In this Article
নিজেকে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করার কারণে আপনি স্বভাবতই আপনারে আভ্যন্তরীণ শক্তির দিকে দৃষ্টিগোচর করেন।আপনার নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন,যাতে আপনার অভ্যন্তরস্থ শিশুটি একটি সুস্থ,স্বাস্থ্যকর এবং সক্ষম শিশু হিসেবে জন্মলাভ করে এবং আমাদের ক্রমবর্ধমান জটিল বিশ্বের চাপের মুখোমুখি হয়ে উঠতে পারে।একটি আয়ুর্বেদিক সমাধান–গর্ভ সংস্কার নামক একটি প্রক্রিয়া,এই পরিস্থিতির জন্য ধীরে ধীরে প্রেরণা অর্জন করেছে।
গর্ভ সংস্কার ব্যাপারটি কি?
প্রতিটি বাবা–মায়েরাই তাদের সন্তানের জন্য সর্বোত্তমটি চান।গর্ভাবস্থায় এবং এমনকি জন্মের পরেও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখা অপরিহার্য।শিশুর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সক্ষম হওয়ার কারণে গর্ভ সংস্কার জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
গর্ভ সংস্কার তত্ত্বটি সুপ্রাচীন ধর্মগ্রন্থের সাথে সম্পর্কিত এবং আয়ুর্বেদের অন্তর্ভূক্ত।“গর্ভ” শব্দটির সংস্কৃত অর্থ হল গর্ভ মধ্যস্থ ভ্রূণ,আর “সংস্কার“এর মানে হল মনের শিক্ষা।সুতরাং “গর্ভ সংস্কার“-পুরো শব্দটির অনুবাদ হল–অনাগত শিশুর মনকে শিক্ষিত করার প্রক্রিয়া।ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করা হয় যে,একটি শিশুর মানসিক এবং আচরণগত বিকাশ মায়ের গর্ভের মধ্যেই শুরু হয় কারণ সন্তান ধারণ করার সময় এটি মায়ের আবেগীয় ভাবের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।অনুশীলনটি মান্ধাতার আমল থেকেই হিন্দু ঐতিহ্যের একটি অংশ এবং অভিমণ্যু,আস্তাবক্র ও প্রহ্লাদের মত পৌরাণিক চরিত্রগুলি কীভাবে তাদের মায়ের গর্ভ আলোকিত করে তুলেছিল,সেই সকল গল্পগুলির দ্বারা প্রমাণিত হয় কীভাবে গর্ভ সংস্কার অনুশীলনটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
এটা শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে কিন্তু যেকোনও মাকে জিজ্ঞাসা করুন তিনি নিশ্চিতভাবে আপনাকে বলবেন যে গর্ভধারণের মুহুর্ত থেকেই শিশুর সাথে বন্ধন গড়ে ওঠা শুরু হয়।আর সেই কারণেই আপনি দেখতে পান মায়েদেরকে তাদের গর্ভাবস্থার বিশেষ পেটটির সাথে কথা বলতে অথবা তাদের কোনও কিছু ভাল চিন্তা করার প্রয়াস করতে কিম্বা এমন কোনওকিছু করতে যা তাদের শিশুকে শান্ত করে তোলে।যদিও বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েরাই এটি করে থাকেন এর ভাল উপাদানটি অনুভব করার জন্য,তবে এর আরও গভীর মূল সুবিধাগুলিও আছে।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের একটি বর্ধিত ক্ষেত্র রয়েছে যা গর্ভ সংস্কার সম্পর্কিত অনুশীলনগুলিকে এবং অনাগত শিশুর উপর এর প্রভাবকে সমর্থন করে।আধুনিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে,একটি ভ্রূণ বাইরের উদ্দীপনায় সাড়া দিতে বা প্রতিক্রিয়া করতে পারে।এমনকি,মায়ের চিন্তার দ্বারা সক্রিয় হরমোনের ক্ষরণও তার গর্ভস্থ শিশুকে প্রভাবিত করতে পারে।
যদিও গর্ভ সংস্কার শিশুর উপকারের জন্য বলে বিশ্বাস করা হয়,তাই বলে এটি কেবলমাত্র শিশুর উপরেই নিবদ্ধ নয়।এই অনুশীলনগুলি নিশ্চিত করে যে মা সুস্থ রয়েছেন এবং তিনি ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন।গর্ভ সংস্কার অনুশীলনগুলির দ্বারা গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার মত ক্রিয়াকলাপগুলিতে পরিবর্তন আনয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়।
গর্ভবতী থাকাকালীন কখন গর্ভ সংস্কার শুরু করবেন?
