শিশুদের কঠিন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করানো

শিশুদের কঠিন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করানো

শিশুর খাবারের তালিকায় ধীরে ধীরে কঠিন খাবারগুলির পরিচয় করানো, তাকে দুধ বা ফর্মুলা দুধ থেকে দৈনন্দিন খাবারে রূপান্তর করতে সহায়তা করবে । যাইহোক, শিশুর জন্য পরিবর্তনটি যেন অত্যধিক না হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে খেয়াল রাখতে হবে ।

কঠিন খাবার কোনগুলি

শিশুদের জন্য কঠিন খাবার হল সেগুলি, যেগুলি দুধ থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের খাবারের প্রতি শিশুকে রূপান্তরিত করে । প্রায় ৪-৮ মাস বয়সের পর, দুধ থেকে পুষ্টি, তা সে ফর্মুলা দুধই হোক বা বুকের দুধই হোক, শিশুর পুষ্টিগত চাহিদাগুলির জন্য পর্যাপ্ত নয় এবং শিশুর খাবারে কঠিন খাবার যোগ করা দরকার ।

শিশুদের কঠিন খাবার খাওয়ানো শুরু করা

বেশিরভাগ শিশু যখন হামাগুড়ি দিতে শুরু করে, তখন তারা খাবার সম্পর্কে আগ্রহী হয়, কিন্তু সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই তাকে কঠিন খাবার খাওয়ানো শুরু করতে হবে ।

১) আমি কখন আমার শিশুর কাছে কঠিন খাবার পরিবেশন করবো?

বাচ্চাদের হজম প্রক্রিয়া ৪ মাস বয়সের কাছাকাছি কঠিন খাবারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় । তারা এই সময়ে কঠিন খাবার গ্রাস করার শারীরিক দক্ষতা অর্জন করে । আপনার শিশুর প্রস্তুতির লক্ষণ দেখা গেলেই, তাকে কঠিন খাবার খাওয়ানো শুরু করা উচিত ।

২) কীভাবে আমি আমার শিশুকে কঠিন খাবার খাওয়াতে শুরু করবো?

একটি শিশুকে কঠিন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করানোর সময়; এক একবারে একটি করে জিনিস পিউরি হিসাবে, সিদ্ধ করে অথবা চটকিয়ে পেস্ট বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে । একক শস্য সিরিয়ালের সঙ্গে শুরু করুন, এবং পরে ফল ও সবজি দিতে সশুরু করুন । শিশুর কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে কিনা তা দেখতে ২-৩ দিনের জন্য এক ধরণের খাবার দিন । খাবারে কোন লবণ বা চিনি দেবেন না, এটা মনে রাখবেন । একটি ছোট চা চামচ দিয়ে খাওয়াতে শুরু করুন, এবং দেখবেন শিশুটি চামচের অনুভূতি ও খাবারের জমির প্রতি কেমন করে প্রতিক্রিয়া জানায় । শিশু খেতে অস্বীকার করলে জোর করবেন না, এক সপ্তাহ বা তার পরে আবার চেষ্টা করুন ।

৩) একটি শিশুকে কত ঘন ঘন এবং কতটা করে খাওয়ানো উচিত?

৪-৬ মাস বয়সে দিনে একবার ১ টেবিল চামচ দিয়ে শুরু করুন । একটি ৬ মাস বয়সী শিশুর খাওয়ানো সময়সূচী হবে দিনে দুইবার ২-৪ টেবিল চামচ করে ।

আমার শিশু যে কঠিন খাবারের জন্য প্রস্তুত, তার লক্ষণগুলি

কঠিন খাবার খাওয়ানো শুরু করতে আপনার শিশুর প্রস্তুতির উপর আপনাকে নজর রাখতে হবে । নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির খোঁজার চেষ্টা করুন:

  • আপনার শিশু তার মাথাটিকে সোজা অবস্থায় রাখতে পারে এবং সেই অবস্থানে স্থির থাকতে পারে । আপনার শিশুকে অবশ্যই শিশুদের খাওয়ানোর চেয়ার বা উঁচু চেয়ারে বসতে সক্ষম হতে হবে, যাতে সে সঠিকভাবে গিলতে পারে ।
  • আপনার শিশুর ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা প্রায় তার জন্মের ওজনের দ্বিগুণ হয়েছে ।
  • আপনি যা খাচ্ছেন সে সম্পর্কে আপনার বাচ্চা কৌতূহলী এবং আপনি কী খাচ্ছেন বা নিচ্ছেন তা সে দেখে ।

