In this Article
যখন কোনও মহিলা গর্ভবতী হন, তখন তার দেহে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বেশ উল্লেখযোগ্যভাবেই বেড়ে যায়।যদি আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকেন, আপনি উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণীজ উভয় প্রকার বিভিন্ন খাদ্য উৎস থেকেই প্রোটিন পেতে পারেন।কিন্তু আপনি যদি শাকাহারি হয়ে থাকেন কিম্বা মাছ মাংস না খান, তবে সেক্ষেত্রে আপনি প্রোটিন পাউডার খাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।প্রোটিন পাউডার হল প্রোটিন এবং তার সাথে আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টি উপাদানের একটি বেশ ভাল উৎস।তবে এই পাউডারের সাথে কিছু কৃত্রিম শর্করা এবং সংরক্ষক বা প্রিজারভেটিভগুলি অতিরিক্তভাবে সংযোজিত থাকার কারণে সেটি কতটা নিরাপদ সে ব্যাপারে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, আর বিশেষ করে গর্ভাবস্থার সময়।
গর্ভাবস্থাকালে একজন মহিলার কতটা প্রোটিনের প্রয়োজন?
গর্ভদশার ক্রম অগ্রগতির সাথে সাথে কোনও গর্ভবতী মহিলার মধ্যে প্রোটিনের চাহিদাটাও ক্রমশ বেড়ে যায় এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, যখন গর্ভস্থ শিশুটি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন সেই চাহিদাটি শীর্ষে পৌঁছায়।কোনও গর্ভবতী মহিলার প্রতিদিনের প্রস্তাবিত প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মহিলার শরীরের ওজনের উপর নির্ভর করে, তবে এটি সাধারণত স্বাভাবিক খাদ্য উপদানের মাধ্যমে পুষ্ট মহিলাদের গর্ভাবস্থাকালীন দেহের ওজন সহ ধরা হয়ে থাকে।(দয়া করে যাচাই করে নিন) চলতি নিয়ম হল, দেহের ওজনকে কিলোগ্রামে প্রকাশ করে 1.2 দিয়ে গুণ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে সেই সংখ্যক গ্রাম পরিমাণই হল প্রয়োজনীয় প্রটিনের পরিমাণ। উদাহরণস্বরূপ, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে যদি আপনার 60 কেজি ওজন হয়, তবে আপনার প্রতিদিনের প্রোটিনের প্রয়োজন হবে 60 * 1.2 = 72 গ্রাম।সময়ের সাথে আপনার গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের পৌঁছানোর সময়, আপনার দেহে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা বেশি হবে। আপনার দেহের ওজনকে তখন 1.5 দ্বারা গুণ করতে হবে। 1.2 এবং 1.5 সংখ্যা দুটি হল গর্ভকালীন সময়ে প্রারম্ভিক এবং শেষের দিকের প্রতিদিন দেহ ভরের প্রতি কেজিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে গ্রামে প্রোটিনের পরিমাণ।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন পাউডার সেবন করা কি নিরাপদ?
প্রোটিন পাউডারগুলি সাধারণত অ্যাথলিটরা ব্যবহার করে থাকেন পেশী তৈরীর জন্য তাদের প্রতিদিনের প্রোটিন গ্রহণে সহায়তার ক্ষেত্রে।এছাড়াও আবার প্রোটিন পাউডারগুলি সেই সকল ব্যক্তিরাও ব্যবহার করে থাকেন যারা ডায়েটে থাকার মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যগুলি কমানোর প্রচেষ্টায় থাকেন।যাইহোক, তবে এই পাউডারগুলি হয়ত গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়ার পক্ষে ঠিক নাও হতে পারে কারণ সেগুলির মধ্যে প্রায়শই স্যাকারিনের মতো কৃত্রিম শর্করা থাকে যা ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে।কিছু ব্র্যান্ডের প্রোটিন পাউডারগুলির মধ্যে আবার থাকে আদা, মৌরি, যষ্টিমধুর মূলের মত আরও অন্যান্য কিছু ভেষজ যেগুলি স্বভাবত কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে যা আবার ভ্রূণের হরমোনগুলিকেও প্রভবিত করতে পারে।
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় একটি পরিপূরক হিসেবে প্রোটিন পাউডার গ্রহণ করতে চান, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনার গর্ভাবস্থার পক্ষে কোন পাউডারটি উপযুক্ত হবে তা আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করে তবেই গ্রহণ করুন।এ ধরণের অধিকাংশ পাউডারগুলি দুধের মাঠা, কেসিন বা ছানা জাতীয় উপাদান এবং সয়া জাতীয় প্রোটিন সহযোগে প্রস্তুত হওয়ার কারণে, দুগ্ধজাত পণ্যে অ্যালার্জি প্রবণ মহিলারা অন্যান্য অর্গানিক বা জৈব প্রোটিন পাউডারগুলির দিকেও যেতে পারেন যেগুলি গর্ভাবস্থায় সেবনের পক্ষে নিরাপদ।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কোন প্রোটিন শেকগুলি নিরাপদ?
