In this Article
সম্প্রতি প্রাদুর্ভাব হওয়া এক অজানা করোনাভাইরাস(নভেল করোনাভাইরাস/ 2019-nCoV)সম্পর্কে আজ সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে, যার এখনও কোনও নিরাময় নেই এবং এটি সর্বত্র বেশ ব্যাপক এক ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে উহানের আশেপাশে, যেখানে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল।
চীন দেশের নিকটবর্তী হওয়ার দরুণ এই আতঙ্ক ভারতের বুকেও অগোচরে প্রবেশ করেছে।
মানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে আতঙ্ক গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণগুলি হল এই করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলি সাধারণ ফ্লু-এর লক্ষণগুলির বেশ অনুরূপ হওয়ায় এই দু’টির মধ্যে কোনটি যে কি তা সনাক্ত করার বা রোগ নির্ধারণের কাজটিকে বেশ কঠিন করে তুলেছে।
উহানের প্রাদুর্ভাবের পরে, বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এগিয়ে এসেছেন এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কে বহু তথ্য উদঘাটন করেছেন সমস্যাগ্রস্থ অসংখ্য মনকে সহজ করে তোলার জন্য।
এখন দেখা যাক এই বিশেষজ্ঞরা কি বলেন!
সূত্রঃ The Wholesome Doctor
করোনাভাইরাস কি?
করোনাভাইরাস প্যাথোজেন গোষ্ঠীভূক্ত ভাইরাস যা স্তন্যপায়ী প্রাণী, পক্ষি এবং মনুষ্য জাতিকেও প্রভাবিত করে।এই গোষ্ঠীর বেশিরভাগ ভাইরাসগুলিই ক্ষতিকারক নয়।মানুষের মধ্যে, তাদের শ্বাসকার্য এগুলি প্রভাব ফেলে এবং তার ফলে সাধারণ ফ্লু, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরিটরি সিন্ড্রোম(SARS) এবং মিডিল-ইষ্ট রেসপিটরি সিন্ড্রোম(MERS) এর মত রোগ-ব্যাধিগুলি সৃষ্টি করে।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিজ্ঞানে সম্পূর্ণরূপে অজানা নয়।এমনকি এটি কল্পনা করার চেয়েও অনেক বেশি সাধারণ।যে ধরণের করোনাভাইরাসগুলি মানুষকে প্রভাবিত করে সেগুলির মধ্যে রয়েছে NL63, 229E, HKU1 এবং OC43 যেগুলি সাধারণত শ্বাস নালীর উর্দ্ধাংশে অসুস্থতা সৃষ্টি করে এবং কিছু ক্ষেত্রে ঠিক সাধারণ সর্দি কাশির মতই সংক্রামক হয়ে থাকে।
দুর্বল রোগ প্রতিরধক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপর এর প্রভাবের সম্ভাবনা বেশি হয়ে থাকে।সুতরাং বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা, ছোট শিশু, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদিতে ভুগে থাকা ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আসুন করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলির দিকে একবার দ্রুত নজর দিয়ে নেওয়া যাক!
করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলির সন্ধান করার জন্য
পূর্বের উল্লেখানুযায়ী, করোনাভাইরাসের অনেক লক্ষণই সাধারণ ফ্লু-এর অনুরুপ হয়ে থাকে।প্রয়োজনবোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নেওয়ার জন্য যে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি আপনার জানা প্রয়োজন তার একটি তালিকা এখানে দেওয়া হলঃ
- নাক দিয়ে জল পড়া
- জ্বর
- খুক-খুক শুকনো কাশি
- মাথা ব্যথা
- গলা ব্যথা
- শরীর ভাল না লাগার এক সাধারণ বোধ
- শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট
- ফুসফুসে প্রদাহ/ নিউমোনিয়া
করোনাভাইরাস এবং সাধারণ ফ্লু-এর লক্ষণগুলির মধ্যে পার্থক্য করতে পারাটা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজ না হওয়ার কারণে, এই অসুস্থতাটিকে সনাক্তকরণ করতে পারাটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।এছাড়াও মনে রাখবেন যে, করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন পর্বটি 14 দিন অবধি থাকে এবং এর লক্ষণগুলি যদি 7-10 দিন পরেও অব্যাহত থাকে বা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসাগত মনযোগ আকর্ষণ করানো অপরিহার্য।
আমরা নিশ্চিত যে বিভিন্ন খবরাখবরগুলি এ ব্যাপারে আপনাকে অত্যন্ত চিন্তাণ্বিত করে তুলেছে, তবে এক্ষেত্রে আপনার নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
এখানে দেওয়া হল আপনি কি করতে পারেন
দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে বড় কারণ হওয়ায়, এটিকে দূরে রাখার সবচেয়ে সংশয়াতীত উপায় হিসেবে অনাক্রম্যতাকে বাড়িয়ে তোলাকে মনে করা হয়।আর সেটি আপনি করতে পারার মত কিছু ব্যবস্থা এখানে দেওয়া হলঃ
1.হাইড্রেট থাকুন
2.পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
3.ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরের ওষুধ গ্রহণ করুন
4.একটি বলিষ্ঠ অনাক্রম্য তন্ত্র গড়ে তুলতে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করুন
