গর্ভবতী থাকাকালীন বেগুন সেবন করা কি নিরাপদ?

গর্ভবতী থাকাকালীন বেগুন সেবন করা কি নিরাপদ?

বেগুন অথবা এগ প্ল্যান্ট হল একটি সুস্বাদু সবজি, যেটিকে সেদ্ধ, পোড়া, ভাজা করে খায়া যায় অথবা এমনকি এটি দিয়ে চিপসও বানানো যায়।স্বাদে অতুলনীয় হওয়া ছাড়াও এর আবার একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, যেমন অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে এবং দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

এগ প্ল্যান্ট কি?

একটি এগ প্ল্যান্ট অবার্জিন বা বেগুন হিসেবেই বেশি পরিচিত।এটি এমন এক উদ্ভিদ যা তার ফলের জন্যই ব্যাপকভাবে জন্মায়।একটি বেগুনের আকার হয় ডিমের মত, দেখতে চকচকে এবং বেগুনি রঙের।বেগুন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ।এছাড়াও এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য সারা বিশ্বের লোকের কাছে এটি খুব পছন্দের একটি খাদ্যে পরিণত হয়েছে।

গর্ভাবস্থায় আপনি কি বেগুন খেতে পারেন?

গর্ভাবস্থায় অবার্জিন বা বেগুন খায়া কি উপকারী? এর উত্তর খুব সহজএর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার দরুণ বেগুন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সুপারিশ করা হয়।বেগুন ভিটামিন A এবং ভিটামিন E এর মত ভিটামিনগুলি সরবরাহ করায় এটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশে সহায়তা করে।এছাড়াও বেগুনে রয়েছে ফোলিক অ্যাসিড যা ক্রমবিকশিত ভ্রূণের লোহিত রক্ত কণিকার বিকাশকে বৃদ্ধি করে।সুতরাং গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি কি? পড়তে থাকুন

গর্ভাবস্থাকালে বেগুন সেবন করার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি

অন্তঃসত্ত্বাকালে বেগুন খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার উল্লেখ এখানে করা হলঃ

1.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বেগুনে পাওয়া যায় সমৃদ্ধ ভিটামিন C, যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য পরিচিত।আর যেহেতু এটি গর্ভবতী মহিলাদের নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে দূরে রেখে মা এবং বাচ্চা উভয়কেই সুরক্ষিত রাখে সেই কারণে বেগুন গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রেও ভাল।

2.উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি হ্রাস করে

একজন গর্ভবতী মহিলা উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভোগার ক্ষেত্রে অধিক মাত্রায় ঝুঁকিপ্রবণ হয়ে থাকেন, আর এই কারণের জন্য বেগুন হল তাদের জন্য একটি প্রস্তাবিত খাদ্য বিকল্প।বেগুন হল থিয়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভোনয়েডস এবং রাইবোফ্লাভিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বেগুন রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, একটি ভাল হৃদ স্পন্দনের হার নিশ্চিত করে এবং একজন মহিলা তার গর্ভাবস্থায় হয়ত ভুগতে পারেন এ ধরণের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির ঝুঁকি হ্রাস করে।

3.শিশুর যথাযথ বিকাশে সহায়তা করে

এগ প্ল্যান্ট বা বেগুনে পাওয়া যায় সমৃদ্ধ ভিটামিন A, ভিটামিন E, B কমপ্লেক্স এবং নিয়াসিন।এই সকল সমৃদ্ধ উৎসগুলি একত্রে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

4.কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

বেগুনগুলি খারাপ কোলেস্টেরল বা নিম্নঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন(LDL) স্তর হ্রাস করতে এবং ভাল কোলেস্টেরল বা উচ্চঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (HDL) স্তরকে বাড়িয়ে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার দ্বারা বেগুনগুলি আবার হৃদযন্ত্র-সম্পর্কিত সমস্যাগুলি হ্রাস করতে এবং গর্ভবতী মহিলার কার্ডিওভাসকুলার সুস্থতাকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।

