শিশুরা তাদের বাবা-মাকে দেখেই তাদের জীবনে উন্নতি লাভ করে । বাবা-মায়েরা সবসময় তাদের শিশুদের জন্য রেফারেন্স বা প্রসঙ্গের বিশিষ্ট হন । তাঁরা এমন একজন, শিশুরা কোন সমস্যায় পড়লে যাদের কাছেই যায়, তাঁদের স্বভাব ও অভ্যাসগুলিই শিশুরা তাদের জীবনে প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করে । বড় হয়ে শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের আচরণ এবং কাজকর্মকে অনুকরণ করে এবং বাবা-মায়েরাই তাঁদের সন্তানদের জন্য রোল মডেল হন । তাঁদের জ্ঞান ও অভ্যাসগুলি তাঁদের বাচ্চাদের মধ্যে অগ্রসর হয় । সুতরাং, ভালো এবং খারাপ অভ্যাসগুলির মধ্যে পাথক্য করতে এবং সেগুলির মধ্যে থেকে ভালোটিকে বেছে নিতে শিশুকে শিক্ষা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা শিশুদের মধ্যে থাকা বাধ্যতামূলক
শিশুদের জন্য সঠিক আচরণ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা যেন যুদ্ধের মতো মনে হয় । কিন্তু আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং সঠিকভাবে তাদের নেতৃত্ব দিতে হবে । নীচে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে এমন কিছু পয়েন্ট বর্ণনা করা হলঃ
১) স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ
প্রো টিপঃ খাবারকে রঙিন করে তুলুন ।
বাচ্চারা বেশিরভাগ সময়েই ফাস্ট ফুড, চিপস, মিষ্টি, বিস্কুট এবং চকলেট চাওয়ার দিকেই বেশি আগ্রহী হয় । আপনাকে তাদের বিশ্বাস করাতে হবে যে, স্বাস্থ্যকর খাবারও একইরকম সুস্বাদু হতে পারে । তাদের ঘরোয়া নুডলস, পাস্তা, কেক, কুকিজ এবং পিজ্জাও পরিবেশন করা যেতে পারে ।
বাচ্চাদের এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বিকাশ করার জন্য, রঙিন উপায় অবলম্বন করুন- সপ্তাহে একবার করে যেন রামধনুর এক একটি রঙের খাবার খাওয়া হয়, তার দিকে নজর রাখুন, অর্থাৎ নানা রঙের খাবার খাওয়া । এর শুধুমাত্র যে স্বাস্থ্য-সুবিধা আছে তাই নয়, বাচ্চারা যেন মজা করে খায়, তাও নিশ্চিত করে । নিয়মিত, পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার খাওয়ার মাধ্যমে বাবা-মায়েদের একটি সুস্থ উদাহরণ স্থাপন করতে হবে ।
২) শারীরিক কার্যকলাপ
প্রো টিপঃ বসে থাকতে উৎসাহিত করবেন না, প্রায়ই স্থানান্তরিত করুন ।
আপনার বাচ্চাদের সোফায় বসতে এবং আরাআম করে টেলিভিশন দেখতে অনুমতি দেওয়া বাবা-মা হিসাবে আপনার দিক থেকে একটি বড় ভুল হবে । আপনার বাচ্চাদের একটি নিস্তেজ জীবনধারা পেতে দেবেন না । তাদের বাইরে যেতে উৎসাহিত করুন, যেমন- তাদের হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে অথবা বাইরে খেলতে পাঠান । একটি পারিবারিক কার্যকলাপ পরিকল্পনা করুন, এতিকে বেশ মজার করে তুলুন এবং আপনার বাচ্চাদেরও এতে লিপ্ত করুন । বাচ্চাদের শেখান যে, আলুভাতে হয়ে থাকলে স্বাস্থ্যের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে । নিম্নোক্ত স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলি জীবনধারার ভঙ্গির জন্য হয়ে থাকেঃ
- স্থূলতা
- ঘুমের সমস্যা
- মনোযোগের সমস্যা
- মানসিক এবং সামাজিক সমস্যা
৩) খাবারের ডিজাইনের উপর বেশি গুরুত্ব না দিয়ে পুষ্টির লেবেলের উপর গুরুত্ব দিন
প্রো টিপঃ বাচ্চাদের খাবারের লেবেলগুলি পড়তে এবং বুঝতে উৎসাহিত করুন ।
একটি নির্দিষ্ট বয়সে, বিশেষ করে তার কৈশোরের বছরগুলিতে, বাচ্চারা তাদের জামাকাপড়ের লেবেলের দিকে আগ্রহী হয় । আপনার বাআচাদের আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ লেবেলগুলি সম্পর্কে শিক্ষাদান করা শুরু করুন, যাতে তারা অল্প বয়স থেকেই খাদ্য লেবেলগুলিকে লক্ষ্য করতে পারে । যখন তাদের এই অভ্যাস তৈরি হবে, একইভাবে তাদের খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করুন ।
তাদেরকে তাদের পছন্দের প্যাকেজগুলি দেখান এবং পুষ্টি লেবেলগুলির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নির্দেশ করুন । ওই লেবেলগুলি পড়া, পুষ্টিমান নির্ধারণ করা এবং তারপর তাদের মূল্য নির্ধারণ করাকে তাদের অভ্যাস হিসাবে গড়ে তুলুন । স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, চিনি, ক্যালোরি এবং কার্ব জাতীয় মূল উপাদানগুলির উপর তাদের গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দিন । আপনার সচেতন প্রচেষ্টা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করবে, যেগুলি তারা সারাজীবন বহন করবে ।