শিশুকে খাওয়ানোর জন্য প্রথম খাবার

প্রতিটি শিশুই অনন্য হয়, তাই আপনার ডাক্তার কঠিন খাবারগুলি সম্পর্কে সবথেকে ভালো পরামর্শ দিতে পারেন । আসলে, আমেরিকান একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিকস (এএপি) লোহার প্রতিস্থাপন করার জন্য মাংস খাওয়ানোর প্রস্তাব দেয়, যা ৬ মাস বয়সের পর কমতে থাকে । অধিকাংশ বাবা-মা লবণ বা চিনি ছাড়া একক খাবার দিয়ে শুরু করেন । আপনি একক শস্য সিরিয়াল, মিষ্টি আলু, পিচ বা কলার পিউরি দিয়ে শুরু করতে পারেন ।

১) কি কি খাবার খেতে হবে?

শিশুদের ৪-৬ মাস বয়সেই কঠিন খাবার শুরু করা উচিত । একটি শিশুকে কঠিন খাবারের সঙ্গে পরিচয় করানোর প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এবং সাবধানে করতে হবে । যদিও নানা রকমের খাবার খাওয়া ভালো, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, শিশুটিকে কঠিন খাবার প্রথমে পিউরি আকারে দিতে শুরু করতে হয়, এরপর চটকানো অথবা ছেঁকে নিয়ে খাবার দিতে হবে, এবং এরপর ছোট ছোট টুকরো করে ফিঙ্গার ফুড দিতে হবে যাতে শিশু সেটা চিবোতে পারে । যেসব সবজির পরামর্শ দেওয়া হয় তার মধ্যে প্রথমে রয়েছে মিষ্টি আলু ।

যখন আপনার শিশু সিরিয়ালের বদলে অন্য ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করে, তখন আপনি শিশুর খাবারের সমন্বয়গুলি চেষ্টা করতে পারেন । শস্যের সাথে কিছু টেবিল চামচ ফল বা সবজি মিশিয়ে দেখুন এবং শিশুর প্রতিক্রিয়া দেখুন । খাবার খুব নরম হওয়া উচিত, যাতে শিশু সহজেই তাদের তালু ও জিভের মধ্যে সেগুলি পেষাই করতে পারে ।

২) কি কি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

মধু

মধু মিষ্টি এবং প্রাকৃতিক জিনিস, কিন্তু ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম ব্যাকটেরিয়াম-এর বীজ থাকতে পারে । এই বীজগুলি শিশুর অন্ত্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে এবং শিশুর বোটুলিজম বিকাশ পেতে পারে । একটু বড় শিশুদের পরিপক্ক পাচকতন্ত্র থাকে, যা এই ধরনের বোটুলিজম বন্ধ করতে পারে, কিন্তু ১ বছর বয়সের শিশুদের গুরুতর পরিণতি হতে পারে । অতএব, এক বছরের নীচের শিশুদের জন্য মধু সুপারিশ করা হয় না ।

দুধ

প্যাকেট থেকে সরাসরি গরুর দুধ বা সোয়া দুধে এমন প্রোটিন থাকতে পারে, যা শিশুটি হজম করতে পারে না । এমনকি কিছু খনিজ তাদের কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে । প্রথম বছরের জন্য, বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধই শুধুমাত্র খাওয়ানো উচিত । কিছু শিশুদের এই ধরনের পণ্যগুলিতে ল্যাকটোজে অসহিষ্ণু হতে পারে এবং এতে ডায়রিয়ার মতো অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে ।

পিনাট বাটার

এটা গুরুতর এলার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ হিসাবে পরিচিত । এর পুরু ঘনত্ব গলায় আটকে বিপত্তি ঘটাতে পারে ।