গর্ভ সংস্কার কেবলমাত্র গর্ভাবস্থাতেই যত্ন নেওয়ার কৌশল নয়,তবে গর্ভধারণের কমপক্ষে এক বছর আগে থেকেই এর প্রস্তুতিগুলি নেওয়া শুরু হয়ে যায়।গর্ভ সংস্কার প্রক্রিয়াটি গর্ভাবস্থার পূর্বে,গর্ভাবস্থায় এবং তার পাশাপাশি স্তন দুধ পান করানোর পর্যায়েও,শিশুর বয়স 2 বছর না হওয়া পর্যন্ত মাকে সম্পূর্ণরূপে সঠিক পথে পরিচালনা করার পথ দেখায়।
প্রসবোত্তর শিক্ষার বিভিন্ন অনুশীলনগুলি
গর্ভ সংস্কার প্রসঙ্গটির খোঁজ প্রাচীন হিন্দু পুরাণ এবং বেদে পাওয়া যায়।কিন্তু তাই বলে এর অনুশীলনগুলি কেবলমাত্র ভারতীয়দের মধ্যেই এককভাবে সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ বেড়ে ওঠা শিশু এবং মায়ের মধ্যে বন্ধনকে সযত্নে লালন করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করে,যা “গর্ভের শিক্ষা“-ধারণাটিরই অনুরূপ।পশ্চিমের দেশগুলির মায়েরা তাদের সন্তানকে অবিশ্বাস্য বুদ্ধিমান করে তোলার জন্য প্রায়শই মোজার্টের মত সেরা সুরকারদের ধ্রুপদী সঙ্গীতগুলি শুনে থাকেন।
গর্ভ সংস্কার অভিজ্ঞতাটির মূল্যায়ণ নির্ধারণ এই ধারণা থেকেই করা যেতে পারে যে,প্রসবোত্তর বিভিন্ন আধুনিক অভ্যাসগুলি এটি থেকেই উদ্ভূত হয়েছে–সেগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
- স্বপরামর্শ এবং সম্মোহনঃ এগুলি হল ধ্যানের কৌশল,যা বাস্তবে রূপান্তরিত হতে পারে এমন এক ধারণার দ্বারা মনকে পরিব্যপ্ত করে রাখে।
- রঙ থেরাপিঃ এই প্রক্রিয়াটিতে মনের ভারসাম্য বজায় রাখতে আলো এবং রঙ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।কিছু বিশেষ রঙ মেজাজকে উন্নত করতে পারে এবং মনের উপর একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- অ্যারোমাথেরাপিঃ এতে গন্ধের ধারণাকে কাজে লাগানো হয় যা অনুভূতিগুলিকে তীক্ষ্ণ করে তোলে এবং শরীর ও মনে প্রশান্তি আনে।মাকে চাপ মুক্ত করে তুলতে অপরিহার্য তেলগুলি এবং অন্যান্য সুগন্ধিগুলি সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গর্ভ সংস্কার ক্রিয়াকলাপগুলির তালিকা
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী,একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দেওয়ার অন্যতম সর্বোত্তম উপায়টি হল গর্ভ সংস্কার করা।এটি মায়ের মনের একটি স্থিরাবস্থা বজায় রাখার ব্যাপারে কেবল মানসিকভাবেই নয়,শারীরিক,আবেগীয় এবং তার সাথে আবার আধ্যাত্মিকভাবেও সহায়ক।আয়ুর্বেদিক গর্ভ সংস্কার,গর্ভবতী মায়েদের মনে রাখার জন্য যে কয়েকটি নির্দিষ্ট নির্দেশিকার প্রস্তাব দিয়ে থাকে,সেগুলির মধ্যে হলঃ
1. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস
খাদ্যতালিকা হল গর্ভাবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ ভ্রূণের বৃদ্ধি মায়ের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির উপর নির্ভর করে। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, আহার–রস হল মায়ের আহার থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি বা শক্তি,যা মায়ের নিজের পরিচর্যায়, শিশুর বৃদ্ধিতে এবং বুকের দুধ গঠনের প্রস্তুতিতে সহায়তা করে। সেই কারণে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ একটি সুষম আহার গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।গর্ভাবস্থায় গর্ভ সংস্কারের খাবারগুলিতে সুষম পরিমাণে ক্যালসিয়াম,ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রণ থাকা উচিত।
গর্ভাবস্থায় গর্ভ সংস্কার খাদ্যে সাত্ত্বিক খাবার অন্তর্ভূক্ত করা হয় যা টাটকা প্রস্তুত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারকে বোঝায়,যার মধ্যে মিষ্টি,নোনতা, ঝাল,তেঁতো এবং টক–এই পাঁচটি স্বাদ অন্তর্ভূক্ত থাকে।আয়ুর্বেদ পঞ্চামৃত গ্রহণের প্রস্তাব দেয়,যা শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপকারি।এটি আট চামচ দুধের সাথে এক চামচ দই,মধু,চিনি এবং দুই চামচ ঘি অথবা বিশুদ্ধ মাখন মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয়।কোনও রকম আসক্তিপূর্ণ দ্রব্য থেকে বিরত থাকারই পরামর্শ দেওয়া হয়।
2. ইতিবাচক চিন্তাভাবনা
গর্ভাবস্থা আপনাকে মেজাজী এবং খিটখিটে করে তুলতে পারে।গর্ভ সংস্কার আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই ভাল।আপনি আপনার শখগুলির দিকে মনোযোগ দিতে পারেন অথবা শুধু এমন কাজগুলি করুন যা আপনাকে খুশি করে।
3. যোগা অথবা কিছু ধরণের হালকা ব্যায়াম অনুশীলন
গর্ভ সংস্কার মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই তাদের দেহের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য কিছু হালকা ধরণের ব্যায়াম অথবা যোগা অনুশীলন করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।আর এই যোগ–ব্যায়াম অনুশীলন করার উপকারিতাগুলি এখানে উল্লেখ করা হলঃ
- প্রাণায়াম শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়ামটি প্রসবের সময় শ্বাস–প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার দেহকে শান্ত এবং শিথিল করতে সহায়তা করে।
- হালকা ব্যায়াম শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়,রক্ত সঞ্চালনে উন্নতি ঘটায় এবং গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হ্রাস করে।
- বিশেষ ধরণের গর্ভ সংস্কার যোগ আসনগুলি নূন্যতম প্রসব বেদনার সাথে মায়ের স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে।
4. ধ্যান
ধ্যান হল গর্ভ সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং মনকে চিন্তামুক্ত করার কারণে এটি আবার দেহের জন্যও বেশ উপকারি।এটি মনকে শূণ্য অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার সাথে জড়িত,যা মনে প্রশান্তির ছোঁয়া এবং একাগ্রতা নিয়ে আসতে সহায়তা করে।ধ্যান করার সময় আপনার বাচ্চার সম্পর্কে ভাল জিনিসগুলি ঠাহর করাও আবার ইতিবাচক চিন্তা এবং বাচ্চার সাথে বন্ধন গড়ে তোলার একটি দুর্দান্ত উপায়,যা আপনার এবং আপনার বাচ্চা উভয়ের জন্যই উপকারি।
