নবজাতকের জীবনের প্রথম বারো মাসটি সবচেয়ে পলকা বলে পরিচিত। অসংখ্য সংক্রমণ, এলার্জি এবং মেডিকেল অবস্থার পাশাপাশি তারা হঠাৎ শিশু মৃত্যুর সিন্ড্রোম বা সিআইডিএসের ঝুঁকির মুখে পড়ে। উপুড় হয়ে ঘুমানো সিআইডিএস–এর একটি কারণ বলে মনে করা হয়।
শিশুর উপুড় হয়ে ঘুমানো কি নিরাপদ?
এটি তাত্পর্যপূর্ণ যে জীবনের প্রথম বারো মাসে একটি শিশু যেন উপুড় হয়ে না ঘুমায় কারণ তারা তাদের নিজস্ব বায়ুকে পুনরায় শ্বাসের মাধ্যমে নেয়। এর ফলে তাদের পুনর্ব্যবহৃত বাতাস শ্বাসের মাধ্যমে নেয় যা কম অক্সিজেন যুক্ত হয় এবং এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস করে। এর থেকে এসআইডিএস হতে পারে। সুতরাং, উপুড় হয়ে ঘুমানো শিশুর পক্ষে মারাত্মক হতে পারে কারণ অক্সিজেনের অভাব ঘটতে পারে। ডাক্তাররা সুপারিশ করেন যে বাবা–মারা যেন সতর্ক থাকেন যে তাদের বাচ্চাটিকে যেন উপুড় হয়ে শুয়ে কয়েক মিনিটের বেশি ঘুমাতে দেওয়া না হয়।
বাচ্চারা কখন উপুড় হয়ে ঘুমাতে পারে?
আমেরিকান একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিকসের মতে, সিআইডিএসের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা 50% কমে গেছে কারণ নবজাতকদের কমপক্ষে এক বছরের জন্য চিত হয়ে ঘুমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি তাদের শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমকে শক্তিশালী এবং স্বাভাবিকভাবে বিকাশ করে। তারা আরো অক্সিজেনে শ্বাস নিতে পারে, এইভাবে সিআইডিএসের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এমনকি এক বছরের পরও, শিশুদের বেশী সময় ধরে উপুড় হয়ে না ঘুমাতে দেওয়া ভাল।
আমার শিশু উপুড় হয়ে ঘুমাতে যদি ভালবাসে?
এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রথম চার মাস পর্যন্ত নবজাতকদের পক্ষে নিজে নিজে উপুড় হয়ে শোয়ার মতো দক্ষতা থাকে না। একবার বাচ্চাটি ঘুরতে শুরু করলে, শিশুর এবং তাদের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখা জরুরি, বিশেষত যখন তারা জেগে থাকার সময় উপুড় হয়ে থাকে। জীবনের প্রথম বছরে উপুড় হয়ে শোয়া যে কোনো ভাবে এড়ানো আবশ্যক। নবজাতক শিশুর শরীর এখনো অক্সিজেন পুনরায় সঞ্চালনের ক্ষমতা লাভ করেনি। অত্যধিক কার্বন ডাই অক্সাইড যা শিশুর উপুড় হয়ে ঘুমানোর সময় শিশুটির দেহে ফেরত আসে তা মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে। যদি আপনার শিশুর চিত হয়ে ঘুমাতে না পারে তবে অবিলম্বে একটি শিশুরোগ চিকিত্সকের সাথে যোগাযোগ করুন।
যদি আপনার শিশু পালটি খেয়ে উপুড় হয়ে শোয়, আপনার কি চিন্তিত হওয়া উচিত?
কিডসহেলথ দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় যে সিআইডিএসের বেশিরভাগ ঘটনাই নবজাতকের জীবনের প্রথম বছরে ঘটে – বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। যে সব শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক শক্তি কম, তারা ছয় মাসের মধ্যে পালটি খেতে শুরু করে। এটির সুবিধা রয়েছে, যে সব শিশুরা প্রথম ছয় মাস পরে উপুড় হয়ে শুয়ে জেগে সময় কাটায়, তাদের মেঝে থেকে মাথা উপরে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উপরের শরীরের শক্তি তৈরি হতে পারে।
সতর্কতা: এই সময়ের মধ্যে শিশুর দিকে নজর রাখা জরুরি কারণ সিআইডিএস এখনও একটি স্বাভাবিক ঝুঁকি। শিশুকে উপুড় হয়ে শোয়া অবস্থায় একলা ছাড়বেন না।
জাগা এবং ঘুমানো উভয় অবস্থায় আপনার শিশু যদি পালটি খেয়ে ঘুরে যায়, তবে এটি প্রথম ছয় মাসের পরে হলে, নিরাপদ হতে পারে। এটির এখনও পর্যবেক্ষণ এবং সতর্কতার প্রয়োজন। প্রথম ছয় মাস পরে, যদি আপনার শিশু ঘুমানোর সময় ঘুরে গিয়ে উপুড় হয়ে শোয়, তবে বায়ু সঞ্চালনের যে কোনো বাধা দূর করা গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ হচ্ছে শিশুর সাথে বিছানাতে কোনো কম্বল, খেলনা প্রাণী, বা অন্যান্য খেলনা ইত্যাদি থাকা উচিত নয়। আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন যাতে আপনার শিশু ঘুমানোর সময় ঘুরে গেলে সমস্যা না হয়।
শিশুর উপুড় হয়ে ঘুমানো: নিরাপদ ঘুমের নির্দেশিকা
আপনার শিশুর নিরাপদ এবং ভাল বিশ্রাম নিশ্চিত করার এবং আপনার সন্তানের উপুড় হয়ে ঘুমানোর জন্য যেন কোনও ক্ষতি না হয় তার জন্য একাধিক উপায় রয়েছে ।
-
একটি শক্ত গদি ব্যবহার করুন: একটি শক্ত গদি ব্যবহার করলে নিশ্চিত করা হবে যে আপনার ছোট্টটি তার প্রয়োজনীয় সমস্ত সমর্থন পাচ্ছে। কোনো বালিশ, ওয়াটারবেড, সোফা বা অন্য কোন নরম পৃষ্ঠতলে তাকে শোয়াবেন না কারণ এটি তার ভালো ভাবে শ্বাস নেওয়ায় সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে আপনার বাচ্চার ঘুমানোর সময় আপনি বিছানাতে কিছু রাখবেন না।
-
বাম্পার প্যাড সরান: এই আনুষঙ্গিক উপকরণটি বেশ প্রচলিত এবং প্রায় প্রতিটি বিছানার গদি প্যাড লাগানোর বিকল্প সহ আসতে পারে। যাইহোক, এটি আপনার বাচ্চার বিছানায় না লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি থেকে শিশুর দমবন্ধ হয়ে যেতে পারে।
-
আপনার শিশুকে খুব উষ্ণ হতে দেবেন না: আপনার শিশুর ঘুমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা জেনে রাখা কঠিন হতে পারে। তবে, যদি আপনি ঘরে ছোট হাতা জামা পরে আরামদায়ক বোধ করেন, তবে তাপমাত্রাটি আদর্শ। সাধারণভাবে ঘরের তাপমাত্রা 23 থেকে 25 ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখতে সুপারিশ করা হয়।
-
শিশুর মাথা আবৃত রাখা এড়িয়ে চলুন: আপনার শিশুর জন্য যে হালকা কম্বলগুলি ব্যবহার করেন সেগুলি যেন কেবল তার বুক পর্যন্ত আবৃত করে এবং তার হাত কম্বলের বাইরে থাকতে হবে। এর ফলে কম্বলটি যেন শিশুর মাথার দিকে সরে না যায় তা নিশ্চিত করা যায়।
-
একটি চুষি ব্যবহার করুন: এই ডিভাইসগুলি আপনার সন্তানকে যথেষ্ট শান্ত করার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সরঞ্জাম হতে পারে যাতে সে ভালো মানের ঘুম পায় । তবে, যদি সে এগুলিতে অস্বস্তি বোধ করেয়, অথবা তার ঘুমানোর সময় যদি এগুলি পড়ে যায়, তবে এটি জোর করবেন না।
আপনার শিশুর সচেতন অবস্থায় উপুড় হয়ে থাকা (টামি টাইম)
যদিও উপুড় হয়ে ঘুমানো বাচ্চাদের জন্য সুপারিশ করা হয় না, তবে জেগে থাকা অবস্থায় তাদের উপুড় হয়ে শোয়া আবশ্যক। একটি দৃঢ় এবং শক্ত পৃষ্ঠের উপর একটি মাদুর রেখে তার উপর আপনার শিশুকে উপুড় করে শোওয়ান। কারেন সোকাল–গুটিয়ারেজ, এম. ডি., এম. পি. এইচ –এর মতে, শিশুদের জেগে থাকা অবস্থায় তাদের উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা দরকার, কারণ এটি তাদের শরীরের উপরের অংশের শক্তি তৈরি করতে এবং ঘুমানোর সময় তাদের আরও ভাল শ্বাস নিতে সহায়তা করে।
এই কাজটির জন্য আপনার শিশুকে জোর করবেন না। শুরুতে একটানা মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য তাকে এই অবস্থায় শোওয়ান। পরে এটির সময় বাড়িয়ে তুলতে পারেন যখন আপনার শিশু এটিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং এটির জন্য সঠিক শক্তি তৈরি করতে পারে।
উপসংহার: একটি নবজাতক শিশু দিনের বেশিরভাগ সময়ে ঘুমাতে পারে। শিশুর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলেই এটি কেবল বাধাগ্রস্ত হয়। একটি শিশুর বিকাশের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি চরম যত্ন এবং সাবধানতার সাথে পরিচালিত হওয়া উচিত। আপনার শিশুর ঘুমের অভ্যাসের ক্ষেত্রে কী মানা উচিৎ এবং কী উচিৎ নয় তার বিশদ তালিকার জন্য আপনি আপনার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চিকিত্সক এবং শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।