In this Article
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কিছু স্কুল বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে থাকে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আমরণ সংগ্রামের বীরত্বপূর্ণ কাহিনিগুলি সম্পর্কে শিশুদের অবগত করানো এবং শিখানোর জন্য।একটি জাতি হিসেবে, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে বেশ কিছু চরম বাধা, বহু দুর্গম পথ এবং চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করতে হয়েছিল যা একেবারেই মসৃণ ছিল না।আমাদের পূর্বপুরুষদের শৌর্য, বীর্য, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও চরম দুর্দাশাপূর্ণ পরিস্থিতিগুলি স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণকারীদের পক্ষে বোঝা ও উপলব্ধি করতে পারাটা বাস্তবেই কঠিন ও মুশকিলের কাজ।মা–বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক এবং প্রবীণ ব্যক্তিগণ যথার্থই একথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, উপনিবেশবাদের পাঠগুলি কিছুতেই ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং স্বাধীনতার মূল্যটি আগত প্রজন্মের দ্বারা লালিত হওয়া উচিত।শিশুদের কেবলমাত্র আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কেই শেখালে ও জানালে চলবে না তাদের কাছে এই আন্দোলনের গুরুত্বখানিও তুলে ধরা উচিত।
অনেক স্কুলেই এই বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে ছাত্রদের একটি বিশেষ বক্তৃতা প্রস্তুত করার কথা বলা হয়ে থাকে, এই নিবন্ধে, আমরা স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণ করে একটি উপযুক্ত বক্তৃতা প্রস্তুত করার সমস্ত দিকগুলি বিবেচনা্র সাথে পর্যালোচনা করতে চলেছি।আর তার জন্য এই নিবন্ধটি তার সমস্ত প্রয়োজনীয় দিকগুলি কভার করার পাশাপাশি বেশ কিছু মূল্যবান টিপসগুলি সরবরাহ করবে এবং তার সাথেই আবার শিশুদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের একটি সুন্দর বক্তৃতা প্রস্তুত করার দিকে একটি সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টিও বজায় রাখবে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি বক্তৃতা কীভাবে প্রস্তুত করবেন
একটা চমৎকার ভাষণ বা বক্তৃতা লেখাটা যেমন একটা বড় কাজ ঠিক তেমনি তা উপস্থাপন করাটা তার থেকেও আরও বড় একটি কাজ হয়ে উঠতে পারে।স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ বা বক্তৃতা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে সহায়তা করার সময় আপনার মনে রাখার প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু বিষয় এখানে উল্লেখ করা হলঃ
1.বাচ্চাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে জানান
প্রতিটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামই সেই দেশের জন্য এক বিরাট মাহাত্ম রাখে, তবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামটি ছিল আরও অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনায় বেশ স্বতন্ত্র এবং অনন্য।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটটি কেবল রাজনৈতিকই ছিল না, এটির সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয়েছিল আদর্শবাদ এবং আধ্যাত্মিকতা।উদাহরণস্বরূপ অহিংস আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল মহাত্মা গান্ধির হাতে।15ই আগস্ট উপলক্ষে শিশুদের জন্য একটি অসাধারণ ভাষণ বা বক্তৃতা প্রস্তুত করতে আপনার সন্তানকে সাহায্য করার আগে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পিছনে এর যে পরিমাণ ক্লেশ, কষ্ট, পরিশ্রম এবং ত্যাগের গরিমাপূর্ণ ইতিহাস লুকিয়ে আছে তা বিশদে ও সবিস্তারে আপনার সন্তানের বোঝা ও জানা উচিত।
