In this Article
গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা প্রতিটি দম্পতির ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র হয়। সুখ এবং উত্তেজনার পাশাপাশি শিশুর প্রত্যাশা করা শারীরিক, আর্থিক এবং মানসিক চাপও নিয়ে আসতে পারে। আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার সঙ্গী এবং আপনার মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি বিবাদ বিতর্ক হবে। দম্পতিদের মধ্যে বিবাদ সাধারণ হলেও, আপনার জানা উচিত যে মতবিরোধগুলি আপনার শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। কীভাবে? তা জানতে পড়ুন।
কীভাবে বিবাদ এবং চিৎকার আপনার অনাগত শিশুকে প্রভাবিত করে?
গর্ভাবস্থায় আপনার স্বামীর সাথে লড়াই করা শিশুর সুস্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগে। লড়াইয়ের ফলে উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি হয় এবং এটি আপনার শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় তর্কবিতর্ক করা বাচ্চাকে প্রভাবিত করে, তার মস্তিষ্ক থেকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পর্যন্ত। কিছু প্রভাব নীচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে –
১. কংক্রিটেড ব্রেন ডেভেলপমেন্ট
চিৎকার করা বা উচ্চস্বরে কথা বলা যতটা সম্ভব কম করুন। ক্রোধ আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে বাধা দেয়। এটি কেবল শিশুর আইকিউ-কেই প্রভাবিত করে না, পরবর্তী জীবনে আবেগ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে তার দক্ষতার উপরও প্রভাব ফেলে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ স্তরের স্ট্রেসের সংস্পর্শে আসা শিশুদের উদ্বেগ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং একটি বড় অ্যামিগডালা থাকে যা মস্তিষ্কের অংশটি ভীতিজনক উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দায়ী।
২. শারীরিক বিকৃতি
একটি শারীরিকভাবে বিবাদ বা চিৎকার করে ঝগড়া করা আপনার সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। এটি মৃত সন্তান প্রসবের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আসে। গর্ভাবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের কারণে শিশুর জন্মের ওজন হ্রাস, শারীরিক আঘাত এবং রক্তপাতও হতে পারে।
৩. কম্প্রোমাইজড ইমিউনো সিস্টেম
লড়াইয়ের সময় বা তার পরে স্ট্রেসের বৃদ্ধি বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দমন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে অসুস্থতা এবং স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।
৪. শারীরবৃত্তীয় ও জৈবিক বিকাশ
ক্রোধ আমাদের হার্টের হার ও রক্তচাপ, পাশাপাশি অ্যাড্রেনালাইন ও এপিনেফ্রাইন বাড়িয়ে তোলে, ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় অবদান রাখে এবং রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে তোলে। এর ফলে জরায়ুতে অক্সিজেন হ্রাস হয়, ভ্রূণের রক্ত সরবরাহের সাথে আপস করে। এটি আলসার, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, মাথাব্যথা, ত্বকের ব্যাধি এবং হজমের সমস্যাও হতে পারে।
৫. আসক্তি বা অত্যাধিক মাত্রাকে প্রশ্রয়
গর্ভাবস্থায় লড়াইয়ের সাথে অনিয়ন্ত্রিত রাগ ও অপরাধ, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং অন্যান্য সহিংস আচরণের মধ্যে একটি সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। ভবিষ্যতে, এই ব্যক্তিরা এমন অভ্যাসগুলিতে লিপ্ত হন যা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপদজনক, যেমন ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল ব্যবহার এবং অত্যধিক খাদ্য গ্রহণ।
এমন কিছু সাধারণ বিবাদ যা প্রত্যাশিত দম্পতিদের থাকে
যদিও প্রতিটি দম্পতি আলাদা এবং প্রায়শই তাদের নিজস্ব লড়াইয়ের বিভিন্ন বিষয় থাকে, সেখানে কয়েকটি সংবেদনশীল বিষয় রয়েছে যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিতর্ক উত্থাপন করতে বাধ্য। এখানে সাধারণ কিছু বিবাদের বিষয় রয়েছে যা প্রত্যাশিত দম্পতিদের থাকে:
১. স্বার্থপর হওয়া