গর্ভাবস্থায় যত বেশি সময় ধরে সংযমের সাথে উচ্চ মানের প্রোটিন শেকগুলি পান করা যায় ততই সেটি নিরাপদ হয়।কিছু প্রোটিন শেক আবার আপনার ক্যালোরির অনুপাত বাড়িয়ে তুলতে পারে।অনেক ক্ষেত্রেই, এগুলির প্রতিটি শেক প্রায় 300 ক্যালোরি পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারে।সুতরাং আপনার এমন কিছু শেকের সন্ধান করা প্রয়োজন যেগুলিতে কম কিম্বা শূণ্য(0) ক্যালোরি উপাদান থাকে।তবে সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং স্যাকারিনের মত কৃত্রিম শর্করা যুক্ত প্রোটিন পাউডারগুলি এড়িয়ে চলুন।আপনি আবার সেটিকে আপনার নিজের মত করেও তৈরী করে নিতে পারেন দুধ, বাদাম, পিনাট বাটার, অ্যাভোকাডো এবং অন্যান্য প্রোটিন বুস্টারগুলি সহযোগে।
প্রোটিন পাউডার ক্রয় করার আগে মনে রাখার বিষয়গুলি
আপনার দৈনন্দিন ডায়েটে প্রোটিনের অভাব পূরণের তাগিদে যদি আপনাকে প্রোটিন পাউডার আবশ্যিকভাবেই ক্রয় করতে হয়, তবে নিম্নোলিখিত বিষয়গুলির দিকে নজর রাখুনঃ
1.অতিরিক্ত ক্যাফিন এবং ভিটামিনগুলি
অনেক প্রোটিন পাউডার আছে, যেগুলিতে ডায়েট–ফ্রেন্ডলি বা ডায়েট–বান্ধব অথবা ভেগান বা নিরামিষের লেবেল করা থাকে, সেগুলিতে যুক্ত করা হয় বহুবিধ ভিটামিন এবং ক্যাফিন।এই ধরণের ব্র্যান্ডগুলি ক্রয় করা আপনার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ গর্ভাবস্থায় যেহেতু ক্যাফিন এবং অতি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণের সুপারিশ করা হয় না।আপনি হয়ত ইতিমধ্যেই প্রসব পূর্ব মাল্টিভিটামিনের পরিপূরকগুলি চালু করে থাকতে পারেন অথবা আপনার ভারসাম্য যুক্ত সুষম আহার থেকে আপনার সমস্ত মাইক্রো–নিউট্রেন্ট বা অণু– পুষ্টিগুলি পেয়ে থাকতে পারেন।অতএব, অতিরিক্ত ভিটামিন গ্রহণ করা অর্থহীন এবং কখনও কখনও তা ক্ষতিকারকও হয়ে ওঠে।গর্ভাবস্থায় ক্যাফিন গ্রহণের পরিমাণও কমানো উচিত এবং প্রত্যহ তা অবশ্যই 200 মিলিগ্রামের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত।
2.কৃত্রিম শর্করাগুলি
ডায়েট সচেতনার জন্য কিছু প্রোটিন পাউডারগুলি আবার কৃত্রিম শর্করা দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে।এগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে কারণ সেগুলি প্রায়শই প্ল্যাসেন্টা বা অমরা অতিক্রম করে এবং গর্ভস্থ শিশুর কাছে পৌঁছে যায়।যদিও স্যাকারিন সমন্বিত পাউডারগুলি অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত, সেরকমই জাইলিটল, সুক্রালোজ এবং স্টেভিয়া যুক্ত অন্যান্য পাউডারগুলিরও ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।সুতরাং এই সকল উপাদান সমন্বিত পাউডারগুলি এড়িয়ে চলাই হল সবচেয়ে ভাল।তদুপরি, সুরক্ষিত এবং নিরাপদ দিকে থাকার জন্য সকল প্রকার কৃত্রিম শর্করা এবং সেগুলি সমন্বিত প্রোটিন পাউডারগুলি এড়িয়ে চলাই হল সর্বোত্তম।
3.ফিলার বা পরিপূরণকারী এবং স্বাদ ও গন্ধকারক উপাদানগুলি
