In this Article
চোখের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা একজন প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি বাচ্চার ক্ষেত্রেও সমান এবং হয়ত বা এর চেয়েও বেশি। প্রসবের নালীতে উপস্থিত ব্যাক্টেরিয়াগুলির কারণে প্রসবের সময়েই নবজাতকদের চোখের সংক্রমণ হতে পারে।এর ফলে চোখ ফুলে উঠতে শুরু করবে, চুলকানি হবে এবং এই সমস্ত অস্বস্তিকর লক্ষণের কারণে আপনার শিশু বিপর্যস্ত ও বিরক্ত হয়ে উঠবে।
চোখ সংক্রমনের লক্ষণগুলি
প্রাপ্তবয়স্কদের মতই নবজাতকেরাও চোখের সংক্রমনের প্রতি সমভাবে সংবেদনশীল।সাধারণত চোখের সংক্রমণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাল প্রকৃতির।সেগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য এখানে তার কিছু লক্ষণ দেওয়া হলঃ
1. লালচে ভাব
চখের সাদা অংশে অথবা চোখের পাতার ভিতরের অংশে লালচে ভাব দেখা দিলে,আপনার ছোট্ট সোনাটি হয়ত চোখের ভাইরাল সংক্রমণে ভুগছে সেটিকেই চিহ্ণিত করে।
2. স্রাব
চোখ থেকে যেকোনও হলুদ স্রাবের অর্থ হল চখের সংক্রমণটি হল ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ।ঐ অঞ্চলটিকে পরিষ্কার করে যেকোনও স্রাবকে মুছে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন।
3. ফোলাভাব
ফোলা চোখের পাতাগুলি সম্ভবত শিশুর চোখের ভাইরাল সংক্রমণকেই সূচিত করে।
4. ঔজ্জ্বল্যহীন ফ্যাকাসে চোখের পাতা
যদি আপনার সন্তানের চোখের পাতা ঔজ্জ্বল্যহীন ফ্যাকাসে ধরনের হয় অথবা যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে তার চোখের পাতাগুলি একসাথে জুড়ে গেছে,তবে চোখের সংক্রমণটির প্রকৃতি ব্যাকটেরিয়াজনিত।অস্বস্তি কমাতে ধীরে ধীরে এর গঠণ থেকে মুক্তি পান।
5. ছলছলে চোখ
জলে ছলছল চোখ আপনার ছোট্টটির মধ্যে একটি ভাইরাল সংক্রমণকেই সূচিত করে।এর ফলে আবার চোখ চুলকোতে এবং শুষ্ক হয়ে যেতেও পারে।চোখ ধুয়ে ঐ অঞ্চলটিকে পরিষ্কার রাখুন।
বাচ্চাদের চোখের সংক্রমণের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার কেন পছন্দ করা হয়?
শিশুরা যখন চোখের সংক্রমণে ভোগে, তখন এর লক্ষণগুলি সহ্য করার মতো তাদের সহ্যক্ষমতা খুব কম থাকে এবং সেই কারণে তারা অত্যন্ত বিরক্ত হতে পারে এবং কাঁদতে শুরু করে।যদিও এর জন্য অনেকগুলি চোখের ড্রপ আছে যেগুলি আপনি নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, তবে এগুলি সম্ভবত আপনার শিশুর জন্য সঠিক পছন্দ নাও হতে পারে। আপনি আপনার বাচ্চার চোখ পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন এবং তারপরে একটি সু–চিন্তিত সুপারিশ পেতে পারেন, কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার শিশুটি সেই ভীষণ অস্বস্তিটি সহ্য করতে না পেরে শোরগোল সৃষ্টি করবে!
ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সব প্রাকৃতিক বিকল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং শিশুর জন্য খুব কম ক্ষতিকারক।এমনকি যদি এগুলি সংক্রমণের চিকিৎসা নাও করে, তারা কিছুটা ভাল আরাম দিতে পারে যা বাচ্চাটিকে শান্ত করতে পারে এবং তারপরে আরও পরীক্ষার জন্য তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
শিশুদের চোখের সংক্রমণের জন্য সেরা 10টি ঘরোয়া প্রতিকার
বাচ্চাদের চোখের সংক্রমণের কিছু সাধারণ প্রতিকার এখানে দেওয়া হল।
1. ক্যামোমিল তেল
ক্যামোমিল তেলের অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তেলে অন্তর্নিহিত বিভিন্ন অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে, যা এটিকে চোখের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য দুর্দান্ত বিকল্প হিসাবে গড়ে তোলে। কয়েক কাপ জল নিয়ে কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে ফোটানো সবচেয়ে ভাল। পরে, এটি ছেঁকে নেওয়া যেতে পারে এবং এর মধ্যে তুলার বল ডুবানোর জন্য দ্রবণটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এই তুলোর বলগুলি শিশুর চোখের উপরে রাখলে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয় এবং এটি সংক্রমণের চিকিৎসা করতে সক্ষম।
2. নুন জল
এক্ষেত্রে সমুদ্রের নুন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নুন নিজেই বেশ ভাল একটি ক্লিনজিং এজেন্ট এবং এতে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে যা এটিকে দুর্দান্ত অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে গড়ে তোলে। এক কাপ জলে এক চামচ নুন মিশিয়ে একসাথে গরম করলে এমন একটি দ্রবণ তৈরি হয় যা চোখের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য দুর্দান্ত। এটিকে চোখ ধোওয়ার উপযোগী ঠাণ্ডা করে শিশুর চোখ ধুয়ে নেওয়া যায় যেহেতু এটি চোখের কোনও স্রাব বা শক্ত হয়ে যাওয়া পিচুটি মুছে ফেলবে। অন্যদিকে, সংক্রমণ কমাতে জলে ডুবানো তুলোর পুঁছা শিশুর চোখের উপরে রাখা যেতে পারে।
3. বুকের দুধ
