In this Article
আপনি কি কল্পনা করতে পারেন এমন এক রাত্রি যেদিন আপনার শিশুটি ডায়পার বা বিছানা না ভিজিয়ে সারা রাত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে?পুরোপুরি নিশ্চিন্তে –ঠিক?অনেক সময় আমরা মায়েরা মনে করি যে আমদের শিশুরা খুব ভালভাবেই পটি ট্রেইন্ড হয়ে উঠেছে,তারা সারারাত ডায়পার ছাড়াই কাটিয়ে দিতে পারবে।আমরা উৎসুক হয়ে উঠি রাত্রে শোয়ার সময় তাদের ডায়পারমুক্ত দেখার জন্য ঠিক যেমন তারা দিনের বেলায় উপভোগ করে।কিন্তু ভোর রাত্রে তারা অস্বস্থি অনুভব করে যখন তারা বিছানা ভিজিয়ে ফেলে এবং আর ঘুমোতে পারেনা।ঠিক সেই সময়েই আপনার প্রয়োজন কিছু সহজ রাত্রিকালীন পটি– ট্রেনিং এর উপায় আপনার ছোট্ট শিক্ষার্থীটির জন্য।
এটা মানতেই হবে যে সব মায়েদের কাছেই ডায়পার বা ন্যাপি ভীষণভাবে প্রয়োজনীয় বিশেষত যখন তারা তাদের শিশুটিকে নিয়ে ভ্রমণ করে অথবা রাত্রে তাদের আরামদায়ক ঘুমের সময়।যাই হোক একটা সময় আসে যখন আপনার ছট্টটি ধীরে ধীরে পটি ট্রেনিং শিখতে শুরু করে এবং আপনিও অপেক্ষা করতে থাকেন আপনার শিশুটিকে ডায়পারমুক্ত দেখার জন্য।আপনার শিশুটি ক্রমে বড়ো হতে থাকে , আরো চলমান হতে শুরু করে এবং দিনের বেলায় সফলভাবে ডায়পারমুক্ত জীবন কাটাতে শুরু করে।আর আপনি ও চান তাদের ত্বক যেন সুরক্ষিত থাকে।ঠিক সেই কারণেই আপনার শিশুটিকে ভালোভাবে পটি ট্রেইন্ড করে তুলতে হবে।তাই বলে দিনের বেলার তাদের এই অভ্যেস কখনই এটা নির্দেশ করেনা যে তারা রাতের বেলায় ও সেইভাবেই কাটাতে প্রস্তুত।মায়েদের মত আমরাও এটা জানি যে সেই একই দুর্ঘটনা আবারও ঘটতেই পারে ,হতাশার সেই অভিজ্ঞতা আবারো ফিরে আসতেই পারে এবং সেই নোংরাগুলি আবার পরিস্কার করতে হতেই পারে।
কিছু সংকেত যা নির্দেশ করে আপনার শিশুটি ডায়পারমুক্ত রাত কাটানোর জন্য প্রস্তুত
যখন কিছু শিশু খুব তাড়াতাড়ি পটি ট্রেনিং শিখতে শুরু করে দেয় তখন অন্যান্য শিশুরা তাদের তিন বছর বয়স পর্যন্ত তা শিখতে চায় না।বেশীরভাগ অভিভাবক তাদের শিশুদের পটি ট্রেনিং শিখাতে শুরু করে ২.৫ বছর বয়স থেকে।যাই হোক রাত্রিকালীন পটিট্রেনিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হল তাদের ইঙ্গিতগুলি বুঝতে পারা।এখানে তিনটি উপায় বর্ণিত হল যার দ্বারা আপনার শিশুটি নির্দেশ করবে যে ডায়পার ছারাই তার ঘুমের সময় হয়েছে।
১.রাতের বেলায় ডায়পার পাল্টানোর সময় আপনার শিশুটি অনিহা দেখায়।যদি আপনার শিশু অস্বস্তিবোধ করে এবং রাত্রে ডায়পার পরতে না চায় এবং অস্বস্তিবোধ করে,তবে এটি খুব ভালো লক্ষণ যে সে হয়ত ডায়পার ছারাই ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
২.আপনার শিশুটি রাতে টয়লেট করার জন্য ঘুম থেকে উঠে পরে এবং আপনার সহযোগিতা চায় ।এটি নির্দেশ করে যে তাদের টয়লেট পেলে উঠে পরার মত ক্ষমতা তাদের হয়েছে।
