শিশুরা গল্প শুনতে ভালোবাসে বিশেষ করে যে গল্পগুলি তাদের হাড়ে মজার সুড়সুড়ি দেয়! আমরা অনেকেই মহান রাজা আকবর এবং তার মন্ত্রী বীরবলের বিখ্যাত গল্পগুলি শুনে বড় হয়েছি।বীরবল তাঁর অসাধারণ বুদ্ধি এবং রসিকতার জন্য ছিলেন অত্যন্ত সুপরিচিত।এই গল্পগুলি শুধুই যে আমাদের অবাক করে তাই নয়, এগুলি আবার আমাদের জীবনের সদগুণগুলি থাকার গুরুত্বগুলি সম্পর্কেও শিক্ষা দেয় যেগুলি আমরা জানতে পারি এই গল্পগুলির শেষে দেওয়া মূল্যবান নীতিবাক্যগুলি থেকে। যদি আপনি আপনার শিশুকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিকথা শেখাতে চান গল্পের মাধ্যমে তাহলে নিচে দেওয়া কয়েকটি আকবর এবং বীরবলের গল্প আপনার ছোট্ট পরীটিকে পড়ে শোনাতে পারেন।
বুদ্ধিদীপ্ত এবং মজাদার আকবর এবং বীরবলের গল্প
বীরবল শুধু যে তার অসাধারণ বুদ্ধির জন্যই পরিচিত ছিলেন তাই নয়, এর সাথে তার অসাধারণ উপস্থিত বুদ্ধি, জ্ঞান এবং চাতুর্যের জন্যও তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন।এখানে আকবর এবং বীরবলের কয়েকটি অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং মজাদার ছোটগল্প দেওয়া হল যেগুলি আপনার ছোট্টটিকে অন্তর থেকে আমোদিত করে তুলবে।
1রাজ্যের কাক সংখ্যা
এক সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল সকালে আকবর এবং বীরবল অবসর সময় কাটাতে রাজপ্রাসাদের বাগানে হাঁটছিলেন।ঠিক তখনই আকবর ঠিক করলেন যে তিনি বীরবলের বুদ্ধি পরীক্ষা করবেন একটি কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার ছলে।মহারাজ তখন বীরবলকে জিজ্ঞাসা করলেন যে “আমাদের রাজ্যে কতগুলি কাক বাস করে?” বীরবল রাজা মশাইয়ের মনের মধ্যে কি চলছে সেটি বুঝতে পারলেন এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বীরবল প্রত্যুত্তর দিলেন যে “রাজামশাই এ রাজ্যে 80 হাজার 971 খানি কাক বাস করে।” একথা শুনে বিস্মিত ও চমকৃত রাজামশাই বীরবলকে আরও পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন যে “যদি এর থেকে বেশি কাক থাকে এ রাজ্যে তবে?” বীরবল তখন রাজামশাইকে উত্তরে বললেন যে “ওহ! তাহলে সেই কাকগুলি অবশ্যই অন্য রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে বেড়াতে এসেছে।” তখন রাজামশাই বীরবলকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন যে “আর যদি এর থেকে কম কাক থাকে তবে?” এবার এর উত্তরে বীরবল তাঁর মুখে একটি বিদ্রূপের হাসি হেসে বললেন যে “এ তো আরো সহজ কথা– তাহলে আমাদের রাজ্যের কাকেরা অন্য রাজ্যে ঘুরতে গেছে।” বীরবলের এই অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং রঙ্গ রসিকতাবোধ দেখে আকবরও হেসে উঠলেন।
নীতিকথা
যদি কেউ সহজভাবে চিন্তা করেন তবে যেকোনও কিছুরই সমাধান সর্বদা পাওয়া যেতে পারে।
2 বীরবলের খিচুড়ি