কিছু সবজি

পালং, বীট এবং লেটুসের মতো শাক-সবজিতে নাইট্র্রেট থাকে, যা শিশুটির পাচকতন্ত্র প্রক্রিয়া করতে পারে না, এমনকি রান্না করা এবং পিউরি তৈরি করা হলেও এড়িয়ে যাওয়া উচিত ।

কিছু মাছ

ম্যাকেরেল, হাঙ্গর, সোয়ার্ডফিশ এবং টুনাতে পারদের উচ্চ মাত্রা রয়েছে, যা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের খাওয়ার পক্ষে অত্যাধিক বেশি । যদি আপনার পরিবারের শেলফিশে অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে, তবে শিশুর সাথে তাদের এগুলি খাওয়াবেন না । ঝিনুক এবং গলদা চিংড়ির মতো কিছু শেলফিশ গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তাই শিশুটিকে বয়স তিন বছর হওয়া পর্যন্ত এগুলি খাওয়ানোর অপেক্ষা করুন ।

কিছু বেরি ও লেবুজাতীয় ফল

স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি এবং ব্ল্যাকবেরিগুলির মত বেরিগুলি এমন একটি প্রোটিন ধারণ করে, যা শিশুদের হজম করতে সমস্যা হয় । কমলালেবু বা আঙুর টকজাতীয় বা আম্লিক এবং এর কারণে পেট খারাপ হতে পারে । ছোট্ট টুকরো করে লেবু বা বেরি জাতীয় ফল কেটে, জল দিয়ে নরম করে শিশুর কাছে দিতে হবে, এটাই সবথেকে ভালো । আপনার শিশুর খাবারের তালিকায় এগুলি যুক্ত করার আগে কোন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করুন ।

লবন

শিশুদের দিনে ১ গ্রামেরও কম প্রয়োজন হয় । বেশি পরিমাণে লবণ প্রক্রিয়া করার জন্য শিশুর কিডনি এখনও যথাযথ বিকশিত হয়নি । সোডিয়াম ধারণকারী প্রক্রিয়াজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভালো ।

বীজ এবং বাদাম

বীজ এবং বাদামগুলি সাধারণত অত্যন্ত অ্যালার্জিক হয় । শিশুর শ্বাসনালী ছোট এবং তাই এর ফলে গলায় আটকে বিপত্তি হতে পারে ।

আঙুর এবং কিশমিশ

তারা মজবুত ও বড় আকারের হয় এবং গলায় লাগার কারণ হতে পারে । এর খোসা শিশুদের পক্ষে হজম করা কঠিন ।

ডিমের সাদা অংশ

বাচ্চাদের ডিম, বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশের অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে । দুর্ভাগ্যবশত এটি অত্যন্ত সাধারণ ।

চকোলেট

চকোলেটে থাকা ক্যাফিন অ্যালার্জির কারণ হতে পারে । চকোলেটের দুগ্ধজাত উপাদান হজম করা কঠিন হতে পারে । এতে গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে । চা এবং কফিতেও ক্যাফিন থাকে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলা ভালো ।

যেসব খাবার গলায় আটকে যাওয়ার ভয় থাকে

কাঁচা গাজর বা অন্য কোন কাঁচা সবজি, যা মজবুত এবং কঠোর হয়, পপকর্ন, শক্ত ক্যান্ডি এবং গাম হল এমন সব খাবার, যেগুলি গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকির সাথে জড়িত এবং এগুলি এড়ানো উচিত ।

আটা

আপনার পরিবারে যদি গ্লুটেন অসহনিয়তার ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার শিশুকে গমের কোন উল্লেখযোগ্য অংশযুক্ত খাবার দেওয়ার আগে শিশুর বয়স এক বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো ।

কার্বনযুক্ত পানীয়

কোলা এবং সোডাসগুলিতে চিনি, সোডিয়াম এবং কৃত্রিম স্বাদ-গন্ধের উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে । এই উপাদানগুলি শিশুদের জন্য ভালো নয় । এই ধরণের পানীয়গুলি কার্বনেট করতে ব্যবহৃত গ্যাসটি শিশুদের পেট খারাপ করিয়ে দেয় ।