5. প্রার্থনা
প্রার্থনা হল গর্ভ সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং শিশুর আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্যও ভাল বলে বিশ্বাস করা হয়।প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলিতে একাধিক মন্ত্র এবং শ্লোকের সম্ভার রয়েছে,যেগুলি অনাগত শিশুদের জন্য উপকারি।প্রার্থনার দ্বারা যে মন্ত্রগুলি উচ্চারণ করা হয় সেগুলি শিশুর সুস্বাস্থ্য এবং নৈতিক মূল্যবোধের আশীর্বাদ করে এবং সেগুলি হল আধ্যাত্মিক বিশ্বাসগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
6. মনে শান্তি নিয়ে আসে এমন সঙ্গীত শোনা
গর্ভ সংস্কার বিবৃতি দেয় যে,মায়ের গর্ভে থাকাকালীন শিশু সঙ্গীতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।এমনকি প্রাচীন সাহিত্যও বলে যে,একটি শিশু গর্ভাবস্থার সাত মাস থেকে শুনতে এবং তার সাথে তার চারপাশের শব্দে প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ করতে শুরু করে।আর সেই কারণেই গর্ভবতী মায়ের সুরেলা সঙ্গীত শোনা উচিত যা তাকে শান্ত রাখতে পারে।এটি বলা হয়ে থাকে যে,মৃদু এবং আধ্যাত্মিক সঙ্গীতগুলি অথবা মন্ত্র এবং শ্লোকগুলি মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই বেশ উপকারি।
7. মনকে শান্ত রাখে এমন ধরণের অথবা আধ্যাত্মিক বই পড়া
গর্ভ সংস্কার আধ্যাত্মিক বইগুলি পড়ার প্রস্তাব দেয়,যা মনে সন্তোষ এবং পরিতৃপ্তির অনুভূতি নিয়ে আসে।এমনকি গর্ভ সংস্কার আবার এই বিষয়টির উপরেও জোর দেয় যে,শিক্ষামূলক বই পড়া গর্ভস্থ শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন করে।এটি বিশ্বাস করা হয় যে, গর্ভাবস্থায় বই পড়া,অনাগত শিশুর মধ্যেও জ্ঞানের সঞ্চার করতে সাহায্য করে।নৈতিক মূল্যবোধ যুক্ত বইগুলি কিম্বা পৌরাণিক গল্পগুলি পড়ার সুপারিশ করা হয়,তবে আপনি সর্বদাই আপনার পছন্দের অন্যান্য বইগুলিও পড়ার জন্য নির্বাচন করতে পারেন।
8. মনকে শান্ত এবং খুশি রাখা
গর্ভ সংস্কার অনুযায়ী,মায়ের কখনই এমন কোনও ক্রিয়াকলাপ অথবা অনুশীলনের সাথে জড়িত হওয়া উচিত নয় যা তার উপর চাপ নিয়ে আসে।অযৌক্তিক চাপ নেওয়া অথবা আপনার মধ্যে ভীতি প্রদর্শন করতে পারে এমন কোনও জিনিস দেখা বা পড়ার সুপারিশ গর্ভাবস্থায় করা হয় না কারণ এটি সেই সকল হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে তোলে যা হয়ত আপনার ভ্রূণের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।আপনার সন্তানের জন্য আপনার গর্ভাবস্থার নয় মাস ধরে চেষ্টা করুন শারীরিক,মানসিক,আবেগীয় এবং আধ্যাত্মিক ভাবে সন্তুষ্ট থাকার!