শীত কালের এক শীতলতম দিনে আকবর এবং বীরবল একটি বড় দীঘির ধার ধরে হাঁটছিলেন।হঠাৎই আকবর থেমে দাঁড়ালেন এবং তার একটি আঙ্গুল প্রায় জমে যাওয়া সেই কনকনে ঠান্ডা জলে ডোবালেন এবং তৎক্ষণাৎ সেটি তুলে নিয়ে বললেন যে, “আমি মনে করি না যে কেউ এই ঠান্ডা জলে এক রাত কাটাতে পারবে বলে“। বীরবল সেটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং বললেন যে তিনি এমন একজনকে খুঁজে নিয়ে আসবেন যিনি এই কাজটি করতে পারবেন।আকবর তখন প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, যে সারা রাত ধরে এই দীঘির কনকনে ঠান্ডা জলে দাঁড়িয়ে কাটাতে পারবে তাকে তিনি 1000 স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করবেন।তক্ষুনি বীরবল এমন একজন গরীব মানুষকে খুঁজে পেলেন যিনি 1000 স্বর্ণ মুদ্রার জন্য রাজী হলেন সেই কনকনে ঠান্ডা জলে একরাত্রি কাটাতে।দুইজন রাজ সৈন্যের পাহারায় সেই দরিদ্র মানুষটি সারা রাত্তির সেই কনকনে ঠান্ডা জলে দাঁড়িয়ে থাকলেন।তার পরের দিন সকালে সেই গরীব মানুষটিকে রাজদরবারে নিয়ে যাওয়া হল পুরস্কার প্রদানের জন্য।যখন রাজামশাই তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কি করে সেই কনকনে ঠান্ডা জলে সারা রাত্রি দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন তখন সেই মানুষটি উত্তর দিলেন যে, “মহারাজ, আমি একটি প্রদীপের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যেটি কিছুটা দূরে জ্বলছিল আর সারা রাত সেটির দিকে তাকিয়েই আমি কাটিয়ে দিলাম“।এই কথা শুনে মহারাজ বললেন যে, “এই মানুষটি কখনই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি নন কারণ তিনি প্রদীপের শিখা থেকে উষ্ণতা পেয়ে নিজেকে সারা রাত ধরে সেই দীঘির কনকনে জলে দাঁড় করিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন“।দরিদ্র মানুষটি মনে মনে অনেক দুঃখ পেলেন এবং হৃদয় ভঙ্গ হয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন।তারপর তিনি বীরবলের কাছে গেলেন সাহায্যের আশায়।তার পরের দিন বীরবল আর সারাদিন রাজ দরবারে গেলেনই না।বীরবল না আসায় আকবর নিজেই তার বাড়ি গেলেন তাঁর অনুপস্থিতির কারণটি জানতে।সেখানে পৌঁছে রাজামশাই অবাক হয়ে দেখলেন যে বীরবল আগুনের পাশে বসে আছেন এবং একটি হাঁড়ি তার প্রায় 6 ফুট উপর থেকে ঝুলছে।এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, বীরবল বলেন যে, “প্রভু, আমি খিচুড়ি রাঁধছি“।ঠিক তখনই আকবর হাসতে শুরু করলেন এবং বললেন যে সেটি একেবারেই অবাস্তব।তখন বীরবল বললেন যে, “হে আমার রাজামশাই এটি বাস্তবেই সম্ভব।যদি একজন গরীব মানুষ তার কিছুটা দূরে থাকা একটি প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের শিখার দিকে কেবল তাকিয়ে থেকেই সেটি থেকে উষ্ণতা লাভ করে নিজের দেহকে গরম করে তুলতে পারে, তবে আমিও এই একই পন্থায় খিচুড়িটি রান্না করতে পারব, তাই নয় কি মহারাজ?” আকবর তখন বীরবলের কথার সূত্রটি বুঝতে পারলেন এবং সেই গরীব মানুষটিকে তার চ্যালেঞ্জ পূরণ করার জন্য 1000 সোনার মুদ্রা দিয়ে পুরস্কৃত করলেন।
নীতিকথা
আশা মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
3 বোকা চোর