৪) একসঙ্গে পারিবারিক খাবার উপভোগ করুন
প্রো টিপঃ সবাই মিলে একসাথে ডিনার করাকে অগ্রাধিকার দিন ।
আজকাল আমরা যে অস্থির জীবনযাপন করি, সেখানে আমাদের পরিবার ও বড়দের সঙ্গে কাটানোর জন্য ভালো সময় খুব কমই বেঁচে থাকে । একটি কর্মব্যস্ত জীবন মানেই আপনি বাচ্চাদের সঙ্গে বসতে এবং তাদের গল্প শোনাতে ও অন্যান্য ব্যক্তিগড় বিষয়ে অক্ষম হতে পারেন । আপনার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একসাথে উপভোগ করাটাকে অগ্রাধিকার দিন । আপনারা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে এবং একে অপরের সাথে মতামত ভাগ করতে পারেন; এটি আপনার সন্তানদের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে । একসাথে খাওয়ার অন্যান্য সুবিধাগুলিতে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্তঃ
- বাচ্চারা পরিবারের সঙ্গে ভালো সমন্বয় তৈরি করতে এবং আরামদায়ক অনুভব করতে শুরু করবে ।
- বাচ্চাদের ভালো খাদ্যাভ্যাস বিকাশ হবে এবং বড়দের সঙ্গে জাঙ্কফুড এড়াতে শুরু করবে ।
- সম্পর্ক শক্তিশালী হয় ।
৫) স্বাস্থ্যকর হাইড্রেশন
প্রো টিপঃ সোডা নয়, জল পান করুন ।
বড়দের থেকে নকল করা সবথেকে সাধারণ বিশিষ্ট, যা শিশুরা সহজেই নিয়ে নেয়, তা হল নরম পানীয় পান করা । আপনাকে আপনার শিশুদের পথপ্রদর্শক হতে হবে দেবং তাদে সোডার বদলে জল পান করার গুরুত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে সচেতন করতে হবে ।
বাচ্চাদের বলুন যে, জল স্বাস্থ্যকর এবং বেশ কিছু রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য কররে; অন্যদিকে নরম পানীয়গুলি অস্বাস্থ্যকর, কারণ এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও ক্যালোরি যোগ করা হয়, যার কারণে ওজনে সমস্যা হয় । তাদের শিক্ষা দিন যে, জল একটি অত্যাবশ্যক সম্পদ এবং সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখার জন্য ভালো পরিমাণে পান করা উচিত । যখন আপনার বাচ্চারা বুঝতে পারবে যে, জল তাদের শরীরের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, তারা নিশ্চয়ই অস্বাস্থ্যকর বায়ুযুক্ত পানীয়গুলির থেকে এটাকেই নির্বাচন করবে ।
৬) অগোছাল জিনিস গুছিয়ে রাখা
প্রো টিপঃ আপনার বাড়তে থাকা শিশুদের জন্য একটি পরিষ্কার এবং গোছানো পরিবেশ প্রদান করুন ।
শিশুদের জীবনের প্রথমদিকে তাদের পরিচ্ছন্নতা শেখানোটা বাধ্যতামূলক । শিশুদের চারপাশের পরিবেশ গুছিয়ে রাখার মধ্যে দিয়ে শুরু করুন । যখন তারা সুশৃঙ্খলভাবে থাকা জিনিসপত্র দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তখন তারা নিজেরাও জিনিসপত্র ওইভাবে রাখতে চাইবে । যখন তাদের যথেষ্ট বয়স হয়, আপনি তাদের বিভিন্ন সময়ে অগোছাল জিনিসপত্র পরিষ্কার করতে এবং সঠিক জায়গায় রাখতে শেখান ও সাহায্য করুন । নিয়মিত এটি করলে, তারা শীঘ্রই নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে শিখবে ও সেইভাবে রাখার চেষ্টা করবে ।
৭) টাকারপয়সার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে
প্রো টিপঃ তাদের একটি বাজেট দিন ।
যত তাড়াতাড়ি আপনার সন্তানরা জিনিসপত্র কিনতে যেতে এবং টাকাপয়সা ব্যবহার করতে শিখবে, আপনি আপনার কষ্ট করে অর্জিত টাকার মূল্য সম্পর্কে তাদের শিক্ষা দিতে শুরু করতে পারেন । আপনি মাঝেমধ্যে আপনার শিশুকে হাতখরচ দিয়ে, তাকে টাকা জমানোর অভ্যাস করাতে পারেন ।
তাদের একটি বাজেট দিন এবং তাদের সঠিকভাবে খরচ করতে এবং টাকা জমাতে উৎসাহিত করুন । এইভাবে, আপনার বাচ্চারা টাকার মূল্য বুঝবে এবং সঞ্চয় করতে শুরু করবে ।
৮) সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়
প্রো টিপঃ বাড়িতেই ভাগ করে নেওয়ায় উৎসাহিত করার মাধ্যমে শুরু করুন ।
