কিউয়ি হল একটি মাংসল সবুজ ফল যা আবার চাইনিজ গুজবেরী নামেও পরিচিত। এটি বিস্তর স্বাস্থ্যকর উপকারিতায় পরিপূর্ণ এবং স্বাদেও খুব ভাল।এই মিষ্টি এবং সুস্বাদু মজাদার ফলটি আপনার সন্তানকে সরবরাহ করে অসংখ্য উপকারিতা এবং পুষ্টি উপাদান যেমন বিভিন্ন ভিটামিন,পটাসিয়াম এবং খাদ্যগত তন্তু।এটি আবার রোগ প্রতিরোধকারী অ্যন্টিঅক্সিডেন্টেও সমৃদ্ধ।কিউয়ি হল উচ্চ পুষ্টি উপাদানে এবং নিম্ন ক্যালোরি সমন্বিত একটি ফল বিশেষ।
কিউয়ি খাদ্যগত তন্তুতে ভরপুর কিন্তু এতে ভিটামিন C থাকার জন্য এটি সামান্য অ্যাসিডযুক্ত হতে পারে যা শিশুর পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে অথবা অন্ত্রের আলোড়নকে বাড়াতে পারে।এমনকি তারা প্রাথমিকভাবে এটিকে থুতু ছিঁটিয়ে বের করে দিতে পারে যতক্ষণ না তারা এর টক মিষ্টি স্বাদে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে।
কিউয়ি কোনও উচ্চ এলার্জিকারক ফল নয়,সুতরাং আপনার সন্তানকে কিউয়ি দেওয়ার বিষয়টি সাধারণত কোনও উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত নয়।এটির প্রাকৃতিক মিষ্টতার(যদি সম্পূর্ণ রূপে পাকা হয়)জন্য শিশুরা এর স্বাদ অণ্বেষণের প্রত্যাশায় থাকবে।
একটি শিশুর জীবনে তার 8-10 মাস বয়সের মধ্যে তার সাথে কিউয়ি ফলটির পরিচয় করানো উচিত।যদি বাচ্চাটির মধ্যে পেটে ব্যথা অথবা ডায়পার র্যাশের মত সংবেদনশীলতা দেখা দেয় তবে সেক্ষেত্রে আরও কয়েক মাস পরে পুনরায় চেষ্টা করুন।
আপনার সন্তানের সাথে নতুন খাবারের পরিচয় করানোর পদ্ধতির পার্থক্য হবে সে সেই খাবারের প্রতি কিরকম প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে তার উপর নির্ভর করে।পূর্বে খাবারের সাথে অন্য কোনও নতুন খাবারের পরিচয় করানো না হলে কিউয়ির পরিচয় করান।শুরু করুন খুব অল্প পরিমাণ দিয়ে এবং লক্ষ্য করুন সে কিরূপ প্রতিক্রিয়া করে।একবার তারা এটিকে পছন্দ করার সংকেতগুলি প্রকাশ করলে,তাদের নিয়মিত খাদ্য পরিকল্পনার সাথে এটিকে যোগ করুন।
এই দুর্দান্ত ফলটি বিভিন্ন ভিটামিন যেমন– K,C এবং E,পটাসিয়াম,ফোলেট,খাদ্যগত তন্তু,কপার,কোলিন,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
100 গ্রাম কিউয়ি ফলে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান
কার্বোহাইড্রেট | 14.7g |
প্রোটিন | 1.1g |
ফ্যাট | 0.5g |
ফাইবার বা তন্তু | 3g |
জল | 83.1g |
ভিটামিন A | 0.26mg |
ভিটামিন C | 92.7mg |
ভিটামিন E | 1.5mg |
ভিটামিন K | 40.3ug |
নিয়াসিন | 0.3mg |
ভিটামিন B-6 | 0.1mg |