একসময়, সম্রাট আকবরের রাজ্যে এক ধনী সওদাগরের সমস্ত কিছু চুরি হয়ে গিয়েছিলো। সেই শোকগ্রস্থ সওদাগরটি তখন রাজ দরবারে গেলেন এবং সাহায্য চাইলেন।তখন আকবর বীরবলকে সেই চোরকে খোঁজার জন্য বণিকটিকে সাহায্য করতে বললেন।সেই বণিকটি তখন বীরবলকে জানালেন যে তিনি তার একজন ভৃত্যকে এ ব্যাপারে সন্দেহ করেন।সেই বণিকের কাছ থেকে কিছুটা ঈঙ্গিত পেয়ে বীরবল বণিকের সকল ভৃত্যকে ডেকে পাঠালেন এবং তাদের সকলকে একটি সারিতে দাঁড়াতে বললেন।যখন তাদেরকে সেই চুরির ব্যাপারে জানানো হল তখন তারা প্রত্যেকেই ঘাড় নেড়ে তা অস্বীকার করলেন, আর সেটি হওয়াই স্বাভাবিক ছিল।এরপর বীরবল তাদের সকলকে সমান মাপের একটি করে দণ্ড দিলেন।তারপর চলে যাওয়ার সময় তাদের সকলকে বললেন যে, “যেই ব্যক্তি সেই বণিকের ধন–সম্পত্তি চুরি করেছে তার দণ্ডটি আগামী কালের মধ্যে 2 ইঞ্চি মত বেড়ে যাবে“। এর পরের দিন যখন বীরবল সেই সকল দণ্ডগুলিকে পরীক্ষা করে দেখার জন্য বণিকের সকল ভৃত্যকে ডাক পাঠালেন, তখন তিনি দেখলেন যে একজন ভৃত্যের দণ্ডটি 2 ইঞ্চি মত ছোট। এরপর যখন সেই সওদাগরটি বীরবলের থেকে জানতে চাইলেন চোরটিকে ধরে ফেলার রহস্যটি তখন বীরবল উত্তর দেন যে, “সেটি খুবই সহজ ছিলঃ যে চুরি করেছিল, সে তার দণ্ডটিকে দুই ইঞ্চি মত কেটে দিয়েছিল এই ভেবে যে তার দণ্ডের মাপ 2 ইঞ্চি বেড়ে যাবে“।
নীতিকথা
সত্যের জয় সর্বদা বিরাজমান।
4 বুদ্ধিমান বীরবল
একদিন আকবর তাঁর হাতের একটি আংটি হারিয়ে ফেলেছিলেন যেটি তার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান ছিল।সেই আংটিটি তার বাবা তাকে উপহার দিয়েছিলেন এবং সেটিকে হারিয়ে ফেলে আকবর খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েছিলেন। এরপর আকবর বীরবলকে ডেকে পাঠালেন এবং সেই আংটিটিকে খুঁজে দেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলেন।সেই সময় রাজ দরবার ছিল প্রচুর সভাসদে পরিপূর্ণ।এমন সময় বীরবল ঘোষণা করলেন যে, “হে আমার প্রিয় রাজন! আংটিটি ঠিক এই সভাকক্ষের মধ্যেই রয়েছে, এবং যার কাছে সেই আংটিটি আছে তার দাড়িতে একটি খড় আটকে আছে।” তখন সকলেই একে অপরের মুখ চাওয়া–চায়ি করল এবং উপস্থিত সভাসদদের মধ্যে একজন তার দাড়ির মধ্যে খড় খুঁজতে শুরু করলেন।বীরবল তখন সিপাহীদের ডাকলেন এবং তাদের বললেন সেই সন্দেভভাজন ব্যক্তিটিকে ভালো করে পরীক্ষা করতে। সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিটিকে ভালো করে তল্লাশি চালানোর পর তার থেকে সেই আংটিটি উদ্ধার হল।তখন বিস্মিত হয়ে আকবর বীরবল কে প্রশ্ন করলেন যে কি করে তিনি সেই আংটিটি খুঁজে বের করলেন।উত্তরে বীরবল জানান যে, “হে আমার প্রভু! যার মধ্যে অপরাধবোধ থাকবে বা ভুল কাজ করবেন তিনি সর্বদাই ভয় পাবেন“।
নীতিকথা
যার মধ্যে অপরাধবোধ থাকে তার প্রতি আর আলাদা করে অভিযোগ করার প্রয়োজন পড়ে না।
5 চাষীর কুয়ো
