ত্রুটিযুক্ত পরিবার – বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব

ত্রুটিযুক্ত পরিবার - বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব

প্রত্যেকেই একটি পরিবারে বড় হয়, যার নিজের একটি গতিশীলতা থাকে । শিশুর জীবনের গঠনমূলক বছরগুলি এবং যে পরিবেশে সে বড় হয়, তা একজন ব্যক্তি হিসাবে তার কাজের বিষয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলে ।

ত্রুটিযুক্ত পরিবার কি?

যে পরিবারে দ্বন্দ্ব, অবহেলা এবং খারাপ ব্যবহার সবসময় চলতে থাকে এবং চিরস্থায়ী হয়, তাকে ত্রুটিযুক্ত পরিবার বলা হয় । আধুনিক মনোবিজ্ঞানের মতে, যে পরিবারে নিজেদের মধ্যে উদ্বেগ থাকে, তাকে ত্রুটিযুক্ত পরিবার বলে সংজ্ঞায়িত করা হয় । পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণে মানসিক অশান্তি রয়েছে এবং কখনও কখনও শিশুদের প্রতি অবহেলা এবং দুর্ব্যবহার করা হয় । ত্রুটিযুক্ত পরিবারের শিশুরা মনে করে যে, এই পরিস্থিতিটিই স্বাভাবিক, কারণ তারা নিয়মিত সেই পরিবেশের সংস্পর্শে থাকে এবং ত্রুটিযুক্ত পরিবারের সাথে মোকাবিলা করার বিভিন্ন দিকগুলি জানে না ।

অন্যদিকে, একটি ত্রুটিমুক্ত পরিবারে সকল সদস্যদের সবচেয়ে ভালো বিকাশ অর্জন করতে উত্সাহিত করে এবং মানসিক কল্যাণের জন্য একটি নিরাপদ স্থান দেয় ।

ত্রুটিযুক্ত পারিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে, প্রায়ই কিছু উদাসীনতা, শিশু নির্যাতন এবং অবহেলা চলতে থাকে । ত্রুটিযুক্ত পরিবারের শিশুদের প্রায়ই আত্ম-বিশ্বাস বা আত্ম-সম্মান কম থাকে এবং এই ধরনের আচরণ স্বাভাবিক বলে মনে করেই তারা বড় হতে থাকে । শিশুদের বিকাশের উপর ত্রুটিযুক্ত পরবারের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ।

স্বাভাবিক ত্রুটিমুক্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকে এবং প্রত্যেকে একে অপরকে সমর্থন করে । ত্রুটিযুক্ত পরিবারে, সবসময় বাবা-মা এবং শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ ও অবিশ্বাস থাকে । এছাড়াও, পরিবারের বাবা-মা প্রায়ই বিভ্রান্তকারী এবং দায়িত্বহীন হয় । এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও, কিছু পরিমাণে অবিশ্বাস এবং বিরক্তি থাকে । পরিবারের সদস্যরা একটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারে না । বেড়ে ওঠার সময় সবসময় একটি অন্তর্নিহিত ভয় থাকে এবং মানসিক আঘাত থেকে যায় । এছাড়াও, ত্রুটিযুক্ত পরিবার ক্ষমার মূল্য দেয় না এবং আবেগকে যুক্তি দিয়ে প্রকাশ করতে দেয় না ।

পরিবারে ত্রুটি থাকার কারণগুলি

কোন পরিবারই নিখুঁত নয়, এবং আপনি কোন পরিবারে জন্মগ্রহণ করবেন বা বড় হবেন সেটি আপনি বেছে নিতে পারেন না । বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় কারণই আছে, যা ত্রুটিযুক্ত পরিবারের জন্ম দেয় । এখানে একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারের কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হল:

১) আর্থিক অবস্থা

যদি কোন পরিবার খুব খারাপ আর্থিক অবস্থায় থাকে বা আগে কখনও ছিল, তবে এটি পরিবারের সদস্যদের আরও ত্রুটিযুক্ত আচরণের দিকে পরিচালিত করে । যখন পরিবার আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়, বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং পারিবারের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়, যা অশান্তি ও অসঙ্গতির দিকে পরিচালিত করে ।

যখন পরিবার আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়, বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং পারিবারের মধ্যে ফাটল দেখা দে২) পারিবারের ত্রুটিযুক্ত ইতিহাস

অনেক প্রজন্ম ধরে পরিবারে যদি ত্রুটিযুক্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে এবং বাবা-মায়ের সাথে তাঁদের বাবা-মায়ের সম্পর্কও যদি ত্রুটিযুক্ত হয়, তবে এই চক্রটি অবিচ্ছিন্ন ভাবে চলতে থাকে । পরিবারের সমস্ত সদস্যরা একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে বড় হওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি প্রদর্শন করে ।

