কাশি শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা এবং এটি শিশুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে তা খুবই বিরক্তিকর হয়। কাশি আসলে বাচ্চাদের এবং সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুদের কম অনাক্রম্যতার ফলে হয়। অতএব ডাক্তারের কাছে না দৌড়েই কিভাবে কাশি নিরাময় করা যায় মায়েরা সবসময় সেই প্রতিকারের সন্ধানে থাকেন। তাই এখানে শিশুদের কাশির জন্য কয়েকটি ব্যবহৃত এবং পরীক্ষিত কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকারের একটি তালিকা দেওয়া হল।
শিশুদের রাত্রিতে হওয়া কাশির প্রতিকার
ঠান্ডা আবহাওয়া মূলত শিশুদের কাশি এবং সর্দির একটি প্রধান কারণ হতে পারে। এটি খাদ্যে অ্যালার্জি, ধুলোয় অ্যালার্জি, অথবা ব্রঙ্কাইটিস, গলা বা ফুসফুসে সংক্রমণের মতো কিছু অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যের অবস্থার কারণে হতে পারে। শিশুদের সারারাত ধরে কাশি হলে, এটি তাদের ঘুম ব্যাহত করতে পারে। ফলস্বরূপ, তাদের শক্তিক্ষয় হতে পারে এবং দিনের বেলায় তারা ক্লান্ত বোধ করতে পারে। যদি আপনার বাচ্চা রাতে কাশে, নিচের প্রতিকারগুলি অনেক সাহায্যের হবে।
১. ইউক্যালিপ্টাসের তেল
আপনার সন্তান যদি 2 বছরের কম বয়সী হয়, আপনার সন্তানের বালিশ এবং বেডরোলগুলিতে ইউক্যালিপটাস তেলের কয়েকটি ড্রপ ঢেলে দিন। এটি তার নাসারন্ধ্র খুলে দেবে এবং তাৎক্ষণিক আরাম দেবে। আপনি আপনার সন্তানের পোশাকেও ইউক্যালিপটাস তেলের কয়েকটি ড্রপ ঢেলে দিতে পারেন। সর্বদা মনে রাখবেন যে আপনার শিশু খুব অল্প বয়স্ক হলে তার গলায় তেল মালিশ করবেন না।
২. উষ্ণ স্যুপ
আপনার সন্তানকে একটি উষ্ণ সবজির স্যুপ বা চিকেন স্যুপ দিন এবং এটি কাশি বা গলা ব্যথা থেকে আরাম প্রদান করবে।
৩. গলার লজেন্স
দেখা গেছে যে জিংক লজেন্স প্রতি 2-3 ঘন্টায় একবার নিলে কাশি ও সর্দি নিরাময় করতে পারে। লজেন্সগুলি গলাতে প্রদাহের কারণে হওয়া জ্বালা থেকে ত্রাণ সরবরাহ করে, যার ফলে সংক্রমণের ফলে হওয়া কাশি নিরাময় হয়।
ভারতে, গলার জ্বালা – যা থেকে কাশি হয়– নিরাময় করার জন্য শিশুকে রক ক্যান্ডি (মিছরি) চুষতে দেওয়া হয়। বলা হয় যে লজেন্স বা রক ক্যান্ডির মত যে কোনো কিছু যা লালাকে উদ্দীপিত করে এবং গলা ভিজিয়ে রাখে, গলা ব্যথা বা গলা জ্বালা থেকে পরিত্রাণ দেয়।
৪. হলদী দুধ
হলুদে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। এক গ্লাস উষ্ণ দুধে, ½ চা চামচ হলুদ মেশান এবং আপনার বাচ্চাকে এটা পান করতে বলুন। ছোট বাচ্চারা হয়তো পুরো গ্লাস হলদী দুধ পান করতে পারবে না, তাই প্রথমে মিশ্রণের মাত্র কয়েক চামচ দিয়ে শুরু করুন।
৫. হলুদ এবং মধুর মিশ্রণ
হলুদের ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং মধু গলায় আরাম এনে দেয় যার ফলে কাশি থেকে পরিত্রাণ দেয়, বিশেষ করে রাতে হওয়া বাচ্চাদের শুষ্ক কাশির ক্ষেত্রে। এইগুলির মতো ঘরোয়া প্রতিকারগুলি সবাই সহজেই করতে পারে, কারণ এগুলি রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে তৈরি।
৬. পোড়া হলুদের শিকড়ের ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়া