শিশুর খাওয়ার সময়সূচী

খাওয়ার কোন নিখুঁত সময় বা সময়সূচী নেই । আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, এবং আপনার দুধ সরবরাহ কম হওয়ার সময় জানেন, তখন সেই সময়ে কঠিন খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন । কিছু শিশু সকালের খাবার হিসাবে কঠিন খাবার খাওয়া পছন্দ করতে পারে । মুখটি বড় করে খুলে বা পেট ঘুরিয়ে শিশুটি কঠিন খাবারের জন্য প্রস্তুত কিনা তা আপনাকে দেখাবে ।

আপনি প্রতিদিন এক একবার খাবার দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং এরপর সকালে একবার ও সন্ধ্যায় একবার করে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন । পুনরাবৃত্তির হার ধীরে ধীরে বাড়াতে চেষ্টা করুন এবং আপনার শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন তিনবার করে কঠিন খাবার দিন । আপনি এবং আপনার শিশুর উপযুক্ত একটি সময়সূচী খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা করে যান ।

যখন ৬-৯ মাস বয়স হলে, তখন শিশুকে সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারে নিয়মিত খাবারের সময়সূচী হিসাবে শুরু করুন । এটি তাকে খাওয়ার সময়সূচীর সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার সময় দেবে ।

এখানে এমন একটি তালিকা রয়েছে, যা আপনি আপনার শিশুর খাবারের সময়সূচী নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন:

বয়স খাবার দিনে কতবার খাওয়াতে হবে পরিমান খাওয়ানোর টিপস
০-৪ মাস বুকের দুধ চাহিদা অনুযায়ী প্রতি স্তনে ৫-১০ মিনিট
  • দিনে ৬-৮টি ভিজে ডায়পার ইঙ্গিত দেয় যে শিশুটিকে সঠিকভাবে খাওয়ানো হয়েছে
  • শিশু এবং তার বোতল উভয়কেই ধরুন
  • বোতলগুলিকে মাইক্রোওয়েভ করতে বা গরম করতে ভুলবেন না
  • অতিরিক্ত খাওয়াবেন না
ফর্মুলা দুধ- ১ মাস ৬-৮ বার ৬০-১০০ মিলিলিটার
ফর্মুলা দুধ- ২ মাস ৫-৭ বার ৯০-১৫০ মিলিলিটার
ফর্মুলা দুধ- ২-৩ মাস ৪-৬ বার ১২০-২০০ মিলিলিটার
ফর্মুলা দুধ- ৩-৪ মাস ৪-৬ বার ১৫০-২৫০ মিলিলিটার
৪-৬ মাস বুকের বা ফর্মুলা দুধ ৪-৬ বার ১৫০-২৫০ মিলিলিটার
  • বোতলকে ঠেসে দেবেন না
  • খাবার খাওয়ানোর বিরতিতে প্যাসিফায়ার ব্যবহার করুন
  • যদি শিশু ৯৫০ মিলিলিটারের বেশি খায়, তবে এটি কঠিন খাবার দেওয়ার সময়
  • চালের সিরিয়াল খাওয়ানো শুরু করুন
  • সিরিয়াল খাওয়ানোর জন্য বোতল ব্যবহার করবেন না
শিশুদের সিরিয়াল ১-২ বার ১-২ টেবিল চামচ
৬-৮ মাস বুকের দুধ ৩-৫ বার ১৫০-২৫০ মিলিলিটার
  • কঠিন খাবারের আগে বুকের বা ফর্মুলা দুধ দিন
  • খাবার মাইক্রোওভেনে গরম করবেন না
  • কঠিন খাবার ফ্রিজে রাখুন
  • এক একবারে একটি করে ফল/ সবজির সঙ্গে পরিচয় করান
ফর্মুলা দুধ ৩-৫ বার ২-৪ টেবিল চামচ
শিশুদের সিরিয়াল ১-২ বার ২-৩ টেবিল চামচ
ছেঁকে নেওয়া ফল ও সবজি ২-৪ বার
৮-১২ মাস বুকের দুধ ৩-৪ বার ১৫০-২৫০ মিলিলিটার
  • একটি কাপে খাওয়ান
  • ফিঙ্গার ফুড শুরু করুন
  • উঁচু চেয়ার কিনুন
  • নরম খাবার খাওয়ান
  • খাবারের দলা দেবেন না
ফর্মুলা দুধ ৩০৪ বার ২-৪ টেবিল চামচ
দই ৩-৪ বার ১৫০-২৫০ মিলিলিটার
করটেজ চীজ বা পনির খাবার মুখে দেওয়ার চেষ্টা করুন ১/৪ থেকে ১/২ কাপ
শিশুদের সিরিয়াল খাবার মুখে দেওয়ার চেষ্টা করুন ১-২ টেবিল চামচ
পাউরুটি বা কুড়মুড়ে বিস্কুট ১-২ বার ২-৪ টেবিল চামচ
শুকনো সিরিয়াল ১-২ বার সামান্য পরিমাণে
ফল এবং সবজি (চটকানো ও ছাঁকা) ৩-৪ বার ৩-৪ টেবিল চামচ
ফলের রস (কমলালেবু নয়) একবার ১২০ মিলিলিটার
মাংস এবং বীনস (পিউরি করা এবং ছাঁকা) ১-২ বার ৩-৪ টেবিল চামচ

