গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরন স্তর কিভাবে বজায় রাখা যায়

গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরন স্তর কিভাবে বজায় রাখা যায়

গর্ভাবস্থায়, ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশের সুবিধার্থে যেকোন মহিলার দেহ অনেকগুলি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধিও অন্তর্ভুক্ত। গর্ভাবস্থায় একটি হরমোন যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হল প্রোজেস্টেরন। এই হরমোনটি সন্তান জন্মদানের বছরগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ এবং গর্ভবতী মহিলা ও তার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক অবদান রাখে।

প্রোজেস্টেরন কি?

প্রোজেস্টেরন একটি মহিলা যৌন হরমোন যা প্রতি মাসে ডিম্বাশয়ে উত্পাদিত হয়। এই হরমোনটি আসন্ন গর্ভাবস্থার জন্য জরায়ুকে প্রস্তুত করে। যদি কোন মহিলা ডিম্বস্ফোটনের সময়কালে গর্ভবতী হন, তবে গর্ভাবস্থার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য তার দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তবে যদি তার প্রজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকে তবে এটি তার গর্ভধারণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাকে গর্ভপাতের উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরনের ভূমিকা কি?

গর্ভাবস্থায়, প্রোজেস্টেরন হরমোন প্লাসেন্টা এবং জরায়ুর মধ্যে রক্ত ​​সঞ্চালন বাড়ায়, স্তন গ্রন্থির বৃদ্ধিকে দুধ উত্পাদন করতে উত্সাহিত করে।

প্রোজেস্টেরন কীভাবে আপনার গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে?

নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

  • এটি প্রতিস্থাপনে সক্ষম জরায়ুর আস্তরণ প্রস্তুত করে।
  • এটি ডিম্বস্ফোটনের সময়কালের শেষ থেকে এবং পুরো ঋতুস্রাবের সময় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • এটি গর্ভাবস্থার সাফল্য নিশ্চিত করতে জরায়ুর আস্তরণকে ঘন করে তোলে।
  • এই হরমোনটি জরায়ুর আস্তরণে রক্ত ​​এবং গ্লাইকোজেন প্রবাহকে বাড়িয়ে দেয়, যা শিশুটি পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় তা নিশ্চিত করে।
  • প্রোজেস্টেরন হরমোন জরায়ুকে ঘন করে এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লী তৈরি করে, যা জরায়ুতে জীবাণু প্রবেশ করতে আটকাতে ব্যাকটেরিয়াগুলিকে সহায়তা করে।
  • এটি জরায়ু সংকোচন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • প্রোজেস্টেরন হরমোন আপনার মাসিক চক্রকেও নিয়ন্ত্রণ করে।

সাধারণ প্রজেস্টেরন স্তরটি কেমন?

গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরনের সাধারণ স্তর নীচে দেওয়া হল। আপনাকে আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করার জন্য, আমরা সপ্তাহ এবং ত্রৈমাসিকের ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ করেছি। প্রথম ত্রৈমাসিকে প্রোজেস্টেরনের চূড়ান্ত গুরুত্ব রয়েছে। গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহগুলিতে এটি কিভাবে বৃদ্ধি পায় তা জানতে পড়ুন।

১. প্রথম এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে

গর্ভাবস্থার প্রথম দুই সপ্তাহে ডিম্বাশয় প্রায় ১ থেকে ১.৫ এমজি/এমএল প্রোজেস্টেরন নিঃসরণ করে। আপনি হয়তো এখনও গর্ভবতী নন, তবে আপনার শরীর নিজেকে গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুত করতে প্রজেস্টেরন তৈরি করবে। আপনার গর্ভাবস্থা আপনার মাসিক চক্রের শেষ দিন থেকে গণনা করা হবে, তবে আপনি অন্তত দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সত্যই গর্ভবতী হবেন না।

২. তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে

একবার ডিম্বস্ফোটন হয়ে গেলে আপনার ডিম্বাশয়ে অন্তঃস্রাবগুলি প্রজেস্টেরন উত্পাদন শুরু করবে। এই সময়ের মধ্যে, আপনার প্রজেস্টেরন স্তরটি ধীরে ধীরে ২ এমজি/এমএল বা আরও বেশি হয়ে যাবে। এটি ডিম্বাণুর রোপনের প্রত্যাশায় জরায়ুর দেওয়ালকে ঘন করতে উত্সাহিত করবে। তৃতীয় সপ্তাহে ডিম একবারে নিষিক্ত হয়ে গেলে আপনার প্রজেস্টেরনের মাত্রা প্রতিদিন ১ বা ২ এমজি/এমএল করে বৃদ্ধি পাবে।

