In this Article
- চিকেন পক্স কী?
- চিকেন পক্স কি সংক্রামক?
- কারণসমূহ
- চিকেন পক্স–এর উপসর্গসমূহ
- চিকেন পক্স–এর জটিলতা
- কোঁচদাদ
- চিকেন পক্স নির্ণয় করা
- শিশুদের চিকেন পক্স–এর কিভাবে চিকিৎসা করাতে হয়?
- প্রতিরোধ
- চিকেন পক্স ভ্যাকসিন
- চিকেন পক্স ভ্যাকসিন এর প্রকার
- আপনি চিকেন পক্স ভ্যাকসিন কখন দেবেন
- চিকেন পক্স ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?
- চিকেন পক্স টিকা–র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- চিকেন পক্স হলে শিশু কি স্কুলে যেতে পারে?
এটা ঠিকই যে আগে থেকে প্রতিরোধ করা সবসময়ই নিরাময়ের থেকে ভালো। আপনি যদি আপনার সন্তানের কোনো রোগ প্রতিরোধ করতে চান, তবে এটি সম্পর্কে আপনার সবকিছু জানা গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের তার সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক চিন্তা থাকে এবং চিকেন পক্স হল এমন একটি যা অনেক বাবা–মা–র দুঃস্বপ্ন হতে পারে। এই নিবন্ধটিতে আপনি এই রোগটি সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে পাবেন। চিকেন পক্সের কারণ, উপসর্গ এবং প্রতিকারগুলি জানুন যাতে আপনি আপনার সন্তানদের সুরক্ষা দিতে পারেন।
চিকেন পক্স কী?
চিকেন পক্স, যা ভেরিসেলা নামেও পরিচিত, একটি ভাইরাল সংক্রমণ। এটিতে ফ্লু–এর মতো লক্ষণ এবং জ্বরের সাথে শরীর জুড়ে ক্ষুদ্র, চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি বা ফোসকা হয়। যখন সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়, ফুসকুড়ুগুলি তরল–ভরা ফোসকায় পরিণত হয় এবং সেগুলি শুকিয়ে গেলে, মামড়িতে পরিণত হয় এবং কড়া পড়ে যায়। যদিও কিছু বাচ্চাদের গায়ে শুধু কয়েকটি ফুসকুড়ি হতে পারে, অন্যান্য শিশুদের সারা গায়ে ফোসকা পড়তে পারে। ফুসকুড়িগুলি সাধারণত মুখ, কান, হাত, বুক, পেট এবং পায়ে দেখা দেয়। চিকেন পক্স একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগ এবং সংক্রামিত সন্তানের কাছে আসা যে কোনো কাউকেই সহজেই সংক্রামিত করতে পারে। এই রোগটি 12 বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খুব বেশী ঘটে।
চিকেন পক্স কি সংক্রামক?
চিকেন পক্স একটি খুব সংক্রামক রোগ এবং সহজেই এক সন্তানের থেকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। এটা ছড়াতে পারে :
- সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে
- পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে
সরাসরি যোগাযোগ মানে চুম্বন এবং লালার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো। অতএব, আপনার সন্তানের চিকেন পক্স হলে, সন্তানকে চুম্বন করা থেকে বিরত থাকুন। পরোক্ষ যোগাযোগ মানে ফোস্কার তরলের কাছাকাছি আসার মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানো। সংক্রমণ এমনকি সংক্রামিত সন্তানের কাশি ও হাঁচির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। চিকেন পক্স মানুষের মধ্যে খুব সংক্রামক হলেও, ভাইরাসটি কুকুর বা বিড়ালের মত পোষা প্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে না।
কারণসমূহ
চিকেন পক্স ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাস বা ভিজেভি দ্বারা সৃষ্ট। এই ভাইরাস শরীরের উপর বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি তৈরি করে। শিশুরা সহজেই এই অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে। বেশিরভাগ সময়ে, আপনার বাচ্চার এই সংক্রমণ কখন এবং কিভাবে হল তা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ শরীরে প্রথম গুটিটি দেখা দেওয়ার আগেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকতে পারে। অতএব, এই সংক্রমণ যুক্ত যে কোনো কারো সরাসরি সংস্পর্শে আসা শিশুটি সংক্রামিত হতে পারে। একবার সংক্রামিত হলে, গুটিগুলি সংক্রমণের এক সপ্তাহ থেকে সর্বাধিক দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে সন্তানের দেহে দেখা দিতে শুরু করে।
