In this Article
যখন আপনার শিশু সাত মাস বয়সে পা দেয়, তখন সে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক মাইলফলক পেরিয়ে যায়, যেমন বসতে সেখা, দাঁত বেরনো ইত্যাদি । বৃদ্ধির এই জটিল সময়ে সঠিক ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এই সময়, শিশুর বুকের দুধ / ফর্মুলা দুধ এবং কঠিন খাবার উভয় থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর সম্পূরক পায় । এখানে ৭ মাসের শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য কিছু আশ্চর্যজনক কিছু বিকল্প রয়েছে, যা আপনি আপনার সন্তানের খাবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন ।
সাত মাস বয়সী শিশুর জন্য সেরা খাবার
ছয় মাসে আপনার বাচ্চাকে কয়েকটি কঠিন খাবার দেওয়া শুরু করার পরে, আপনি ধীরে ধীরে বিকল্পগুলি বৈচিত্র্য করতে এবং পরবর্তী মাসে তাদের খাবারের মধ্যে আরও বিভিন্ন ধরণের খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন । এখানে ৭ মাসের শিশুর জন্য খাবারের কিছু আকর্ষণীয় বিকল্প দেওয়া হল ।
১) ফলের পিউরি
ফল ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার একটি মহান উৎস । আপেল, সবেদা, পেঁপে, কলা, তরমুজ, এভোকাডো ইত্যাদি ফলগুলি হল স্ন্যাক বা খাবারের জন্য দুর্দান্ত একটি বিকল্প ।
২) সবজি
সবজিতে অপরিহার্য মাল্টি ভিটামিন এবং খনিজ থাকে । এটাকে সিদ্ধ করে এবং একটি পিউরি তৈরী করে খাবার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে । বড় বড় করে কাটা সিদ্ধ সবজি একটি চমৎকার জলখাবার হিসাবে দেওয়া যেতে পারে ।
৩) পরিজ
কোন একটি শস্যের সিরিয়াল থেকে তৈরি পরিজ শিশুদের জন্য একটি মহান পুষ্টির সম্পূরক তৈরি করে । ধান, গম, ওট, বার্লি, মিলেটের মতো খাদ্যশস্যগুলি প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং চূর্ণ করে পরিজ তৈরি করা যায় ।
৪) মাংসের পিউরি
মাংস এবং মুরগি উচ্চ প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, যা পিউরির আকারে শিশুদের জন্য চালু করা যেতে পারে ।
৫) ডিম
ডিমের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রোটিনের একটি জনপ্রিয় উৎস । শিশুদেরকে এটি ডিম ফোটানোর পরে ছোট্ট ছোট্ট টুকরা হিসাবে দেওয়া যেতে পারে ।
৬) চীজ বা পনির
পেস্টুরাইজড বা প্রক্রিয়াজাত দুধ থেকে তৈরি পনির বা চীজ ব্যাপকভাবে বাজারে পাওয়া যায় । এটি একটি ফ্যাট, প্রোটিন, এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার ।
৭) খিচুড়ি
চাল, গম বা ডালের সঙ্গে হালকা মসলা এবং লবণ দিয়ে তৈরি খিচুড়ি ছোট শিশুদের জন্য একটি পূর্ণ এবং পুষ্টিকর খাবার । এটি প্রাপ্তবয়স্ক খাদ্য তালিকায় তাদের প্রথম স্বাদ হিসাবে কাজ করে ।
প্রতিদিনের খাবারের পরিমাণ
সাধারণত, সাত মাস বয়সী শিশুরা তিনবার কঠিন খাবার এবং মাঝে দুইবার স্ন্যাক বা জলখাবার গ্রহণ করে । কিছুদিনের খাবার খাওয়ার সেশনে সকালে ও রাতে বুকের দুধ খাওয়াও রুটিন অংশ করতে হবে ।
সাধারণত, বাচ্চারা একটি একক খাবারের এক চতুর্থাংশ কাপ পিউরি বা পোরিজ খায় । চাহিদার উপর ভিত্তি করে, আপনি পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন । বাচ্চাদের ৮০০-৯০০ মিলিমিটার বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হয় ।
৭ মাস বয়সী শিশুর খাদ্য তালিকা / পরিকল্পনা
নীচের খাবারগুলি, সময়সূচী শিশুর খাবার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে । এটি শিশুর বিভিন্ন পুষ্টিগত প্রয়োজনীয়তাগুলি সামঞ্জস্য করে বিভিন্ন রেসিপিগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়তা করে । এখানে ৭-মাস-বয়সী শিশুর খাবারের সময়সূচী রয়েছে, যা আপনি নিজের চার্ট ডিজাইন করতে অনুসরণ করতে পারেন ।
সপ্তাহের দিন | খুব সকাল বা ভোর | ব্রেকফাস্ট | মধ্য সকাল | লাঞ্চ | সন্ধ্যাবেলার স্ন্যাক | মধ্য সন্ধ্যা | ডিনার | রাত |
সোমবার | বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ | রাগি, আপেলের পরিজ | বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ | ঘি ভাত | ইয়োগার্ট বা দই (ফলের স্বাদযুক্ত) | বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ | মিলেট পরিজ | ঘুমের আগে বুকের দুধ / ফর্মুলা দুধ |
মঙ্গলবার | ন্যাসপাতির পিউরি | ডালিয়ার খিচুড়ি | মুসুরির ডালের খিচুড়ি | দই ভাত | ||||
বুধবার | খিচুড়ি | দই ভাত | এক বাটি সিদ্ধ সবজি | চালের পরিজ | ||||
বৃহস্পতিবার | গমেরপ্যানকেক | মাছের পিউরি | গাজর ও বাদামের ক্ষীর | রাগি পরিজ | ||||
শুক্রবার | ইডলি ও ডাল | খিচুড়ি | কলা | মুগ ডালের খিচুড়ি |
৭-মাস-বয়সী শিশুর জন্য খাবারের রেসিপি
অনেক বাচ্চাদের সাত মাস বয়সেই একটি বা দুটি দাঁত বেরোতে শুরু হতে পারে । এমনকি যদি তাদের ভাল দাঁত নাও বেরোয়, তবে তাদের অবশ্যই শক্ত মাড়ি থাকবে, যার কারণে তাদের দীর্ঘদিন ধরে আঙ্গুল চিবোনোর প্রবণতা দেখা দেয় । এখানে ৭ মাস বয়সীদের জন্য কিছু বাড়িতে তৈরি খাবারের রেসিপি রয়েছে ।
১) গমের প্যানকেক
উপকরণ
- গমের আটা- ১ কাপ
- পাতলা গুড়- ১/৪ কাপ
- জল- পরিমাণ মতো
- মৌরি- ১ চা-চামচ
কীভাবে তৈরি করবেন
- গমের আটায় পাতলা গুড় দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন ।
- অল্প করে জল দিয়ে হালকা কঠিন ঘনত্বের মিশ্রণ তৈরি করুন ।
- অই ব্যাটারে অল্প মৌরি দিয়ে মিশিয়ে নিন । প্যানকেক তৈরির আগে এটি সারা রাত বা কয়েক ঘন্টার জন্য রেখে দিন ।
- একটি তাওয়া নিয়ে হালকা করে ঘি মাখিয়ে নিন । এবার ডোসার আকারে ঢেলে দিন ।
- দুই দিক ভালো করে রান্না করে পরিবেশন করুন ।
২) রাগি ও আপেলের পরিজ
উপকরণ
- রাগির আটা- ১ কাপ
- আপেল- অর্ধেকটা
- ঘি- ১ চা-চামচ
- জল- প্রয়োজন মতো
কীভাবে তৈরি করবেন
- আপেলটিকে ছাড়িয়ে ছোট কিউবের আকারে কেটে নিন । জলে বা প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নিন এবং ভালো করে চটকে নিন ও মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন ।
- একটি প্যানে রাগির আটা ও জল মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন এবং অল্প আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ এর মদ্ধে বুদবুদ তৈরি হয় ।
- এই মিশ্রণে আপেলের পিউরি মিশিয়ে রান্না করে নিন ।
- রান্না হলে আঁচ বন্ধ করে এক চামচ ঘি ছড়িয়ে দিন ।
৩) মিলেট পরিজ
উপকরণ
- বাড়িতে তৈরি মিলেটের গুড়ো- ১/২ কাপ
- জল- ১-২ কাপ
- বুকের দুধ / ফর্মুলা দুধ- ১/২ কাপ
কীভাবে তৈরি করবেন
- একটি পাত্রে, মিলেটের আটা ও জল মিশিয়ে নিন এবং যতক্ষণ না কোন দলা ছাড়া মসৃণ পেস্ট তৈরি হয় ততক্ষন ভালো করে নাড়িয়ে যান ।
- আঁচ জ্বালিয়ে দিন এবং বুদুবুদ উঠতে শুরু হওয়া পর্যন্ত মিশ্রণটিকে রান্না করুন ।
- এই পর্যায়ে আঁচ কমিয়ে নিন এবং প্রয়োজনীয় সামঞ্জস্য বুঝে দুধ যোগ করুন ।
- অতিরিক্ত স্বাদ হিসাবে, যেকোনো ফলের পিউরি যোগ করতে পারেন, যা মিষ্টতা আনবে ।
৪) মুগ ডাল খিচুড়ি
উপকরণ
- সবুজ মুগ ডাল- ১/২ কাপ
- চাল- ১/২ কাপ
- হলুদ গুঁড়ো- ১ চা-চামচ
- জিরে- ১/৪ চা-চামচ
- ঘি- ১ চা-চামচ
- জল- ৩/৪ কাপ
কীভাবে তৈরি করবেন
- চাল এবং ডাল ধুয়ে নিন এবং আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন
- চাল ও ডাল ছেঁকে নিয়ে তাতে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো ও জিরে ছড়িয়ে দিন ।
- প্রেসার কুকারে ৩/৪ কাপ জল যোগ করে এটি রান্না করুন ।
- ব্লেন্ডারে ভরে পেস্ট তৈরি করে খাওয়ান ।
৫) ন্যাসপাতির পিউরি
উপকরণ
- ন্যাসপাতি- ১টি
- জল / দুধ- ১/৪কাপ
কীভাবে তৈরি করবেন
- পরিষ্কার করে ধুয়ে ন্যাসপাতিটি ছাড়িয়ে নিন । ফলটি ছোট ছোট করে কেটে বীজ বের করে দিন ।
- একটি প্যানে জল ফুটিয়ে তাতে ফলটি দিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করুন ।
- কোন ব্লেন্ডার বা মিক্সারে ভরে সিদ্ধ ন্যাসপাতিটি চটকে নিন ।
- এটে জল বা দুধ মিশিয়ে সটিক অনুপাতে তৈরি করুন ।
খাওয়ানোর টিপস
এখানে আপনার সাত মাস বয়সী শিশুকে খাওয়ানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস রইল ।
- আপনার শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না । বিভিন্ন বাচ্চাদের ক্ষিদে এবং স্বাদের পছন্দ বিভিন্ন হয় । তারা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে কিনা তা নির্ধারণ করতে ভিজা এবং ময়লা ডায়পারের সংখ্যার দিকে নজর রাখুন । পুষ্টিকর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য, অনেকটা বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ পরিপূরক হিসাবে তাদের দিন ।
- একটি নতুন খাবার খাওয়ানোর সময়, সবসময় তিন দিনের জন্য অপেক্ষা করুন । এই শরীরের খাবারের প্রতিক্রিয়া এবং অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ দেখার জন্য সময় দিন । এমন কোন ক্ষেত্রে, যেখানে শিশুর নির্দিষ্ট খাবারের অ্যালার্জি থাকে, তা কয়েক মাসের জন্য বন্ধ করুন এবং পরে আবার চেষ্টা করুন ।
- সঠিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস স্থাপন করার জন্য খাবার রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান রাখুন । এই অভ্যাস, শিশুর মনের মধ্যে স্থান এবং খাবারের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে, বাবা-মায়ের জন্য খাওয়ানো সেশনগুলি আরও সহজ করে তোলে ।
- শিশুদের ফিঙ্গার ফুড দিয়ে খাবার বুঝতে উত্সাহিত করুন । এই বয়সে বাচ্চাদের কামড়ানোর একটি প্রবণতা থাকে এবং ফিঙ্গার ফুডের প্রতি জোরালো আকাঙ্ক্ষা থাকে, যা তাদের মাড়িতে প্রশমিত করতে সাহায্য করে । এটি তাদের টেক্সচার এবং তাদের স্বাদের সঙ্গে একটি প্রথম অভিজ্ঞতা দেয় ।
- রেগে রেগে খাওয়ানো এড়ানো উচিত । এটি তাদের খাবারকে আনন্দ করে উপভোগ করা থেকে দূর করে দেয় ।
- বাচ্চাদের কগাবার গলায় আটকে যাওয়া বা গলায় লাগা খুবই সাধারণ ঘটনা, বিশেষ করে যখন তারা দলাযুক্ত খাবার খায় অথবা যখন তারা একটি বড় টুকরো গিলে ফেলে । তার খাওয়ার সময় ভালোভাবে নজর রাখুন এবং গলায় আটকালে চটজলদি প্রতিক্রিয়া করুন ।
- দেবার আগে ফল এবং সবজি পরিষ্কার করুন । ফল এবং সবজির পিউরি পূর্ণ খাবারের বদলে জলখাবার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে । ফলের সাথে দুধ মেশানো এড়িইয়ে চলার চেষ্টা করুন কারণ এটি হজমে সমস্যা করে ।
- শিশুর খাবার তৈরির জন্য ব্যবহৃত বাসনপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন, কারণ শিশুরা খুব শীঘ্রই সংক্রমিত হয়ে থাকে । দলা ছাড়া খাবার তৈরি করতে একটি ভাল খাদ্য প্রসেসর ব্যবহার করুন ।
সাত মাস বয়সী শিশুদের তাদের ক্রমবর্ধমান শরীর এবং মস্তিষ্কে জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন । এটি একটি পরিবর্তনের পর্যায়, যেখানে তারা কঠিন খাবার খেতে শুরু করে এবং তাদের স্বাদ অনুভবের উন্নয়ন শুরু হয় । অনেক রকম শাকসবজি ও ফল খেলে এই ভালো খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হওয়া দীর্ঘতর হবে ।