৩. পঞ্চম এবং ষষ্ঠ সপ্তাহে

আপনার প্রোজেস্টেরনের স্তর এই সময়ে ১০ এমজি/এমএল এবং ২৯ এমজি/এমএলের মধ্যে থাকতে পারে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ সপ্তাহের মধ্যে চিকিত্সকরা ন্যূনতম ৬ এমজি/এমএল থেকে ১০ এমজি/এমএল প্রত্যাশা করেন। এই মুহুর্তে, আপনার দেহের প্রোজেস্টেরন আপনার রক্তনালীগুলির বৃদ্ধির মাধ্যমে ভ্রূণ এবং প্লাসেন্টা বিকাশে সহায়তা করবে। আপনি যে ‘গর্ভাবস্থার রূপের ঝলক’ বুঝতে পারেন তার জন্যও প্রোজেস্টেরন দায়ী। তবে, কখনও কখনও এটি আপনার ত্বকে র‍্যাস বা চুলকানিও সৃষ্টি করতে পারে।

৪. সপ্তম থেকে চৌদ্দতম সপ্তাহে

সপ্তম সপ্তাহ থেকে প্রোজেস্টেরন ডিম্বাশয়ের পরিবর্তে প্ল্যাসেন্টায় উত্পাদিত হবে। এটি প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মন্দা সৃষ্টি করে। যাইহোক, আপনার প্রজেস্টেরনের স্তর প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষের দিকে আবার বাড়বে। আপনার প্রোজেস্টেরনের মাত্রা এই সময়ের মধ্যে ১৫ থেকে ৬০ গ্রাম/এমএল পর্যন্ত হতে পারে। এই সংখ্যাটি একাধিক গর্ভাবস্থাযুক্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে। প্রোজেস্টেরন হরমোন এই সময়ে আপনার পেশীগুলি শিথিল করতে সহায়তা করবে এবং আপনার দেহের পক্ষে ক্রমবর্ধমান বাচ্চাকে প্রসারিত এবং সমন্বিত করা সহজ করবে। এটি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সংকোচন রোধ করবে। তবে, এই সময়ে উচ্চ প্রজেস্টেরনের মাত্রার কারণে বদহজম, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য বা মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

ত্রৈমাসিক-অনুযায়ী

গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরনের মাত্রা সম্পর্কে ত্রৈমাসিক ভিত্তিক তথ্য নীচে দেওয়া হল।

১. প্রথম ত্রৈমাসিক

আপনার প্রথম ত্রৈমাসিকে, আপনার প্রোজেস্টেরনের স্তর ৯ থেকে ৪৭ এমজি/এমএলের মধ্যে হতে পারে।

২. দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক

দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রোজেস্টেরনের একটি সাধারণ স্তর ১৭ এবং ১৪৭ এমজি/এমএলের মধ্যে থাকে।

৩. তৃতীয় ত্রৈমাসিক

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৫৫ থেকে ৩০০ এমজি/এমএলের মধ্যে থাকা প্রোজেস্টেরন স্তর স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচিত হয়।

নিম্ন প্রোজেস্টেরনের স্তর কি?

অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা বা গর্ভপাতকে সনাক্ত করার জন্য প্রথম ত্রৈমাসিক জুড়ে প্রোজেস্টেরনের স্তর পর্যবেক্ষণ করা হয়। গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ সপ্তাহে প্রায় ৬ থেকে ১০ এমজি/এমএলের চেয়ে কম প্রোজেস্টেরনের স্তরকে নিম্ন স্তর বলে বিবেচনা করা হয়। আপনি যদি নিম্ন প্রোজেস্টেরনের মাত্রা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন, তবে আপনি আপনার ডাক্তারকে রক্ত ​​পরীক্ষা করানোর জন্য বলতে পারেন। পরীক্ষার ফলাফল আপনাকে এক দিনের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। গর্ভাবস্থার ২০তম সপ্তাহের মধ্যে যে মহিলাদের ৩টিরও বেশি গর্ভপাত হয় তাদের ক্ষেত্রে, গর্ভপাতের সম্ভাবনা রোধে চিকিৎসকরা প্রজেস্টেরন চিকিত্সার পরামর্শ দেন।

নিম্ন প্রোজেস্টেরন স্তরের কারণগুলি কি কি?