হলুদের শিকড় পোড়ানো এবং সেটির ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়া (আয়ুর্বেদে ধূম পান নামে পরিচিত), কাশি নিরাময়ের একটি ভাল ও কার্যকর প্রতিকার। আপনি জ্বলন্ত কাঠকয়লায় কয়েকটি হলুদ পাতা দিয়ে এটি করতে পারেন। তারপর পাতাগুলোর উপরে কিছুটা হলুদ রাখুন এবং পুড়িয়ে দিন। এর থেকে নির্গত ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে নিতে দিন।
৭. আদা এবং মধু
আদার অ্যান্টিহিস্টামাইন গুণ অ্যালার্জির চিকিৎসায় সহায়তা করে যা কাশির সবচেয়ে সাধারণ কারণ। এটা খুব স্থায়ী কাশি নিরাময় করতেও সাহায্য করে। থেঁতো করা আদার রস, মধুর সাথে মিশ্রিত হলে, প্রদাহযুক্ত গলায় আরাম দেয় এবং কাশি নিরাময় করে।
৮. মাথা উঁচু করে রাখা
কিছু ক্ষেত্রে, রাতের বেলায় শিশুর কাশির কারণ হল নাকের পেছন দিয়ে মিউকাস গলায় ঝরে পড়ে যার ফলে সারারাত ধরে ক্রমাগত কাশি হয়। অতএব, কয়েকটি বালিশের সাহায্যে তার মাথা উঁচু করে ধরে রাখলে, মিউকাসের ঝরে পড়া কম হবে, ফলে রাতে কম কাশি হবে।
৯. মালিশ
সরিষার তেল গরম করুন এবং এটির মধ্যে কিছুটা অল্প থেঁতো করা রসুন যোগ করুন। এটিকে ঠান্ডা হতে দিন। আপনার সন্তানের সারা শরীরে বিশেষ করে গলা, বুক, পিঠ, হাতের তালু এবং পায়ের পাতার নিচে এটি মালিশ করুন। সরিষার তেল শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং রসুনের জীবাণু বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে। তবে, আপনার শিশুর বুক ও পিঠ মালিশ করার সময় অত্যধিক চাপ দেবেন না। এটা আলতোভাবে করা উচিত।
১০. তুলসি এবং মধু
তুলসি অনাক্রম্যতা বাড়ায় এবং সব ধরণের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তুলসির পাতাগুলি এক্সপেক্টোরান্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় যা মিউকাসকে পাতলা করে এবং বুকে সর্দি জমে যাওয়া নিরাময় করে। এটা কাশি সৃষ্টিকারী স্নায়ুর উপরও কাজ করে। অন্য দিকে, মধুতে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং ভাইরাস বিরোধী গুণ রয়েছে যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে গলায় আরাম দেয়। সুতরাং, যখন মধু দিয়ে মিশ্রিত তুলসি পাতার রস শিশুকে দেওয়া হয়, তখন এটি শিশুকে কাশি থেকে মুক্তি দেয়।
এর পাশাপাশি, আপনি আপনার সন্তানের কাশি উপশম করার জন্য গার্গলের মতো অন্যান্য অনেক বিকল্পও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এক গ্লাস উষ্ণ জলে কিছু লবণ গুলে দিন। আপনার সন্তানকে এটি দিয়ে গার্গল করতে দিন। দিনে তিনবার উষ্ণ লবণ জল দিয়ে গার্গল করলে গলার প্রদাহ কমাতে পারে, যার ফলে গলা ব্যথার উপশম হয়। লবণ ও হলুদ মেশানো উষ্ণ জল দিয়ে গার্গল করলেও গলার সংক্রমণ নিরাময় করতে পারে, কারণ হলুদ ও লবণে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে করা হয়।
শীতের সময় কাশি প্রতিরোধ করার আরেকটি দুর্দান্ত উপায় হল আপনার সন্তানের ঘরে একটি হিউমিডিফায়ার রাখা। এটি ঘরের ভিতরে শুষ্ক শীতের বাতাসে আর্দ্রতা যোগাবে এবং কাশি প্রতিরোধ করবে। হিউমিডিফায়ারটি প্রায়ই পরিষ্কার করতে ভুলবেন না যাতে এটির ভিতরটা পরিষ্কার থাকে।
কাশি একটি গুরুতর সমস্যা নয়। তবে, এটা কখনো বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা উচিত নয়। প্রতিটি ভারতীয় পরিবারে, কাশি নিরাময় করার জন্য ঘরোয়া প্রতিকারের চেষ্টা করা খুবই প্রচলিত। তবে, যদি সমস্ত ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করার পরেও কাশি চলতে থাকে তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার উপদেশ দেওয়া হয়।