একদা, এক চতুর ব্যক্তি তার নিজের পাত–কুয়োটিকে একজন চাষীকে বিক্রি করে দেন।তার পরের দিন যখন চাষীটি কুয়োর কাছে গেলেন তার থেকে কিছু জল তুলতে তখন সেই ধূর্ত ব্যক্তিটি চাষীকে বলেন যে তিনি চাষীকে কেবল কুয়োটিকে বিক্রি করেছেন কিন্তু তার জল বিক্রি করেন নি। তখন চাষীটি বুঝতে পারলেন না যে তিনি কি করবেন এবং বিষণ্ণ চিত্তে আকবরের সভায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন বীরবলকে এই মামলার তদারকি করতে বলা হল।তারপরের দিনই কুয়ো বিক্রি করা লোকটির সাথে সেই চাষীটিকেও রাজ দরবারে ডাকা হল।চতুর লোকটি তখন সেই একই কথা বললেন যে তিনি তার কুয়োটিকে বিক্রি করেছে কিন্তু তার জলকে নয়।এই কথা শুনে বীরবল বললেন যে, ” হে বন্ধু আমার! তবে তো তোমাকে এক্ষেত্রে হয় কুয়ো থেকে সব জল সরিয়ে ফেলতে হবে কিম্বা সেই জল রাখার জন্য কর দিতে হবে কারণ কুয়োটি যে তোমার নয়, চাষীর।” তখন বুদ্ধিতে হেরে গিয়ে অসহায় বোধ করে সেই ব্যক্তিটি তার ভুল বুঝতে পারেন এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
নীতিকথা
যদি আপনি কাউকে ঠকান তাহলে আপনাকে আপনার কর্মের মূল্য দিতে হবে।
6.বুদ্ধির হাড়ি
একবার সম্রাট আকবর বীরবল এর উপর এতটাই রাগে পাগল হয়ে গেলেন যে তাকে তার রাজত্ব ছেড়ে চলে যেতে বললেন।বীরবল ভগ্নহৃদয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে গেলেন এবং কাছাকাছি গ্রামের এক কৃষকের বাড়িতে আশ্রয় নিলেন।বীরবল খামারে কাজ করে তাঁর দিন কাটাতে লাগলেন।যত দিন যেতে থাকল সম্রাট আকবর ততই বেশি বেশি করে তাঁর প্রিয় সভাসদ এর অনুপস্থিতিতে ব্যথিত হয়ে উঠতে লাগলেন।একদিন সম্রাট ঠিক করলেন বীরবলের খোঁজ করার জন্য তাঁর রাজ সেনা পাঠাবেন।রাজার সৈন্যরা সব দিকে বীরবলকে খুঁজতে লাগলেন কিন্তু তাদের সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হলো। এই সময় সম্রাট আকবর তাঁর মাথা খাটিয়ে এক বুদ্ধিদীপ্ত উপায় বের করলেন বীরবলকে খোঁজার– তিনি ঘোষণা করলেন যে তাঁকে এক হাঁড়ি পূর্ণ বুদ্ধি এনে দিতে পারবে তাকে তিনি ওই হাঁড়ি ভর্তি করে হীরে উপহার দেবেন।এই ঘোষণার কথা কাছাকাছি সব গ্রামগুলোতে পৌঁছে গেল এবং এমনকি বীরবলও তা জানতে পারলেন।তখন গ্রামবাসীরা এক সভার আয়োজন করলেন এবং সম্রাটের প্রহেলিকার সমাধান কীভাবে করা যায় সে নিয়ে আলোচনা করলেন।বীরবল তাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং এক মাস সময় চাইলেন।বীরবল একটি হাঁড়ি নিলেন এবং তাতে শিকড়সহ একটি ছোট গোটা তরমুজ বসিয়ে দিলেন।একমাস পরে তরমুজটি সম্পূর্ণ হাঁড়ির আকৃতি লাভ করে বড় হয়ে উঠল।তারপর সেই হাঁড়িটিকে. সম্রাটের কাছে পাঠিয়ে দিলেন আর তিনি বলে পাঠালেন যে সেই হাঁড়িটির ভিতরে থাকা বুদ্ধিটিকে তখনই বের করা সম্ভব যদি হাঁড়িটিকে না ভেঙে সেটি বের করা যায়। সম্রাট আকবরের বুঝতে অসুবিধা হল না যে এই ধরনের বুদ্ধি বীরবল ছাড়া অন্য আর কারোর হতে পারে না এবং তখনই তিনি বীরবল কে তাঁর রাজসভায় ফিরিয়ে আনতে গেলেন।
নীতিকথা
তাড়াহুড়ো কোনও সমাধান নয় কারণ তা কেবলই ক্ষতি করে, সময় নিয়ে কঠোর চিন্তা করুন কারণ প্রতিটি সমস্যারই একটি সমাধান রয়েছে।
7. কেবল একটি মাত্র প্রশ্ন