প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় কম প্রোজেস্টেরন মাত্রার কয়েকটি সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা – যখন নিষিক্ত ডিম নিজেকে ফ্যালোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয় বা পেটের গহ্বরে অথবা সারভিক্সে রোপন করে, তখন এটি একটি অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থার ঘটনা। অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা সময়মতো নির্ণয় করা উচিত। যদি এটির চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি প্রাণঘাতী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ক্রোমোসোমে নির্দিষ্ট অস্বাভাবিকতার কারণে ভ্রূণের ক্ষতি বা গর্ভপাত।
  • একটি সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ গর্ভপাত। এটি গর্ভাবস্থার প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ঘটে।
  • একটি ঝুঁকির কারণে হওয়া গর্ভপাত বা অনিবার্য গর্ভপাত। এটি অগ্রগতি হতে পারে বা নাও হতে পারে।
  • নিম্ন স্তরের বিএইচসিজি রাসায়নিক গর্ভাবস্থার দিকে পরিচালিত করে। কোন রাসায়নিক গর্ভাবস্থায় প্রথম পর্যায়ে গর্ভাবস্থার ক্ষতি বা গর্ভপাত হয়। গর্ভধারণের পঞ্চম সপ্তাহের আগে এটি ঘটে।
  • কর্পাস লিউটিয়ামের প্রাথমিক মৃত্যু। কর্পাস লিউটিয়াম ডিম্বাশয়ে প্রোজেস্টেরন উত্পাদনের জন্য দায়বদ্ধ হয় যতক্ষণ না প্লাসেন্টা সেই দায়িত্ব নেয়।
  • গর্ভাবস্থায় নিম্ন প্রোজেস্টেরন স্তরের সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ

গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হল নিম্ন প্রোজেস্টেরনের মাত্রার সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণ। যদিও আপনি অন্যান্য কারণে স্পটিং এবং রক্তক্ষরণ লক্ষ্য করতে পারেন, তবে আপনার প্রোজেস্টেরনের মাত্রা নজরে রাখা সবচেয়ে ভাল। আপনার গর্ভাবস্থা বেঁচে থাকবে কিনা তা পরীক্ষা করতে আপনার ডাক্তার রক্ত ​​পরীক্ষা করবেন। যদি আপনার প্রজেস্টেরনের মাত্রা খুব কম হয় তবে আপনি বাচ্চাকে বহন করতে সক্ষম হবেন না। আপনার মধ্যে যদি এই লক্ষণগুলির কোনও সনাক্ত হয়, তবে আপনার অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

নিম্ন প্রোজেস্টেরন স্তরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি?

নিম্ন প্রোজেস্টেরন স্তরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি?

যদি গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকে তবে নিম্নলিখিত ফলাফল হতে পারে:

  • একটি গর্ভপাত
  • একটি অকাল প্রসব
  • রক্তে শর্করার মাত্রা কম হওয়া
  • যোনির শুষ্কতা।

উচ্চ প্রোজেস্টেরন স্তরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কি কি?

গর্ভাবস্থায় আপনার যদি উচ্চ স্তরের প্রজেস্টেরন থাকে তবে আপনি নিম্নলিখিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মুখোমুখি হতে পারেন:

১. মেজাজের দোলাচল

প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি মেজাজের দোলাচল এবং হতাশার সাথে যুক্ত।

২. বন্ধ নাক

যেহেতু প্রজেস্টেরন গর্ভাবস্থায় পেশী শিথিল করার জন্য দায়ী, তাই এই হরমোনের অস্থির স্তর নাকের মসৃণ পেশীগুলিকেও শিথিল করে। এর ফলে বন্ধ নাকের সমস্যা হতে পারে।

৩. মাথাব্যথা

প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহকে বাড়িয়ে তোলে, যা রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে। এটি মহিলাদের মধ্যে মাইগ্রেন বা গুরুতর মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে।

৪. কোষ্ঠকাঠিন্য

হরমোনটি অন্ত্রের পেশীগুলিকেও শিথিল করতে পারে, যা খাবারকে অন্ত্রের মধ্যে প্রবেশ করা কঠিন করে দেয়, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

৫. স্তনের কোমলতা

এটি আপনার স্তনে কোমলতা এবং সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।

৬. ক্লান্তি

হরমোন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করার ফলে চরম ক্লান্তি এবং নিদ্রাহীনতা দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় নিম্ন প্রোজেস্টেরনের চিকিত্সা

নিম্ন প্রোজেস্টেরনের স্তর একজন মহিলার পক্ষে গর্ভধারণ করা অত্যন্ত কঠিন করে তুলতে পারে। আপনি যদি গর্ভবতী হন তবে আপনার প্রজেস্টেরন হরমোনের স্বাস্থ্যকর স্তর বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত, কারণ এটি গর্ভাবস্থা স্থায়ী করতে সহায়তা করে। যদি আপনার প্রজেস্টেরনের মাত্রা কম থাকে তবে আপনার চিকিত্সা বিভিন্ন চিকিত্সার পরামর্শ দেবেন। গর্ভাবস্থায় কম প্রোজেস্টেরনের কিছু সাধারণ চিকিত্সা নীচে বর্ণিত রয়েছে –

