In this Article
কল্পিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ভীষণ কার্যকরি একটি পন্থা হল জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি বা পিল গ্রহণ।যদি নির্ধারণ মেনে এটি সঠিক ভাবে গ্রহণ করা যায়,জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি 99% কার্যকরি হয় গর্ভধারণ প্রতিরোধে।তার অর্থ সেগুলিকে প্রতিদিন একই সময়ে গ্রহণ করতে হবে কোনও রকম বিফলতা ছাড়াই।যাই হোক,যদি আপনি একটি ডোজও বাদ দেন,গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে নাটকীয় ভাবে 1000 জনের মধ্যে 1জন থেকে 20 জনের মধ্যে 1 জন–এর মধ্যে।
আপনি কি জন্মনিয়ন্ত্রক ব্যবহারকালে গর্ভবতী হতে পারেন?
জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি গ্রহণের সময়েও গর্ভধারণ করা সম্ভব।যদি এগুলি গ্রহণ করা হয় ডাক্তারের দেওয়া সঠিক নির্দেশানুযায়ী,গর্ভনিরোধে এগুলি ভীষণ কার্যকরি হয়।আপনি কীভাবে পিলগুলি গ্রহণ করবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে পিলগুলি কি ধরণের তার উপর।
সাধারণত 2 ধরণের জন্ম–নিয়ন্ত্রক বড়ি হয়,কম্বিনেশন পিল এবং প্রোজেস্টিন অনলি পিল।সম্মিলিত জন্ম নিরোধক বড়ি বা কম্বিনেশন পিল প্রথমে 21 দিনের জন্য গ্রহণ করতে হয় এবং তারপরে 7 দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়।এই 7 দিনে আপনার মাসিক পিরিয়ড হবে।কম্বাইন্ড পিলগুলি গ্রহণ করা উচিত সঠিক নিয়ম মেনে প্রতিদিন একই সময়ে। আপনি যদি একটি নিতেও ভুলে যান,তবে এটিকে পূরণ করার জন্য আপনার কাছে 24 ঘন্টার একটি উইন্ডো রয়েছে এবং তখনও এটি গর্ভধারণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে।এর কার্যকারিতা কমে যায় যদি আপনি 2 বা তার বেশী পিল মিস করেন।
প্রোজেস্টেরন অনলি পিল গ্রহণ করতে হয় প্যাকের ওপরে লেখা নির্দেশাবলী মেনে।সেগুলি গ্রহণ করতে হয় কোনো রকম বাদ না দিয়ে 3 ঘন্টার মধ্যে প্রতিদিন একই সময়ে।যদি বাদ দেন বা মিস করেন আপনি গর্ভনিরোধ থেকে সুরক্ষা পাবেন না।
জন্ম নিয়ন্ত্রকের কার্যকারীতায় কি প্রভাব পড়ে?
নিম্নোলখিত কারণগুলি গর্ভনিরোধক বড়ির কার্যকারিতা হ্রাস করেঃ
1) প্রতিদিন একই সময়ে গ্রহণ না করা
গর্ভনিরোধক বড়িগুলিতে থাকে খুব কম ডোজের ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন হরমোন,যেগুলি যৌথ ভাবে কাজ করে গর্ভধারণ প্রতিরোধে।এই কার্যকারীতা বজায় রাখতে,পিলগুলি প্রতিদিন একই সময়ে গ্রহণ করতে হবে।একটি ডোজ–ও মিস করলে পিল গুলি অকার্যকরী হয়ে পড়ে।
2)চিকিৎসাগত ওষুধ
এমন কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে যেগুলি শরীরের উপর প্রভাব ফেলে জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি বা পিল গ্রহণের ক্ষেত্রে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক,স্নায়বিক ওষুধ,ভেষজ সম্পূরক এবং অবসাদ অবদমনের ঔষধাদি।
3) বমি করা এবং ডায়রিয়া
যদি আপনি গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার 2 ঘন্টার মধ্যে বমি করেন,তবে এটিকে মিসড পিল হিসেবেই বিবেচনা করা হয়,এবং আপনাকে তখন আরেকটি পিল গ্রহণ করতে হয়।যদি না নেন,আপনি গর্ভধারণ করতে পারেন। এটা অনুরূপ যদি আপনার ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হয় 24 ঘন্টার জন্য,পিলটি শোষিত হয় না,এবং জন্মনিয়ন্ত্রক পুনরায় অকার্যকরি হয়ে পড়ে।
4) তাপ এবং সূর্যালোকে সেগুলির প্রকাশ ঘটালে