যদি শিশু খেতে অস্বীকার করে

কঠিন খাবার এড়িয়ে চলা শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ । তাদের হয়তো টেক্সচার বা গঠন পছন্দ হয় না বা তারা খাবার গলায় ঢোকানোর দক্ষতা অর্জন করতে পারে না । শিশুকে জোর করে না খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ । আপনি তাকে যথেষ্ট দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করুন ।

আপনার শিশুকে খাবার স্পর্শ করতে এবং খাবারের সঙ্গে খেলতে উত্সাহিত করুন । এটি তাদের খাবারের গঠন এবং আকৃতিতে অভ্যস্ত করবে । তাদের খাবারের সঙ্গে যা খুশি করার অনুমতি দিন । তারা এটা যত বেশি করবে, তারা আরও বেশি খাবারে তৃপ্তি পাবে এবং এটি খাওয়ার কাছাকাছি যাবে । একটি চামচের অনুভূতি রপ্ত করতে তাদের সময় দিন । শিশুরা সবজায়গায়খাবার ছড়াবে, এর মানে এই নয় যে, তারা খাবারকে অপছন্দ করে, এর মানে কেবল তারা অগোছালো ।

যখন শিশু অন্তত তাদের হাতের উপর খাবারকে সহ্য করতে পারে, তখন তাদের দেখান কিভাবে এটি তাদের মুখের মধ্যে গ্রহণ করতে হবে এবং এটির স্বাদ নিতে হবে । অনেকবার পুনরাবৃত্তি করুন । একবার তারা হাত থেকে খাওয়া শিখবে, তাদের একটি চামচ দিন । খাওয়া, চিবানো, এবং গ্রাস করার সময় তাদের সময় দিন, যে দক্ষতাগুলি তাদের শিখতে হবে । এটা স্বাভাবিকভাবে শিশুদের মধ্যে তৈরি হয় না ।

মুখের মধ্যে খাবার রাখতে যে শারীরিক সমন্বয় দরকার, তা শিশুদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ । প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া তার জিভ দিয়ে খাবার ধাক্কা দেয় । সুতরাং আপনার শিশুর সামঞ্জস্য আসার জন্য সময় দিন ।

শিশুদের জন্য কঠিন খাবারের তালিকা

শিশুরা যখন শিশুখাদ্য খাওয়া শুরু করে, তখন একটি প্রশ্ন নিয়ে মায়েরা প্রায়ই বিভ্রান্ত হযন । নিম্নোক্ত তালিকা বয়স অনুসারে শিশুর খাবার সম্পর্কে কিছু সন্দেহ দূর করবে ।