৩.ভোর বেলায় আপনি শুকনো অথবা আংশিক ভিজে ডায়পার দেখেন।ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে যখন আপনি ছোট্ট সোনার ডায়পারটি লক্ষ করেন আর দেখেন যে সেটি প্রায় শুকনো অথবা খুব সামান্য ভিজে ,এর অর্থ সে আপনার পটি ট্রেনিং এর সাথে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে।নিয়মিতভাবে যদি এটি ঘটতে থাকে তবে মূলত এটিই নির্দেশ করে যে আপনার শিশুটি ডায়পার ত্যাগের জন্য প্রস্তুত।
লক্ষ্য করুন সমস্ত সংকেতগুলি যেগুলি নির্দেশ করে আপনার শিশুটি পটি ট্রেনিং এর জন্য প্রস্তুত
রাত্রিকালীন পটি ট্রেনিং এর কয়েকটি সহজ পদ্ধতি
কোনো সন্দেহ নেই যে রাত্রিকালীন পটি ট্রেনিং কঠিন বিষয়।তবে যদি নিয়ম মেনে করা যায় খুবই এটি সহজ হয়ে উঠতে পারে।শিশুর দেওয়া সংকেতগুলি পরিবারের সকলেই যদি খুব সহজে বুঝে উঠতে পারে তবে তা শিশুর ডায়পার নির্ভরশীলতা হ্রাসের সহজ চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।
১।ঘুমানোর আগে তাদের মূত্রত্যাগ করাতে হবে
পটি ট্রেনিং এর অভ্যাসের সাথে তাদের পরিচিত ক রাতে হবে।আমরা বড়রা সাধারণত ঘুমানোর আগে বাথরুম সেরে আসি যাতে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে।একই অভ্যেস ছোটোদের ও শিখাতে পারলে তারাও দীর্ঘক্ষণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে।এমনকি আপনার শিশু যদি আধ ঘন্টা আগেও টয়লেট করে তবুও রাত্রে ঘুমানোর আগে তাকে আরেকবার টয়লেট করিয়ে নেবেন।এই পদ্ধতিটি ঠিক ঘুমানোর আগে প্রয়োগ করা উচিত।
২।গদি না ভেজার উপযোগী জল–নিরোধক আচ্ছাদন ব্যবহার
রাত্রিকালীন টয়লেট ট্রেনিং চলাকালীন এধরণের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।এই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য আমাদের শুধু ধৈর্য আর ভালো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রয়োজন।সেইজন্য একটা কাজ করা যায় ,জল–নিরোধক আচ্ছাদন বা ওয়াটারপ্রুফ সিট বিছানার গদির উপর পেতে দিলে ভিজে বিছানার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এরকম ঘটনার জন্য আগে থেকেই আপনার এক সেট অতিরিক্ত শুকনো পায়জামা অথবা জামাকাপড় রাখা প্রয়োজন আপনার শিশুর ভিজে যাওয়া পোষাক পরিবর্তনের জন্য।
৩। রাত্রে খাওয়ার পরে তরল পানের পরিমাণ কমান
সবাই রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দেহের সমস্ত তরল মুত্রের মাধ্যমে বের করতে পারেনা।বিশেষঞ্জরা বলেন রাত্রের খাবার আগে পর্যন্ত তরল পানের পরিমাণ সীমিত করলে তা ভাল ফল দেয়।বিশেষত যখন আপনি পটি ট্রেনিং করাচ্ছেন।গরমকালে এর ব্যাতিক্রম হতে পারে।সামান্য জল পান রাত্রের খাবার পর শেষ তরল গ্রহণ হওয়া উচিত।খেয়াল রাখা উচিত যে আপনার শিশুটির যেন জলের অভাব না ঘটে দিনের বেলায়,তাহলে তার কোনো সমস্যা হবে না।
টীকা:ঘুমাতে যাবার আগে জল বা দুধ খাওয়া খুব ভাল।এইসময় মিষ্টি বা ঠান্ডাপানীয় খাওয়া উচিত নয়, কারণ এর ফলে রাত্রে প্রস্বাব পাবার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