বাচ্চাদের কিছু নির্দিষ্ট জিনিসের মূল্য জানতে হবে, কৃতজ্ঞ হতে শিখতে হবে এবং যাদের সামর্থ্য নেই তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো বিনয়ী হতে হবে । এছাড়াও, তাদের আবেগ, অনুভূতি এবং গল্প ইত্যাদি অত্যাবশ্যক জিনিস ভাগ করে নেওয়া সম্পর্কেও শেখান । শিশুরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই প্রথমে ভাগ করে নিতে শিখবে- বাবা-মা, ঠাকুরদা-ঠাকুমা, ভাই-বোন, যৌথ পরিবার এবং এরপর অন্য মানুষজনদের সঙ্গে । ভাগ করে নেওয়ার এই মনোভাব তাকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবে ।
৯) জনসমক্ষে জঞ্জাল ছড়াবে না
প্রো টিপঃ নিজেদের আবর্জনা রাখার জন্য একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে চলুন; এটি বাড়ি নিয়ে আসুন এবং জমে থাকা আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলে দিন ।
আপনার সন্তানকে সভ্য এবং দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে বড় করুন । তাদের বোঝান যে, জনসমক্ষে আবর্জনা ছড়ানো উচিত নয় এবং কাছাকাছি ডাস্টবিনে আবর্জনা ফেলতে হয় । তাদের এই সাধারণ অভ্যাসটি বিকাশ করতে সাহায্য করুন এবং সব জায়গায় এই অভ্যাস মেনে চলতে বলুন, কারণ এটা তাদের আরো ভালো মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে । আবর্জনামুক্ত রাখাটাকে তার অভ্যাস করে তুলিন, এবং তাহলে আপনার সন্তান নিশ্চয়ই আপনার উদাহরণ অনুসরণ করবে । বাড়ির বাইরে জিনিসপত্র ফেলার জন্য সবসময় ডাস্টবিন ব্যবহার করুন । সমস্ত আবর্জনা রাখার জন্য আপনি বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে একটি প্ল্যাস্টিক ব্যাগ নিয়ে যেতে পারেন; যেমন- খালি জলের বোতল, কাগজের ন্যাপকিন প্রভৃতি । রেস্টুরেন্টের টেবিলে রাখা অথবা রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া বা গাড়ির দরজার বাইরে ফেলে না দিয়ে এটি বাড়িতে নিয়ে এসে ডাস্টবিনে ফেলে দিন ।
১০) নম্র হওয়া উচিত
প্রো টিপঃ অন্য মানুষদের সঙ্গে তেমন আচরণ করুন, যেটা আপনি চান যে আপনার বাচ্চারা করুক- সম্মান দিয়ে এবং বিনীতভাবে ।
বিনীত বা নম্র হওয়াটা প্রত্যেকের দেওারা প্রশংসনীয় একটি মহৎ গুণ । আপনার বাচ্চাদের মানুষজনকে শ্রদ্ধা করতে শেখান, তা সে বড়ই হোক বা ছোট । তাদের কাছে ব্যাখ্যা করুন যে, যদি তারা এমন কারোর সম্মুখীন হয় যাদের তারা পছন্দ করে না, তখনও তাদের শালীনভাবে ও বিনীতভাবে আচরণ করতে হবে । সবার সঙ্গে শান্ত এবং আন্তরিক হতে হবে তাদের । এই গুণগুলি সারাজীবন তাদের সঙ্গে থাকবে, তাদের সবসময় সম্মানের চোখে দেখা হবে । প্রথমে আপনার সন্তানদের সম্মান করুন, তাহলেই আপনি লক্ষ্য করবেন যে তারা নিজেরাই এই অভ্যাস নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেবে । বাড়ির কাজের লোকেদের সঙ্গে নম্র আচরণ করুন । শিশুরা যা দেখে তাই করে ।
১১) নিরপেক্ষ হতে হবে
প্রো টিপঃ বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে উতসাহ দিন ।
শিশুরা জন্ম থেকেই নিষ্পাপ ও নিরপেক্ষ হয়, এবং সমাজের সতর্কীকরণের একটি অংশ পার্থক্যবোধ । বাবা-মা হিসাবে আপনাকে আপনার শিশুদের বৈষম্যের প্রবণতা থেকে দূরে রাখতে হবে । তাদের নিরপেক্ষ হতে এবং সমস্ত মানুষের সঙ্গে সমানভাবে আচরণ করতে শেখান, সে ধনী হোক বা গরিব, বন্ধু হোক বা শত্রু । আপনি তাদের যেকোন ধর্ম ও বর্ণের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে উতসাহ দিতে পারেন ।
১২) পশুপাখিদের ক্ষতি করো না
প্রো টিপঃ শিশুদের টিভিতে পশুপাখিদের শো এবং তথ্যচিত্র দেখান ।
শিশুরা সাধারণত পশুপাখিদের কাছাকাছি গেলে উত্তেজিত হয়ে পড়ে । কেউ কেউ আকৃষ্ট বোধ করে, কেউ কেউ ভয় পায়, কেউ আবার আত্মরক্ষার চেষ্টা করে, আবার কেউ শান্ত থাকে । তাদের এই শিক্ষা পাওয়া উচিত যে, পশুপাখিরাও জীবন্ত প্রাণী, তারা নিজস্ব উপায়ে যোগাযোগ করে এবং বন্ধুত্ব করে । ক্ষতিকর পশু এবং যারা ক্ষতিকর নয়, তাদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে তাদের । ক্ষতিকর পশুদের থেকে দূরে থাকতে এবং পোষা প্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পরামর্শ দিন । তাদের টিভিতে পশুপাখিদের শো এবং ডকুমেন্টারি দেখানোর মাধ্যমে আপনি এটা করতে পারেন ।
১৩) নিয়মিত ব্যায়াম করা
