রাগি হল একটি শস্যদানা যা এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক দেশে জন্মায়।অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য এর অনেক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সুবিধা রয়েছে।এটিকে খাওয়া যেতে পারে রাগির আটা দিয়ে রুটি তৈরী করে অথবা পোরিজ, আদাই, ধোসা কিম্বা কালী আকারে।গর্ভদশায় রাগি খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতার উল্লেখ এখানে করা হল।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রাগির স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি
গর্ভাবস্থায় রাগি খাওয়া কি ভাল? গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রাগির স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সম্পর্কে পড়ার পর আপনার তার সন্ধান মিলবে।
1.ক্যালসিয়ামের উচ্চ পরিমাণ
রাগি ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ যা শিশুর দাঁত এবং হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে।বাচ্চা তার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি পেয়ে থাকে তার মায়ের দেহ থেকে, সুতরাং পর্যাপ্ত ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আপনার দেহে উপস্থিত থাকা উচিত।ক্যালসিয়াম আপনার এবং আপনার বাচ্চার দু–জনেরই দাঁত, হাড় এবং নখ শক্ত করে তুলতে সহায়তা করে।
2. প্রাকৃতিক ফ্যাট সামগ্রী রয়েছে
অতিরিক্ত ফ্যাট সমন্বিত খাবারগুলি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভাল।এগুলি থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ রোগের মত নানা রূপ সমস্যার সৃষ্টি হয়।রাগির মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ফ্যাট যা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করায় না।
3.ফাইবার বা তন্তু সমৃদ্ধ
রাগির আটা গর্ভাবস্থার পক্ষে ভাল কারণ এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার।সুতরাং এটি অন্ত্রের গতিবিধি সম্পর্কিত সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।
4.অনিদ্রা মোকাবিলায় সাহায্য করে
অনেক গর্ভবতী মহিলাই অনেক সময় রাত্রিবেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাতে মুশকিলের মুখে পড়েন।আপনি যদি রাগি খান তবে আপনি রাতের বেলায় যথেষ্ট পরিমাণে নিশ্ছিদ্র ঘুম দিতে সমর্থ হবেন।রাগিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিডটি হল ট্রিপ্টোফেন যা অনিদ্রা মোকাবিলায় সহায়তা করে।
5.এর মধ্যে গ্লুটেন থাকে না
কিছু মহিলা মারাত্মক অ্যালার্জির ঝুঁকিতে থাকেন এবং কঠোরভাবে গ্লুটেন–মুক্ত ডায়েট মেনে চলেন।রাগি হল গ্লুটেন–মুক্ত এবং গর্ভাবস্থায় এটি গ্রহণ করা সম্পূর্ণ নিরাপদ।আপনার যদি অ্যালার্জি হয়ে থাকে বা আপনি অ্যালার্জি প্রবণ হয়ে থাকেন তবে আপনার এমন খাবার এড়ানো উচিত যা জ্বলন ও অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। গ্লুটেন মুক্ত খাবারগুলি অনাগত শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
6.দুগ্ধ উৎপাদনে সহায়তা করে
সন্তান প্রসবের পর বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করানোর জন্য মায়ের দেহে দুধ উৎপাদনের প্রয়োজন।রাগি ক্যালসিয়াম, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং আয়রণে সমৃদ্ধ হওয়ায় তা দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে একনাগাড়ে বুকের দুধ পান করানোর পরিকল্পনা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভাবস্থায় রাগি খাওয়া উচিত।
7.কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
গর্ভাবস্থায় আপনার দেহে কোলেস্টেরলের অস্বাভাবিক মাত্রার উপস্থিতির ফলে আপনার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে এবং স্বাভাবিক শ্রমের সম্ভাবনাও হ্রাস করতে পারে।রাগি মধ্যস্থ লেসিথিন এবং মেথিওনাইন আপনার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর।
