখের ভিতরে না পড়ে যায়একটা ট্রে নিয়ে তার উপরে কিছুটা ময়দা ছড়িয়ে দিনতারপর আপনার বাচ্চাকে তার আঙ্গুলগুলির দ্বারা সেগুলিকে অনুভব করতে দিনএমনকি আপনি আবার তার উপরে কয়েকটি ছোট গাড়ি অথবা খেলনাও রেখে দিতে পারেনআপনার বাচ্চা এই ক্রিয়াটি করার চেষ্টা করে তার সূক্ষ্ম সঞ্চালন দক্ষতা এবং হাত ও চোখের সমন্বয়ে

কখন একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবেন

টিকাদান ছাড়াও আপনি আপনার বাচ্চার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করতে পারেন যদি নিম্নোলিখিত লক্ষণগুলো আপনি লক্ষ্য করেন আপনার সন্তানের মধ্যে

  • যদি আপনার সন্তান হামাগুড়ি না দিতে পারে,মুখে নানারকম বুলি না আওড়াতে পারে,কিছু সহজ শব্দ যেমনমামা,দাদাএগুলি না বলতে পারে অথবা কোনো জিনিসকে যেমনখেলার ব্লক অথবা তার খেলনাকে হাতে করে না ধরে রাখতে পারে,তবে সেক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করবেন
  • যদি আপনার বাচ্চা বসা বা দাঁড়াবার সময় নিজের ভারসাম্য রক্ষা না করতে পারে, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা উচিত

স্বাস্থ্যকর খাদ্য,ভালোবাসা এবং যত্ন এগুলির সবকটিই আপনার শিশুর জন্য প্রয়োজনতাই এইসব কিছুই তাকে প্রদান করুন এবং বিকশিত হতে ও বেড়ে উঠতে দেখুন এক অমূল্য সম্পদ রূপে