হরমোন থেরাপি – এটি মহিলারা জরায়ুর সর্বোত্তম আস্তরণ দিতে সক্ষম করতে এবং শিশুকে পূর্ণমেয়াদে বহন করার সম্ভাবনা বাড়ানোর প্রত্যাশায় সরবরাহ করা হয়।

চিকিত্সক কিছু ক্রিম এবং জেলের পরামর্শ দিতে পারেন, যা উপর থেকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু ক্রিম যোনিগতভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে কেবল ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে।

কম প্রোজেস্টেরনের মাত্রা যখন উর্বরতার সমস্যাগুলির দিকে নিয়ে যায়, তখন ডাক্তার সাপোজিটরিগুলির পরামর্শ দিতে পারে। ভ্যাজাইনাল সাপোজিটরিগুলি হল এক ধরণের ওষুধ যা বিশেষত যোনিতে প্রবেশ করানো হয়। তবে এটি কেবলমাত্র কোন ডাক্তার দ্বারা সুপারিশ করা হলেই ব্যবহার করা উচিত।

হরমোন-ছাড়ার প্রক্রিয়াযুক্ত ভ্যাজাইনাল রিংগুলিও ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলি মৌখিক ওষুধের চেয়ে ধীর গতিতে হরমোনগুলি প্রকাশ করে।

প্রোভেরার মতো মৌখিক ওষুধগুলিও গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে যদি কোন ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

প্রজেস্টেরনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য আপনার কোন ওভার-দ্য কাউন্টার ওষুধ ব্যবহার না করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলির জন্য ডাক্তারের তদারকির প্রয়োজন। এছাড়াও, কোনও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা এবং আপনি যে ওষুধ ও পরিপূরক সেবন করতে পারেন তার সঠিক প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করাই আদর্শ।

ঘরোয়া প্রতিকার

এখানে কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা আপনি আপনার প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বাড়ানোরজন্য চেষ্টা করতে পারেন।

১. আপনার ডায়েটে ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি-এর পরিমাণ বাড়ান

লিভারে ইস্ট্রোজেন ভেঙে ফেলার জন্য ভিটামিন বি৬ প্রয়োজন হয়। ভিটামিন বি৬-এর অভাব ইস্ট্রোজেনের ভাঙ্গনের এবং শরীরে এর স্তর বাড়িয়ে তোলার গতি কমিয়ে দেবে। এটি হরমোন ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। এর মোকাবিলায় আপনি ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার যেমন সামুদ্রিক খাবার, আখরোট, গোটা শস্য, চর্বিহীন লাল মাংস, পোলট্রি পণ্য, বিভিন্ন বীন এবং শাকসবজি খেতে পারেন। আপনাকে ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে। দেখা গেছে যে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ৭৫০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা যথেষ্ট বেড়ে যায়। তবে এগুলিকে পরিমিতভাবে খাবেন, কারণ যে কোন কিছু বেশি হলেই জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

২. জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন

শরীরে প্রোজেস্টেরনের উত্পাদন বাড়ানোর জন্য জিঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ। জিঙ্ক নামক খনিজের ফলে পিটুইটারি গ্রন্থি হরমোন নিঃসরণ করে, যা ডিম্বাশয়ে গ্রন্থিকোষকে উদ্দীপিত করে। এটি ডিম্বস্ফোটন এবং ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের উত্পাদন বাড়ে। পাতলা চর্বিহীন লাল মাংস, তরমুজ, গাঢ় চকোলেট, গমের দানা, কুমড়ো, ছোলা, স্কোয়াশের বীজ ইত্যাদি খাবারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক পাওয়া যায়।

৩. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান

দেহে স্বাস্থ্যকর পরিমাণে প্রজেস্টেরন বজায় রাখার জন্য ম্যাগনেসিয়ামও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি হরমোনের ভারসাম্যকে প্রচার করে। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য আপনি খাদ্যতালিকায় কালো বীন, কুমড়ো, ওকড়া, পালংশাক, বাদাম ইত্যাদি জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। আপনি খাদ্যতালিকাগত পরিপূরকও নিতে পারেন।

আপনার প্রোজেস্টেরনের স্তর বাড়ানোর অন্যান্য কয়েকটি উপায়

এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ছাড়াও, প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য আরও কিছু উপায় রয়েছে। আপনি যা করতে পারেন তা এখানে রয়েছে:

১. আপনার মানসিক চাপের স্তর কমিয়ে দিন

দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস বা মানসিক অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলিকে প্রভাবিত করে এবং করটিসোলের উত্পাদন কম করে বলে জানা যায়। স্ট্রেস হরমোন কিডনির মাধ্যমে প্রজেস্টেরন হরমোনকে করটিসলে রূপান্তর করতে পারে। উচ্চ করটিসোলের মাত্রা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে। অতএব, আপনার চাপের স্তরগুলি পরিচালনা করার চেষ্টা করা উচিত। আপনার দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ কমাতে ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হন। আপনি জার্নাল লিখতে, পড়তে, গান শুনতে বা ধ্যান করতে পারেন।

২. একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন

যদি আপনার ওজন বেশি হয় তবে আপনার শরীর আরও বেশি ইস্ট্রোজেন তৈরি করবে, যা আপনার দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রার ভারসাম্যহীন করতে পারে। প্রজেস্টেরনের সাথে ইস্ট্রোজেন অনুপাত স্বাভাবিক হওয়া উচিত। যদিও ওজন হ্রাস আপনার শরীরে প্রজেস্টেরন বাড়িয়ে তুলবে না, তবে এটি আপনার হরমোনের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখবে।

৩. অত্যধিক মাত্রায় ব্যায়াম অভ্যাস করবেন না

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অনুশীলন করা ভাল, কারণ এটি আপনাকে আপনার স্ট্রেস পরিচালনা করতে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। তবে আপনি যদি খুব বেশি অনুশীলন করেন তবে এটি আপনার শরীরকে প্রোজেস্টেরনের চেয়ে স্ট্রেস হরমোন তৈরি করতে বাধ্য করতে পারে। আপনি যদি গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম অনুশীলন চালিয়ে যেতে চান তবে আপনি সাঁতার কাটা, হাঁটা বা যোগ ব্যয়াম অনুশীলন করতে পারেন। কঠোর ব্যায়ামগুলি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন এবং অনুশীলন শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. একটি মিথ্যা ইতিবাচক প্রোজেস্টেরন স্তর কি বোঝায়?

একটি মিথ্যা পজিটিভ প্রজেস্টেরন স্তর হল যখন গর্ভাবস্থা এবং ডিম্বস্ফোটন ছাড়াই কোন কারণে আপনার শরীরে প্রজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আপনার দেহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রায় উচ্চতা বাড়ার কয়েকটি কারণ হল:

  • ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার
  • অ্যাড্রিনালীন ক্যান্সার
  • প্রোজেস্টেরন বড়ি বা সাপোজিটরিগুলি গ্রহণ করা
  • জন্মগত অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাজিয়া যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে এমন একটি অবস্থা
  • অন্যান্য হরমোনগুলির সাথে ক্রস-রিয়্যাকশনের ফলে হওয়া ল্যাব্রেটরি এররের কারণেও এটি হতে পারে।

২. যদি গর্ভাবস্থার এইচসিজি পরীক্ষায় প্রজেস্টেরন একটি মিথ্যা ইতিবাচক ফল দেখায়?

গর্ভাবস্থা পরীক্ষার ফলাফলগুলি এইচসিজি (হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোট্রপিন) হরমোনের স্তরের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই গর্ভাবস্থার হরমোন প্রজেস্টেরন হরমোনের মতো নয়। আপনার শরীরে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা গর্ভাবস্থার পরীক্ষার মিথ্যা ইতিবাচক ফল দেয় না।

৩. গর্ভাবস্থায় নিম্ন প্রোজেস্টেরন স্তর কি গর্ভপাতের দিকে পরিচালিত করতে পারে?

নিম্ন প্রজেস্টেরন স্তর কোন অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থার সূচক হতে পারে। এর অর্থ এটিও হতে পারে যে গর্ভাবস্থা পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে না। যদি গর্ভাবস্থার ৬ষ্ঠ সপ্তাহে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ৬ থেকে ১০ এমজি/এমএলের চেয়ে কম হয়, তবে আপনাকে গর্ভপাতের উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

মসৃণ গর্ভাবস্থার জন্য প্রোজেস্টেরন অপরিহার্য এবং গর্ভাবস্থায় যে কোন জটিলতা এড়াতে আপনার প্রজেস্টেরন স্তরটি সর্বোত্তম কিনা তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, গর্ভাবস্থায় আপনার প্রজেস্টেরন স্তর পরিমাপ করতে আপনাকে কোন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরামর্শ দেওয়া হল। প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থায় এই হরমোনের স্তর নিরীক্ষণ করা চালিয়ে যান এবং নিম্ন প্রজেস্টেরন স্তরের ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিত্সা করান।