যদি আপনি আপনার গর্ভনিরোধক পিল গুলিকে উত্তাপ বা সরাসরি সূর্যালোকে উন্মুক্ত করেন,পিল গুলি অধঃপতিত হতে শুরু করে এবং অবশেষে অকার্যকরী হয়ে পড়ে। সেগুলিকে সরাসরি সূর্যালোকের থেকে দূরে রাখুন,এবং 25° সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করুন।
5) একটি ডোজ মিস করলে
পিল গ্রহণ বাদ পড়লে তা গর্ভনিরোধের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।যদি আপনি 2 টির বেশী পিল গ্রহণ করতে ভুলে যান,আপনার জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন যেমন,স্পার্মিসাইড অথবা কন্ডোম এবং এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ জেনে নিন।
6) মাদকদ্রব্য
অ্যালকোহলের বিপাক হয় লিভারের দ্বারা।যেসকল জিনিস লিভারের উপর প্রভাব ফেলে সেগুলি দেহের দ্বারা পিলের শোষণ পদ্ধতি পরিবর্তন ঘটায়। অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান গর্ভনিরোধক বড়ির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেবে।তাই সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
জন্ম নিয়ামক ব্যার্থতা প্রতিরোধের টিপস
এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল জন্ম নিয়ামক ব্যার্থতা দূরীকরণের।
- কোনও রকম বিফলতা ছাড়াই প্রতিদিন একই সময়ে পিলগুলি সেবন করুন—এই কাজটি আপনি অন্য এমন কিছু কাজের সাথে সংযুক্ত করুন যা আপনি প্রতিদিন একই সময়ে করেন,যেমন–দাঁতমাজা,সকালের জলখাবার গ্রহণ।এই পদ্ধতি মেনে চললে আপনি ভুলে যাবেন না পিলগুলি প্রতিদিন একই সময়ে গ্রহণ করার কথা।
- ব্যবহার করুন জন্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প পদ্ধতি—যদি আপনি একটি পিল মিস করে থাকেন তবে মনে পড়ার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি গ্রহণ করুন,তবুও তার সাথে আরেকটি বিকল্প জন্মনিরধোক ব্যবহার করুন যেমন সেক্ষেত্রে স্পার্মিসাইড নিরাপদ হতে পারে।অদি আপনি 2 টি বা তার বেশী পিল গ্রহণ করতে ভুলে যান, আপনার ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলুন এবং মিস করা ডোজের বিষয়ে পরামর্শ নিন এবং একটি বিকল্প গর্ভনিরোধক ব্যবহার করুন অন্তত কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য।
- কি করবেন যদি আপনি সবে পিলগুলি গ্রহণ করা শুরু করেন—আপনি যদি সবে গর্ভনিরোধক বড়ি বা পিলগুলি গ্রহণ করা শুরু করেন,অনেক ডাক্তারই পরামর্শ দেন বিকল্প গর্ভনিরোধক ব্যবহার করার জন্য পিলগুলি শুরু করার পরে একমাসে এক সপ্তাহের জন্য।
- প্ল্যাসেবো পিলগুলি গ্রহণ— গর্ভনিরোধক পিলগুলির প্যাকে থাকে 3 সপ্তাহের জন্য কার্যকরি পিল এবং 1 সপ্তাহের প্ল্যাসেবো বা অকার্যকরি পিল।আপনি যদি এই প্ল্যাসেবো পিলগুলি গ্রহণ না করেন,আপনি ভুলে যেতে পারেন এবং পরের প্যাকটি শুরু করা দেরী করে ফেলতে পারেন।এটি পিলগুলির কার্যকারিতা হ্রাস করে।
- অন্যান্য ওষুধের সাথে মেশাবেন না—যখন পিলগুলি গ্রহণ করবেন তখন সেই কাউন্টার পিলগুলি এবং প্রেসক্রিপশনের অন্যান্য ওষুধ একসাথে মিশিয়ে ফেলবেন না।আপনার যদি অন্য কোনরকম ওষুধ চলে তবে সেক্ষেত্রে সব সময়ে ডাক্তারের কাছে জেনে নিন আপনার অন্য কোনো অতিরিক্ত বিকল্প গর্ভনিরোধের প্রয়োজন আছে কিনা।এই পিলগুলি গ্রহণের সাথে কখনই ভেষজ সম্পূরক ব্যবহার করবেন না।এই সকল বিষয়গুলোই পিলগুলিকে অকার্যকরী করে তোলে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে।
যখন জন্মনিয়ন্ত্রক ব্যবহার সত্ত্বেও আপনি গর্ভবতী হয়ে পারেন,তার লক্ষণ গুলি
কিছু সময়ে কিছু জিনিস ভুল হতে পারে এবং আপনি গর্ভবতী হয়ে পড়তে পারেন যখন গর্ভনিরোধক বড়ি খান।যদি আপনি অনুমান করেন যে আপনি গর্ভবতী,বাড়িতেই একটি প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন এবং এটি নিশ্চিত করতে রক্ত পরীক্ষা করান নিশ্চিত হওয়ার জন্য। দেখা যাক গর্ভাবস্থার সেই সকল লক্ষণ যখন গর্ভনিরোধক ব্যবহার করা হয়।
1) স্তনের নমনীয়তা
কোমল এবং স্ফীত স্তন হল গর্ভাবস্থার প্রারম্ভিক লক্ষণ যা হরমোনের পরিবর্তনের জন্য ঘটে।
2) মর্নিং সিকনেস
মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতা হল গর্ভাবস্থার একটি লক্ষণ যা বমিবমি ভাব,বমি করা এবং অবসাদে বিভক্ত।
3) নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি অনীহা
যদি আপনি কোনো আকস্মিক খাদ্যবস্তু গ্রহণের সময় সেই নির্দিষ্ট খাদ্যের প্রতি অপ্রত্যাশিতভাবে অনীহা আসে,এটি গর্ভধারণের সংকেত হতে পারে।
4) পিরিয়ড মিস করলে
দেরী করে হওয়া বা পিরিয়ড বাদ যাওয়া হল বেশীর ভাগ মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রাথমিক সংকেত।যাইহোক,কিছু মহিলার মাসিক হয় না যখন তারা গর্ভনিরোধক সেবন করেন।সুতরাং,তাদের জন্য এটি গর্ভাবস্থা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভালো লক্ষণ নয়।
কি করবেন যখন জন্মনিয়ন্ত্রক গ্রহণ সত্ত্বেও আপনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন?
জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ি বা পিলগ্রহণের পরেও গর্ভধারণ একটি ভীষণ অপ্রত্যাশিত ব্যাপার।যদি আপনি আবিষ্কার করেন যে আপনি গর্ভবতী হয়ে উঠেছেন যখন গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন করছেন তখনও,আপনার উচিত ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা এর সঠিক উপায়ের জন্য।অবিলম্বে আপনার গর্ভনিরোধক বড়ি গ্রহণ বন্ধ করা উচিত।আপনি যদি এই গর্ভাবস্থাটি বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেন,আপনাকে শুরু করতে হবে স্বাথ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ এবং গ্রহণ করতে হবে ফোলেট সম্পূরক গুলি এবং এর পাশাপাশি সঠিক পথে ভিটামিনও গ্রহণ করতে হবে।
যদি এই অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থা প্রতিহত করতে চান,তবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে,যত দ্রুত সম্ভব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর গর্ভাবস্থা প্রতিরোধের চিকিৎসায় বাধা আসতে পারে যা নির্ভর করে আপনি যে শহরে বাস করেন সেখানকার আইনের উপর।
গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার সময়েও আপনি গর্ভবতী হয়ে উঠতে পারেন।গবেষণা দেখায় গর্ভনিরোধ এবং প্রারম্ভিক গর্ভাবস্থার মধ্যে যোগ সূত্র,যেগুলি হতে পারে মূত্রনালীর অস্বাভাবিক বিস্তার,অকালপ্রসব,এবং কম ওজনের স্নতানের জন্ম।যাইহোক,এগুলিই কেবল সন্দেহকে প্রমাণ করেনা। তবুও এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ যে,আপনি গর্ভবতী এটি বুঝতে পারার পরে অবিলম্বে গর্ভনিরোধক বড়ি গ্রহণ করা বন্ধ করুন।
যদি সঠিক ভাবে গ্রহণ করা হয় তবে অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে গর্ভনিরোধক বড়িগুলি ভীষণ ভাবে কার্যকরি হয়ে ওঠে।এই পিলগুলি শারীরিক অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কাজ করে,যেমন যন্ত্রণা দায়ক মাসিকের খিঁচুনি এবং ব্রণ।যদি সঠিক ভাবে গ্রহণ না করেন,পিল গুলি হয়ে পড়বে অকার্যকরি। ভালো ভাবে জেনে নিন সকল কারণ সমূহ যেগুলি পিলগুলিকে অকার্যকরি করে তোলে যা আপনাকে সাহায্য করবে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যার্থতা এড়াতে।