চিকেন পক্স–এর উপসর্গসমূহ
চিকেন পক্স সংক্রমণ সাধারণত ফ্লু–র মত উপসর্গ দিয়ে শুরু হয়। বাচ্চাদের চিকেন পক্সের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জ্বর
- মাথা ব্যাথা
- বমি বমি ভাব
- পেট ব্যথা
- ব্যথা এবং যন্ত্রণা
-
ক্ষুধামান্দ্য
সংক্রামিত হওয়ার কয়েকদিন পরেই বাচ্চাদের দেহে ফুসকুড়িগুলি দেখা দিতে শুরু করবে। এই ছোট্ট লাল ফুসকুড়িগুলি আপনার শিশুর মুখে প্রথম লক্ষ্য করা যাবে এবং তারপর তারা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে হাত, ধড়, এবং পায়ের মত এলাকা। কিছু বাচ্চার শুধুমাত্র হালকা ফোসকা থাকে, তবে কিছু বাচ্চাদের গুচ্ছ গুচ্ছ ফোসকা হয় এবং সেগুলি একে অপরের উপর উঠে পড়ে। এই চিকেন পক্স ফোসকাগুলি মুখগহ্বর, খুলি এবং কুঁচকির মতো অঞ্চলে বেশী ক্ষতযুক্ত হয়। এটি বেদনাদায়কও হতে পারে, তাই আপনার বাচ্চাকে আলগা পোশাক পরিয়ে রাখুন। ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার কয়েক দিন আগে এবং ফুসকুড়ি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
চিকেন পক্স–এর জটিলতা
চিকেন পক্সের সময় যথাযথ যত্ন নেওয়া না হলে শিশুর কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই জটিলতার মধ্যে রয়েছে:
- ত্বকের সংক্রমণ। কিছু ক্ষতস্থান বার বার চুলকানোর জন্য সংক্রামিত হতে পারে এবং ত্বকের সংক্রমণ তৈরি হতে পারে
- ক্ষত থেকে দাগ হওয়া
বিরল পরিস্থিতিতে, কিছু গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:
- মস্তিষ্কের প্রদাহ, যা এনসেফালাইটিস নামেও পরিচিত। এটি শিশুদের পেশী সমন্বয়কে প্রভাবিত করতে পারে
- ফুসফুসের প্রদাহ, যা ভেরিসেলা নিউমোনিয়া নামেও পরিচিত
- কিডনির প্রদাহ
- অ্যাপেন্ডিসাইটিস
- হৃৎপিণ্ডের পেশীর প্রদাহ
- জয়েন্টগুলোর প্রদাহ
যদিও এই জটিলতাগুলি খুব বিরল, তবু এগুলিকে এড়াতে যথাযথ সাবধানতা প্রয়োগ করতে হবে।
কোঁচদাদ
কোঁচদাদ হল এক ধরনের ত্বকের ফুসকুড়ি। এটি সেই একই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয় যার দ্বারা চিকেন পক্স হয়। আপনার সন্তানের ইতিমধ্যেই তীব্র চিকেন পক্স হয়ে থাকলে, এই ভাইরাস মেরুদণ্ডের নার্ভ কোষে থেকে যায়। যদিও এটি স্নায়ুর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে না, তবে এই ভাইরাসটি জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে কোঁচদাদ সৃষ্টি করতে পারে। 12 বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খুব কমই কোঁচদাদ দেখা যায়। এটা শিশুদের চেয়ে বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
চিকেন পক্স নির্ণয় করা
প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার সন্তানের চিকেন পক্স নির্ণয় করা খুবই কঠিন হতে পারে কারণ এটির লক্ষণগুলি ফ্লু–র মতো একই রকম। শিশুটির জ্বর, নাক দিয়ে জল ঝরা, মাথা ব্যাথা, কাশি হতে পারে, এবং অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ হতে পারে। ক্ষুধামান্দ্যও হতে পারে। শুধুমাত্র কয়েক দিন পরেই বাচ্চার মুখে এবং যৌনাঙ্গ সমেত শরীরের অন্যান্য অংশে ফুসকুড়ির মতো উল্লেখযোগ্য উপসর্গগুলি দেখা যাবে। কিছু বাচ্চাদের শরীরের উপর শুধুমাত্র কয়েকটি দাগ থাকবে যেখানে অন্য শিশুদের প্রচুর পরিমাণে থাকতে পারে। এই দাগগুলিতে ব্যথা এবং চুলকানি থাকবে। আপনার সন্তানের শরীরে এই লক্ষণগুলি দেখার সাথে সাথে, চিকিৎসা সহায়তা চাইতে হবে যাতে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে না পড়ে।
শিশুদের চিকেন পক্স–এর কিভাবে চিকিৎসা করাতে হয়?