বীরবলের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান এবং রসিকতার কাহিনীগুলি বহু দূর দেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল।একবার একজন পন্ডিত মানুষ আকবরের সভায় এসে উপস্থিত হলেন বীরবলের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য।সেই ব্যক্তি সম্রাটকে বলেছিলেন তিনি হলেন সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী এবং তার চেয়ে জ্ঞানী মানুষ পৃথিবীতে আর দুটো নেই এবং এছাড়া তিনি আবার এও বললেন যে বীরবল তার একটি প্রশ্নের উত্তরও দিতে সমর্থ হবে না।আকবর বীরবলকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠালেন এবং ওই পন্ডিত ব্যক্তি যা দাবী করেছেন সেটি তাঁকে জানালেন।বীরবল চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করলেন যেটি সেই পণ্ডিত ব্যক্তি তার উদ্দেশ্যে রেখেছিলেন।তখন সেই পন্ডিত ব্যক্তিটি বীরবলকে জিজ্ঞেস করলেন যে, “আপনি একশত সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে চান নাকি একটি কঠিন প্রশ্নের?” বীরবল তখন তাঁকে জানালেন যে তিনি কঠিন প্রশ্নটির উত্তরটিই দিতে চান। তখন সেই পন্ডিত ব্যক্তিটি বীরবলকে বললেন যে, “বলুন তো বীরবল মশাই কোনটি আগে এসেছে, মুরগি নাকি ডিম?” বীরবল একটু চিন্তা করলেন এবং তারপর উত্তরে বললেন, “মুরগি আগে এসেছে“। তখন সেই পণ্ডিত বীরবলকে উপহাস করলেন এবং বললেন, “কীভাবে আপনি এ ব্যাপারে এতটা নিশ্চিত হতে পারেন?” বীরবল তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন যে, “আমি শুধুমাত্র একটি প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সুতরাং আমি আর একটি প্রশ্নের উত্তরও দেবো না“।সেই পন্ডিত ব্যক্তিটি নিজের দাবীতে লজ্জিত বোধ করলেন ও ভগ্ন হৃদয়ে সেই রাজসভা থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন।
নীতিকথা
প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব যেকোন ধরনের কঠিন সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
8.মুরগি এবং মোরগের কাহিনী
একবার সম্রাট আকবর তার প্রিয় মন্ত্রী বীরবলের সঙ্গে একটি কৌতুকপূর্ণ চালাকির খেলা খেলবেন বলে মনস্থ করলেন। তিনি তাঁর বাকি সমস্ত মন্ত্রীদের কাছে তার পরিকল্পনাটি ব্যক্ত করলেন এবং তাদের সাথে তা নিয়ে আলোচনাও করলেন।পরিকল্পনা মাফিক নির্ধারিত দিনে প্রত্যেক মন্ত্রী একটি করে ডিম আনলেন এবং সেগুলিকে তারা তাদের পোশাকের ভেতর লুকিয়ে রাখলেন। পরের দিন সম্রাট আকবর তাঁর সভাসদদের বললেন যে, তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছেন– সেই স্বপ্নানুযায়ী তিনি দেখেছেন যে, সভার প্রতিটি মন্ত্রী যদি রাজ–পুকুর থেকে একটি করে ডিম সংগ্রহ করে আনেন তবে সেটি সম্রাটের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রমাণ করবে।তাঁর স্বপ্ন বর্ণনের পর, সম্রাট তাঁর সকল মন্ত্রীদের সেই কাজটি করার কথা বললেন যাতে তাঁর প্রতি তাঁর মন্ত্রীবর্গের আনুগত্যটি প্রকাশ পায়। পরিকল্পনা মাফিক সকল মন্ত্রী পরিষদ ডিমের খোঁজ করতে যাওয়ার মত অভিনয় করলেন, এবং প্রায় কোনওরকম সময় না নিয়েই তারা সকলেই তাদের পোশাকের মধ্যে আগে থেকেই লুকিয়ে রাখা ডিমগুলিকে বের করে নিয়ে এলেন। বীরবলও ডিমের সন্ধানে গেলেন কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও একটি ডিমও খুঁজে পেলেন না।