ফিলারগুলি হল এমন উপকরণ সমূহ যা প্রোটিন পাউডারের সাথে যুক্ত করা হয় কোনও শেকের মধ্যে মিশ্রিত করার সময় তার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য।এছাড়াও সেগুলি পানীয়টির গঠণ এবং ঘনত্বে এমন এক রূপ আনে যা তার স্বাদকে আরও ভাল করে তোলে।কিছু সাধারণ ফিলারগুলির মধ্যে জ্যান্থান গাম, গুয়ার গাম, প্যালাটিনোজ এবং অন্যান্য উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত যেগুলির পুষ্টিগুণ বেশ কম বা প্রায় থাকে না বললেই চলে।এগুলি শুধুমাত্র কিছু ক্যালোরি যুক্ত হতে পারে এবং বাস্তবে কোনও উপকার ছাড়াই আপনার পেট ভর্তি হওয়া বা পেট ভার হওয়া বোধ করাতে পারে।স্বাদ ও গন্ধকারক উপাদানগুলি প্রায়শই কোনওরকম পুষ্টি বিহীন হয়ে থাকে এবং মাঝেসাঝে সেই সবগুলি সেই অর্থে প্রাকৃতিক হয় না যেমনটা তারা দাবী করে থাকে।প্রোটিন পাউডারের মধ্যে মেশানোর আগে সেগুলি রাসায়নিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।অতএব, ফিলার বা পরিপূরণকারী এবং স্বাদ ও গন্ধকারক উপাদান সমন্বিত পাউডারগুলি এড়িয়ে চলুন।
4.কোথা থেকে পাউডারটির উৎপত্তি
গর্ভাবস্থায় আপনি যাই খান না কেন তার থেকে কিছু হলেও তা আপনার গর্ভস্থ শিশুর কাছে পৌঁছায়।সুতরাং আপনার প্রোটিন পাউডারের উৎসগুলির ব্যাপারেও আপনার গভীর মনোযোগ সন্নিবিষ্ট করাটা অত্যন্ত জরুরি।পাউডার প্রস্তুতকারক এবং তার উৎপাদন প্রক্রিয়াগুলি পরীক্ষা করুন এবং দেখে নিন যে, পণ্যটি কীটনাশক, রাসায়নিক এবং হরমোন মুক্ত কিনা।তার সাথে আবার এর উপর একটু এই ধরণের গবেষণাও করে নিন যে, কীভাবে সেটি প্রস্তুত হয় এবং প্রস্তুত করার পদ্ধতিটিই বা কীরূপ… এগুলি আপনাকে একটি সঠিক পাউডার ক্রয় করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।আর এটি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আপনি যখন মাঠা এবং কেসিন বা ছানা জাতীয় উপাদান দ্বারা প্রস্তুত দুগ্ধ ভিত্তিক পাউডারগুলি নির্বাচন করতে যান সেক্ষেত্রে।দুগ্ধজাত পণ্যগুলিতে প্রায়শই rBGH (বোভাইন গ্রোথ হরমোন)-এর মতো হরমোনগুলি সমন্বিত থাকে যা ভ্রূণের পক্ষে ভাল নয়।উদ্ভিদ–ভিত্তিক প্রোটিনগুলি যখন জৈব হয়ে থাকে তখন তা ভাল হয় এবং একটি ভাল ব্র্যান্ডকে সর্বদা তার উৎসে ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
5.উপকরণ সমূহ
ইদানিং অনেকগুলি পণ্যই এ ধরণের সতর্কতা লেবেল নিয়ে আসে যে, যদি সেগুলির মধ্যে এমন কোনও উপাদান বা উপকরণ থাকে যা গর্ভবতী মহিলা, স্তন পান করানো মায়েদের অথবা শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়, তবে সেই একই জিনিস প্রোটিন পাউডারগুলির ক্ষেত্রেও হবে।সাধারণ এই পাউডারগুলিতে ক্রিয়েটিন, টাউরিন, ক্যাফিন, বিটা–অ্যালানাইন, এসিটাইল L-কার্নিটাইন HCL এবং ভিটামিনের শতকরা পরিমাণের মত এমন কিছু উপাদান থাকে যা আপনার বরাদ্দ খাদ্যের সুপারিশকে অতিক্রম করে যায়।এই লেবেলগুলি আপনাকে নিরাপদ পাউডার বেছে নিতে সাহায্য করে, তবে তাই বলে সেগুলির সবগুলিই লেবেলের সাথে আসে না।অতএব, কেনার সময় তার লেবেলে লেখা উপকরণগুলি দেখে এবং তার থেকে অনুপযুক্ত উপাদানগুলিকে সনাক্ত করতে পারাটাই হল সবচেয়ে ভাল একটি ধারণা।
গর্ভাবস্থা হল এমন একটি অবস্থা যখন পুষ্টিকর পছন্দগুলি গড়ে তোলার সময়। আপনার গ্রহণ করা খাদ্যের মাধ্যমে যদি আপনার প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তাটি পূরণ না হয়ে থাকে, তবে সেক্ষেত্রে আপনি প্রোটিন পাউডারের মত কিছু পরিপূরক গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করতে পারেন, তবে তা অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করার পরেই।এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর করা কিছু গবেষণা এবং তাঁর সম্মতি সূচক মতামত নেওয়ার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে একটি ভাল প্রোটিন পাউডারকে বেছে নেওয়া সম্ভব হতে পারে।