আপনার সন্তানের ইমিউন সিস্টেম চিকেন পক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। চিকিৎসক দ্বারা প্রস্তাবিত চিকিৎসা শিশুর বেদনা এবং অস্বস্তি দূর করবে। এর পাশাপাশি, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি চিকেন পক্স সম্পর্কিত কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারে:
-
জ্বর – শিশুর জ্বর নিয়ন্ত্রণে সঠিক ঔষধ দেওয়া হবে। ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ওষুধ হল অ্যাসিক্লোভির। সেরা ফলাফলের জন্য, প্রথম ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার 24 ঘন্টার মধ্যেই এটি দেওয়া উচিত
-
ফোস্কা এবং ফুসকুড়ি – চুলকানি থেকে মুক্তি দিতে এবং ক্ষতস্থানের নিরাময় দ্রুততর করার জন্য ক্রিম এবং মলম দেওয়া হয়। ক্যালামাইন হল এরকম একটি লোশন যা চুলকানি কমায় এবং ত্বকে ভালো অনুভূতি আনতে পারে
-
আরামদায়ক জামাকাপড় – শিশুকে আরামদায়ক সুতীর জামাকাপড় পরানো উচিত। হালকা জামাকাপড় পরালে তাদের আরো আরামদায়ক বোধ হবে এবং তাদের শরীরের তাপমাত্রা না বাড়াতে সাহায্য করবে
-
আঙুলের নখ কেটে দেওয়া – শিশুটির নখগুলি কেটে দেওয়া উচিত যাতে সে ফোস্কাগুলি খোঁচাতে না পারে
-
শিশুকে হাইড্রেটেড এবং পেট ভর্তি অবস্থায় রাখুন – ডিহাইড্রেশন এড়াতে শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে তরল খাওয়ানো উচিত। তাদের জল খাওয়ানোর চেষ্টা করুন এবং কোলা বা মিল্কশেকের মতো মিষ্টিযুক্ত পানীয় বা মশালযুক্ত খাবার এড়ানোর চেষ্টা করুন, বিশেষ করে যদি চিকেনপক্স মুখের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে থাকে, কারণ এই ধরনের খাবার এবং পানীয় ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনি আপনার সন্তানকে ডিম, মুরগি বা কোনো মাংস দিতে পারেন যেটিতে লাইসিন থাকে যা নিরাময় প্রক্রিয়াতে সহায়তা করে। অন্যান্য সুপারিশকৃত খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে রসুন, নারকেল তেল এবং আপেল সাইডার ভিনেগার
-
নিম পাতা – নিম পাতা হল ক্ষতগুলির ব্যথা প্রতিরোধ করার আর একটি দুর্দান্ত উপায়। আপনি এটিকে থেঁতো করে পেস্ট বানিয়ে লাগাতে পারেন বা পাতাগুলিকে জলে ফুটিয়ে সেটিকে ঠান্ডা করার পর একটি তোয়ালে দিয়ে লাগাতে পারেন
-
গজ প্যাড – বাইকার্বনেট সোডা এবং জলে গজ প্যাড ডুবিয়ে সেটিকে ক্ষতের উপর লাগানো হল চুলকনির অনুভূতি হ্রাস করার আরেকটি উপায়
-
দস্তানা এবং মোজা – আপনার বাচ্চার হাতে দস্তানা বা মোজা পরিয়ে রাখলে, আপনি তাদের চুলকে ফেলা প্রতিরোধ করতে পারেন, নাহলে এটা থেকে দাগ হতে পারে
প্রতিরোধ
শিশুদের চিকেন পক্স সহজেই ‘চিকেন পক্স’ –এর টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। চিকেনপক্স টিকা দেওয়া থাকলে শিশুরা এই সংক্রমণ থেকে 80 থেকে 90 শতাংশ সুরক্ষা পায়। প্রশ্ন হচ্ছে, টিকা দেওয়ার পরেও কি আপনার চিকেন পক্স হতে পারে?
