নবজাতক শিশুদের ঘুমের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্যসমূহ (0 থেকে 3 মাস)

নবজাতক শিশুদের ঘুমের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্যসমূহ (0 থেকে 3 মাস)

নবজাতকরা প্রচুর ঘুমায় বস্তুতঃ, তারা যতক্ষণ জেগে কাটায় তার থেকে অনেক বেশি ঘুমিয়ে কাটায়। জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা প্রতিদিন 18 ঘন্টা ঘুমোতে পারে যাইহোক, দিনে বা রাতে তারা একবারে 3-4 ঘন্টার বেশী সময় ঘুমোয় না। ঘুমের মধ্যে শিশুটিকে অনেকবার খাওয়ানো, আরাম দেওয়া বা জামা বদলানো, অভিভাবকদের পক্ষে ক্লান্তিকর হতে পারে।

সাধারণ নবজাতকদের ঘুমের প্রকৃতি

একটি নবজাতকের ঘুমের প্রকৃতি অনির্দিষ্ট। ঘুম থেকে বঞ্চিত পিতামাতার কাছে তাদের নবজাতকের ঘুমানোর জন্য অপেক্ষাটি অনন্তকালের জন্য মনে হতে পারে। শিশুদের ঘুমের ধরন হল এটি সারা দিন ধরে ছড়িয়ে থাকে এবং একটানা হয়না। 1 মাস বয়সী শিশুর ঘুমের ধরন 6 মাস বয়সী শিশুর চেয়ে আলাদা হয়।

প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে, নবজাতক শিশুর ঘুমের সময়ের প্যাটার্নটি 50% সক্রিয় ঘুম এবং 50% শান্ত ঘুমের মধ্যে ভাগ করা যেতে পারে। তারা সক্রিয় ঘুমের পর্যায়ের পর প্রায়ই জেগে যাবে। প্রায় তিন মাস বয়সের পরে, ঘুমের প্যাটার্নটি; হালকা ঘুমএবং;গভীর ঘুম চক্রগুলিতে বিভক্ত করা যেতে পারে। ছয় মাসের সময়, তারা রাতে ঘুম থেকে কম উঠবে। আট মাস সময়ে, তারা যদি রাতের মাঝখানে জেগে ওঠে, তবে তারা নিজে ঘুমিয়ে পড়তে সক্ষম হবে।

শিশুর কতটা ঘুমের দরকার (0- 3 মাস)

জন্মের প্রাথমিক কয়েক সপ্তাহ ধরে বাচ্চারা দিনের বেশিরভাগ সময়েই ঘুমিয়ে থাকে, তা সে দিন হোক বা রাত্রি। যাইহোক, তারা প্রায়ই হয় খাবার জন্য বা তাদের ডায়াপার পরিবর্তন করার প্রয়োজনে ঘুম থেকে ওঠে। 30 মিনিট থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ছোট্ট ছোট্ট ঘুমে তাদের সারা দিনে 16-18 ঘন্টার ঘুম প্রয়োজন। প্রতি 35-40 মিনিট পর পর তারা জেগে উঠতে পারে। একটি নবজাতকের একটানা ঘুম ক্রমশ কমতে থাকে, তারা যত বড় হতে থাকে, এবং ছোট ঘুমের সময় বাড়তে থাকে। অবশেষে, তারা রাতভোর ঘুমোতে শুরু করে এবং শুধুমাত্র একবার বা দুবার খাবার জন্য ওঠে।

নবজাতকরা দিনের এবং রাতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। দিনের বেলা তাদের জাগিয়ে রাখতে তাদের সাথে আপনার যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে  এবং রাতের সময় তাদের উদ্দীপনা হ্রাস করার মাধ্যমে তাদের শান্ত হয়ে ঘুমাতে শেখাতে হবে, এইভাবে একটি ঘুমানোর রুটিন তৈরি করতে হবে। শিশুর ঘুমের এই রুটিনটি আপনাকে শিশুর ঘুমের সময় সেট করতে সাহায্য করবে।

দিনের বেলায়

দিনের বেলায়, শিশুটি 3-4 বার 30 মিনিট থেকে তিন ঘন্টা করে সকাল থেকে বিকালের মধ্যে সময় ভাগ করে ঘুমাতে পারে। বাচ্চা যত বাড়তে থাকে তত তার দিনের বেলায় ঘুম হ্রাস পায় এবং স্বল্প ঘুমগুলির মধ্যে সময়ের ফাঁক বাড়তে থাকে।

রাতে

রাতের বেলায়, শিশুরা দুধ খাওয়ার জন্য মাঝখানে ঘুম থেকে উঠলেও  9-12 ঘণ্টা ঘুমাবে। তারা বেড়ে উঠলেও, তারা রাতে মাঝেমধ্যে আপনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে, কিন্তু তা ক্রমশ হ্রাস পাবে। একটি নবজাতকের শয়নকালের সময়সূচী তৈরি করার দরকার পড়বে আপনার। একটি নবজাতকের তুলনায় একটি 3 মাসের বাচ্চা আপনাকে রাতে কম জাগাবে।

নবজাতক শিশুর ঘুমের উন্নয়ন

নতুন দক্ষতা শেখার এবং নতুন তথ্য আহরণের উত্তেজনা একটি শিশুর ঘুমের প্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তারা অনেকসময় বিচ্ছিন্নতা উদ্বেগ অনুভব করতে পারে এবং যখন তারা আপনাকে চারপাশে খুঁজে পায় না তখন তারা বিরক্ত হয়। তারা জেগে থাকতে চাইবে এবং ঘুমাতে চাইবেনা যাতে আপনি তাদের পাশ ছেড়ে না যান।

ক্লান্ত শিশুর লক্ষণ কী কী?