প্রো টিপঃ আপনার সন্তানদের কিছু খেলাধুলার জন্য তালিকাভুক্ত করুন ।
সবাই মিলে একসাথে সময় কাটানোর জন্য আপনার নিজের এবং আপনার পরিবারের হাঁটা, জগিং, সাঁতার, ব্যায়াম অথবা বাড়িতেই যোগচর্চা প্রভৃতি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের একটি রুটিন স্থির করুন । পুরো পরিবারের ক্ষেত্রেই এই ব্যায়াম দীর্ঘ সময়ের জন্য উপকারী হবে । শিশুদের রুটিনে এগুলি দ্রুত শুরু করলে এগুলি তাদের সক্রিয়, ফিট এবং নমনীয় রাখবে । এটি আপনার শিশুদের সুস্থ জীবনযাপন করতে সহায়তা করবে । সঙ্গীত যোগ করে আপনাদের ওয়ার্কআউটকে আরও উত্তেজক করুন । এটা করার সবথেকে ভালো উপায় হয়, আপনার শিশুকে কিছু খেলার তালিকায় নথিভুক্ত করান । এটা তাদের জীবনের মূল্যবান শিক্ষাও শেখাবে, এটাই খেলাধুলা করার সবথেকে বড় বিষয় ।
১৪) কাউকে সমালোচনা বা ঠাট্টা করবেন না
প্রো টিপঃ সবসময় গঠনমূলকভাবে ভুলত্রুটি নির্দেশ করুন ।
সমালোচনা ছোট বাচ্চাদের গড়তেও পারে বা ভাঙতেও পারে । অল্প বয়সে, সবাই সমালোচনামূলক মন্তব্যকে সঠিকভাবে গ্রহণ করতে সমর্থ হয় না । বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদের উপর নজর রাখতে এবং তাদের মিথস্ক্রিয়া ও অন্যান্য পদ্ধতিতে নির্দেশনা করতে হবে । শিশুদের বোঝাতে হবে যে, সমালোচনা অন্যদের কষ্ট দিতে পারে, সেই কারণে অন্যদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা তাদের উচিত নয় । শুধু মাত্র মজা পাওয়ার জন্য, অযথা এমন কাউকে উত্যক্ত করা বা ঠাট্টা করা, যাকে আপনি খুব কমই জানেন, ভুল কাজ, এটি কখনই গ্রহণযোগ্য নয় ।
১৫) মহৎ হওয়া
প্রো টিপঃ বাচ্চাদের সাথে মিথ্যা কথা বলবেন না । অপরকে আঘাত না দেবার জন্য যে সামান্য মিথ্যা কথা, তাও মিথ্যাই । সব সময়ে যতটা সম্ভব সৎ হওয়ার চেষ্টা করুন ।
সততা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ গুণ এবং শৈশব থেকে বাচ্চাদের মধ্যে প্রয়োগ করা প্রয়োজন । একজন বাবা-মা হওয়ার কারণে, আপনি আপনার সন্তানদের জন্য রোল মডেল । আপনার কাজকর্ম এবং কথা তাদের উপর সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলে, সেটা ইতিবাচকও হতে পারে, আবার নেতিবাচকও হতে পারে । সব সময়ে সৎ হয়ে থাকুন, বিশেষ করে বাচ্চাদের উপস্থিতিতে । সব পরিস্থিতিতে তাদের সত্যি কথা বলতে অনুপ্রাণিত করুন ।
১৬) ধৈর্য এবং অধ্যবসায়
প্রো টিপঃ বাগান পরিচর্যা বা রান্না শুরু করতে তাদের উৎসাহিত করুন ।
বলা হয় ‘ধৈর্য হল একটি বিশুদ্ধ গুণ’, এটি সঠিক বলা হয়, কারণ যারা ধৈর্যশীল হয়, তারা শান্তিতে থাকতে পারে এবং আজকের চাপপূর্ণ জগতে সকলেই শান্তি চায় । আপনার শিশুর জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে ধৈর্যশীল হওয়ার বৈশিষ্ট্য বজায় রাখুন, যাতে তারা প্রশান্ত এবং শান্তিপূর্ণ হতে পারে । তাদের আরাম করা, শান্তি রাখতে শেখান এবং তাদের নিজস্ব গতিভঙ্গিতে কিছু নির্দিষ্ট কিছু ঘটতে অথবা তাদের পালার জন্য অপেক্ষা করুন । তাদের নিশ্চিত করুন যে, ধৈর্য কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করে বা সেই পরিস্থিতি থেকে বের করে দেয় । বাগান পরিচর্যা অথবা রান্নার মতো কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের উৎসাহ দিন, যেসব কাজে ফলাফল তাৎক্ষণিক নয়, ধৈর্যের প্রয়োজন হয় ।
১৭) কৃতজ্ঞতা প্রদান করা
প্রো টিপঃ দিনে দুইবার প্রার্থনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।
আপনার শিশুদের মধ্যে নম্র মনোভাব গড়ে তুলতে উৎসাহিত করুন এবং বড়-ছোট সব কিছুর জন্য কৃতজ্ঞ হতে শেখান । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, দিনে দুইবার প্রার্থনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন । এটি আপনি নিজেও অনুসরণ করুন এবং বাচ্চারা আপনার কাছ থেকেই শিখবে ।
১৮) হাত ধোয়া
প্রো টিপঃ নোংরা হাত থেকে হতে পারে এমন জীবাণু ও রোগগুলি সম্পর্কে তাদের শেখান ।
কিন্ডারগার্টেন থেকে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়া সবচেয়ে সাধারণ শিষ্টাচার হল খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়া । তাদের জানতে দিন যে, হাত ধোয়া ফ্লু, ঠান্ডা এবং অন্যান্য সংক্রমণের মতো সাধারণ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে । আপনাকে তাদের নিম্নলিখিত প্রাথমিক নিয়মগুলি শেখাতে হবেঃ