যে সব শিশুদের ভাইরাসটি থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা তৈরি হয় না, তারা সংক্রমণের সংস্পর্শে এলে আবার তাদের চিকেন পক্স হতে পারে। তবে, চিকেন পক্সের এই পর্বটি হালকা হয়, কম ফুসকুড়ি বেরোয়, এবং প্রায় কোনও জ্বর থাকে না। চিকেন পক্সের টিকা 12 মাস থেকে 15 মাস বয়সের পর শিশুকে দেওয়া হয় এবং বুস্টার ডোজ 4 থেকে 6 বছর বয়সের জন্য সুপারিশ করা হয়।
শুধুমাত্র চিকেন পক্সের জন্য একক টিকা হিসাবে এই টিকা দেওয়া যেতে পারে, অথবা অন্যান্য টিকার সঙ্গে একত্রিত করেও দেওয়া যায় যেটি এমএমআরভি (মাম্প, হাম, রুবেলা, এবং ভেরিসেলা) হিসাবে আসে। রোগ প্রতিরোধের অন্য পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে আপনার সন্তানকে সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসতে দেওয়া কারণ রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। আপনার শিশুটির এই পরিস্থিতিটি বোঝা জরুরী কারণ সে এই দুর্বল সময়ে একা অনুভব করতে পারে। এছাড়াও, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখলে, শিশুর এই ধরনের রোগ হওয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম করবে। তবে, সবচেয়ে ভালো উপায় হল আপনার সন্তানের চিকেন পক্স ভ্যাকসিন নেওয়া নিশ্চিত করা।
চিকেন পক্স ভ্যাকসিন
কিছু বাবা–মা বিশ্বাস করেন যে ছোট শিশুকে চিকেন পক্স ভ্যাকসিন দেওয়া অপ্রয়োজনীয়। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বাচ্চাদের চিকেন পক্সের পর্বটি হালকা হয়। তাদের শরীর বিশেষ অসুবিধা ছাড়াই নিজে নিজে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তবে, অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এই টিকা সুপারিশ করেন। চিকেন পক্স টিকা নিয়ে চিকেন পক্সের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ কখনও কখনও জটিলতা মারাত্মক হতে পারে। এমন পরিস্থিতিও হয়েছে যেখানে শিশুর মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি বা শরীরের অন্যান্য অংশে গুরুতর সংক্রমণ হয়েছে।
এই টিকাগুলি সমস্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর কাছে সহজে পাওয়া যায়। চিকেন পক্স ভ্যাকসিনগুলি ছোট বাচ্চাদের দেওয়া অত্যন্ত নিরাপদ। যদিও এই ভ্যাকসিনটি ব্যয়বহুল, এটি আপনার শিশুর সুরক্ষা প্রদান করে।
চিকেন পক্স ভ্যাকসিন এর প্রকার
চিকেন পক্স টিকা এই ভাইরাল সংক্রমণের চিকিৎসাতে খুব কার্যকর। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টিকা এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে শিশুর টিকা নেওয়ার পরেও সংক্রমণ হতে পারে। টিকা দেওয়া শিশুদের মধ্যে চিকেন পক্সের লক্ষণ খুব হালকা হয় এবং বেশী অস্বস্তি সৃষ্টি করে না। অতএব, শিশুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে রোগের সাথে লড়াই করতে দেওয়ার তুলনায় চিকেন পক্স টিকা দিতে সবসময় সুপারিশ করা হয়। দুই ধরণের চিকেন পক্স টিকা আছে :
-
ভেরিসেলা – এই টিকা শুধুমাত্র চিকেন পক্স থেকে সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয়
-
এমএমআরভি– এটি মাম্প, হাম, রুবেলা এবং ভেরিসেলার জন্য যৌথ ভ্যাকসিন এবং চিকেন পক্সের বিরুদ্ধে দেহকে রক্ষা করার জন্য কার্যকরভাবে কাজ করে
আপনি চিকেন পক্স ভ্যাকসিন কখন দেবেন
আপনার সন্তানের জন্মের এক বছর পরই চিকেন পক্স ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। টিকা দুই শটে দেওয়া হয় যা কমপক্ষে তিন মাসের ব্যবধানে হওয়া উচিত। অতএব, ঔষধের প্রথম সময়সূচি 12 মাস থেকে 15 মাস বয়সের মধ্যে হওয়া উচিত। দ্বিতীয় সময়সূচী বা বুস্টার ডোজ শিশুকে 4 থেকে 6 বছর বয়সের মধ্যে দেওয়া হয়। যদি কোনও কারণে এই সময়সূচীটি মিস হয়, তবে 13 বা তার বেশি বছর বয়সে শিশুটিকে 1 মাস ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
চিকেন পক্স ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?