2. বাচ্চাকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংক্রান্ত তথ্যগুলি অবগত করানোর দ্বারা সহযোগিতা করুন
যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন তারা একটি মহান জাতি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন যার মূল্যবোধগুলি তার নাগরিকদের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।আর এই ধারণাগুলির অধিকাংশটাই ছিল আধুনিক পশ্চিমী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে। পশ্চিমী দেশগুলির একটি কার্যকর আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন বা নিয়ন্ত্রণ রীতি ছিল, যা তাদের নাগরিকদের মধ্যে এনে দিয়েছিল এক ব্যাপক মুক্তি বা স্বাধীনতা এবং তাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা। এই একই দেশের জাতি বা জনগোষ্ঠীগুলিই যারা অন্তর্ভূক্তিমূলক উপনিবেশিক শাসনের কথা বলেছিল তারাই অন্যান্য জনগোষ্ঠীর লোকেদের পরাধীন করে দিয়েছিল।আমাদের প্রতিষ্ঠাতা পিতৃপুরুষ যাদের কেউ কেউ আবার সেই সকল রাষ্ট্রে অধ্যয়ন এবং বসবাস করেছিলেন, তারাও ভারতের জনগণের জন্য এই একই দাবী করেছিলেন।আপনার শিশুরও এই সকল আদর্শবাদ এবং আকাঙ্খাগুলির সাথে পরিচিত হওয়া উচিত, সেগুলি তার জানা উচিত।উপরন্তু, আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীতের অর্থ, জাতীয় পতাকার রঙগুলি কি ও প্রতিটি রঙের মধ্যে থাকা প্রতীকি হিসেবে তার অন্তর্নিহিত অর্থগুলিই বা কি এবং জাতীয় প্রতীকচিহ্নের মত সাধারণ বিষয়গুলির সাথেও পরিচিত হওয়া প্রয়োজন, সেগুলি জেনে রাখা দরকার, যেগুলির সবকিছুই একটা ভাল বক্তৃতা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে, আর যার মধ্যে একটা সংবেদনশীল অনুরণন বজায় থাকার পাশাপাশি একইসঙ্গে সেটি হয়ে উঠবে তথ্যবহুল।
3.বিখ্যাত উক্তিগুলি
কোনও একটি উদ্ধৃতি বা উক্তিকে কয়েকটি শব্দে সংক্ষিপ্ত করা যেতে পারে।আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা প্রেরণাদায়ী অনেক বক্তৃতা লিখে গেছেন যা একটি মহান জাতির স্বপ্নকে মূর্ত করে তোলে।এই সকল মহান ব্যক্তিদের বিখ্যাত উক্তিগুলি থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিগুলি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতৃবৃন্দের মধ্যে থাকা উচ্চ ভাবাদর্শ ও চিন্তাভাবনাগুলিকে বোঝার মাধ্যমে একটি ভাল মানের বক্তৃতা তৈরী করার কাজেও সহায়তা করতে পারে।শুধুমাত্র আপনার সন্তানের জন্য একটা সুন্দর ও ভালো বক্তৃতা তৈরী করার জন্যই গুটিকয়েক উদ্ধৃতিকে বেছে নেওয়া উচিত নয়, তবে তার সাথে এই উক্তিগুলির প্রসঙ্গ এবং তাৎপর্যগুলিও তাদের কাছে ভালভাবে ব্যাখ্যা করে সম্পূর্ণরূপে তাদের তা বুঝিয়ে দেওয়াও উচিত।উদাহরণস্বরূপ বলা যাক, আব্রাহাম লিংকন একদা বলেছিলেন, “আমি যেহেতু একজন ক্রীতদাস হতে পারব না, তখন আমি একজন প্রভুও হতে পারব না” এটি আমার গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা প্রকাশ করে“।এই উক্তিটি তাঁর গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা এবং পাশ্চাত্য ধাঁচের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, অবিকল গণতন্ত্রের ঠিক একই রূপ ভারতের সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