- খাওয়ার আগে এবং পরে অথবা মাটি বা বালিতে খেলার পর তোমার হাত ধোবে ।
- হাত মোছার জন্য পরিষ্কার শুকনো তোয়ালে অথবা টিস্যু ব্যবহার করো ।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হ্যান্ড ওয়াস ব্যবহার করো ।
১৯) দিনে দুইবার দাঁত মাজা উচিত
প্রো টিপঃ এতা একসাথে করুন- আপনার শিশুর সাথে নিজেও দাঁত মাজুন ।
মুখের ভিতরের স্বাস্থ্যবিধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শৈশবের প্রথম দিন থেকেই এই বিষয়ে যত্ন নিতে হবে । যে অভ্যাস প্রথমদিকে গড়ে তোলা হয়, তা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় । দাঁত মাজার ক্ষেত্রে শিশুরা প্রায়শই অলস হয়ে যায়, এই রুটিন কাজকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় । পুরষ্কার হিসাবে, আপনি মাঝে মাঝে তাদের প্রিয় মিষ্টি তাদের দিতে পারেন । দাঁত মাজার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের শিক্ষা দিনঃ
- প্রতিদিন এবং দিনে দু’বার দাঁত মাজো
- খাবার পর কুলকুচি করো- এটি ক্যাভেটি এবং ,মুখে দুর্গন্ধ এড়িয়ে যেতে সাহায্য করবে
- উপযুক্ত সময়ে দাঁতে ফ্লস করো
- জিভছোলা দিয়ে জিভ পরিষ্কার করো
- দাঁত মাজার ব্রাশ কারো সাথে ভাগ করো না ।
২০) কান পরিষ্কার করা
প্রো টিপঃ স্নান করে গা মোছার একটি অংশ হিসাবে এটা করুন ।
আপনার শরীরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ হল কান । আপনার কানের পরিচ্ছন্নতাকে অবহেলা অনেক অস্বস্তি এমনকি সংক্রমণের কারণ হতে পারে । শিশুর ক্ষেত্রে নিয়মিত কান পরিষ্কার করতে এবং অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে । কানের বাইরের অংশ প্রতিদিন জল ও শুকনো তোয়ালে দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত । শিশু বড় হলে, আপনি তাদের নিজে নিজে কান পরিষ্কার করা শেখাতে পারেন ।
২১) রোজ স্নান করা
প্রো টিপঃ গ্রীষ্মকালে দিনে দু’বার করে স্নান করা উচিত ।
স্নান করা একটি সাধারণ প্রয়োজনীয়তা এবং সকল বয়সের সমস্ত মানুষদের জন্যই এটা সুপারিশ করা হয় । ঘুম থেকে ওঠার পর সকালে প্রথমেই এই জিনিসটি করা প্রয়োজন । গ্রীষ্মকালে আপনি আপনার বাচ্চাকে দিনে দু’বার স্নান করাতে পারেন । বিকল্পভাবে, বাইরে খেলাধুলা করে বাড়ি ফেরার পর আপনার বাচ্চাদের স্নান করা উচিত । স্নান করলে চামড়া আবার নরম ও তরুন হয় এবং তাদের তাজা অনুভব করায়, সারা দিনের জন্য প্রস্তুত করে, পাশাপাশি রাতে ভালো ঘুম নিয়ে আসে ।
২২) চুল পরিষ্কার করা
প্রো টিপঃ শিশুদের সঠিকভাবে চুল আঁচড়ানো শেখান ।
বাচ্চাদের তাদের চুল পরিষ্কার রাখা উচিত । বাইরে ঘুরতে গেলে অথবা খেললে প্রায়ি স্কাল্প এবং চুল নোংরা হয়ে যায় । তাদের প্রায়ই চুল ধোয়া উচিত, অন্তত দুই তিন দিনে একবার । এটা তাদের নিরাপদ এবং উকুনের সংক্রমণ, খুশকি এবং অতিরিক্ত চুল পড়া দূরে রাখবে । চুল ধোয়ার আগে তাদের স্কাল্পে তেল দেওয়াটা অভ্যাস তৈরি করে ফেলুন । এছাড়াও, নিশ্চিত করুন যে, আপনি এমন একটি চিরুনি ব্যবহার করেন, যেটা আঁচড়ানোর সময় স্কাল্পকে স্পর্শ করে । এটা স্কাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং সুস্থ চুল বৃদ্ধিতে ত্বরান্বিত করে ।
২৩) নখ ছোতো রাখা
প্রো টিপঃ কীভাবে তাদের নখ থেকে শরীরে জীবাণু প্রবেশ করে, তা তাদের ব্যাখ্যা করুন ।
বাচ্চাদের প্রায়ই তাদের মুখের মধ্যে তাদের আঙ্গুল রাখা ঝোঁক থাকে, তাই নখ পরিষ্কার এবং ময়লা থেকে মুক্ত রাখা প্রয়োজন । শিশুরা বড় হয়ে গেলে, আপনি তাদের নখ ছোট এবং পরিষ্কার রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পারেন । কীভাবে তাদের নখ থেকে চুলকানোর মাধ্যমে অথবা মুখের মাধ্যমে জীবাণু শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে, যেগুলি তাদের অসুস্থ করে তোলে, তা তাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারেন ।