৩) হিংস্রতা

পূর্বের প্রজন্মের শারীরিক, মানসিক বা যৌনতা সম্পর্কিত হিংস্রতার ইতিহাস, বাবা মায়েদের নিজেদের মধ্যে এবং শিশুদের প্রতি ভয়, ধ্বংসাত্মক আচরণ এবং সহিংসতার দিকে পরিচালিত করে ।

৪) অতি ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রথা

যদি কোনো পরিবারে দৃঢ় ধর্মীয় বিশ্বাস থাকে, সেখানে কথোপকথন বা বিতর্ক অথবা ব্যাখ্যার কোনও জায়গা না থাকে, তাই বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের উপর সেই একই বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন । বাবা-মায়েরা কারণ ছাড়াই এবং শুধুমাত্র তাদের মৌলিক মতামতের ভিত্তিতে কঠোর হতে পারেন, এবং এর ফলে ত্রুটির জন্ম দিতে পারে ।

৫) কর্তৃত্ববোধ

একটি পরিবারের ত্রুটিযুক্ত হওয়ার একটি কারণ হতে পারে, বাবা-মায়ের আচরণে জবরদস্তি করা, আক্রমণাত্মক কর্তৃত্ববোধ এবং অত্যাচারী হয়ে ওঠা; এর ফলে সদস্যদের মধ্যে অত্যন্ত বেশী অধিকারবোধ গড়ে ওঠে এবং একে অপরকে অপছন্দ করতে শুরু করে ।

একটি পরিবারের ত্রুটিযুক্ত হওয়ার একটি কারণ হতে পারে, বাবা-মায়ের আচরণে কর্তৃত্ববোধ এবং অত্যাচারী হয়ে ওঠা

আপনি একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে বড় হয়েছেন কিনা তার চিহ্নগুলি

আপনি যদি একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবার থেকে এসেছেন কিনা, প্রায়শই এটি অনুমান করা কঠিন হতে পারে, তবে এখানে কিছু লক্ষণ বা চিহ্ন রয়েছে যা আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন:

১) আপনি মানুষকে খুশি করতে চান

যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে, আপনি অন্যদের সবসময় “হ্যাঁ” বলার চেষ্টা করেন এবং তাদের খুশি করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, তবে এটি আপনার ত্রুটিযুক্ত পরিবার থেকে আসার একটি চিহ্ন হতে পারে । লোকের চোখে ভালো হওয়ার জন্য যদি আপনি ভালো কিছু করেন এবং অন্যদের সুখী করতে যদি নিজস্ব চাহিদাগুলি ত্যাগ করেন, তবে এটিও একটি লক্ষণ হতে পারে । এর কারণ, শৈশবে আপনাকে বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, আপনাকে ত্যাগ করতে হবে ।

২) আপনি একজন ‘টাইপ এ’ মানুষ

যদি আপনার সব কাজে আপনি নিখুঁততা কামনা করেন, তাহলে হতে পারে যে, আপনি ব্যর্থ হওয়ার ভয় পান, যা একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে বেড়ে উঠার ফলে হতে পারে ।

৩) আপনি সবসময় অপরাধবোধে ভোগেন

একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, যদি আপনি অন্যদের অবস্থার বা আচরণের জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করেন, যার কোনোটি আপনার কারণে হয়নি, তবে এটি একটি চিহ্ন হতে পারে । লোকেরা যখন মন খারাপ করে, তখন আপনি যদি তার জন্য দায়ী নাও হন, তবুও যদি আপনি নিজেকে দোষী ভাবেন ।

৪) আপনার যোগাযোগ করার দক্ষতার অভাব থাকে

যদি আপনি আপনার বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথে কথা বলার সময় সুস্থ ভাবে আবেগ প্রকাশ করতে না পারেন এবং আপনার চুপ করে থাকার প্রবণতা থাকে এবং এটির সমাধান করতে পারেন না, তাহলে আপনার একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ।

৫) অন্যদের প্রতি দায়িত্বশীল

অন্যেরা যখন তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেয় এবং আপনি তাদের জন্য দায়বদ্ধ না হলেও আপনি যা ঘটেছে তার জন্য নিজের দায়বদ্ধতা অনুভব করেন, বিশেষত যখন পরিস্থিতি খারাপ হয় ।