9. গর্ভাবস্থায় ভেষজ ঘি খাওয়া
আয়ুর্বেদ গরুর দুধের ঘি থেকে প্রস্তুত ওষধি ঘি গর্ভাবস্থার চতুর্থ,পঞ্চম,সপ্তম,অষ্টম এবং নবম মাসে খাওয়ার সুপারিশ করে।এটি বলা হয় যে,এই ঘি শিশুর মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য উপকারি এবং ভ্রূণের মধ্যে জন্মগত অস্বাভাবিকতাগুলি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।আয়ুর্বেদ অনুযায়ী,এই ওষধি ঘি আবার মায়ের পূর্ণ মেয়াদি স্বাভাবিক প্রসবেও সহায়তা করে থাকতে পারে।তবে প্রতি ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত,কারণ সকল গর্ভাবস্থাই অনুরূপ হয় না।
10. আপনার সৃজনশীলতার প্রয়াস
গর্ভাবস্থায় সৃজনশীল হয়ে ওঠা কেবল আপনার মনকেই অধিকার করে রাখে না,গর্ভ সংস্কার অনুযায়ী,সৃজনশীলতার গুণটি আবার আপনার থেকে আপনার সন্তানের মধ্যেও স্থানান্তরিত হতে পারে।হাতে বোনা,ছবি আঁকা,বাগান করা অথবা এমনকি মৃৎ শিল্পের ন্যায় শখগুলিও মানসিক চাপ কাটিয়ে আপনাকে সুখী রাখতে সহায়তা করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় গর্ভ সংস্কারের উপকারিতাগুলি
শিশুর প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে আকার দেওয়া মায়ের উপর নির্ভর করে,ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং একটি ইতিবাচক মনোভাব মায়ের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে,যা আবার তার গর্ভস্থ শিশুটির সুস্বাস্থ্যের সাথেও সম্পর্কিত।গর্ভ সংস্কার মা এবং তার অনাগত শিশুর মধ্যে চির বন্ধনটির বিকাশ করতে সহায়তা করে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা গর্ভ সংস্কারের অভ্যাসগুলি অনুশীলনের প্রতি উৎসাহ দিয়ে থাকেন মায়ের সু–স্বাস্থ্যের জন্য,তবে সেটি শিশুদের জন্যও দীর্ঘ মেয়াদে উপকার করে থাকে, যা হয়ত তৎক্ষণাৎ শনাক্ত করা যাবে না।শিশুর সাথে যোগাযোগ করা হল “গর্ভ সংবাদ“,যা শিশুর মানসিক বিকাশে অবদান রাখে এবং মায়ের সাথে বাচ্চার একটি দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
আপনার অনাগত শিশুর সাথে গান শোনা এবং বই পড়া পরবর্তীতে আপনার সন্তানকে একজন গভীর নিদ্রালু করে তুলতে সহায়তা করতে পারে অথবা ভালো ঘুমের অভ্যাসে প্ররোচিত করতে পারে।আপনার শিশু হয়ত আরও বেশি সচেতন,সজাগ এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে।এছাড়াও শিশুটি আবার হয়ত উদ্দীপনায় আরও ভালভাবে সাড়া দিতে পারে এবং আরও বেশি সক্রিয় এবং পরিতৃপ্ত হয়ে উঠতে পারে।আবার এই উপায়ে আপনার সোনাটি হয়ত আরও ভাল ভাবে স্তন পান করা শুরু করতে পারে আর সেই কারণে মা এবং সন্তানের বন্ধনটিও আরও ভালোভাবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এই অভ্যাসটি বেশ উপকারি হয়ে উঠতে পারে।
গর্ভ সংস্কার সঙ্গীত যেভাবে আপনার সন্তানকে সহায়তা করে