যখন আপনার বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার মতো যথেষ্ট বড় হয়ে যায়, আপনাকে তাদের ভালো স্বাস্থ্য এবং ভালো অভ্যাসের মূল্য সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে । উপরে তালিকাভুক্ত স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের পাশাপাশি, এখানে স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের অনুসরণের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় রয়েছে:
২৪) “দয়া করে”, “ধন্যবাদ” এবং “দুঃখিত”
প্রো টিপঃ আপনার বাচ্চাদের সঙ্গে এবং সামনে যত ঘনঘন পারবেন এই শব্দগুলি ব্যবহার করুন ।
আপনাকে আপনার বাচ্চাদের তিনটি যাদুকর শব্দ “দয়া করে”, “ধন্যবাদ” এবং “দুঃখিত” শেখানো উচিত, যা তাদের অনেক সমস্যা সহজে মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে । এই সোনালী শব্দগুলি ব্যবহার করার অভ্যাস একজনকে সমাজে সম্মানিত এবং প্রশংসিত করে তোলে । আপনার সন্তানরা নম্র এবং উষ্ণ হৃদয়গ্রাহী মানুষ হিসাবে গন্য হবে । আপনার বাচ্চাদের সাথে এই শব্দগুলি ব্যবহার করা অনুশীলন করুন এবং শীঘ্রই তারা এই অভিবাদনগুলি ঘনঘন ব্যবহার করা শুরু করবে ।
২৫) অন্যদের সাহায্য করা
প্রো টিপঃ বাচ্চাদের প্রত্যেকদিন একজন করে মানুষকে সাহায্য করতে উৎসাহ দিন ।
আপনার বাচ্চাকে এমন ভাবে বড় করুন, যাতে তারা একটি উপকারী প্রকৃতির মানুষ হয়ে ওঠে । তাদের নম্রতা এবং উদারতার পথ প্রদর্শন করুন । যখন এবং যেখানেই প্রয়োজন হবে, তাদের সাহায্যের হাত বাড়াতে উত্সাহিত করুন । আপনার অংশের কাজ করুন; বন্ধুই হোক বা অচেনা ব্যক্তি, আপনার বাচ্চাদের উপস্থিতিতে মানুষদের সাহায্য করুন, কিন্তু একই সময়ে, তাদের অপরিচিতদের সাথে সতর্ক হওয়ার জন্য সাবধান করুন ।
২৬) একটি স্বাস্থ্যকর এবং ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব থাকা
প্রো টিপঃ আশাবাদ স্থাপন করুন ।
বাচ্চারা খুব সংবেদনশীল এবং সহজে ছোট জিনিসে অথবা যখন কিছু তাদের অনুযায়ী না হয়, তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে । তাদের সাথে কী ঘটছে এবং তারা কি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে তা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য, আপনার তাদের সাথে জড়িত হওয়ার এবং তাদের সঙ্গে কথা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা কোনও নেতিবাচক স্ব-কথোপকথনে লিপ্ত না হয় । মিথ্যা প্রশংসা এড়িয়ে চলুন; পরিবর্তে, তাদের কৃতিত্ব এবং প্রচেষ্টার সময়মত স্বীকৃতি দিন । আপনি বাচ্চাদের তাদের ক্ষমতা এবং অনন্য গুণাবলী সম্পর্কে আশ্বাস দিয়ে তাদের আত্মসম্মানের বিকাশ ঘটাতে পারেন এবং এই বিষয়ের উপর জোর দিন যে, যাই হোক না কেন তাদের ভালোবাসা হবে । যৌক্তিক এবং ব্যবহারিক হতে তাদের চিন্তাভাবনা বিকাশ করার চেষ্টা করুন, যাতে তাদের একটি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা তৈরি হয় এবং তাদের জীবন জুড়ে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে সেগুলি অনুযায়ী ভাবতে পারে ।
২৭) বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো
প্রো টিপঃ সপ্তাহান্তে খেলার জন্য প্লে-ডেটের ব্যবস্থা করুন ।
বলা হয় যে, স্কুলে তৈরি হওয়া বন্ধুত্ব দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকতে পারে, এমনকি সারা জীবনের জন্য । কারণ শিশুদের মন নির্দোষ হয়; তারা কোন স্বার্থপর উদ্দেশ্য ছাড়াই বন্ধুত্ব করে । অল্প বয়সে, আপনার সন্তানদের সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বন্ধুরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । শিশুরা মূল্যবান জীবন দক্ষতা শিখতে পারে; যেমন- যোগাযোগ, সামাজিকীকরণ, সহযোগিতা, সমস্যা সমাধান, এবং বন্ধুদের সাথে থাকা ও একসাথে কাজ করা ।
কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্ক সময়ে, ভাল বন্ধুরা আপনার বাচ্চাদের সমর্থন সংগঠনের অংশ হয়ে ওঠে । আপনার সন্তানদের বন্ধুত্ব করতে এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ও আরাম করতে উত্সাহিত করুন ।
২৮) ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে যাবে না
প্রো টিপঃ তাদের একটি পুষ্টিকর, স্বাস্থ্যকর দিনের শুরু করা নিশ্চিত করুন ।