4. স্বাধীনতার মূল্য
আজকের ভারতবর্ষে বিবিধ মতামত প্রকাশের একাধিক বিভিন্ন কণ্ঠ রয়েছে, যেখানে কিছু কণ্ঠ গর্ববোধে সোচ্চার হয়ে ওঠে ভারতবর্ষ আধুনিক গণতান্ত্রিক একটি দেশে পরিণত হয়ে ওঠার ব্যাপারে, তেমনি পক্ষান্তরে আবার অন্যরা দুর্নীতিতে হতাশ হয়ে বলেছেন যে ব্রিটিশ শাসনই ভাল ছিল।আপনার সন্তানের পক্ষে এটা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রকৃত গণতন্ত্রে সরকারের বিভিন্ন কণ্ঠস্বর, মতামত এবং সমালোচনা শোনা যায় এবং তা গৃহীত হয়।আপনার সন্তানের কাছে এটা বোঝাও জরুরী যে কেন একটা দেশ, জাতি এবং তার জনগণের মধ্যে স্ব–সংকল্পের একটি অধিকার থাকা প্রয়োজন এবং শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তাদের নিজস্ব লোকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একটি দল গঠন করা উচিত।একটি বিদেশী শক্তি চূড়ান্তভাবে উৎসাহিত ও আগ্রহী হবে তার নিজ দেশ তথা জাতির মঙ্গলার্থে।অতএব, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে একটি দেশ বা জাতিকে পরিচালনা এবং শাসন করার ক্ষমতাগুলি সেই সকল ব্যক্তির হাতেই অর্পিত হওয়া উচিত যারা হলেন জনগণের জন্য, জনগণের মধ্যে থাকবেন এবং জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবেন।
5.স্বদেশপ্রেমের মূল্যবোধগুলি
এ ব্যাপারে যদি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তি যোদ্ধাদের মধ্যে চরম স্বদেশভক্তি না থাকত তবে হয়ত আমরা কখনই আমাদের স্বাধীনতা ফিরে পেতাম না, আজকের স্বাধীন ভারতবর্ষের মুখ দেখতাম না।দেশপ্রেম হল এমন এক আত্মসংযুক্তি যা কেউ তার মাতৃভূমি, তার অধিবাসী এবং সংস্কৃতির জন্য অনুভব করেন।স্বাধীনতা দিবসের জন্য দেশপ্রেমের উদ্দীপনা ছাড়া প্রস্তুত কোনও একটি বক্তৃতা সেই দেশ ও তার জনগণের আবেগপূর্ণ সংযুক্তি, অনুভূতিপূর্ণ সংবেদনশীলতার অনুভূতিকে খুব বেশি অনুপ্রাণিত করবে না।দেশপ্রেমের অর্থ কখনই এই নয় যে সমাজের খারাপ দিকগুলিকে অন্ধের মতই গ্রহণ করতে এবং মেনে নিতে হবে, পরিবর্তে দেশপ্রেম হল খুব সহজভাবেই দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং আস্থা এবং বিশ্বাস থাকা যা জাতির মূল্যবোধগুলি শেষ পর্যন্ত বজায় রাখবে, ধরে রাখবে।আপনার শিশুকেও অবশ্যই একজন দেশপ্রেমিক হয়ে উঠতে হবে এবং দেশের তথা জাতির মূল্যবোধগুলির প্রতি তার একটি অগাধ বিশ্বাস বজায় রাখতে হবে এবং তা তার মধ্যে প্রদর্শিত হওয়াও প্রয়োজন।
6.অনুশীলন পর্ব
একটি সুন্দর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় দীর্ঘ অনুশীলন।আপনি আপনার সন্তানকে বক্তৃতাটি মুখস্থ করার জন্য উৎসাহিত করুন কারণ কাগজে লেখা দেখে বক্তব্য রাখার থেকে স্মৃতি থেকে বক্তৃতা করা আনেক বেশি আকর্ষণীয়।আপনার সন্তানকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, আবেগমিশ্রিত করে দৃঢ়ভাবে অবিচল স্বরে বক্তব্য রাখতে শেখান।শিশুটি যেন তার বক্তব্য পেশ করার সময় শূন্যপানে না তাকিয়ে শ্রোতাদের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বক্তৃতা করে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন।মূল অনুষ্ঠানের আগে বেশ কয়েকবার অনুশীলন করা প্রয়োজন হতে পারে।
7.বিষয়বস্তুই হল আসল কথা
