গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়া

গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়া

গর্ভাবস্থার সময় মায়ের খাদ্যতালিকার বিশেষ যত্ন নিতে হবে কারণ এটি শিশুর বিকাশের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। মায়ের সুস্থতার পাশাপাশি সন্তানের সুস্থতার জন্য খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কোনও খাদ্য আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার আগে, শরীর এর থেকে যে উপকারগুলি পাবে, এবং এটির যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি হতে পারে সেগুলি বোঝা দরকার।

গর্ভবতী মহিলারা কি ডিম খেতে পারে?

“গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়া কি ঠিক আছে?”, অনেক মায়েরা মাঝে মাঝে এটি ভাবতে পারেন। যদিও এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ, তবু কিছু সতর্কতা রয়েছে যা ডিম খাওয়ার আগে নেওয়া দরকার।
ডিম একটি মহান খাদ্য কারণ এটি খনিজ, ভিটামিন, এবং স্নেহ পদার্থে ভরপুর।  গর্ভাবস্থায় ডিম খেলে, মা এবং শিশুর কাছে এই সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হবে।

কাঁচা বা সিদ্ধ না করা ডিম খাওয়ার পরিবর্তে, গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ করা ডিম খেতে পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি ডিমে উপস্থিত যে কোনো ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে। প্যাকেজিংয়ের তারিখ চেক করে ডিমের তাজাভাব নিশ্চিত করা এবং শুধুমাত্র পরিষ্কার জায়গাগুলি থেকে কেনার মতো সতর্কতা অবলম্বন করলে, সেগুলি দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

ডিম খাওয়ার উপকারিতা

ডিম খাওয়ার উপকারিতা

ডিমগুলি হল শক্তিতে ভরপুর খাদ্য সামগ্রী এবং মায়ের অপরিহার্য পুষ্টির সমৃদ্ধ- উৎস। নীচে তালিকাভুক্ত করা পয়েন্টগুলি গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে:

1. উচ্চ প্রোটিন ধারী: প্রোটিন হল কোষের মূল গঠনকারী উপাদান এবং শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। সঠিক পরিমাণে ডিম খেলে শিশুর স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রোটিন সরবরাহ করবে।

2. মস্তিষ্কের বিকাশ: ডিমে কোলাইন থাকে যা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুকে স্পাইনা বিফিডা এবং অ্যানেনসেফালির মতো রোগে আক্রান্ত হতে বাধা দেয়।

3. ক্যালোরি গ্রহণ: প্রতিটি ডিমে প্রায় 70 ক্যালোরি থাকে এবং শিশুর এবং মায়ের ভাল বৃদ্ধি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দৈনিক ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তার একটি অংশ পূরণ করতে সহায়তা করে।

4. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে: ডিম খেলে শরীরে কোলেস্টেরল জমার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভাবস্থায় কোনো মহিলার যদি কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকে, তবে ডিমের কুসুম খাওয়া উচিত নয়।
এছাড়া, ডিম ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি 12 এবং ভিটামিন বি2-এর মতো অপরিহার্য ভিটামিনগুলি সরবরাহ করে।

গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়ার ঝুঁকি

যদিও ডিম গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস, এর সাথে ঝুঁকিও জড়িয়ে আছে বিশেষত যদি সঠিকভাবে না খাওয়া হয়ে থাকে

1. সালমোনেলা বিষক্রিয়া

কাঁচা, রান্না না করা ডিম সালমোনেলা নামে একটি রোগ-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার ঘর হতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে যার ফলে বমি, ডায়রিয়া, উচ্চ জ্বর, মাথা ব্যাথা, পেট ব্যথা এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এই লক্ষণগুলি অকাল প্রসব এমনকি গর্ভস্রাব ঘটানোর মতো যথেষ্ট গুরুতর হতে পারে। এই অবস্থাকে সালমোনেলা বিষক্রিয়া বলা হয়।

2. অন্যান্য ঝুঁকি

কোনো গর্ভবতী মহিলার আগে থেকেই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশী থাকলে, ডিমের কুসুম খেলে অসুবিধা হতে পারে। ডিম খাওয়ার কারণে ত্বকের ফুসকুড়ির মতো অ্যালার্জি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, আমবাত এবং অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।

একজন গর্ভবতী মহিলা কতগুলি ডিম খেতে পারে?

আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা অনুসারে প্রতিদিন এক থেকে দুটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতিটি ডিমে প্রায় 185 মিগ্রা কোলেস্টেরল থাকে এবং শরীরের প্রতিদিন প্রায় 300 মিগ্রা প্রয়োজন হয়। উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে প্রতিদিন ডিম খাওয়া জটিলতা বাড়াতে পারে তাই এটিএড়ানোউচিত।

দৈনিক ডিম খাওয়ার সংখ্যা আপনার বাকি ডায়েটের কোলেস্টেরলের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে ঠিক করা উচিত। নিরাপদে থাকার জন্য, এক মাসের মধ্যে ডিমের কুসুম খাওয়ার সংখ্যা কুড়ির কমে সীমিত রাখা উচিত। বেশিরভাগ চিকিৎসক সুপারিশ করেন যে গর্ভবতী মহিলাদের শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশ খাওয়া উচিৎ।

সঠিক ডিম নির্বাচন কিভাবে করবেন?

ডিম বাছাই করার সময় নিশ্চিত হওয়া দরকার যে ডিমগুলি একটি স্বাস্থ্যকর স্থানে সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ দেশগুলিতে ডিমগুলিতে একটি শংসাপত্রের চিহ্ন থাকবে যা ইঙ্গিত করে যে ডিমগুলি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত এবং কোনো ব্যাকটেরিয়ানেই।

এমনকি অন্য খাদ্যদ্রব্যগুলি ক্রয় করার সময়, ডিমযুক্ত খাবারগুলি এড়াতে ভুলবেন না কারণ এই ডিমগুলির উৎস যাচাই করা যাবে না।

ডিম সরক্ষণ করার সঠিক উপায় কি?

স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থেকে ডিমগুলি মুক্ত রাখতে, সঠিকভাবে সেগুলি সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

  • ডিম সর্বদা ফ্রিজে রাখুন কারণ এটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়
  • ডিমগুলিকে অন্যান্য খাবারের আইটেম থেকে দূরে রাখুন এবং সেগুলিকে কোনো ট্রে বা বাক্সে রাখুন, যেবাক্সেডিমগুলিএসেছিল,সেটিতেরাখবেননা।
  • সিদ্ধকরেরাখাডিম3দিনেরমধ্যেখেয়েনেওয়ারপরামর্শদেওয়াহয়।
  • ডিমের খোসা ভেঙে গিয়ে থাকলে সেই ডিম খাবেন না, কারণ এতে ধুলো এবং ব্যাকটেরিয়া থাকতেপারে।
  • নিশ্চিত করুন যে ডিমগুলি তাদের জীবনের মেয়াদ পেরিয়ে যায়নি।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডিম রান্না করা

গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য ডিম রান্না করার পদ্ধতি গর্ভবতী না থাকার সময়ের মতো একই। রান্না করার প্রক্রিয়াতে সালমোনেলা ব্যাকটিরিয়া যেন মরে যায় সেটি এখানে নিশ্চিত করতে হবে:

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ডিম রান্না করা

ডিম রান্না করার জন্য, একটি ডিম নিন এবং এটি প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিনিট ধরে সিদ্ধ করুন।
আপনি ডিম ভাজাও করতে পারেন, যেখানে দুই পিঠই ভাজতে হবে যতক্ষণ না সাদা অংশটির স্বচ্ছ ভাব চলে যায়। কুসুমটি যেন সম্পূর্ণরূপে কঠিন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া প্রায় পাঁচ মিনিট সময় নেয়।
ডিম যুক্ত খাবার খাওয়ার সময়, যেখানে ডিমটি বাড়িতে রান্না করা হয়নি, বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

ডিম কতদিন ঠিক থাকে?

ডিমপাড়ারদিনথেকেআঠাশদিনেরমধ্যেডিমটিখেয়েনেওয়াভালো।
ডিম সিদ্ধ করার পর 2-3 দিনের মধ্যে খেয়ে নেওয়া উচিত এবং ডিমযুক্ত খাবার অবিলম্বে খাওয়া উচিত।

ডিম খাওয়া মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এড়ানোর জন্য পরামর্শ

  • পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হাত ধুয়ে পরিষ্কার করে ডিম ধরুন।
  • অন্যান্য বাসন বা খাদ্য দ্রব্যের উপর কাঁচা ডিম ছিটকে ফেলবেন না।
  • গরম, সাবান জল দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে এমন পাত্র ব্যবহার করুন।
  • ডিমটি ভাঙা হোক বা না হোক, অন্য কোন খাবারের সাথে সেটি রাখবেন না।
  • রান্না সমাপ্ত হওয়ার পর উষ্ণ, সাবান জল দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাসন, চারপাশ / রান্নাঘরের মেঝে পরিষ্কার করুন।

উপসংহার

প্রোটিনের একটি সহজলভ্য উৎস, ডিম হল গর্ভাবস্থায় খাদ্যের জন্য একটি দুর্দান্ত সংযোজন। উপরের পয়েন্টগুলি মনে রেখে ডিমকে খাবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং ডিমের সর্বাধিক পুষ্টিগুণগুলি পান।