বাচ্চারা কথা বলতে পারে না, কিন্তু তাদের আচার আচরণই তাদের চাহিদা এবং প্রয়োজন নির্দেশ করবে। আপনি তাদের হাই তোলা, কান্নাকাটি করা, অস্থির হয়ে ওঠা বা অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে ওঠার মতো চিহ্নগুলি লক্ষ্য করবেন। একটি ঘুম বঞ্চিত শিশু খামখেয়ালি হতে পারে এবং তার মানে হল অভিভাবকরাও ঘুম-বঞ্চিত। একটি খুব ক্লান্ত শিশুকে শান্ত করা বেশ কঠিন হবে।

একটি ভাল ঘুমোবার নিয়ম প্রতিষ্ঠা করুন

আপনার শিশুর জীবনের প্রথম পর্যায়ে তার জন্য ভাল ঘুমের নিয়মাবলী তৈরী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুতে যাবার আগে ঘুমপাড়ানি গান শোনানো, গল্প, এবং চুম্বন পিতামাতার এবং শিশুর মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে।

  • শিশুর খেলতে চাওয়া বা ঘুমাতে চাওয়ার সংকেত বুঝতে চেষ্টা করুন। যদি ঘুমানোর সময় হয়ে থাকে, তবে তাদের উত্তেজিত করবেন না বা তাদের সতর্ক এবং সক্রিয় রাখতে চেষ্টা করবেন না।
  • ঘুমানোর আগেই বাচ্চাকে খাইয়ে দিন যাতে ঘুমোবার পরে খাবার জন্য বার বার না ওঠে।
  • বিছানায় শুইয়ে দেবার আগে নিজের হাতে বা দোলনায় অল্প দোলা দিয়ে দেবেন। আপনার হাতকে কাপের মতো করে ধীরে ধীরে তাদের চাপড়ালেও তাদের শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ঘুম পাড়াবার জন্য আপনি কোনো ঘুমপাড়ানি গান গুণগুণ করতে বা গাইতে পারেন বা কিছু শিথিলকারক সঙ্গীত শোনাতে পারেন।
  • শিশু যখন ঘুমায় তখন আপনিও ঘুমান।

নবজাতক থেকে 3 মাস বয়সী শিশুর ঘুমের জন্য অন্যান্য পরামর্শ

একবার আপনি আপনার সন্তানের জন্য একটি ভাল ঘুমানোর রুটিন ঠিক করে নিলে, আরো কয়েকটি পরামর্শ আপনার শিশুকে শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রথম কয়েক সপ্তাহের জন্য, শিশুকে ঘন ঘন ছোট ঘুম নিতে দিন। যথেষ্ট ঘুম তাদের জন্য অপরিহার্য। একদম ছোটো শিশুদের জন্য ঘুমের রুটিন মানে আর কিছুই নয় শুধুমাত্র সারা দিন ঘুম!

  • তাদের রাত ও দিনের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে শেখান। শিশুটি যেন বুঝতে পারে যে রাতের অন্ধকারের সময় হল ঘুমের সময় এবং দিনের উজ্জ্বলতা খাওয়া আর খেলার সময়। আপনি সেই অনুযায়ী আপনার শিশুর ঘুমের একটা সময়সূচী তৈরি করতে পারেন।
  • তাদের স্বাধীনভাবে ঘুমোতে শিখতে সাহায্য করুন। শিশুর ঘুমের একটি ভালো সময়সূচী আপনার শিশুর পাশাপাশি আপনার ঘুমেরও একটা নির্দিষ্ট সময় স্থাপন করতে সাহায্য করবে। আপনার শিশুর বড় হওয়ার সাথে সাথে, তাদের ঘুমের সময়সূচী পরিবর্তন হবে। কোন 2 মাস বয়সী শিশুর ঘুমের সময়সূচী একজন নবজাতকের চেয়ে বেশি স্থায়ী হবে।

উপসংহার একটি নবজাতককে বড় করার সময় সমস্ত অভিভাবকরা যে সমস্যার সম্মুখীন হন তা হল ঘুম-বঞ্চিত হওয়া। এটা জানা ভাল যে শুরুতে এটি কঠিন হতে পারে তবে এটি সময়ের সাথে সহজ হয়ে যায়। বাচ্চাদের বয়স বাড়লে তাদের ঘুমের ধরণ বাবা-মায়ের মতোই হয়ে যায় এবং ঘরে সকলেই ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন ।