একটি নবজাতকে স্তন পান করানোর সময় বিবেচনা করার জন্য 10 টি প্রয়োজনীয় পরামর্শ

একটি নবজাতকে স্তন পান করানোর সময় বিবেচনা করার জন্য 10 টি প্রয়োজনীয় পরামর্শ

একটি নবজাতকে বুকের দুধ পান করানো মা এবং নবজাত শিশুর মধ্যে বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন অথবা সদ্য আপনি আপনার সন্তান প্রসব করে থাকেন,তবে আপনি বিস্মিত হবেন এই ভেবে যে আপনার সন্তানের চাহিদা পূরণের মত পর্যাপ্ত দুধের যোগান আপনার মধ্যে আছে কিনা।যদি আপনি স্তন পান করানোর প্রায় সকল চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েই কাজ করে থাকেন,আমাদের পরামর্শ হল,আপনি প্রশমিত হন এবং নিজেকে শান্ত করুন।যদিও কখনও কখনও স্তন পান করানোটি আপনার কাছে স্বাভাবিকভাবে নাও আসতে পারে এবং আপনার ও আপনার শিশুকে এ ব্যাপারে কিছু সামঞ্জস্য করতে হতে পারে,তবে এটিই হল একজন মা এবং তার সন্তানের মধ্যে গড়ে ওঠা সেই দৃঢ় বন্ধন যার মধ্যে মা এবং শিশু উভয়েই আবদ্ধ থাকে।বুকের দুধ পান করানো আপনার এবং আপনার সন্তনেরদুজনের কাছেই নতুন এবং আপনারা দুজনেই কিছু দিনের মধ্যেই এই নতুন অভ্যাসটির সাথে অভ্যস্থ হয়ে উঠবেন।

কীভাবে একটি নবজাত শিশুকে স্তন পান করাবেন?

এখানে নতুন মায়েদের জন্য কিছু পরামর্শ রইল যেগুলি তাদের সন্তানকে স্তন পান করানোর জন্য একটি সহজ এবং আরামদায়ক অভিজ্ঞতা তৈরী করবেঃ

1. নিরুদ্বেগ থাকুন এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করুন

প্রথম দিনেই আপনার নবজাতটিকে স্তন পান করানোর সময় আপনার এ ব্যাপারে নিরুদ্বেগ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা প্রয়োজন।স্তন পান করানো কেবল মায়ের জন্যই একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত নয়,এটি আবার শিশুর জন্যও একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং সান্ত্বনাকারী উপায় হওয়া উচিত।আপনার শিশুটিকে খাওয়াবার জন্য একটা শান্ত ঘরে আরামদায়ক অবস্থানে আপনার বসার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।ভাল সঙ্গীত এবং স্নিগ্ধ আলো আপনাকে শিথিল হতে এবং শান্ত,স্বাচ্ছন্দ্য এবং আনন্দিতবোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

2. যতবার সম্ভব ঘন ঘন স্তন পান করান

জন্মের পর প্রথম কয়েকদিন আপনার সন্তানকে যতটা সম্ভব বারে বারে খাওয়ানো খুবই প্রয়োজন।এর কারণ হল বার বার খাওয়ানোর ফলে আপনার সন্তানের চাহিদা অনুযায়ী আপনার দুধের সরবরাহটি হয়ে থাকবে।আপনি যদি আপনার সন্তানকে স্তন পান করানোর সময় সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন তবে সেটি সম্পর্কে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন।

3. কাপড়ে জড়িয়ে দোলা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন

আপনার শিশুটিকে শান্ত রেখে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য আপনি হয়ত তাকে একটি কাপড়ের দ্বারা জড়িয়ে দোলা দেওয়ার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারেন এবং এর ফলে সে হয়ত আবার এমনকি খাওয়ার জন্যও না উঠতে পারে।কিন্তু এটি আপনার স্তন দুধ উৎপাদনের জন্য মোটেই ভাল নয়।আপনার দুধের সরবরাহ বাড়াবার জন্য আপনার আরও বেশি ঘন ঘন স্তন পান করানো উচিত।

4. খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন অবস্থানগুলি বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন

আপনি যদি কোনও একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে আপনার সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করে থাকেন অথবা আপনার দাই মা যদি এ ব্যাপারে আপনাকে কোনও বিশেষ অবস্থানের কথা বলে থাকেন,সেক্ষেত্রেও আপনি বাচ্চাকে স্তন পান করানোর জন্য স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারেন এমন যেকোনও অবস্থানকেই বেছে নিতে পারেন।এক্ষেত্রে স্তন পান করানোর পর্বে আপনার এবং আপনার সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করাটাই মূখ্য ব্যাপার সেখানে আর অন্য কিছুই বিবেচনা করা উচিত নয়।আপনার অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনি বেশ কয়েকটি বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।তবে আপনার বাচ্চা যাতে ঠিকমত স্তন চোষণ করতে পারে সেই ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করবেন।

খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন অবস্থানগুলি বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন5. আপনার শিশুকে স্তন চোষণে সহায়তা করুন

বেশিরভাগ নতুন মায়েদের মধ্যে হয়ে থাকা একটি অতি সাধারণ ভুল হল তারা তাদের সন্তানকে খাওয়ানোর অবস্থানের দিকে তাদের মনোযোগ দেন না।অযথাযথভাবে স্তন চোষণ কেবল আপনার স্তন বৃন্তের জন্যই খারাপ নয় এর ফলে আবার বাচ্চার কাছে পর্যাপ্ত দুধ সরবরাহও হয় না।তাই ভালভাবে দুধ পান করানোর জন্য চেষ্টা করুন আপনার সন্তানকে আপনার স্তনের অ্যারিওলার উপর থেকে বা স্তন বৃন্তের চারপাশের কালো অঙশের মধ্যে শিশুটির মুকগ গহ্বরটি রেখে তাকে স্তন চোষণে সহায়তা করার।

6. যখনই আপনার বাচ্চা জেগে উঠবে তাকে খাওয়ান

নবজাত শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে কাটায় আর কেবল তখনই তারা জেগে ওঠে যখন তারা তাদের বিছানা ভিজিয়ে ময়লা করে ফেলে অথবা তাদের খিদে পায়।যখনই আপনার বাচ্চা ঘুম থেকে জেগে উঠবে তখনই তাকে স্তন পান করানোর ক্ষেত্রে বেশ ভাল একটা ব্যাপার হবে।এটা শুধু আপনার বাচ্চাকে কম ঘ্যান ঘ্যানে করে তুলবে না এটি আবার আপনার দুধের সরবরাহকেও ঠিকঠাক রাখবে।

7. চুষিকাঠি ব্যবহার করবেন না

কিছু নতুন মায়েরা আবার তাদের সন্তানের জন্য একটি চুষিকাঠি ব্যবহার করে থাকতে পারেন।এগুলি চোষণের সাথে জড়িত হওয়ার কারণে আপনার শিশুর জন্য চুষিকাঠি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।চোষণ হল আপনার শিশুর জন্য এক প্রকার অনুশীলন এবং চুষিকাঠি ব্যবহারের ফলে তার আসল খাবারের সময় সে চোষণের প্রতি তার কৌতুহলটিকে হারিয়ে ফেলে।তার একমাত্র চোষণ করা উচিত যখন তাকে বুকের দুধ পান করানো হয়ে থাকে সেই সময়ে।আপনার নবজাত শিশুটিকে একটি চুষিকাঠি দেওয়ার আগে তার কিছুটা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া অবধি আপনার অপেক্ষা করাটিকে নিশ্চিত করুন।

8. অযথা আতঙ্কিত হবেন না

আপনি 24 ঘন্টার চক্রে আপনার নবজাত শিশুটিকে 8-12 বার স্তন পান করাতে পারেন যা আপনাকে হয়ত ক্লান্ত এবং অবসন্ন করে তুলতে পারে।তবে এক্ষেত্রে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই,নবজাতরা সাধারণত এতবার করেই খেয়ে থাকে কারণ তাদের পেটটি খুবই ছোট হয় তাই তাদের বার বার খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়।

9. আপনার বাচ্চাকে আরামদায়ক পোশাক পরান

নবজাত শিশুদেরকে উষ্ণ রাখার কথা চিন্তা করে আমরা সাধারণত তাদের অতিরিক্ত জামা কাপড় পরিয়ে ফেলি।শিশুদের আরামদায়ক এবং উষ্ণ রাখা প্রয়োজন কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে আপনি তাকে একাধিক অস্তরণের দ্বারা মুড়ে রাখবেন।এটি মায়েদের মধ্যে থাকা একটি ভাল সহজাত প্রবৃত্তি তবে আপনার বাচ্চাকে আপনার নিজের পোশাকের ন্যায় সমতুল্য মানানসই মার্জিত পোশাক পরানোর পরামর্শই দেওয়া হয়।অতিরিক্ত পোশাক পরিধানের ফলে এবং অস্বস্তিবোধ হওয়ায় তা বাচ্চাকে ঘ্যানঘ্যানে করে তোলে এবং তারা তাতে ভাল করে খেতে এমনকি ঘুমাতেও পারে না।

10. সাহায্যের জন্য বলুন

স্তন পান করানো কিছু সময় আবার নতুন মায়েদের কাছে সমস্যার হয়ে ওঠে এবং তারা এটি সামলিয়ে উঠতে মুশকিলে পড়তে পারেন।এই সব ক্ষেত্রে আপনি কারুর সাহায্য চাইতে সঙ্কোচবোধ করবেন না তা সেটি আপনার পরিবারের কেউ,বন্ধু অথবা এমনকি আপনার ডাক্তারবাবুই হন না কেন সেই সকল মানুষদের কাছে গিয়ে তাদের কাছে আপনার সাহায্য এবং সহযোগিতা চাইতে দ্বিধা করবেন না।

শিশুকে জন্ম দেওয়ার প্রথম কয়েকদিন অথবা এমনকি এক মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে স্তন পান করানো একজন নতুন মায়ের কাছে কিছুটা শুল্ক প্রদান স্বরূপ হতে পারে।এটি সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক এবং আপনি খুব শীঘ্রই একটা রুটিনে প্রবেশ করবেন।একটি নবজাত শিশুকে স্তন পান করানোর ব্যাপারে আপনার মধ্যে যদি কোনও সংশয় থেকে থাকে,আপনি সেই ব্যাপারটির জন্য একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন।