In this Article
একজন গর্ভবতী মহিলা হওয়ার কারণে, প্রতিটি বিষয় নিয়ে প্রচুর পরিমাণে জ্ঞান–উপদেশ পেতে আপনি বাধ্য।যদিও তথ্যগুলি অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হতে পারে, তবে একটি উপদেশ যেটি আপনার অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত তা হল– গর্ভাবস্থায় আপনি অবশ্যই সঠিক মাত্রায় জল পান করবেন।জল আপনার গর্ভাবস্থার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অধিকাংশ গর্ভবতী মহিলারা মধ্যেই গরম জল খাওয়া এবং তাদের গর্ভাবস্থার উপর সেটির প্রভাবের ব্যাপারে উদ্বেগ থাকে।
গর্ভাবস্থাকালে উষ্ণ জল পান করা কি নিরাপদ?
আপনার অন্তঃসত্ত্বাকালে আপনার গর্ভ মধ্যস্থ শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্য সঠিক পরিমাণে জল পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।পান করা জলের সঠিক পরিমাণটি নিশ্চিত করবে যে, আপনাকে হাইড্রেট রাখা ছাড়াও সেটি আপনাকে প্রবলভাবে সক্রিয় এবং ডিটক্সিফায়েড রাখবে।
গরম কিম্বা উষ্ণ জল পান করার অনেক উপকারিতা আছে এবং তা ডিহাইড্রেশন বা জলশূণ্যতা, অবসাদ, ক্লান্তি এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।তবে জলটি যাতে পুড়ে যাওয়ার মত তীব্র গরম না হয় সে ব্যাপারটিকে নিশ্চিত করুন কারণ সেটি আপনার মুখের আস্তরণটিকে পুড়িয়ে দিতে পারে, যা আপনি গর্ভবতী হয়ে থাকুন কিম্বা না হয়ে থাকুন, আপনার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে।ডিহাইড্রেশন সাধারণত গা গুলানো–বমি বমি ভাব এবং ক্র্যাম্প বা খিঁচুনি লাগার মত এক রাশি অন্যান্য সমস্যার প্রবেশদ্বার, এবং এটি আবার এমনকি প্রিটার্ম লেবারেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বাকালে উষ্ণ জল পান করার উপকারিতাগুলি
উপরের উল্লেখানুযায়ী, গর্ভাবস্থায় হাইড্রেট থাকা হল এমন এক বিষয় যেটিকে অবশ্যই আপনার অগ্রাধিকার দিতে হবে।আপনার গর্ভাবস্থায় হাইড্রেট থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সুবিধার উল্লেখ নিম্নে করা হলঃ
1.ডিটক্সিফিকেশন এবং হজমে সহায়তা করে
উষ্ণ জল পান করলে তা আপনার দেহ থেকে সকল টক্সিন বা দূষিত পদার্থগুলি পরিষ্কার করার দ্বারা আপনার হজমে সহায়তা করবে।এটি আবার পরিপাক নালীকে পরিষ্কার করে, আপনার দেহে আরও ভালভাবে পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে।তখন এই সকল পুষ্টিগুলি আরও সহজে আপনার গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।এছাড়াও উষ্ণ জল আবার ফ্যাট বা চর্বি এবং তেলের বিন্দুগুলিকেও দ্রবীভূত করে বলা হয়ে থাকে।
2.মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতা হ্রাস করে
বেশিরভাগ মায়েরাই এ কথা স্বীকার করবেন যে মর্নিং সিকনেস হল গর্ভবতী হয়ে ওঠার একটি অন্যতম কঠিণতম দিক।জলশূণ্যতার কারণে বমি বমি ভাবটি হয় আর এই সূত্রপাতগুলি হল একটি বিশ্রী চক্র যেখানে আপনার জল পান করার ইচ্ছে বোধ হলেও বমি বমি ভাবটি আপনার মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে সেক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে।এই চক্রটি ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার জন্য এবং নিজেকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে, হাইড্রেট থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণ জল পান করা জরুরি।
3.কোষ্ঠকাঠিণ্য থেকে স্বস্তি আনে
গর্ভবতী থাকাকালীন আপনার দেহে এবং খাদ্য তালিকায় বহুবিধ পরিবর্তনগুলি আসার সাথে, আপনি খুব সম্ভবত নিজেকে লড়াই করতে লক্ষ্য করতে পারেন কোষ্ঠকাঠিণ্যের সাথে, যেটি গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা খুব সাধারণ একটি সমস্যা।উষ্ণ জল কোষ্ঠকাঠিণ্যেr বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ভাল যোদ্ধা হিসাবে পরিচিত এবং এটি আপনার নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি হতে সহায়তা করবে।
4.শ্বাসনালীর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে যে বিষয়গুলির ব্যাপারে বলবেন তার মধ্যে একটি হল গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভস্থ ক্রমবিকশিত শিশুর সু–স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে অপ্রয়োজনীয় ওষুধগুলি আপনাকে অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।এর অর্থ হল আপনাকে অবশ্যই আপনার সাধারণ স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে এবং এমন পরিস্থিতিগুলি এড়িয়ে চলতে হবে যা জ্বর, সর্দি কাশির মত সাধারণ অসুস্থতাগুলির কারণ হয়ে উঠতে পারে।এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে, গলার ইনফেকশন, সর্দি, কাশি এবং জ্বরের মত কতকগুলি বিশেষ অবস্থাকে দূরে রাখতে আপনি উষ্ণ জল গ্রহণ করুন।
5.উন্নত হাইড্রেশন বজায় রাখে
উষ্ণ জল পান করলে তা আপনার দেহকে আরও ভালোভাবে হাইড্রেট রাখবে, যা আপনার শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে তার ক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করতে সহায়তা করবে।আপনার দেহে হরমোন স্তরের পরিবর্তনের সাথে আপনার সকল শারীরবৃত্তিয় ক্রিয়াকলাপগুলি অব্যাহত রাখার জন্য আপনার নিজেকে ভালভাবে হাইড্রেট রাখা প্রয়োজন।দেহে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বজায় থাকলে তা এডিমা, প্রাতঃকালীন অসুস্থতা, ক্র্যাম্প লাগা এবং মাথা ঝিমঝিম ও ঘোরার মত গর্ভাবস্থাকালীন সাধারণ সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে আপনাকে লড়াই করতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় উষ্ণ জল পান করলে তা আপনার শিশুর ক্ষতি করতে পারে কি?
যদিও উষ্ণ জল সরাসরি আপনার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করবে না, তবে ভীষণ গরম কিম্বা পুড়ে যাওয়ার মত প্রচণ্ড গরম জল হলে তা আপনার মুখ এবং গলা পুড়ে যাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে।যার ফলস্বরূপ আপনি ভীষণ যন্ত্রণায় ভুগতে ও কষ্ট পেতে পারেন এবং আপনার খাওয়ার ধরণের মধ্যেও সীমাবদ্ধতা আসতে পারে।আহার গ্রহণ কমে যাওয়ার ফলে তা আপনাকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং ক্রমবিকশত শিশুর কাছেও কম পরিমাণে পুষ্টি পৌঁছাতে পারে।পুড়ে যাওয়া ক্ষতের জায়গাটি আবার সংক্রামিতও হয়ে উঠতে পারে এবং তা নিরাময়ের জন্য ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।আর এই ওষুধগুলিই আবার পরণতিতে আপনার শিশুর ক্ষতি করতে পারে কারণ মায়ের দেহের মধ্যে হওয়া যেকোনও পরিবর্তনই ভ্রূণের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
অবলম্বিত সাবধানতাগুলি
আপনি যদি উষ্ণ জল পানের ব্যাপারে এখনও চিন্তিত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার অবলম্বন করার মত বেশ কিছু সাবধানতা আছে।এখানে তার কয়েকটির উল্লেখ করা হলঃ
- আপনি যে জলটি পান করবেন তা বেশ ভালমত অনেকটা সময় ধরে ফুটিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন যাতে তার মধ্যস্থ সকল ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুগুলি মরে গিয়ে থাকে।
- আপনি অনিশ্চিত এ ধরণের কোনও জায়গার জল পান করবেন না।আপনি যেখানেই যান না কেন বেড়োবার সময় বাড়ি থেকে একটি জলের বোতল সবসময় আপনার সঙ্গে নিয়ে বেড়োন।
- আপনার পান করা জলে কোনওরকম সীসার অস্তিত্ব যে নেই সে ব্যাপারে নিশ্চিত হন, যেটি একটি সমস্যা হয়ে উঠতে পারে যদি আপনি কোনও বহু পুরোনো বাড়িতে বসবাস করে থাকেন যেখানে এখনও সীসার পাইপ ব্যবহার করা হয়ে আসছে।
- নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি সর্বদা ফোটানো জলকে ছেঁকে নিয়েই ব্যবহার করেন, নিয়মিত আসা কলের কাঁচা জল নয়।প্রসব পূর্ব স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করার ক্ষেত্রে নিরাপদ দিকে থাকাই সবচেয়ে ভাল।
- সঠিক পরিমাণে জল পান করুন কিন্তু বারে বারে অল্প অল্প করে।একেবারে অনেকটা বেশি জল খেয়ে নিলে তা আপনার কিডনির উপর ভীষণ চাপ ফেলতে পারে।
- প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় এক কাপ করে জল পান করুন যা আপনাকে এ ব্যাপারে সচেতন রাখে।
- আপনার যদি সাদা জল খেতে ভাল না লাগে, তবে তাতে স্বাদ আনতে আপনার জলের মধ্যে দু–এক কুঁচি পাতলা করে কাটা লেবুর টুকরো কিম্বা তরমুজের কয়েকটি টুকরো যোগ করুন।
- আপনার ডায়েটের মধ্যে তরল অন্তর্ভূক্ত করুন।স্যুপ এবং তাজা ফলের রসের মধ্যে থাকা তার জলীয় উপাদানের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত উৎস হয়ে উঠতে পারে।শুধু জ্যুসটি চিনি ছাড়া বাড়িতে তৈরী করে নেওয়াকে নিশ্চিত করুন।
- ভীষণ মাত্রায় চিনি মিশ্রিত প্রক্রিয়াজাত ফ্রুট জ্যুসগুলি কিম্বা ক্যাফিনজাত পানীয়, সোডা ইত্যাদিগুলি পান করা এড়িয়ে চলুন।এই পদার্থগুলি মুত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে যা আপনার পক্ষে হিতে বিপরীত হয়ে ওঠে।
- কঠিন ও চাপদায়ক যোগ–ব্যায়ামগুলি করা এবং গরমের সময় বাইরে বেরোনো এড়িয়ে চলুন।আপনার দেহে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হবে তবে শরীরের উপর যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই চাপ দিন।
আপনি নিজেকে হাইড্রেট রাখা নিশ্চিত করুন, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যখন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা আপনার গুরুতর ডিহাইড্রেশনের বা জলশূণ্যতার কারণ হয়ে উঠতে পারে।আপনার দেহের প্রয়োজনগুলিকে সনাক্ত করতে পারাটা ভীষণই জরুরি।
গর্ভাবস্থায় গরম জল গ্রহণ সম্পর্কিত কোনও উদ্বেগ বা আশঙ্কা যদি এখনও আপনার মধ্যে থাকে, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল বিকল্প হল এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া।জলের তাপমাত্রা এবং পরিমাণের সাথে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য হওয়াকে নিশ্চিত করুন আর যদি আপনি এ ব্যাপারে কোনওরকম অস্বচ্ছন্দ বোধ করেন তবে তা পান করার ক্ষেত্রে ইতিরেখা টানুন।