ফোলেট | 25ug |
ক্যালসিয়াম | 34mg |
আয়রণ | 0.3mg |
ম্যাগনেসিয়াম | 17mg |
ফসফরাস | 34mg |
পটাসিয়াম | 312mg |
সোডিয়াম | 3mg |
কিউয়ি ছোট্ট শিশু,বাচ্চা এবং বড়দের জন্য অসংখ্য উপকারিতা প্রদান করে।শিশুদের সাথে এগুলির পরিচয় করালে সেগুলি তাদের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনা গঠণে সাহায্য করে।
কিউয়ি এলার্জি ঘটায় না।যাইহোক,এটি আম্লিক প্রকৃতির।ফলটির এই অম্লতা হয়ত মুখে অথবা ডায়পার র্যাশকে সংঘটিত করতে পারে।যখন আপনি প্রথম আপনার সন্তানের সাথে ফলটির পরিচয় করান তখন যদি তার মধ্যে পেটের সমস্যা,র্যাশ অথবা থুতু ছেঁটানোর মত সঙ্গবেদনশীলতাগুলি দেখা যায়,তবে কয়েক মাস পর পুনরায় তাকে এটি দেওয়ার চেষ্টা করুন।যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা বিপরীতমুখী প্রবাহ থাকে,তবে এটিকে তার খাবারের সাথে সংযুক্ত করার আগে এক বছর অপেক্ষা করুন।
কিউয়িতে এলার্জি খুবই বিরল।যাইহোক,শিশুদের মধ্যে হে জ্বর(এলার্জিক রাইনিটিস) থাকলে এটি থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন যেহেতু এটি শিশুর মুখের চারপাশে ত্বকের জ্বালা,চুলকানির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।এটি খুব সাধারণ কিন্তু ক্ষতিকারক নয়।
কিউয়িতে এলার্জির ইঙ্গিতগুলির মধ্যে অন্তর্গত হল মুখে ঘা,গলা চুলকানো অথবা জিভ,মুখ,ঠোঁট এবং মুখমন্ডলের ফোলাভাব।এটিতে বমি হতে পারে,গুরুতর এলার্জির মধ্যে প্রশ্বাসে শাঁ শাঁ শব্দ হওয়া অথবা শ্বাস কষ্ট অন্তর্ভূক্ত যা অবিলম্বে ডাক্তারি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।কোন খাবারের জন্য এলার্জি প্রতিক্রিয়া ঘটে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,সুতরাং এক সময়ে একটি নতুন খাবারের সাথেই পরিচয় করান এবং তার সাথে অন্য কোনও নতুন খাবার আর তখন যোগ করবেন না।তাদের সেটি প্রথমে খুব অল্প পরিমাণে দিয়ে খাওয়ানো শুরু করুন,যদি বাচ্চার মধ্যে সেটিতে কোনওরকম এলার্জি না দেখা যায়,তবে তাকে সেটি আরও বেশি পরিমাণে দেওয়ার জন্য এগিয়ে চলুন।
কিউয়ি ফলের এলার্জির প্রতিক্রিয়া বার্চ পোলেন এলার্জি,সীডার এলার্জি অথবা ল্যাটেক্স এলার্জির সাথে যুক্ত থাকার প্রবণতা থাকতে পারে;অতএব,আপনার সন্তানের যদি পেঁপে,আনারস,তিল বীজ,রাঁধুনি,মধু,পীচ,আপেল,কলা,অ্যাভোকাডো,চেরী,তাল অথবা ন্যাশপাতিতে এলার্জি হয় তবে তার কিউয়ি ফলটিতেও ভাল ভাবেই এলার্জি হতে পারে।