যখন বীরবল খালি হাতে ফিরে এলেন তখন প্রত্যেকেই তার সমালোচনা করলেন এবং নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে লাগলেন।বীরবল পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন এবং সোজাসুজি সম্রাটের কাছে গিয়ে জোর গলায় মোরগের মত ডাকতে শুরু করলেন।সম্রাট কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে উঠলেন এবং বীরবলকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কেন এরকম আচরণ করছেন যার প্রত্যুত্তরে বীরবল বললেন, “হে রাজন! আমি কোনও মুরগি নই আর তাই কোন ডিম আমি আপনাকে এনে দিতে পারিনি; কিন্তু আমি একটি মোরগ হতে পারি আর সেজন্য আমি আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল এইরকম ডাক ডাকতে পারি“। একথা শুনে প্রত্যেকেই উচ্চ হাসিতে ফেটে পড়লেন।
নীতিকথা
আত্মবিশ্বাস যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সবথেকে বেশি সাহায্য করে।
9 কে রাজা
একবার বীরবরলকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অন্য একটি রাজ্যে পাঠানো হল।সেই রাজ্যের রাজাও বীরবলের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ব্যাপারে অনেক গল্প শুোলছিলেন এবং তিনিও চাইলেন তাঁকে এ ব্যাপারে পরীক্ষা করতে। সেখানকার রাজামশাই তখন তাঁর দরবারের সকল মন্ত্রীদের তাঁর নিজের মতই একই রকম পোশাক পরিয়ে একই সারিতে বসালেন বীরবলের বুদ্ধির পরীক্ষা নিতে।যখন বীরবল সেই সভা কক্ষে এসে প্রবেশ করলেন, সেখানে তিনি সকলকেই একই রকম পোশাক পরে এবং একই রকম সিংহাসনে একইরকম ভাবে বসে থাকতে দেখে চকিত হয়ে উঠলেন।কিংকর্তব্যবিমূঢ় বীরবল তখন খানিক্ষন ধরে তাদের প্রত্যেকের দিকে তাকিয়ে থাকলেন এবং তাদের মধ্যে একজনের কাছে গিয়ে তার সামনে মাথা নত করলেন। ইনিই ছিলেন স্বয়ং রাজামশাই, যিনি এতটাই অবাক হয়ে গেলেন যে আর কোনও শব্দই খুঁজে পেলেন না বলার মত। তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং বীরবলকে জড়িয়ে ধরলেন এবং আরো জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কি করে তাদের মধ্যে প্রকৃত রাজাকে অনুধাবন করে বের করলেন।তখন বীরবল হেসে উত্তর দিলেন যে, “হে প্রভু! যে ধরনের আত্মবিশ্বাস আপনার মধ্যে প্রদর্শিত হচ্ছিল তা আর কারুর মধ্যে ছিল না এবং তাছাড়াও তাদের দৃষ্টি ছিল রাজা মশাই আপনার দিকে আপনার সমর্থনের জন্য“।রাজামশাই খুশিতে আহ্লাদিত হয়ে উঠলেন এবং বীরবলের অতুলনীয় প্রত্যুৎপন্নমতি এবং উপস্থিত বুদ্ধির অনেক প্রশংসা করলেন।
নীতিকথা
বুদ্ধিমান মানুষেরা কোন কিছুর দিকে তাকিয়েই অনেক কিছু বুঝে যান এবং দারুণভাবে বলে দিতে পারেন।
10 স্বর্ণ মুদ্রা এবং ন্যায়বিচার
ঠিক অন্যান্য দিনের মতই সম্রাট আকবরের সভায় একদিন আকবর বীরবলকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, “বন্ধু বীরবল যদি আমি তোমাকে ন্যায়বিচার এবং স্বর্ণ মুদ্রা এই দুটির মধ্যে কোনওটিকে বেছে নিতে বলি তুমি কোনটিকে বেছে নেবে?” বেশি সময় না নিয়েই বীরবল উত্তর দিলেন যে। “আমার প্রিয় প্রভু! নিঃসন্দেহে আমি স্বর্ণমুদ্রাকেই বেছে নেব“। বীরবলের এই নিমেষের উত্তরে সকলেই বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে উঠলেন এমনকি স্বয়ং আকবরও ছিলেন তাদের মধ্যে এবং সকলেই ভেবেছিলেন যে বীরবল হয়ত এই বার একবার হলেও উত্তর দেওয়ার আগে তোতলাবেন ও ইতস্থত বোধ করবেন উত্তর দিতে।