ব্রেকফাস্ট সব বয়সের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার । এটি বিশেষ করে শিশুদের এবং স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের জন্য বাধ্যতামূলক, কারণ এটি মস্তিষ্ক, বিপাক এবং শরীরের অন্যান্য কাজগুলিকে চালিত করে এবং সারাদিনের জন্য শক্তি সরবরাহ করে । আপনি আপনার বাচ্চাদের উচ্চ-ফাইবারযুক্ত সিরিয়াল তাদের ব্রেকফাস্টে দিতে পারেন, কারণ এটি ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে । ব্রেকফাস্ট করার অভ্যাস তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সময়ে উপকারী প্রমাণিত হবে । ব্রেকফাস্ট না করার ক্ষতিকারক পরিণতিগুলি তাদের জানতে দিন, এবং এটাও বোঝান যে, প্রায়ই সকালের খাওয়া না খেলে মোটা হয়ে যেতে পারে ।
২৯) টেবিলের (খাবার সময়ের) রীতিনীতি
প্রো টিপঃ দ্রুত শুরু করুন এবং তাদের স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করুন ।
নির্দিষ্ট বয়সের পরে, শিশুরা খাবার খাওয়ার বিষয়ে নিজেরাই জোর দেয় । যদিও তারা কাঁটা-চামচ ধরে রাখতে পারে, তবুও তারা ঠিকমত খেতে ব্যর্থ হয় এবং উল্টে জগাখিচুড়ি তৈরি করে । সঠিক রীতিনীতি মেনে নিজে নিজে খাওয়ার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার । আপনি তাদের সঙ্গে বড়দের মতো আচরণ করতে পারেন এবং উপযুক্ত ভাবে খাবার খাওয়ার শিষ্টাচার দেখানো শুরু করতে পারেন ।
৩০) নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ জড়িত হওয়া
প্রো টিপঃ দৈনিক দীর্ঘ ৪০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপের জন্য রাখুন ।
বাচ্চাদের শারীরিকভাবে সক্রিয় করা উচিত তাদের আকর্ষণীয় লাগে এমন কার্যকলাপে যুক্ত রাখা উচিত, খেলাধুলা করা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, সাঁতার বা জিমন্যাস্টিক্স খেলা হতে পারে । এই অভ্যাস আপনার সন্তানের বিভিন্ন দিকে বিকাশকে উন্নত করবে । বাচ্চারা সুস্থ এবং সতর্ক থাকবে; তারা দৃঢ় হতে শিখবে এবং সম্ভবত পরবর্তীকালে প্রাপ্তবয়স্ক সময়েও এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে । যদি আপনার সন্তানরা খেলাধুলা বা জিম ক্লাসে ভীত হয় বা আগ্রহী না হয়, তবে তাদের নতুন কিছু চেষ্টা করার এবং তাদেরকে অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলিতে উৎসাহিত রাখুন । শীঘ্রই বা পরে, তারা স্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জিং, আনন্দদায়ক, এবং মজার কিছু খুঁজে পাবে ।
৩১) প্রত্যেকদিন কিছু (গল্প বা বই) পড়া উচিত
প্রো টিপঃ এটি আপনার বাচ্চাদের ঘুমনোর সময়কার রুটিনের একটি অংশ করে তুলতে হবে ।
আপনার বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলার সর্বোত্তম উপায় হল এটিকে আপনার বাচ্চাদের খেলার সময় এবং ঘুমানোর সময়ের রুটিন করে তোলা । এমন একটি বই নির্বাচন করুন, যার কারণে আপনার সন্তানদের কাছে পড়াশোনা একটি উপহারের মতো লাগে । এটিকে একটি দৈনিক অভ্যাস হসাবে তৈরি করুন এবং বজায় রাখুন, এটি শিশুদের আত্মসম্মানের বিকাশ, তাদের পড়ার দক্ষতা বৃদ্ধি এবং তাদের কল্পনা, শব্দভান্ডার এবং সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়তা করবে । এটা বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক এবং যোগাযোগ উন্নতিতে উপকারী প্রমাণিত হবে ।
৩২) সময়ের মূল্য দেওয়া
প্রো টিপঃ সময়নিষ্ঠা বিষয়ে উৎসাহিত করুন ।
আমরা “সময়ই হল অর্থ” কথাটি সম্পর্কে সচেতন এবং টাকাপয়সার মতো সময়েরও মূল্য দিতে জানি । শিশুদের সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা শেখানো দরকার, সময়মত প্রস্তুত হওয়া, দৈনিক সময়সূচী অনুসরণ করা এবং সময়নিষ্ঠ হওয়া শেখানো উচিত ।
তাদের সময়মতো স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন বুঝতে হবে, কারণ তারা সময়নিষ্ঠ না হওয়ার কারণে শাস্তি পেতে পারে । একটি পরিবার হিসাবে, আপনাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা পার্টিতে উপস্থিত থাকতে হতে পারে । প্রতিটি অনুষ্ঠানে আপনি সময়ের আগে বা সময়মত পৌঁছান, কারণ সন্তানরা বড় হওয়ার পর একই অভ্যাস গড়ে তুলবে ।