কিউয়িকে নানান মজাদার উপায়ে খাওয়ানো যেতে পারে।আপনি এটি দিয়ে তৈরী করতে পারেন ফ্রুট ককটেল,স্মুদি,স্যালাড,ডিপ,মিষ্টান্ন,পপসিক্যাল,স্ট্যু অথবা সাধারণ ঘনকাকারে কেটে এটিকে পরিবেশন করতে পারেন।
উপকরণ
1 টি পাকা কিউয়ি,1/2 আম,আনারসের কয়েকটি টুকরো,2-3 টি স্ট্রবেরী
পদ্ধতি
ফলগুলিকে ভাল করে ধুয়ে,খোসা ছাড়িয়ে কুঁচি কুঁচি করে কেটে নিয়ে একটা ফুড প্রসেসরে করে ব্লেন্ড করে নিন।
উপকরণ
পালং শাকের ছোট একটা আঁটি,1 টা পাকা কিউয়ি,1/2 আপেল অথবা ন্যাশপাতি
পদ্ধতি
পালং শাক ভাল করে বেছে নিয়ে ধুয়ে নিন,ফলগুলির খোসা ছাড়িয়ে কুঁচিয়ে নিন এবং একটা ফুড প্রসেসরের মধ্যে সবগুলিকে এক সাথে ব্লেন্ড করে নিন।
উপকরণ
1 টি ছোট কিউয়ি,1/2 পাকা পীচ,2 বড় চামচ কটেজ চীজ
পদ্ধতি
উপকরণ
1 টা বড় পাকা কলা,1 টা পাকা কিউয়ি,1 কাপ দই
পদ্ধতি
সাধারণভাব কিউয়ির খোসা ছাড়িয়ে নিন এবং একটা এগ স্লাইসার দিয়ে সেটিকে টুকরো করুন।এবার এটিকে হিমায়িত করে নিয়ে এর উপরে ফোঁটা ফোঁটা করে মধু ছড়িয়ে দিয়ে একটা ডেজার্ট(মিষ্টান্ন)রূপে অথবা এগুলিকে পপসিক্যালে রূপান্তরিত করে নিয়ে পরিবেশন করুন।গ্রীষ্মের উত্তাপের সাথে মোকাবিলা করতে এবং ছোট শিশুদের দাঁত ওঠার সময় মাড়ির যন্ত্রণার উপশমের জন্য এগুলি দূর্দান্ত একটি উপায়।
উপকরণ
1 টি বড় পাকা কলা,1 টি পাকা কিউয়ি,1 কাপ দই
পদ্ধতি
উপকরণ
পাতলা করে কাটা 1 টি কিউয়ি,ঘনকাকারে কাটা 1 টা আপেল,এক মুঠো শুকনো ক্যানবেরী,আখরোট,ফেটা চীজ
পদ্ধতি
সমস্ত উপকরণগুলিকে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিয়ে হালকা ভিনাইগ্রেট(ভিনিগার যুক্ত) ড্রেসিং এর সাথে পালং পাতার উপরে ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকরণ
4 টি পাকা কিউয়ি,1/2 কাপ আপেল অথবা আঙুরের জুস
পদ্ধতি
আপনি কিউয়ির সাথে কলা,অ্যাভোকাডো,পাকা আম,অ্যাপেল সস অথবা ন্যাশপাতি যোগ করে এর অম্লীয় প্রকৃতি কিছুটা হ্রাস করতে পারেন এবং মজাদার শিশু খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন।এটি শিশুদের মধ্যে স্বাদের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।
বাচ্চাদের কিউয়ি খাওয়ানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসিত কিছু সাধারণ প্রশ্নাবলী এখানে দেওয়া হলঃ