আকবর তাঁকে বললেন যে, “আমি তোমার উপর ভীষণ হতাশ হয়েছি বীরবল।কেন তুমি ন্যায়বিচারের মত একটা বড় জিনিসকে বাদ দিয়ে সোনার মত এক সামাণ্য জিনিসকে বেছে নিলে?” তখন বীরবল তাঁর মুখে এক বিদ্রূপের হাসি এনে উত্তর দিলেন যে। “হে আমার দয়াপরবশ রাজা!ন্যায়বিচারের তো কোনও অভাব নেই কারণ আপনার রাজ্যের সর্বত্রই তো ন্যায়বিচার রয়েছে।আর আমি মনে করি না যে জিনিসটি আমার কাছে ইতিমধ্যেই প্রচুর পরিমাণে আছে এবং যার ফুরাণ নেই সেটির প্রয়োজন আছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করার আর কোনও প্রয়োজন আছে বলে কিন্তু হে প্রভু, এক দিন না একদিন আমার অর্থের ঘাটতি অবশ্যই হবে আর তখনের জন্য স্বর্ণ মুদ্রাটাই সবচেয়ে ভাল“। এই উত্তর শোনার পর আকবর নির্বাক হয়ে গেলেন, কিন্তু তাঁর মুখে এক বৃহৎ হাসি দেখা গেল।বীরবলের এই বুদ্ধিদীপ্ত যৌক্তিক উত্তরে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়ে উঠলেন এবং তাঁকে 100 টি স্বর্ণ মুদ্রা উপহার দিলেন।
নীতিকথা
কথা বলার সময় বুদ্ধি দিয়ে শব্দগুলিকে বেছে নেওয়া উচিত।
11 কার এই আম গাছ?
একদিন রাম এবং শ্যাম দুই ভাই মিলে একটি আম গাছের মালিকানা নিয়ে লড়াই করছিল।রাম বলল যে সেই আম গাছটি তার এবং শ্যামও সেই একই দাবী করল। এইভাবে চলার পর কোন স্থায়ী উপায় বার করতে না পেরে তারা ঠিক করলো যে তারা বীরবলের কাছে যাবে এর সমাধানের জন্য।তখন বীরবল সেই পরিস্থিতিটি পর্যালোচনা করে তাদের বললেন যে, প্রথমে সেই আম গাছ থেকে সবকটি আম পেড়ে ফেলতে আর পরামর্শ দিলেন য্ সেই আমগুলিকে দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে নিতে এবং তারপর গাছটিকে দুটি সমান ভাগে কেটে ফেলতে।বীরবলের এই কথা শুনে রাম ঘাড় নাড়ে যখন শ্যাম সেই গাছটিকে কাটতে রাজী হয় না কারণ সে তিন বছর ধরে গাছটির যত্ন নিয়ে এসেছে সে কথাও ব্যক্ত করে।তখন বীরবল বুঝে গেলেন যে সেই গাছটির আসল মালিক কে। বীরবল তখন বললেন যে, ” এই গাছটির আসল মালিক হল শ্যাম কারণ সেই গাছটির কাটার কথা শুনেই সে ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিল।একজন যে তিন বছর ধরে কোনও গাছের যত্ন নিয়ে তাকে বড় করে এসেছে সে কখনই সেই গাছটিকে সঙ্গে সঙ্গে কেটে দিতে দেবে না।”
নীতিকথা
সত্তিকারের মালিকানা আসে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে।
আমরা নিশ্চিত যে উপরে বর্ণিত সকল গল্পগুলিই আপনি ভীষণভাবে উপভোগ করেছেন কারণ এগুলি কেবল কৌতুক পূর্ণই নয় এই গল্পগুলি আবার এর সাথে আমাদের দিয়ে থাকে উপযুক্ত শিক্ষাও।ঘুমপাড়ানি গল্প বলার একটি রুটিন প্রস্তুত করুন এবং প্রতি রাত্রে ঘুম পাড়ানোর সময় তাদের এই বিস্ময়কর গল্পগুলি বর্ণন করুন। এগুলি কেবল তাদের পারিবারিক বন্ধন গড়ে তুলতেই সহায়তা করে না তার সাথে আবার পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলি অর্জনেও শিশুদের সহায়তা করে।