5.হজম জনিত সমস্যা নিরাময়ে সহায়তা করে

বেগুনে পাওয়া যায় সমৃদ্ধ ডায়েটরি ফাইবার বা খাদ্যতালিকাগত তন্তু যা অন্ত্রগুলিতে খাদ্য ও বর্জ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ সহজ করতে এবং গর্ভবতী মহিলার মধ্যে হজমের সমস্যা হ্রাস করতে সহায়তা করে।বেগুন অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক ভাবে হওয়াকেও নিশ্চিত করে, এইভাবে গর্ভবতী মহিলাদের মুখোমুখি হওয়া একটি বড় সমস্যাকোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে।

6.RBC(রেড ব্লাড সেল) বা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে

RBC(রেড ব্লাড সেল) বা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে

লোহিত রক্ত কণিকা(RBC) গুলি ভ্রূণের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অপরিহার্য কারণ সেগুলি স্নায়ু্‌, মস্তিষ্কের কোষ এবং মাংস পেশীর বিকাশে সহায়তা করে এবং তাছাড়াও আবার তা মা এবং সন্তান উভয়েরই পর্যাপ্ত আয়রণ মাত্রর নিশ্চিতকরণ করে।বেগুনে রয়েছে ফোলেট যা ফোলিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়।আর ফোলিক অ্যাসিড হল লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনের মূল উৎস যা বেগুনকে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

7.তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

ম্যাগনেসিয়াম, আয়রণ, পটাশিয়াম, কপার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ম্যাঙ্গানীজের মত বিভিন্ন খনিজে বেগুন সমৃদ্ধ।এই সকল খনিজগুলি একত্রে দেহের তড়িৎ বিশ্লেষ্যের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং মা ও সন্তান উভয়ের মধ্যে রক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

8.গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিসকে নিরীক্ষণের মধ্যে রাখতে সহায়তা করে

গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিস বিকশিত হওয়ার ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি থাকে।এইক্ষেত্রে, গর্ভবতী মহিলার রক্ত শর্করার মাত্রাটি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুবই জরুরী আর বেগুন ঠিক সেই কাজটিই করে।রক্ত শর্করার যেকোনও ধরণের উত্থান পতনকে নিয়ন্ত্রণ করার দ্বারা বেগুন রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।

অন্তঃসত্ত্বাকালে বেগুন খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি

বেগুন খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক, তবে এর পাশাপাশি আবার এর কিছু বিরূপ প্রভাবও আছে।আমরা এখানে তারই কিছু তালিকাবদ্ধ করলামঃ

1.অকাল প্রসব ঘটতে পারে

ঠিক অন্য যেকোনও ফল বা সবজির মতই, বেগুনকেও রান্না করার পূর্বে ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া অপরিহার্য।বেগুন যে মাটিতে জন্মায় তা টক্সোপ্লাজমোসিসে সমৃদ্ধ যা অকাল প্রসবের কারণ হিসেবে পরিচিত।অতএব, আপনার খাওয়ার আগে বেগুনটিকে(এবং অন্য যেকোনও সবজি যেগুলি আপনি সেবন করেন) ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

2.অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে

কিছু ক্ষেত্রে অত্যধিক মাত্রায় বেগুন খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলারা অ্যালার্জিতে ভুগে থাকতে পারেন।এমনকি আপনার যদি কোনওদিনই বেগুনে অ্যালার্জি হওয়ার কোনও রূপ পূর্ব ইতিহাস নাও থেকে থাকে, তথাপি এই সময় আপনার মধ্যে হালকা চুলকানি এবং র‍্যাশ দেখা দেওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে বেগুন।আর আপনি যদি এই সবজিটির প্রতি অ্যালার্জি প্রবণ হয়ে থাকেন তবে সেটি না খাওয়ার কথাটিকেই স্মরণে রাখুন।

3.অ্যাসিডিটি বা অম্লতা দেখা দিতে পারে

বেগুন আবার গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় অ্যাসিডিটি বা অম্লতাপ্রবণ হিসাবেও পরিচিত, যা তাদের মধ্যে উদ্বেগ এবং অস্বস্তি দেখা দেওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারেআর এই উচ্চ অ্যাসিডিটির মাত্রা এড়িয়ে চলার জন্য গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রায় বেগুন সেবনের সুপারিশ করা হয় না।

আপনার খাদ্য তালিকায় বেগুন সংযোজনের উপায়গুলি

বেগুন সেবনের ভালমন্দ, সুবিধাঅসুবিধাগুলি আলোচনার পর, আসুন এবার আলোচনা করা যাক গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্য তালিকায় বেগুন সংযোজন করার বিস্তৃত উপায়গুলি সম্পর্কে। প্রত্যেকেরই যে কথাটি মনে রাখা উচিত তা হল নিম্নে আলোচিত পরিবেশনের পরামর্শগুলি যেন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে এটি নিশ্চিত করে যে এগুলি তাদের কোনওরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে আরও বেশি উপকারিতা সরবরাহ করে।

1.ভারতীয় পরিবারগুলিতে বেগুনের বা এগ প্ল্যান্টের বিবিধ রেসিপিগুলি প্রস্তুত করা হয় যেগুলি জিভে জল আনা মুখে লেগে থাকার মত এবং অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।বেগুন দিয়ে অভিনব রেসিপিগুলি প্রস্তুতের জন্য আপনাকে আপনার বাধাধরা পথের বাইরে যেতে হবে না, ভাত বা রুটি দিয়ে খাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় আপনার নিয়মিত সবজি অথবা ভর্তা রাখাটাই যথেষ্ট।

2.আপনি যদি তাতে একটু অভিনবত্ব আনতে চান বা একটু অন্য উপায়ে বেগুন সেবন করতে চান, আপনি তবে বেগুনটিকে পাতলা পাতলা করে কেটে নিয়ে তা কিছুটা জলপাই তেলের মধ্যে নেড়েচেড়ে সাঁতলে নিতে পারেন।আবার এর সাথে আপনি কিছু আরও অন্যান্য সবজিও যোগ করতে পারেন।এরপর তার উপর সামাণ্য লবণ, মরিচ এবং কিছু ভেষজ ছড়িয়ে দিয়ে উপভোগ করতে পারেন।

3.কিছুটা শৌখিন একটি ডিশের জন্য, আপনি বেগুনের পাতলা ফালিগুলির উপর কিছুটা পাউরুটির গুঁড়োর প্রলেপ দিয়ে কিছুটা জলপাই তেল গরম করে তার মধ্যে হালকা করে নেড়ে চেড়ে সাঁতলে নিন, এরপর তার উপর বাড়িতে প্রস্তুত মায়ো বা একটি ক্রীম জাতীয় সস্ ছড়িয়ে দিয়ে তার অপরূপ স্বাদ আস্বাদন করুন।

মনে রাখার বিষয়গুলি

গর্ভাবস্থাকালে বেগুন সেবনের সময় যে বিষয়গুলি মনে রাখা প্রয়োজনঃ

  • রান্না করার আগে বেগুনগুলি ভালভাবে ধুয়ে নেওয়া উচ্চ মাত্রায় সুপারিশকৃত, কারণ একটি আধোয়া বেগুন সেবন করলে তা থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীজনিত রোগ হতে পারে।
  • বেগুন থেকে অ্যালার্জি হওয়ার পূর্ব ইতিহাস রয়েছে এমন মহিলাদের গর্ভাবস্থায় সেটি খাওয়ার সুপারিশ করা হয় না।
  • যেকোনও রকম হজমের সমস্যা দূর করতে বেগুনগুলিকে ভালভাবে রান্না করা দরকার।

বেগুন বা এগপ্ল্যান্টে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, যেমন এটি সংবহন তন্ত্রের উন্নতি সাধন এবং গর্ভাবস্থাকালীন ডায়াবেটিসকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।তবে এটি আবার অকাল প্রসব এবং অ্যাসিডিটি বৃদ্ধির মত স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলির আধিক্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।আপনার কাছে মজুত থাকা বেগুন গ্রহণ করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেটিকে পরিমিত পরিমাণে সংযমের সাথে সেবন করা।বেগুনের সাথে সম্পর্কিত কোনওরকম সমস্যার পূর্ব ইতিহাস যদি আপনার থেকে থাকে তবে সেক্ষেত্রে এটি পুরোপুরি এড়িয়ে চলুন।