৬) আপনি নিজের উপর কঠিন

আপনি যা-ই করেন বা অর্জন করেন না কেন, আপনি আপনার নিজের সবচেয়ে কঠিন সমালোচক এবং আপনি যদি সমসময় নিজের সমালোচনা করেন । আপনি মনে করেন যে, যে কোনও ভুল আপনার দোষেই হয়েছে এবং সেটির জন্য আপনি নিজের উপর কঠিন হয়ে পড়েন ।

৭) আপনার সর্বোচ্চ মাত্রায় উদ্বেগ আছে

এমনকি যখন সবকিছু ঠিকঠাক চলছে, তখনও আপনি সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকেন যে, কিছু ভুল হয়ে যাবে, যা উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ নিয়ে আসে । ফলে, আপনি কখনো নিজে আনন্দ করতে পারেন না ।

৮) আপনি বিচ্ছিন্ন এবং শূন্য অনুভব করেন

অবিরত বিচ্ছিন্নতার ফলে, শৈশবে আবেগগত সমর্থনের অভাবের ফলে, আপনি অপূর্ণ এবং খালি অনুভব করেন । আপনি ক্রমাগত স্নেহ চাইতে থাকেন, এবং একা হতে ভয় পান ।

আপনি বিচ্ছিন্ন এবং শূন্য অনুভব করেন

৯) আপনি হতাশ

আপনার জীবন যতই ভালো হোক না কেন, আপনি সবসময় ভুল কিছুর দিকেই আঙুল নির্দেশ করেন এবং আপনি সন্তুষ্ট হতে পারেন না । আপনার মনে হয় যে, আপনার প্রচেষ্টা সব সময় অপ্রশংসিত থেকে যায় ।

১০) আপনি যন্ত্রণা অনুভব করেন

কোনো শোচনীয় পরিস্থিতি ছাড়াই আপনার দৈনন্দিন জীবনে অসহায়তা এবং যন্ত্রণা অনুভব করেন । আপনি নেতিবাচক চিন্তাধারা এবং একটি হতাশাপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখেন ।

ত্রুটিযুক্ত পরিবারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য

ত্রুটিযুক্ত পরিবারগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে, যেগুলি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের একে অপরের প্রতি মনোভাব প্রদর্শন বেমানান হয় ।

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে থাকা কেমন হতে পারে তা এখানে দেওয়া হল:

১) যোগাযোগের অভাব

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারের সদস্যরা জানে না, কিভাবে একে অপরের সাথে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে হয় এবং প্রায়ই তাদের মধ্যে গুরুতর যোগাযোগের সমস্যা দেখা যায় । তারা কার্পেটের নীচে লুকিয়ে রাখার মতো নিজেদের সমস্যাগুলি লুখিয়ে রাখে এবং সেগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে না । তারা আলোচনার জন্য স্বাস্থ্যকর সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে না এবং প্রায়ই চিৎকার করে কথা বলে বা মারামারি করে । পরিবারের সদস্যরা একে অপরের কথা শোনে না এবং সাধারণত যোগাযোগের অন্য উপায় অবলম্বন করে ।

২) সহানুভূতির অভাব

ত্রুটিযুক্ত পরিবারে কোনো সহানুভূতি থাকে না, থাকলেও খুব কম থাকে । এটা এমন এক পর্যায়ে যে ,শিশুরা নিজেদের সম্পর্কে খারাপ অনুভব করে । কোনও নিঃশর্ত ভালবাসা থাকে না এবং আচরণ সংশোধনকে কেন্দ্র করে সবসময় সমস্যা তৈরি হয়, এমনকি যখন সেটির প্রয়োজন নেই এবং শিশুটি যখন কেবল একটি ছোট ভুল করেছে তখনও । ভুল করার কোনো জায়গা থাকে না, ফলে একটি আবদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যা শিশুদের মধ্যে অবিরত ব্যর্থতার ভয় তৈরি করে ।

৩) আসক্ত হওয়ার প্রবণতা

যে শিশুরা তাদের বাবা-মাকে মাদকে, ধূমপানে আসক্ত হতে দেখে, তারাও প্রায়ই বড় হয়ে জীবনের সাথে মোকাবিলা করার জন্য এই ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করে ফেলে ।

বড় হয়ে জীবনের সাথে মোকাবিলা করার জন্য এই ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করতে পারে

৪) মানসিক সমস্যা

যেসব শিশুরা তাদের চারপাশে প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক অসুস্থতা এবং ব্যক্তিত্বের সমস্যাতে ভুগতে দেখে, তারা প্রায়ই প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বা তাদের মতো আচরণ করতে শেখে না । জিনগত কারণে তাদেরও একই অসুস্থতার শিকার হওয়ার প্রবণতা থাকে ।