জৈব কিউয়ি চয়ন করা সবসময়ের জন্যই ভাল।যাইহোক,কিউয়ি কীটনাশকের কারণে দূষিত হয় না।মিষ্টি এবং পাকা কিউয়ি ফলের জন্য আপনার বুড়ো আঙ্গুল এবং তর্জনীর মাঝে সেটিকে ধরে সামান্য চাপ দিয়ে পরীক্ষা করে নিন।দৃঢ় ফলকেই বাছাই করুন এবং নরম না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।ত্বকে ক্ষতচিহ্নযুক্ত বা দৃশ্যমান খাঁজ বা কাটা দাগ বিশিষ্ট কোনও একটি ফলও পছন্দ করবেন না।কোনও রকম কুঁকড়ে যাওয়া,থেঁতলে যাওয়া,নরম অথবা পচনের দাগ বিশিষ্ট ফল নির্বাচন করা থেকে এড়িয়ে চলুন।অপরিপক্ক কিউয়িকে দু–দিনের মধ্যে পাকাতে সেগুলিকে একটি কাগজের ব্যাগে কলা,আপেল অথবা ন্যাশপাতির সাথে রাখা যেতে পারে।ফ্রিজের মধ্যে করে কিউয়িকে মজুত রাখা যেতে পারে চার সপ্তাহের জন্য আর ঘরের তাপমাত্রায় সেগুলিকে রাখা যেতে পারে এক সপ্তাহের জন্য।
হ্যাঁ।বেশীরভাগ ফল এবং সবজির মতই কিউয়ির ত্বকেও পুষ্টিতে ভরা থাকে,তবে বেশীরভাগ ভিটামিন এবং খনিজগুলিই কেবল এর ত্বকের মধ্যে অথবা ত্বকের নীচে থাকে।যাইহোক,শিশুদেরকে খোসা সমেত কিউয়ি দেবেন না,এটির খোসা চিবানোর ক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হতে পারে অথবা তাদের এটির জন্য বিষম লাগতে পারে।শিশু খোসা চিবিয়ে খাওয়ার মত একবার যথেষ্ট বড় হয়ে গেলে,একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ত্বকের উপরের লোমশ অংশগুলিকে ঘষে তুলে নিয়ে পছন্দসই পরিবেশন করুন।
আপনি একটি ধারালো ছুরির সাহায্যে কিউয়ির প্রতিটা প্রান্তকে কেটে নিয়ে খোসা ছাড়াতে পারেন এবং দৈর্ঘ্য বরাবর সম্পূর্ণ খোসাটিকে ছাড়িয়ে নিন।বিকল্প ভাবে,ফলটির উভয় প্রান্তকে কেটে বাদ দিয়ে দিন এবং তারপর একটা পাতলা চা–চামচ নিয়ে ফলের খোসা এবং শাঁসালো মাংসল অংশের মাঝে ঢুকিয়ে নিয়ে ফলটির বাইরের দিকের অংশের চারিপাশে চামচটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মোচড় দিয়ে কার্যকর ভাবে খোসাটাকে আলগা করে নিয়ে ছাড়িয়ে নিন।অথবা আপনি খুব সাধারণ ভাবে কিউয়িটিকে অর্ধেক করে কেটে নিয়ে একটা চামচের সাহায্যে ফলের ভিতরের অংশটিকে আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান।
আপনি কিউয়ি থেকে এর বীজকে সরাতে পারেন না।সেগুলি অত্যন্ত পাতলা হয় এবং শিশুদের বিষম খাওয়ার মত বিপত্তি ঘটায় না।বাচ্চার ডায়পারে এই বীজগুলিকে দেখতে পেয়ে একদম বাতিকগ্রস্থ হয়ে উঠবেন না কারণ তারা এগুলিকে হজম করতে পারে না।
যখন আপনার সন্তানকে কঠিন খাবার খেতে দেওয়ার সময় শুরু হবে এবং সবজি ও ফলের বিশাল সম্ভার থেকে কোনটি দিয়ে সেটা শুরু করা যেতে পারে এই ভেবে যদি আপনি দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে ওঠেন,আপনার বাচ্চাকে কিউয়ি পরিবেশন করা সবচেয়ে ভাল বিকল্প হয়ে উঠতে পারে যেহেতু এটি পুষ্টিকর উপকারিতায় ভরপুর এবং তার সাথে এর স্বাদও খুব ভাল হয়।m