বাহ্যিক উদ্দীপনায়,বিশেষ করে গর্ভাবস্থার সপ্তম মাস থেকে ভ্রূণ সাড়া দিতে পারে এই বিশ্বাস থেকে,গর্ভ সংস্কার অনুযায়ী সঙ্গীতের থেরাপিউটিক প্রভাবটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।একটি শিশুর জন্য তার সবচেয়ে কাছের শব্দটি হল তার মায়ের হৃদস্পন্দন,আর এই কারণেই কোনও কান্নারত শিশুকে তার মায়ের বুকের কাছে ধরে রেখে তাকে শান্ত করে তোলা যেতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়।পরিচিত কোনও কিছু শোনার সাথে সাথে সেটি শিশুটির মধ্যে একটা ধীরতা বা নিস্তব্ধতাবোধ নিয়ে আসতে পারে।এই একই নীতি সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও প্রযজ্য এবং অনেকটা হৃদ স্পন্দনের ছন্দের অনুরূপ,গানের ছন্দগুলিও শিশুর উপর একটা শান্ত প্রভাব ফেলতে পারে।
গর্ভ সংস্কারে বিশ্বাস করা হয় যে,বীণা,একটা তারের বাদ্যযন্ত্র এবং বাঁশিতে এমন সুর আছে যা মন এবং আত্মায় প্রশান্তি ছুঁয়ে দেয়।এমনকি আজকালকার দিনে,এ ব্যাপারে বিভিন্ন গর্ভ সংস্কার সঙ্গীতগুলি সিডি আকারে অথবা ইন্টারনেটে উপলভ্য।
গর্ভ সংস্কারের পরামর্শগুলি
এখানে এমন কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হল যেগুলি,মা এবং সন্তানের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
- আপনার সন্তানের সাথে কথা বলুন এবং আদর করুন।এমনকি বাবারও উচিত পালা করে তার কণ্ঠ্যস্বরের সাথে তার সন্তানকে পরিচিত করে তোলা।এটি করার ক্ষেত্রে একটা অদ্ভুত জিনিস বলে মনে হতে পারে,কিন্তু এটি মা–বাবার সাথে শিশুটির বন্ধনের বিকাশ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারে।
- প্রতিদিন আপনার বাচ্চার কাছে কিছু অন্যরকম ভাবে কথা বলুন।আপনার গলার স্বর পরিবর্তন করে তাকে বলুন যে,আপনার জীবনে তাকে পেয়ে আপনি কতটা খুশি হয়েছেন এবং আপনি আপনার সন্তানকে ধরার জন্য আর কোনও রকম প্রতীক্ষাই করতে পারছেন না সেটিও জানান।
- ইতিবাচক থাকা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।মানসিক চাপ এবং বাজে চিন্তাগুলি এড়িয়ে চলুন।
- একটি মনোরোম জায়গায় ছুটি কাটানোও হয়ত আপনাকে শিথিল হয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে।মানের দিক থেকে বা মানসিকভাবে শান্ত হয়ে ওঠা যদি আপনার পক্ষে কঠিণ হয়ে ওঠে তবে একটা অবকাশের কথা বিবেচনা করতে পারেন।মধুচন্দ্রিমার ন্যায় শিশুচন্দ্রিমাও একটি ভাল কারণের জন্য আজকাল প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
যদিও এই অভ্যাসগুলি প্রাথমিকভাবে অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে,সেগুলি নিশ্চিতভাবেই আপনার অভ্যাসের মধ্যে বেড়ে যায় এবং শিশুর সাথে আপনার সম্পর্কের উপর একটা ভাল প্রভাব পড়ে।
গর্ভ সংস্কারের মূলগুলি প্রাচীন অভ্যাসগুলির মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়।এটির লক্ষ্য হল মায়ের সু–স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং শিশুর একটি স্বাস্থ্যকর বিকাশ ঘটা।কিন্তু এর থেকেও আরও বেশি কথা হল,গর্ভ সংস্কার মা এবং শিশুর মধ্যে একটা চিরিস্থায়ী বন্ধন অটুটভাবে গড়ে তোলার দিকে দৃষ্টি রাখে।একটি সুষম আহার,ইতিবাচক চিন্তাভাবনা,নিয়মিত ব্যায়ামাভ্যাস এবং একটি ভালবাসার বন্ধন হল গর্ভ সংস্কারের উপকরণসমূহ।গর্ভ সংস্কারের এই সহজ মতবাদগুলি অনুশীলন করা রপ্ত করুন এবং তারা যে প্রশান্তি প্রদান করে সেগুলি উপভোগ করুন।