In this Article
জাগগেরি,হিন্দিতে এটিকে গুড় বলা হয়,এটি হল অপরিশোধিত শর্করা যা আখের রস থেকে অথবা খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি হয়।এটি তৈরি করা হয়, আখের রস অথবা খেজুর গাছের রসকে ফুটিয়ে ঘন করে এবং তারপর সেটিকে ঠাণ্ডা করা হয় যতক্ষণ না সেটি জমে শক্ত হয়ে ওঠে।ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটিকে দুই ভাবেই ব্যবহার করা হয়,মিষ্টি এবং সুস্বাদু থালি হিসেবে।ভারতবর্ষে শিশু খাদ্যে গুড়কে মিষ্টি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।এই নিবন্ধটিতে শিশুদের গুড় খাওয়ানোর উপকারিতা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আপনি কি শিশু খাদ্যে গুড় সংযোগ করতে পারেন?
শিশুদের জন্য গুড় ভালো কিনা এই ভেবে আপনি নিশ্চিত অবাক হচ্ছেন?এর উত্তর হল হ্যাঁ,কিন্তু এটা সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা আবশ্যক।গ্রামীণ ভারতে ডাক্তারেরা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের খাদ্যে গুড়ের সংযোগ করার সুপারিশ করতে পারেন অ্যানিমিয়া প্রতিহত করতে যেহেতু গুড় হল আয়রণের ভালো উৎস।সুতরাং,শিশুর খাদ্যে গুড়ের সংযোজন তাকে খাওয়ানোর পদ্ধতি,জীবনযাত্রা,এবং প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নিজস্ব পছন্দের উপর নির্ভর করে।
একটা বাচ্চার সাথে কখন আপনি গুড়ের পরিচয় করাবেন?
শিশু খাদ্যের সাথে শিশুর এক বছর বয়স হওয়ার পরেই গুড়ের পরিচয় করানো উচিত।যাইহোক, এটা নির্ভর করে শিশুর স্বাস্থ্য এবং আপনার ডাক্তারের পরামর্শের উপর।শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেন যে,শিশুদের এক বছর পূর্ণ হওয়া না পর্যন্ত তাদের কনওরকম মিষ্টি দেওয়া উচিত নয়।এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য তাদের খাবারে মিষ্টতা আনার জন্য বিভিন্ন ধরণের ফলের পিউরি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
ছোট শিশুদের জন্য গুড়ের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
যদিও এক বছরের কম বয়সী শিশুদের দেওয়ার জন্য গুড় সুপারিশ করা হয় না তবুও গুড়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আছে।এক বছরের বেশী বয়সী শিশুদের গুড় দেওয়া যেতে পারে।গুড়ের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা গুলি হলঃ
-
অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে
গুড় হল আয়রণের ভালো উৎস।10 গ্রাম গুড়ের মধ্যে 0.3 মিলিগ্রাম আয়রণ থাকে,যা হল 3 শতাংশ বা দৈনিক সুপারিশকৃত খাদ্যতালিকাগত ভাতা(RDA)।আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় গুড়ের সংযোজনের ফল হিসাবে সেটি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে পারে যা রক্তে আয়রণের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে।
-
হাড় শক্তিশালী করে তোলে
গুড়ের মধ্যে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম নামক খনিজ গুলি থাকে যা শক্তিশালী,স্বাস্থ্যকর হাড়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য।সুতরাং, গুড় খাওয়ালে তা আপনার সন্তানের হাড় গুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।
-
লিভার বা যকৃৎকে বিষমুক্ত করে
গুড় হল অপরিশোধিত শর্করা যা শরীর থেকে অধিবিষ গুলিকে মুক্ত করতে সাহায্য করে,এটি লিভারকে পরিষ্কৃত ও বিষমুক্ত করে তোলে।
-
অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করে
গুড় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ এবং ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ম্যাগনেসিয়াম,সেলিনিয়াম এবং জিঙ্কের মত খনিজ গুলির দ্বারা সমৃদ্ধ।এছাড়াও এর মধ্যে থাকে ভিটামিন B4,B5,B6 এবং কোলিন।এই সব কিছুই একসাথে আপনার শরীরের অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
-
ফ্লু,সর্দি–কাশি এবং ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণগুলিকে সারিয়ে তোলে
ঠাণ্ডা লাগা,সর্দি–কাশি এবং ফ্লু–এর উপসর্গগুলির চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার হিসাবে ভারতে ঐতিহ্যগত ভাবে গুড়ের ব্যবহার হয়ে আসছে।সর্দি–কাশি,ঠাণ্ডা লাগা এবং ফ্লু–তে ভোগার সময় শিশুদের উষ্ণ গরম জলের সাথে একটুখানি গুড় মিশ্রিত করে দেওয়া হয়।এটি শিশুকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়।গুড়ে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার ক্ষমতা আছে।যখন আপনার বাচ্চার ফ্লু হয়ে থাকে তখন তাকে উষ্ণ গরম জলের সাথে গুড় মিশিয়ে খাওয়ালে তা তার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।
-
কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে
গুড় নিয়মিত অন্ত্রের আলোড়নকে উদ্দীপিত করে,এভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়।এটি আবার পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্তের পাচক উৎসেচক গুলিকে সক্রিয় করে হজমে সহায়তা করে।
-
পেটের সমস্যা এবং কীট–পতঙ্গ গুলিকে অপসারিত করে
গুড় শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং পেটে ব্যথা প্রশমিত করে।এছাড়াও গুড় কীট–পোকা এবং কষ্টকর হিট র্যাশ থেকে মুক্তি দেয়।
-
তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে
জটিল কার্বোহাইড্রেট গুলির 97 % শর্করার দ্বারা তৈরি হওয়ার ফলে গুড় শরীর দ্বারা শোষিত হতে বেশী সময় নেয়।এটা দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
গুড় মধ্যস্থ খনিজ গুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রক্তচাপকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
-
অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল
গুড় মধ্যস্থ ম্যাগনেসিয়াম অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে ভালো করতে এবং পাচনে সাহায্য করে। 10 গ্রাম গুড়ের মধ্যে প্রায় 4 % মত ম্যাগনেসিয়ামের দৈনিক RDA থাকে।
শিশুদের গুড় দেওয়ার ঝুঁকি সমূহ
গুড়ের মধ্যে প্রায় 97% শর্করা থাকে।সুতরাং অতিরিক্ত মাত্রায় এর ব্যবহার আপনার সন্তানের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।শিশুদের গুড় দেওয়ার ঝুঁকি গুলি হলঃ
-
অনেক বেশি ক্যালোরি
প্রতি 10 গ্রাম গুড়ের মধ্যে প্রায় 38 ক্যালোরি থাকে।যার ফলে অতিরিক্ত মাত্রায় গুড় খেলে শিশুদের দেহে অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রবেশ ঘটে যা তাদের রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার,হৃৎপিণ্ড জনিত রোগ এবং জীবনের পরবর্তীকালে ডায়বেটিসের কারণ হয়ে ওঠে।
-
চিনির আসক্তি
গুড় পরবর্তীকালে শিশুদের মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠার কারণ হয়ে উঠতে পারে,যার ফলে ডায়বেটিস হয়।
-
প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া
কিছু শিশুর মধ্যে আবার গুড়ে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া হতে পারে,যেমন র্যাশ বা পেটের সমস্যা।
-
ক্যাভেটিস বা গহ্বর
অতিরিক্ত গুড় খেলে তা আপনার বাচ্চার দাঁতে গহ্বর হওয়ার কারণ হতে পারে।
-
স্থূলতা এবং ডায়বেটিস
খুব বেশি গুড় খাওয়া শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় তাদের স্থূলতা এবং ডায়বেটিসের কারণ হতে পারে।
শিশুদের জন্য গুড়ের স্বাস্থ্যকর রেসিপিগুলি
এখানে শিশুদের জন্য গুড়ের কিছু স্বাস্থ্যকর রেসিপির উল্লেখ করা হলঃ
1.সুজির হালুয়া
এক ধরণের মিষ্টি খাবার তৈরি করতে গুড়ের সাথে সুজি ব্যবহার করা হয়।
উপকরণঃ
সুজি,গুড়,জল এবং এলাচ গুড়ো
কীভাবে তৈরি করবেনঃ
জলের মধ্যে কিছুটা গুড় দিয়ে সেটিকে ফোটান।একটা কড়াইয়ে সুজিকে ভাজতে থাকুন যতক্ষন না সেটির সোনালী বাদামী রঙ হয়।এরপর এটিকে সেই গুড়ের জলের মধ্যে ঢেলে দিন।এবং অনবরত সেটিকে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ সেটির ঘনত্ব পোরিজ বা জাউ–এর মত একটা শক্ত অবস্থায় না আসে।এর সাথেই আবার এলাচ গুড়ো মিশিয়ে নিন।ভালভাবে নাড়তে থাকুন এবং আপনার সুজির হালুয়া প্রস্তুত হয়ে যাবে।
2.গুড়ের সিরাপ বা রস
শিশুদের জন্য গুড়ের সিরাপটি হল খুব সাধারন এবং এটিকে সহজেই তৈরি করা যায়।এটিকে 2 মাস পর্যন্ত ফ্রিজে মজুত করে রাখা যেতে পারে এবং শিশুদের পোরিজ বা জাউ–কে মিষ্টি করে তুলতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপকরণঃ
গুড় এবং জল
কীভাবে তৈরি করবেনঃ
একটা পাত্রের মধ্যে কিছুটা গুড় নিয়ে তার সাথে কয়েক বড় চামচ জল দিয়ে সেটিকে কম আঁচে বসিয়ে রাখুন।এবার এটিকে অন্য আরেকটি পাত্রে ছেঁকে নিয়ে তার দলা গুলি বাতিল করে সরিয়ে দিন।এর সাথে 1 কাপ জল মিশিয়ে সেটিকে একবার ফুটতে দিন।আরও কয়েক মিনিটের জন্য এটিকে তাপে রেখে তারপর ঠাণ্ডা হতে দিন।ঠাণ্ডা হওয়ার পর এটিকে ঘন,সোনালী বাদামী সিরাপের মত দেখতে হওয়া উচিত।এটিকে ফ্রিজে মজুত করে রাখুন এবং শিশুদের পোরিজ বা জাউয়ের জন্য মিষ্টি হিসেবে এটির ব্যবহার করুন।
শিশুদের জন্য গুড়ের অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আছে,যদিও সবচেয়ে ভাল হয় এটিকে আপনি আপনার সন্তানের খাবারের সাথে অন্তর্ভুক্ত করার আগে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে এটির পরীক্ষা করে নেওয়া।আপনার বাচ্চাকে গুড় দেওয়ার আবার কিছু ঝুঁকিও আছে,সেই কারণে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের সাধারণত এটি দেওয়ার সুপারিশ করা হয় না।আপনি বাচ্চার খাবারের সাথে চটকানো কলা,খেজুরের পিউরি বা আপেল সশের মত কিছু ফ্রুট বা ফলের পিউরি ব্যবহার করে সেটিকে মিষ্টি করে তুলতে পারেন।