5.ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন-
- সাবান এবং জল দিয়ে ভালভাবে হাত ধোবেন।
- একটি অ্যালকোহল ভিত্তিক স্যানিটারিজার ব্যবহার করুন।
- আপনার চারপাশ পরিষ্কার রাখুন।
- কাশা বা হাঁচি দেওয়ার সময় আপনার নাক এবং মুখ ভালভাবে ঢেকে রাখুন।
- একবার ব্যবহার করা ট্যিসু পেপারগুলি নষ্ট করে ফেলুন।
- আপনার নাক এবং চোখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলুন।
- আপনার বারংবার ব্যবহৃত বস্তুগুলিকে নির্বীজিত করুন।
6.ভিড় জায়গাগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
7.সর্দি-কাশি হয়ে থাকা এমন কোনও ব্যাক্তির নৈকট্য এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন।
8.খামারের পশুগুলির সাথে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন।
9.ভালভাবে যথাযথ সেদ্ধ না করে কাঁচা মাংস এবং ঠিকমত না ফোটানো দুধ খাওয়া পরিহার করুন।
10.কাঁচা মাংসগুলির ব্যবস্থা করার সময়, দূষণ এড়াতে হাতে গ্লাভস পরুন এবং পৃথক ভাবে সংরক্ষণ করুন।
এছাড়াও ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে অসুস্থতার সংক্রমণটি ছড়ানো এড়াতে আপনার অবশ্যই অনুসরণ করার জন্য কিছু সাধারণ নির্দেশিকার ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সাধারণ নির্দেশিকাগুলি
আপনি যদি বিদেশে ভ্রমণ করেন, বিশেষ করে সেই দেশে যেখানে করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার অনেক রিপোর্ট রয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনার অনাক্রম্যতাকে বাড়িয়ে তোলা এবং জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা লাগার যাবতীয় প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সাথে রাখা নিশ্চিত করুন।চেষ্টা করুন পারতপক্ষে এধরনের ভ্রমণ এই সময় না করতে।
করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত যাত্রীদের নির্বাসন এবং আগমন এড়াতে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর, রেল স্টেশন এবং বাস টার্মিনাস যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।সুতরাং আপনার যদি ইতিমধ্যেই জ্বর হয়ে থাকে কিম্বা ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশি হয়ে থাকে আপনার যাত্রার পরিকল্পনাটি বাতিল করে দিন।
করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিরা অবশ্যই অবিলম্বে নিজেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন।
জ্বর, সর্দি-কাশি এবং ঠাণ্ডা লাগার সাথে আপনি যদি শ্বাসকষ্ট বোধ করেন তৎক্ষণাৎ তা ডাক্তারের নজরে নিয়ে আসুন।
বাইরে খাওয়ার সময়, রেঁস্তোরাগুলি খাদ্য নিরাপত্তার সাধারণ নর্দেশিকাগুলি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যবিধিগুলি যে অনুসরণ করে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন।
একটি অতিরিক্ত পরামর্শ হিসেবে, আপনার অনাক্রম্য শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে এবং নিরাপদ থাকতে এখানে একটি চটজলদি রেসিপির উল্লেখ করা হলঃ
মশলা চায়ের রেসিপি
এই চা হল ভিটামিন A, ভিটামি C এবং B ভিটামিগুলির মত পুষ্টি উপাদান এবং অতুলনীয় স্বাদের এক যথার্থ মিশ্রণ।এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ফাঙ্গাল(ছত্রাক বিরোধী) এবং অ্যান্টি ইনফ্লেম্যাটোরি(প্রদাহ বিরোধী) বৈশিষ্ট্যাবলী, যা মানব দেহ মেরামত করতে এবং অনাক্রম্যতন্ত্রকে আরও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
বি.দ্রঃ এই রেসিপিটি তাদের জন্য প্রযোজ্য নয় যাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার অথবা অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের কারণে হয়ে থাকা যেকোনও ব্যাধি রয়েছে।
উপকরণ
- 1-2 টি ভারতীয় স্টার-অ্যানি
- 250 মিলি. (বড় 1 কাপ) জল
পদ্ধতি
- একটি পাত্রে জল নিয়ে ফোটান
- এর সাথে স্টার-অ্যানিগুলি যোগ করুন এবং আগুনের শিখা নিভিয়ে দিন।
- পাত্রটি ঢাকা দিয়ে রাখুন এবং সেটি পান করার আগে 10-15 মিনিটের জন্য একভাবে ঢাকা দিয়েই থাকতে দিন।
সূত্রঃ https://www.youtube.com/watch?v=PBVvV8A7iSI
এই করোনাভাইরাস শীত এবং বসন্তের সময় বেশি সক্রিয় বলে জানা গেছে, সুতরাং সাবধানতার সাথে ভ্রমণ করুন।এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি অবশ্যই ভিড় জায়গাগুলিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।যদি আপনার করোনাভাইরাসের ওপরে আরও তথ্যের প্রয়োজন হয় কিম্বা এই রোগটি হওয়ার আশঙ্কা যদি আপনাকে তাড়িত করে, সেক্ষেত্রে অবিলম্বে আপনার অবশ্যই চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়া উচিত।