চিকেন পক্স ভ্যাকসিন চিকেন পক্স প্রতিরোধে কার্যকর এবং এটি শিশুদের জন্য খুব নিরাপদ। এই টিকা শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি বিকশিত করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এই টিকাতে এই ভাইরাসের একটি দুর্বল রূপ আপনার সন্তানকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। যদিও কিছু লালভাব ও ব্যথা হতে পারে, এটি ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে।
শিশুকে চিকেন পক্সের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হবে কি হবে না তা সম্পূর্ণরূপে পিতামাতার উপর নির্ভর করে, কিন্তু এটি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন। টিকা দেওয়া শিশুদের মধ্যে চিকেন পক্স হালকা হয় এবং অনেক অস্বস্তি কম হয়।
চিকেন পক্স টিকা–র পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চিকেন পক্স টিকা অত্যন্ত নিরাপদ এবং কার্যকর এবং কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু কিছু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই টিকাটি দেওয়ার পর বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। অন্য যে কোনও ঔষধের মতো, চিকেন পক্স টিকাও শিশুদের কিছু জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে যেমন:
- নাক দিয়ে জল ঝরা, গলা ব্যথা
- পেশী বা গাঁটের ব্যথা
- জ্বর
- যেখানে টিকা দেওয়া হয় সেই জায়গায় লালভাব, ফুলে যাওয়া বা ব্যথা
- চামড়ার ফুসকুড়ি
- অবসাদ
- মাথা ব্যাথা
- ঘুমাতে সমস্যা
উপরে উল্লিখিত জটিলতাগুলি ছাড়াও কিছু গুরুতর জটিলতা রয়েছে যা বিরল ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে, যেমন:
- খুব উচ্চ জ্বর
- শ্বাসে অসুবিধা
- বুকে অস্বস্তি
- সহজে রক্তপাত এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়া
- আচরণে পরিবর্তন
- মুর্ছা যাওয়া
উপরের উপসর্গগুলির মধ্যে কনোওটি যদি দেখা দেয়, তবে আরও জটিলতা এড়াতে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা সহায়তা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
চিকেন পক্স হলে শিশু কি স্কুলে যেতে পারে?
চিকেন পক্স অত্যন্ত সংক্রামক এবং এক শিশুর থেকে অন্যতে সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতএব, আপনার সন্তানের চিকেন পক্স থাকলে আপনার সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয় না। প্রথম দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার আগেও সংক্রমণ সক্রিয় থাকে। সুতরাং, আপনি আপনার সন্তানের শরীরের উপর একটি ফুসকুড়ি বা দাগ এক বা দুই দিন ধরে লক্ষ্য করা মাত্রই স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি এর সাথে জ্বর থাকে, তাহলে এটি ভাইরাল সংক্রমণের একদম প্রথম পর্যায় হতে পারে। সংক্রমণটি সহজেই সংক্রামিত সন্তানের কাশি বা হাঁচি থেকে ছড়িয়ে যেতে পারে। যতক্ষণ না সমস্ত ফোসকা শুকিয়ে যাবে এবং কোনও নতুন মামড়ি তৈরি হওয়া বন্ধ হবে, ততক্ষণ আপনার সন্তানকে স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত থাকা উচিত। সন্তানের সংক্রমণ দূর না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকা এবং বিশ্রাম করা উচিত।
উপসংহার: চিকেন পক্স অত্যন্ত সংক্রামক কিন্তু সঠিক সতর্কতা এবং যত্ন নিলে এই সংক্রমণ দূরে রাখা যেতে পারে। আপনার বাচ্চাকে এই রোগের টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি আপনার সন্তানের এই ভাইরাল সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।