বক্তৃতাটি কতটা তথ্য সমৃদ্ধ হল যে বিষয়ে বলা হবে শুধুমাত্র সেই বিষয়ের লেখার উপর নির্ভর করে না, লেখার বিষয়বস্তুটি যেন শ্রোতাকে আকর্ষিত করে সেটা দেখাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।সার্ভিসম্যান বা চাকুরিজীবীদের উদ্দেশ্যে রচিত বক্তৃতার বিষয়বস্তুটি অবশ্যই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে রচিত বক্তৃতার বিষয়বস্তু থেকে পৃথক হবে।এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে বিদ্যালয়ে দেওয়া বক্তৃতাটির শ্রোতাগণ হল বা হলেন তার সহপাঠিরা এবং শিক্ষক–শিক্ষিকাবৃন্দ।এই ছাত্রছাত্রীরা অদূর ভবিষ্যতে যৌবনে পদার্পন করতে চলেছে, তাই তাদের বোঝা প্রয়োজন একটি স্বাধীন দেশের গুরুত্ব, এবং ছাত্রদের এ ব্যাপারেও অবগত হওয়া দরকার যে তাদের প্রকৃত অবস্থানটি ঠিক কিরূপ এবং বৃহত্তর দেশাত্মবোধের আদর্শের জন্য তাদের অবদান কি হওয়া উচিত।আপনার সন্তানের জন্য বক্তৃতার বিষয়বস্তু নির্বাচন করার সময় এই ব্যাপারগুলি মাথায় রাখতে হবে।
8.বিষয়ের ধারাবাহিকতা এবং সময়
একটি স্কুলের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি বক্তৃতা শেষ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বাঁধা থাকবে, তাই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সেটি শেষ করার জন্য এই দিনটির প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলিকে যথাযথ ভাবে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে সাজিয়ে তা শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করার লক্ষ্য স্থির রাখতে হবে। আবার অন্যদিকে, দীর্ঘ একটি বক্তৃতা নাটকের একঘেয়ে একক বাচনের মত শোনাবে।বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতাকে বেশ কয়েকটি উপ–শিরোনামে ভাগ করা উচিত যার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে উপস্থিত থাকবে সূচনা বা ভূমিকা, মাঝের একটি অংশ এবং উপসংহার।একবার আপনি উপ–শিরোনামের তালিকাটি সাজিয়ে নিলে প্রতিটি উপ–শিরোনামের জন্য পূর্বনির্ধারিত সময়ের কথা মাথায় রেখে প্রতি বিভাগের জন্য বিষয়বস্তু লিখতে শুরু করুন।বক্তৃতার ধারাবিবরণীটি শেষ হওয়ার কয়েক মুহূর্ত আগের মধ্যেই প্রতিটি উপ–শিরোনামের জন্য সেট করা পূর্ব নির্ধারিত সময়গুলির সমষ্টি মিলে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত মোট সয়সীমা হওয়া উচিত।
9. সূচনা–সম্বোধন
বক্তৃতার শুরুতেই থাকা উচিত মাননীয়/মাননীয়া শিক্ষক/শিক্ষিকা, সহপাঠী শিক্ষার্থী এবং সম্মানীয় অতিথিবৃন্দের প্রতি সম্বোধনসূচক দু–একটি উক্তি এবং স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও সেই দিনটিকে উপলক্ষ করে সকলে একত্রে জমায়েত হওয়ার কারণটিও সেখানে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।বক্তৃতার সূচনাতে স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব, এবং 1947 সালের ঐ দিনটির পাশাপাশি আজকের দিনটিতে তার প্রাসঙ্গিকতার বিষয়েও একটি রেফারেন্স প্রস্তুত করা উচিত।একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণেও ক্রমবর্ধমান জাতির পরিবর্তিত অগ্রাধিকারগুলির প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত, কারণ এর অগ্রাধিকারগুলি 1947 সালে ভিন্ন ছিল এবং আজ সেগুলি তার থেকেও আরও পৃথক।
10. প্রতিষ্ঠাজনকের লক্ষ্য এবং আকাঙ্খাগুলি