সময় কঠিন খাবারের পরিমাণ
০ থেকে ৪ মাস
  • কোন কঠিন খাবার নয়
৪ থেকে ৬ মাস
  • ১ থেকে ৪ টেবিল চামচ সিরিয়াল বা চটকানো ফল এবং সবজি
৬ থেকে ৭ মাস
  • ৪ থেকে ৯ টেবিল চামচ ফল, সিরিয়াল এবং সবজি, ২ থেকে ৩ বার খাবার হিসাবে দিতে হবে
  • দিনে ১ থেকে ৬ টেবিল চামচ প্রোটিন, সম্ভব হলে মাংস, করটেজ চীজ বা পনির, দই অথবা ডিমের ভুজিয়া হিসাবে
৭ থেকে ৯ মাস
  • বেশিরাভাগ শিশুরই দাঁত বেরিয়ে যায় এবং তারা খাবারের চটকানো মিশ্রণ খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় । এক একবারে একটি করে নতুন খাবার যোগ করে মিশ্রণ তৈরি করুন ।
  • বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধও খাওয়াতে হবে
৯ থেকে ১২ মাস
  • ৯ মাস বয়সে, আপনি ডিমের কুসুম, মাছ এবং নরম পরোটার মতো জটিল খাবার খাওয়ানো নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন ।
  • দশ মাসে, আপনি অল্প স্ন্যাক এবং আমিষজাতীয় খাবারের সঙ্গে পরীক্ষা করতে পারেন । আপনি শস্যও ব্যবহার করে দেখতে পারেন, কিন্তু সেগুলিতে অ্যালার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন । আপনি পাস্তা ও নুডলস নিয়েও পরীক্ষা করতে পারেন ।
  • ১২ মাস বয়স হলে, শিশুটি পরিবারের অন্যদের মতো একই কিছু খাবার খেতে পারে । কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে যে, খাবারটি যেন খুব ছোট্ট ছোট্ট টুকরোতে কাটা থাকে ।

খাবার অবশ্যই চটকানো বা একদম ছোট্ট টুকরোতে কাটা থাকতে হবে ।

শিশু যেন প্রয়োজন মতো বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ পায়, তা নিশ্চিত করুন । আপনি কঠিন খাবারে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি সহ প্রতিদিন দুধের দুধ খাওয়ার হার তিন থেকে চারবার করে কমিয়ে আনতে পারেন ।

শিশুদের বিভিন্ন রকম খাবারের অ্যালার্জি

একটি নতুন খাবার থেকে একটি অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ প্রায় অবিলম্বে বা কয়েক ঘন্টার মধ্যে দেখা দেয় । সাধারণত প্রতিক্রিয়া হালকা হয় । গুরুতর হলে, হাইভ, ডায়রিয়া বা বমি হলে আপনার ডাক্তারের সাথে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন ।

চরম প্রতিক্রিয়া হলে আওয়াজসহ শ্বাস, শ্বাস নিতে সমস্যা বা মুখ ফুলে যেতে পারে । এর জন্য অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ।

যদি আমার শিশুর বিষম লাগে বা গলায় আটকে যায়

যদি আপনার শিশু শ্বাস নিতে অক্ষম হয়, তবে এটি শ্বাসনালীর বাধার কারণে হতে পারে । পরিস্থিতি দ্রুত মূল্যায়ন করে এবং এটি সরাতে তাকে সাহায্য করতে হবে । পিঠে চাপড় মারুন এবং বুকে হালকা ঠেলা মারুন এবং বাধা সরিয়ে দিন । আপনার হাতের তালুর গোড়া দিয়ে শিশুর কাঁধে কিছু আঘাত করুন । ঘা মারলে সম্ভবত বাধা ভালোভাবে সরে যাবে ।

যদি কোন বাধা দেখতে পান, তবে আপনি এটি অপসারণ করার চেষ্টা করতে পারেন । যাইহোক, না দেখে আপনার আঙুল দিয়ে শিশুটির মুখ থেকে বাধা বের করার চেষ্টা করবেন না, কারণ এটি তার গলায় বাধাকে আরও ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পারে ।

আস্তে আস্তে শিশুর কাঁধের উপর আলতো চাপ দিন । শিশু যদি সাড়া না দেয় বা যদি শ্বাস না নিতে দেখেন, তবে সিপিআর শুরু করুন । শিশুকে চিত করে শুইয়ে, ১০০-১২০ প্রতি মিনিট হারে আস্তে আস্তে বুক চাপ দিন ।

আপনার শিশুর প্রতিটি নতুন খাবারের স্বাদ, টেক্সচার, এবং সংবেদনতে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে । সুতরাং আপনাকে এই সব মনে রাখে রূপান্তর শুরু করতে হবে ।