৫) আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ

যখন বাবা-মারা বাচ্চাদের জীবনে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ রাখেন, তখন তাদের বিকাশের ক্ষমতাকমে যায়, এবং ভালো আচরণ করতে উৎসাহিত হয় না । এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ, যখন বাচ্চাদের সক্ষমতার প্রশ্ন আসে, তখন তাদের আত্ম-সন্দেহ তৈরি হতে পারে, এবং বিশ্বাসের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে ।

৬) নিখুঁততাবাদ

ভালো ফল করার জন্য বাবা-মায়েরা প্রায়ই তাদের বাচ্চাদের উপর চাপ দেন এবং সেই চাপ যখন অত্যধিক হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে ত্রুটিযুক্ত আচরণের বিকাশ ঘটে । ব্যর্থ হওয়ার ভয় শুরু হয় এবং সন্তানরা নিখুঁততাবাদী হয়ে বড় হতে চায় ।

৭) সমালোচনা

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা ক্রমাগত তাদের সক্ষমতা সম্বন্ধে বা তার অভাব সম্বন্ধে সমালোচিত হয় এবং তাদের সব কাজের জন্য তিরস্কার করা হয় । বাবা-মায়েরা প্রায়ই শিশুদের মধ্যে ক্ষমত, অনুগ্রাহীতা এবং অসহায়ত্বের অনুভূতি এবং বিশ্বাসের অভাবকে খারাপ ভাবে প্রবেশ করিয়ে দেন, যার ফলে তাদের আত্ম-মর্যাদাবোধ কমে যায় ।

বাবা-মায়েরা প্রায়ই শিশুদের মধ্যে ক্ষমত এবং অসহায়ত্বের অনুভূতিকে খারাপ ভাবে প্রবেশ করিয়ে দেন

৮) স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অভাব

ত্রুটিযুক্ত পরিবারে বাবা-মায়েরা ক্রমাগত সন্তানের গোপনীয়তা কেড়ে নেন এবং তাদের দমন করেন, যার ফলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাদের কোনো স্বাধীনতা থাকে না । বাচ্চারা কি করছে তা তাঁরা সবসময় যাচাই করেন এবং এই সম্পর্কে আন্তরিকভাবে কথাবার্তা বলা বা কোনো নিয়ম বানানোর প্রয়োজন অনুভব করেন না ।

৯) আবেগগত সমর্থন থাকে না

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আবেগ বা সমর্থনের জন্য কোন জায়গা থাকে না । আবেগ স্পষ্টভাবে এবং ইতিবাচক ভাবে প্রকাশ করার জন্য বাচ্চাদের কোন নিরাপদ অবকাশ দেওয়া হয় না । বাচ্চারা প্রায়ই এই পরিস্থিতিতে তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বা একাকী হয়ে বেড়ে ওঠে ।

১০) সহিংসতা ও দুর্ব্যবহার

ত্রুটিযুক্ত পরিবারের বাবা-মায়েরা সন্তানের উপর শারীরিক নির্যাতন এবং আঘাত করতে পারেন । ত্রুটিযুক্ত পরিবার থেকে আসা শিশুদের মধ্যে মৌখিক, শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের লক্ষণ দেখা জেতে পারে । শিশুরা এটিকেই স্বাভাবিক হিসাবে ধরে নেয় এবং বড় হয়ে নিজেও একই রকম আচরণ করে ।

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবার বড় হওয়ার প্রভাব

একটি ত্রটিযুক্ত পরিবারে বড় হলে পরিবারের শিশুদের উপর খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে । অবিশ্বাস, উদ্বেগ, অবজ্ঞা এবং অন্যান্য নেতিবাচক আবেগগুলি একজন দৃঢ়তাহীন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে গড়ে তোলে ।

একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবার থেকে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু সাধারণ আচরণের নিদর্শন দেখা যেতে পারে । সেগুলি হলঃ

  1. তাদের নিজেদের সম্পর্কে খারাপ ভাবমূর্তি থাকে এবং আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার অভাবে ভোগেন ।
  2. তারা স্বাস্থ্যকর প্রাপ্তবয়স্কদের মতো সম্পর্ক গঠন করতে সমস্যায় পড়েন এবং লাজুক প্রকৃতির হন বা ব্যক্তিত্বের সমস্যা থাকে ।
  3. তারা ঘন ঘন এবং খুব সহজে রেগে যান এবং একা থাকতে পছন্দ করেন ।
  4. গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের কর্মক্ষমতা কম হয়, কারণ তাঁরা মনোযোগ দিতে এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকতে অসুবিধায় পড়েন ।
  5. তাঁরা আত্ম-ক্ষতিকর বা আত্ম-ধ্বংসাত্মক আচরণ প্রদর্শন করেন ।
  6. তাঁদের অ্যালকোহল, ড্রাগ বা ধূমপানে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে ।
  7. তারা বিষণ্নতা, আত্মঘাতী চিন্তাধারা, উদ্বেগ, প্যারানয়ার মতো গুরুতর মানসিক অসুখে ভুগতে পারেন ।
  8. এই ধরনের মানুষদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব থাকতে পারে, কারণ তাদের বেড়ে উঠার সময় অনুসরণ করার মতো সামনে কোনো আদর্শ মানুষ থাকেন না এবং তারা দায়িত্বহীন বা ধ্বংসাত্মক মনোভাবের হতে পারেন ।
  9. তাদের নির্দোষতার মতো শিশুসুলভ গুণাবলী না থাকতে পারে, কারণ তাদের অল্প বয়স থেকেই বড় দায়িত্ব নিতে হয় ।

ত্রুটিযুক্ত পরিবারের নেতিবাচক প্রভাবগুলি মোকাবিলা করার কৌশল

আপনি যদি বোঝেন যে, আপনি একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবার থেকে এসেছেন, তাহলে ত্রুটিযুক্ত ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত আচরণ এবং অভ্যাসগুলি স্বীকার করা এবং চিহ্নিত করাই হবে প্রথম পদক্ষেপ । প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, আপনি একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারে বড় হওয়ার প্রভাবগুলি নিয়ে বেঁচে আছেন । এগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করার উপায় আছে । কিভাবে করা যাবে ,তা এখানে দেওয়া হল:

১) দায়িত্ব নিন

প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, আপনার পরিস্থিতিগুলির সঙ্গে মোকাবিলা করার এবং একটি স্বাস্থ্যকর মানসিক পরিস্থিতি তৈরির জন্য উপায় আছে । আপনার কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করা এবং আপনি নিজের থেকে ও আপনার পরিবার আপনার থেকে যে প্রত্যাশাগুলি করে তা পূরণ করতে শেখা গুরুত্বপূর্ণ ।

২) কারো কাছে সাহায্য চান

একবার আপনার ত্রুটিগুলি শনাক্ত করা হলে, শৈশব থেকে পাওয়া সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে কোন পেশাদারের কাছে বা অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়া গুরুত্বপূর্ণ । কম আত্মবিশ্বাসের সাথে মোকাবিলা করা কঠিন হতে পারে, পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থন সবসময় সাহায্য করে ।

৩) সৃষ্টিশীল হন

কখনও কখনও, দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতি সৃজনশীলতা এবং অভিব্যক্তির পথ তৈরি করতে পারে । আপনি যদি একটি ত্রুটিযুক্ত পরিবারের নেতিবাচক প্রভাব অতিক্রম করতে চান, তাহলে নিজেকে আপনার পরিবারের এবং ঘনিষ্ঠদের কাছে স্বাস্থ্যকরভাবে প্রকাশ করুন । আপনার চিন্তা অন্যদের সাথে ভাগ করে নিন এবং আপনি কিভাবে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনা করুন ।

৪) বিশ্বাস গড়ে তুলুন

এমন জায়গায় বড় হওয়া সহজ নয়, যেখানে আপনার আশেপাশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিশ্বাস থাকে না । শিশু হিসাবে, আপনি যদি আপনার বাবা-মাকে সবসময় অবিশ্বাস করতে দেখে থাকেন, তবে তাদের এই প্রবণতা আপনার প্রাপ্তবয়স্ককালে একইভাবে আপনার মধ্যে চলে আসবে । সময় এবং ধৈর্যের সঙ্গে, আপনার কাছের মানুষদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলতে শিখুন ।

সময় এবং ধৈর্যের সঙ্গে, আপনার কাছের মানুষদের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলতে শিখুন

৫) আপনার পরিবারের সাথে সেতু গড়ে তুলুন

ত্রুটিযুক্ত পরিবারগুলি আবেগগতভাবে অস্থির হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, আপনার ভাঙা সম্পর্ক গড়ে তোলার বা পুনর্নির্মাণের উপায় রয়েছে । ছোট ছোট পদক্ষেপ দিয়ে শুরু করুন এবং যেখানেই সম্ভব আপনার পরিবারকে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন এবং সমর্থন করুন ।

যে ভাবেই আপনি বড় হন না কেন, প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, আপনার সবসময় নিজেকে প্রতিফলিত করার ও উন্নত করার এবং মানুষের সাথে অর্থপূর্ণ সম্পর্ক রাখার সুযোগ রয়েছে !