8.বহুবিধ খনিজের সমৃদ্ধ উৎস
রাগির মধ্যে নানা ধরণের খনিজ উপস্থিত থাকে যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রণ বা লোহা ইত্যাদি।এই খনিজগুলি গর্ভাবস্থায় গর্ভস্থ শিশুর বিকাশের জন্য অপরিহার্য। আপনার ডাক্তারবাবু অথবা পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করার পর আপনি আবার আপনার গর্ভাবস্থাকীন ডায়েট চার্টের মধ্যে রাগি অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করতে পারেন।
9.দেহের বিভিন্ন অংশে প্রোটিন সরবরাহ করতে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থাকালে শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিনের প্রয়োজন।এটি আবার ভ্রূণের বিকাশেও সহায়তা করে।শাকাহারীদের জন্য রাগি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য, কারণ এটি দেহে তার প্রয়োজনীয় প্রোটিনের যোগান দিতে সাহায্য করে।
10.উচ্চ পরিমাণে আয়রণ বা লোহা
রাগিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রণ যা গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশু উভয়ের পরিচর্যার জন্যই অপরিহার্য।এটি অনাক্রম্যতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং মাকে সারাদিন ধরে বেশ চনমনে বোধ করায়।
স্বাস্থ্যকর রাগি ধোসার রেসিপি
রাগির ধোসা খুবই সুস্বাদু এবং আপনাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করে, সুতরাং আপনি সেটি রান্না করতে ও খেতে পারেন যখনই স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু দক্ষিণ ভারতীয় খাদ্য রসস্বাদনের বাসনা আপনার মনে জাগবে।
উপকরণঃ
- 1 কাপ রাগির আটা
- 1/2 কাপ সুজি
- 1/3 কাপ চাল গুঁড়ি
- 1/2 কাপ দই
- 1 টা পিঁয়াজ (মিহি করে কুঁচানো)
- 1 চা–চামচ আদা(মিহি করে কুঁচানো)
- 1 টা কাঁচা লঙ্কা(সূক্ষ্ম করে কাটা)
- 2 টেবল–চামচ ধনে পাতা(মিহি করে কুঁচানো)
- 5-6 টি কারি পাতা
- 1 চা–চামচ জীরা
- 1/2 চা–চামচ গোলমরিচ
- 1 চা–চামচ লবণ
- 4 কাপ জল
- তেল– প্রয়োজন মত
কীভাবে প্রস্তুত করবেন
1.একটা বড় বাটির মধ্যে রাগির আটা, সুজি এবং চাল গুঁড়ি নিন।
2.জল ছাড়া বাকি সব উপকরণগুলি এর সাথে যোগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিন।
3.এর সাথে 1-2 কাপ মত জল যোগ করুন এবং ধীরে ধীরে সেট সমানে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না ঘন, দলা মুক্ত ব্যাটারে পরিণত হয়।
4.এবার পাত্রটি ঢাকা দিয়ে ব্যাটারটি 15-20 মিনিটের জন্য একভাবে রেখে দিন।
5.তারপর বাকি জলটিও অল্প অল্প করে ঢেলে সমানে নেড়ে মিশাতে থাকুন যতক্ষণ না সেটা একটা তরলের ঘনত্বে আসে।
6.একটা চাটুর উপর সামাণ্য কিছুটা তেলের প্রলেপ লাগিয়ে গরম করুন।
7.চাটুর ঠিক মাঝখানটায় কিছুটা ব্যাটার ঢালুন এবং সেটিকে একটি হাতার সাহায্যে ধীরে ধীরে বৃত্তিয় গতিতে চারপাশে ছড়িয়ে দিন যতক্ষণ না আপনি ধোসার কাঙ্খিত আকার এবং বেধ পান।
8.উপর থেকে এবার তার উপর হালকা তেলের ছিঁটা দিন।
9.ধোসার এক পাশটা একবার স্বর্ণালী বাদামী বর্ণ হয়ে উঠলেই আপনি সেটিকে উলটে দিয়ে অপর পাশটিও 2-3 মিনিট ধরে রান্না করে নিন।
10.সর্বান্তে ধোসাটিকে ভাঁজ করুন এবং প্লেটের উপর নিয়ে চাটনি এবং সাম্বারের সাথে গরম গরম নিজেকে ও তার সাথে বাড়ির বাকিদেরও পরিবেশন করুন।
রাগি কেবল মহিলাদের জন্য তাদের গর্ভাবস্থাকালেই উপকারি নয়। প্রসবের পরবর্তীকালের জন্যও এর বহুবিধ উপকারিতা আছে।এটি কোষ এবং কলা মেরামতে সাহায্য করে এবং শক্তির একটা ভাল উৎসও বটে।রাগি এবং রাগির আটা গর্ভাবস্থার পক্ষে ভাল এবং গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকেই সেটিকে আপনার ডায়েট চার্টের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করতে পারলে, একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।