৪। রাত্রে তাদের ঘুম থেকে জাগান
এটি একটি বহু পুরানো পদ্ধতি। আপনার শিশুটিকে প্রস্বাব করান আপনি ঘুমাতে যাবার আগে।এর ফলে আপানার ও তাদের ঘুমাতে যাবার মাঝের সময়ে শরীরে জমে থাকা মূত্র শিশুটির দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে।অনেক শিশুই এই ব্যাপারটি করে ঘুমের ঘোরে ফলে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেনা,অবশ্য যদি আপনার শিশুটির ঘুমের সমস্যা না থাকে।
৫।পা ঢাকা পায়জামা পড়ানোর অভ্যেস
অনেক শিশুর অভ্যাস থাকে তদের প্যান্ট বা ডায়পার নষ্ট করার।অনেক সময় তারা সেগুলো কে টেনে নিচে নামিয়ে দেয়।এর ফলে ন্যাপিটি এক জায়গায় জড় হয়ে যায়।ফলে তা সহজেই ভিজে যায়।এর সমাধান হল পা ঢাকা পায়জামা যেটি তাদের মাথা থেকে পা অবধি ঢেকে রাখে।তার ফলে তারা প্যান্টের নাগাল পায় না।
৬।বড় শিশুদের জন্য আন্ডারওয়ার ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন
বড় শিশুদের জন্য আন্ডারোয়্যার ব্যবহার করতে পারেন যখন আপনি শিশুটিকে রাত্রিকালীন পটি ট্রেনিং দেবেন।এর মূল কারন ৬।হল শিশুটি অস্বস্তি বোধ করবে বা তার ঠান্ডা লাগে যখন সে টয়লেট করে ফেলে।এইটি তাদের বাধ্য করে ঘুম থেকে উঠে যাতে তারা টয়লেটে যায়।যাই হোক আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুটির ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
৭।রাত্রে টয়লেট করানোর সহজ উপায়
অনেক সময় রাত্রিকালীন পটি ট্রেনিং–এর সমস্যার জন্য শিশুরা অস্বস্তি বোধ করে। যদি আপনার শিশুটি নিজে নিজেই রাত্রে ঘুম থেকে উঠতে পারে তবুও রাত্রের অন্ধকারে ওরা ভ্য় পায় বিছানা থেকে দূরে বাথরুমে যেতে।এটা লক্ষ্য রাখুন যাতে বাথরুমের এবং ঘরের আলো জ্বলে অথবা সুইচ সহজে নাগালে থাকে।যদি আপনি আলাদা শোন তাহলে দরজাটি সামান্য ফাঁক করে রাখুন যাতে আলো তার ঘরে পড়ে।শিশুর ঘরে পটির প্যান রাখার বিষয়টি ভাবতে পারেন পটিট্রেনিং–এর প্রথম দিকে।
৮।তাদের প্রচেষ্টাকে তারিফ করা
শেষ পর্যন্ত এটা ভুললে চলবে না যে কোনো কারণে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আপনাকে শিশুটির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাতে হবে। তাকে উৎসাহ দেবার জন্য তাকে জড়িয়ে ধরতে পারেন অথবা মিষ্টিকথা বলতে পারেন যখন সে রাত্রে বিছানা ভেজায় না। তারা এতটাই ছোট যে তারা বোঝে না কিসে তাদের মা খুশী হবে।
সকালবেলা লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তারা ভালো করে টয়লেট করে কারণ তাদের মুত্রাশয় ভর্তি থাকে। যদি আপনার শিশুটি কয়েক রাত্রি পরপর বিছানা ভেজায় তাহলেও হতাশ হবার কারণ নেই। আপনাকে অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। কোনো কোনোশিশু তারাতারি শিখে নেয়, আবার কারুর বেশী সময় লাগে। এবং এটি সম্পূর্ণ সঠিক, যেহেতু প্রত্যেক শিশুই ধারাবাহিক ভাবে শিক্ষা লাভ করে।