আপনি একবার গর্ভবতী হয়ে গেলে, আপনার সবকিছু শিশুকে কেন্দ্র করেই ঘোরে এবং আসলে এটা হওাই উচিত। যাইহোক, অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীকে অত্যাধিক আবেগযুক্ত এবং অন্য কিছু নিয়ে স্ত্রীরা কথা বলতে পারেন না বলে মনে করতে পারেন, এই নিয়েই বিবাদ হতে পারে। অন্যদিকে, স্বামী কাজের মধ্যে অথ্যাধিক ব্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন এবং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টগুলি মিস করতে পারেন, তার ফলে স্ত্রী রাগান্বিত হন।
২. অর্থ
আর্থিক অবস্থা প্রত্যাশিত দম্পতিদের মধ্যে লড়াইয়ের বিশাল কারণ। অবশ্যই, আপনার ব্যয় কী পরিমাণ বাড়বে সে সম্পর্কে আপনাদের কারোরই স্পষ্ট ধারণা থাকবে না, ব্যয় এবং সঞ্চয় সম্পর্কে মতামতের মধ্যে বিশাল পার্থক্য তৈরি হতে পারে।
৩. শিশুর নাম
শিশুর নামকরণ একটি বিশাল বড় কাজ, এবং বেশিরভাগ দম্পতিরা এমন একটি নাম চয়ন করতে চান যা অনন্য, অর্থপূর্ণ ও শিশুর জন্য উপযুক্ত। নামের বিষয়ে সবার সম্মত হওয়া একটি ঝামেলার কাজ হতে পারে, বিশেষত যদি আপনার পরিবারের সদস্যরা সবাই কিছু না কিছু নাম দিতে চান।
মায়ের উপর বিবাদ এবং চিৎকারের প্রভাব
গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে মা উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীল পরিবর্তন এবং মেজাজের দোলাচল অনুভব করে যা সঙ্গী সাথে তাঁর তর্কবিতর্ক তৈরি করে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনগুলির দ্রুত পরিবর্তনের মাত্রার কারণে এই পরিবর্তনগুলি হয়। চিৎকার করা, ঝগড়া বা মারামারি করা মায়ের পক্ষে অনিবার্য হতে পারে। স্ট্রেস পেটে খিঁচুনি, মাথাব্যথা, বমিভাব এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। এটি অকাল প্রসব শ্রমেরও কারণ হতে পারে। প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী হওয়ার সময় তর্ক করা হতাশা এবং বিরক্তির কারণও হতে পারে। সুতরাং, আপনার সঙ্গীর সাথে মারামারি এড়ানো একটি শান্তিপূর্ণ গর্ভাবস্থার জন্য সেরা সমাধান।
গর্ভাবস্থায় লড়াই এবং বিতর্ক এড়ানোর টিপস
সঙ্গীর সাথে একটি ভাল অংশীদারিত্ব গর্ভাবস্থায় খুব চ্যালেঞ্জিং। হরমোনগত পরিবর্তন, ঘুম ও শক্তির অভাব এবং মায়ের পরিবর্তিত দেহের আকারের পাশাপাশি সেই দম্পতির জন্য জীবনের একটি বিশাল পরিবর্তন রয়েছে। এই পরিবর্তনগুলি এমনকি দম্পতির দৃঢ় সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলে এবং তর্ক ও ঝগড়াগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। আপনার সঙ্গীর সাথে বিরোধ এড়াতে এখানে কয়েকটি টিপস দেওয়া হয়েছে।
-
একে অপরকে প্রায়শই প্রশংসা করা
স্বামীরা তার গর্ভবতী স্ত্রীর পরিপূরক করতে পারেন যে তিনি কীভাবে জিনিস পরিচালনা করছেন তা জানিয়ে বা উন্নয়নশীল সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারেন। অন্যদিকে, স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের সমর্থন করার জন্য পরিপূরক করতে পারেন। এটি লড়াই কম করতে পারে।
-
আরও পরস্পর বোঝাপড়া তৈরি করুন
আপনার সঙ্গীর সাথে আরও ভাল বোঝাপড়া ঝামেলা এড়াতে সহায়তা করে। ঘরের রুটিনের কাজগুলিতে একে অপরকে সাহায্য করুন, যাতে আপনারা দুজনেই বিশ্রাম পান ও তাজা হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় পান।
-
ভয়, উদ্বেগ এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলুন
গর্ভাবস্থায়, অনেকগুলি অজানা জিনিস থেকে ভয় পাওয়া যায়। স্ত্রী গর্ভাবস্থা, প্রসব শ্রম এবং মাতৃত্ব নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন। স্বামী সেই সময় আর্থিক অবস্থা, দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারেন, তবে গর্ভাবস্থার পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা আপনার বন্ধনকে শক্তিশালী করে এবং একে অপরের মন বুঝতে সহায়তা করে।
-
একসাথে অ্যাক্টিভিটি ক্লাসে যান
অতিরিক্ত কিছু মজাদার কাজগুলি করুন যা আপনাকে আরও ভাল বোধ করাবে। যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন গ্রুপে যোগদান আপনাকে আপনার পরিস্থিতি ভাগ করে নেওয়ার জন্য অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়। ব্যায়াম আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট এবং মানসিকভাবে সুস্থ রাখে।
কখনও কখনও তর্ক-বিবাদ করা স্বাভাবিক, যার ফলে কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই তবে অতিরিক্ত কোনও ঝগড়া এড়ানো উচিত, কারণ এটি মা এবং শিশুর উভয়েরই মারাত্মক পরিণতি ঘটাতে পারে। টিপস এবং যথাযথ চিকিৎসা থেরাপি ব্যবহার করা সহজ মসৃণ গর্ভাবস্থার জন্য এই সমস্যাগুলি প্রশমিত করতে পারে।