জাতির প্রতিষ্ঠাজনকগণ দেশের স্বাধীনতার জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলেন কারণ তারা একটি দুর্দান্ত ও দুর্নির্বার জাতির উন্মেষের কল্পনা করেছিলেন এবং সেই দেশের বা জাতির মানুষদের দক্ষতা, সম্মিলিত সম্ভাবনা এবং তাদের আকাঙ্খাগুলিতে বিশ্বাস রেখেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার সময় আমাদের প্রতিষ্ঠাজনকরা তাঁদের মনের মধ্যে যে আদর্শের ভাবধারায় সাম্যতা, সহিষ্ণুতা, গণতন্ত্র, অন্তর্ভূক্তি এবং বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের আদর্শ অন্তর্ভূক্ত করে স্বযত্নে অন্তরে লালন করে চলেছিলেন আমাদের মধ্যেও সেই সকল স্মৃতিগুলিকে অত্যন্ত যত্ন সহকারে লালিত করে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
11.ত্যাগ ও শহীদত্বের কাহিনী
মানবজাতির সকল দুর্দান্ত সংগ্রামের মতো, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামেও অগণিত দুঃখকষ্ট, দুর্দমনীয় অফুরন্ত সাহস, উন্নতশির নেতৃবৃন্দের বীরত্ব এবং রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের গল্প রয়েছে।স্বাধীনতার দুর্গম পাথুরে রাস্তায় জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতাদের দ্বারা নিরলস প্রয়াস, নেতৃত্ব এবং তাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের কথা বক্তৃতার মধ্যে উল্লেখ থাকা উচিত।
12.নেতৃবৃন্দের নেতৃত্ব
প্রাক্ স্বাধীন ভারতবর্ষে এমন কিছু আশীর্বাদধন্য মহান নেতৃবৃন্দ ছিলেন যাঁরা তাঁদের নিজ দেশবাসীকে এক গৌরবময় জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। 1857 সালে মঙ্গল পান্ডের বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ভগত সিং, সুখদেব এবং রাজগুরু প্রভৃতি মহান নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সুভাষচন্দ্র বসু, সরদার প্যাটেল, খান আব্দুল গফফর খান এবং পরের দিকের অন্যান্য আরও অনেক নেতৃবৃন্দ যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের বীরত্ব, ধৈর্য, সাহস এবং সহনশীলতা প্রদর্শন করিয়েছিলেন তাদের সকলের নাম এবং সেই সকল যোদ্ধাদের ত্যাগের উল্লেখ করুন।
13.স্মরণীয় ঘটনাবলী
স্ব—শাসনের প্রয়োজনে ভারতবর্ষের মানুষের চোখ খুলে দেওয়ার মত এমন অনেক মর্মান্তিক ঘটনা আছে যেগুলির উল্লেখ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নৃশংস বর্বরতার নিষ্ঠুর প্রকৃতিগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরে, যার মধ্যে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড, 1857 সালের বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ– এই সবগুলিই ভারতীয়দের মনের উপর এক গভীর ক্ষতরেখা টেনে দেয়।আবার ভারত ছাড়ো আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলনের মত বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যেগুলি শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদেরও ভারত ত্যাগ করতে বাধ্য করে তুলেছিল সেগুলিও স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতার মধ্যে বিশদে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
14.আজকের ভারত
বর্তমান ভারতের সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতাগুলি যেন আপনার বক্তব্যের মধ্যে ফুটে ওঠে এবং সমৃদ্ধশালী ভারতীয় ঐতিহ্য আর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে গৃহীত শিক্ষা যেন আপনার প্রস্তুত করা বক্তৃতার মধ্যে থাকে।আপনি অবশ্যই স্বাধীনতা উত্তরকালে ভারতবর্ষের উন্নতির বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেবেন।ব্রিটিশরা যখন শেষ পর্যন্ত ভারত ছেড়ে চলে যায় তখন তাদের এই পুরাতন উপনিবেশের বাসিন্দাদের