এটি প্রথমে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে তবে মায়ের দুধ আসলে চোখের সংক্রমণের চিকিৎসার একটি ভাল বিকল্প। মায়ের দুধে প্রথম থেকেই প্রচুর ভিটামিন এবং পুষ্টি রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি যা শিশুর প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। যেহেতু এগুলি সক্রিয়ভাবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তাই ড্রপার ব্যবহার করে শিশুর চোখে দু‘ফোঁটা স্তন দুধ প্রয়োগ করলে সংক্রমণ হ্রাস পেতে পারে। বুকের দুধ কনজাংটিভাইটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সুপরিচিত।
4. আই ব্রাইট প্ল্যান্ট
এই জাতীয় উদ্ভিদ চোখের সংক্রমণ সহ বিভিন্ন সংক্রমণের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে সুপরিচিত। এই উদ্ভিদে প্রচুর পরিষ্কারক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চোখের চুলকানি কমায়। অ্যান্টি–অ্যালার্জিক উপাদান যুক্ত, এই উদ্ভিদ ফোলা চোখ কমাতেও সহায়তা করে। 2 কাপ জলে সামান্য আইব্রাইট দিয়ে ফোটালে এমন একটি দ্রবণ তৈরি হয় যাতে তুলোর বল ডুবিয়ে রাখা যেতে পারে।এরপর জলটি নিংড়ে বের করে দিন এবং তারপরে তুলোর বলগুলিকে শিশুর চোখের উপরে রাখুন।
5. গরম এবং ঠান্ডা জল
চোখের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দ্রুততম উপায় হ‘ল জলের ব্যবহার। কিছুটা শীতল জল দিয়ে চোখ ধুলে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি এনে দেয় এবং চোখের ভিতরে থাকা যে কোনও ছোট কণা বের করে দিতে সাহায্য করে। এর পরে তুলোর পুঁছা উষ্ণ জলে ভিজিয়ে চোখের উপরে রাখুন, এবং এই তাপমাত্রা পরিবর্তন সংক্রমণ মোকাবিলার পাশাপাশি কোনও স্রাব পরিস্কারের ব্যাপারেও সহায়তা করতে পারে। এর ফলে চোখের সংক্রমণজনিত ফোলাভাব এবং ব্যথা যথেষ্ট হ্রাস পায়।
6. চা বা টি ব্যাগ
চায়ের অনেক অ্যান্টি–মাইক্রোবায়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চা সেবন করার পরে শরীরের উপকার করে। এগুলি চোখের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে। টি ব্যাগটি গরম জলে ডুবিয়ে রেখে তারপর এটি শীতল হতে দিন, চায়ের উপাদানগুলি সক্রিয় করতে। এই টি ব্যাগটি এরপর প্রতিটি চোখের উপর পর্যায়ক্রমে স্থাপন করা যেতে পারে এবং এটি সংক্রমণের ব্যথার উপশম করে।
7. জুঁই ফুল
এটি অন্যতম একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক শীতলকারী যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় প্রতিকারেরও একটি অংশ। জুঁইয়ের জল ত্বককে প্রশমিত করার জন্য পরিচিত এবং এটি চোখকে প্রশান্ত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। জুঁইয়ের ফুলগুলি সারা রাত ধরে পাতিত জলে ভিজতে দিয়ে, তারপর একটি ড্রপার ব্যবহার করে জলটি চোখে লাগানো যেতে পারে। এর শীতল প্রভাব সংক্রমণের কারণে হওয়া প্রদাহ থেকে দ্রুত স্বস্তি এনে দেয়।
8. অ্যান্টিবায়োটিক
শক্তিশালী ব্যাকটিরিয়া দ্বারা চোখের কিছু সংক্রমণ হতে পারে এবং সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকারগুলি তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর নাও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, সংক্রামক ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল বিকল্প। আপনার ডাক্তার বাচ্চাকে শিশু–নিরাপদ মলম বা ড্রপ দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। চোখের কাছাকাছি হওয়া কোনও হলুদ বর্ণের স্রাব নুনের জলে ভেজানো তুলার পুঁছা ব্যবহার করে মুছে ফেলা উচিত।
9. মালিশ
কখনও কখনও অশ্রু নালীটির পথ পরিস্কার না থাকলে বা তার পথে কিছুটা বাধা থাকলে, চোখ জ্বালা করে। এইসব ক্ষেত্রে, আপনার আঙ্গুলগুলি ঘষে উষ্ণ করে চোখ এবং নাকের সেতুর মধ্যবর্তী স্থানটি মালিশ করা ভাল। আঙ্গুলের উষ্ণতা ঐ পথে আটকে থাকা যেকোন কিছুকে স্থানচ্যুত করে অশ্রু নালীটি পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
10. জন্মের সময় সংক্রমণ
অনেক সময়, চিকিৎসকেরা নিজেরাই কোনও শিশুকে ঠিক তার জন্মের পর হওয়া কোনও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য তার চোখে ড্রপ দিতে পারেন। এই ড্রপ নবজাতকের চোখের জন্য বেশ সংবেদনশীল হতে পারে এবং চরম জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। এই সব ক্ষেত্রে, নেওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ নেই বা পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই এবং জ্বালা নিজের সময়েই চলে যায়।
একটি শিশুর চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং তাদের চোখে সংক্রমণ বা জ্বালা হলে সাথে সাথেই তাদের মর্মাহত করে দেয়। ব্যথা প্রশমিত করার জন্য এবং শিশুর স্বস্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, আপনি সংক্রমণের কারণ কী তা যাচাই করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী সঠিক প্রতিকার বা আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োগ করতে পারেন।