৩৩) ঠিক সময়ে ঘুমনো
প্রো টিপঃ নিয়মিত ঘুমোতে যাওয়ার একটি রুটিন তৈরি করুন ।
ঘুম সদ্যজাত শিশুর পাশাপাশি উন্নয়নশীল শিশুর জন্যও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । আপনার শিশুদের শৈশবকালেই প্রাথমিকভাবে “তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা”-কে রুটিনে উত্থাপন করতে হবে । স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের প্রতিদিন সক্রিয় এবং অনলস হতে হবে, যার জন্য তাদের যথেষ্ট ঘুম প্রয়োজন । ঘুম সারাদিনে হারিয়ে যাওয়া শরীরের সব শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে । তাড়াতাড়ি ঘুমানো আপনার বাচ্চাদের যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে সহায়তা করবে, যাতে বাচ্চারা পরের দিন তাজা এবং সক্রিয় বোধ করে ।
- আপনার সন্তানদের তাড়াতাড়ি ঘুমাতে দিন এবং তাদের নিজের পাশে ঘুমোতে দিন । আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ থাকার ফলে আপনার সন্তানরা নিরাপদ বোধ করবে এবং একটি ভালো ঘুম পাবে ।
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান; এটি শিশুদের জন্য একটি প্যাটার্ন সেট করতে সাহায্য করবে, এবং তারা নিজেই ঘুমোতে শিখবে ।
- আপনার বাচ্চাদের একটি নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় সময়ের থেকে বেশি সময় ঘুমোতে দেওয়া এড়িয়ে চলুন । প্রয়োজন হলে, বিকেলের সময় বাচ্চারা অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নিতে পারে ।
৩৪) পরাজয় গ্রহণ করা
প্রো টিপঃ তাদের ব্যর্থতায় তাদের সমর্থন করুন ।
শিশু ব্যর্থ হলে বিরক্ত বোধ করতে পারে । বাবা-মা হিসাবে তাদের সমর্থন করা এবং অনুপ্রাণিত করা আপনাদের দায়িত্ব, যাতে তারা ইতিবাচকভাবে পরাজয়কে মেনে নেয় এবং পরের বার তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করে । তাদের জীবনযাত্রার উন্নতি ও অবনতি সম্পর্কে অবগত থাকা দরকার এবং বুঝতে হবে যে, কোন পরাজয়ই স্থায়ী নয় । জেতা বা হারাই সবকিছু নয় । তুমি যে প্রচেষ্টাটি করেছো এবং যে অগ্রগতি অর্জন করেছো তাও গুরুত্বপূর্ণ ।
৩৫) কঠিন পরিশ্রম করা
প্রো টিপঃ আপনার বাচ্চাদের শেখান যে, জীবনে কোন শর্টকাট হয় না ।
কঠোর পরিশ্রমের উপর গুরুত্ব দিয়ে আপনার বাচ্চাদের আলোকিত করুন । যাই হোক না কেন তারা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, তা সে পড়া, লেখা, বা কোনো গঠনমূলক কাজ যাই হোক না কেন, এটার অভ্যাস করান । তারা এই সত্যটি শিখতে পারে যে, সফলতা শুধুমাত্র সৌভাগ্য থেকেই হয় না; এতে দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন । আপনি জীবিকা উপার্জন করতে কতটা কঠিন পরিশ্রম করেন, তা ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে আপনি আপনার বাচ্চাদের কাছে উদাহরণ হতে পারেন ।
৩৬) ধূমপান, মদ্যপান এবং ড্রাগের নেশা কখনই না
প্রো টিপঃ নিজে এইসব অভ্যাস ত্যাগ করুন এবং আপনার সন্তান সেটা অনুসরণ করবে ।
মদ্যপান, ধূমপান ও মাদকাসক্তির মতো অভ্যাসগুলি মূলত পারিবারিক পটভূমিতে এবং বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে ।অবহেলা এবং যোগাযোগের অভাবের কারণে তারা আপনার বাচ্চাদের আঘাত করে এবং বহিরাগত প্রভাব তাদের উপর পড়তে শুরু করে, নিশ্চিত করুন যে আপনি তাদের জীবনে সম্পূর্ণরূপে জড়িত, তাদের প্রতিটি স্তরে তাদের সমর্থন করেন । আপনার বাচ্চাদের এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে এবং তাদেরকে সব পরিস্থিতিতেই এইসব থেকে দূরে রাখতে হবে । এছাড়াও, বন্ধুদের প্রভাবে পড়ে যাতে তারা এইসব না করে, সেই বিসয়েও বাচ্চাদের সতর্ক করতে হবে । বাবা-মা হিসাবে, আপনি প্রথমত মদ্যপান ও ধূমপান না করেই সাহায্য করতে পারেন ।
আপনি আপনার সন্তানদের শৃঙ্খলার শিক্ষা দিতে পারেন, তবে আপনার বাচ্চা এটি প্রয়োগ করে কিনা , তা দৈনন্দিন জীবনে বাবা-মা হিসাবে আপনি কতটা ভাল তার উপর নির্ভর করবে । তাদের সঠিক পথ দেখান এবং ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি ও প্রশংসা সহকারে এটি বজায় রাখার জন্য উত্সাহিত করুন ।