উদ্বর্তনের বিষয়ে তারা সন্দিগ্ধ ছিল।ভারতের সাফল্য পাশ্চাত্যের অনেক দেশকেই অবাক করেছে।স্বাধীন হবার মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ভারতবর্ষে কেবল গণতন্ত্রই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি পাশাপাশি সে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং পারমাণবিক শক্তি আর মহাকাশ বিজ্ঞানে তার সাফল্য পৃথিবীর কয়েকটি মাত্র হাতে গোনা দেশের সঙ্গে আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে এক আসনে বসিয়েছে।
15.সমাপ্তি পর্ব এবং উপসংহার
বক্তৃতার সমাপ্তি পর্বে অবশ্যই আমাদের আদর্শ নাগরিক হয়ে ওঠার এবং দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত আদর্শের প্রতি জীবন ধারণ করার এক প্রতিশ্রুতি ও সংকল্প গ্রহণ অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।জাতীয় কিম্বা বিদেশী কিছু মহান নেতৃবৃন্দের মুক্তি, গণতন্ত্র অথবা স্বাধীনতা সম্পর্কিত অনুপ্রেরণামূলক এক মহান উদ্ধৃতি বক্তৃতার অন্তিম পর্বে রাখলে তা সকলকে আকৃষ্টকারী একটি ভাল সমাপ্তি পর্ব হয়ে উঠবে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি ভাষণ বা বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আপনার সন্তানকে প্রস্তুত করার কয়েকটি পরামর্শ বা টিপস
একটা অসাধারণ বক্তব্য রাখার জন্য আপনার শিশুটির অনুশীলনে তাকে সহায়তা করুন এবং এর জন্য তার আত্মবিশ্বাসটিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে নিম্নোলিখিত টিপসগুলি প্রয়োগ করতে পারেন, যা তাকে ঐ বিশেষ দিনের জমায়েতের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।
1.বক্তৃতাটি মুখস্থ করান
বক্তৃতাটি মুখস্থ করা এবং তা বেশ কয়েকবার অনুশীলন করার জন্য আপনার সন্তানকে তোশামোদ করুন।যদি আপনার শিশু কোনও কাগজের টুকরো থেকে না পড়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে সকলের সমক্ষে বক্তৃতাটি দিতে পারে তবে সে আরও বেশী আকর্ষণীয়, দৃঢ়চেতা এবং আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠবে।এছাড়াও তার মধ্যে যদি মঞ্চের উপর থেকে দূরের কোনও জিনিসের দিকে তাকানো বা মঞ্চে ওঠার এ ধরণের কোনওরকম ভয় থেকে থাকে তবে তা কাটানোর কিছু কৌশল তাকে শেখান।
2.আপনার শিশুকে সেই মত উপযোগী পোশাক পরান
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী অনেক নেতৃবৃন্দের মধ্যেই তাদের পোশাক পরিচ্ছদের ব্যাপারে একটু স্বতন্ত্র রুচি এবং পছন্দ ছিল।কিছুজন যেমন অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী পোশাক পরিধান করতেন তখন আবার অন্যদের মধ্যে ছিল আলাদা একটা স্বতন্ত্র শৈলী।বিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আপনার শিশুর সাজসজ্জা করাতে আমাদের দেশনায়কদের ব্যবহৃত পোশাকের স্টাইলগুলি থেকে এমন কিছু ইঙ্গিত নেওয়া যেতে পারে যা অতীতের সেই সকল মহান বীর নেতাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।
স্বাধীনতা দিবস ভারতবর্ষের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য দিন।এই বিশেষ দিনটি উপলক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আপনার সন্তানকে যদি নির্বাচিত করা হয়ে থাকে, তবে সেটা ভীষণ গর্বের একটা বিষয় হয়ে ওঠে।এই অত্যন্ত ঐতিহ্যপূর্ণ স্মরণীয় দিনটিতে একটি স্মরণীয় বক্তব্য রাখতে একটা সুন্দর বক্তৃতা প্রস্তুত করার জন্য উপরোক্ত টিপসগুলি অনুসরণ করুন।