শিশুদের ত্বক সবসময়েই অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে থাকে,এবং তাদের দেহ এখনও প্রক্রিয়াকরণের পর্যায়ে আছে।এর অর্থ হল আপনি লক্ষ্যণীয় পরিবর্তনগুলি তার মধ্যে দেখতে পাবেন যেহেতু তার দেহ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এগুলি ছাড়াও আপনি দেখতে পাবেন যে জলবায়ুর পরিবর্তন অথবা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরণ এর মত অন্যান্য বাহ্যিক কারণগুলি কার্যত শিশুদের জন্য আরও সমস্যা এবং অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।এমনকি আপনি এটিও লক্ষ্য করতে পারেন যে কীভাবে এই জিনিসগুলি হচ্ছে,যদিও বিপজ্জনক নয়,তবে শিশুকে খুব হতাশ করতে পারে।
তাপজনিত ফুসকুড়ি ছোট শিশুদের জন্য চূড়ান্ত বিরক্তিকর একটা ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।এই তাপজনিত ফুসকুড়িগুলি গ্রীষ্মকালে হয় যখন শিশুর দেহ বেশ ঘন ঘন ঘামতে শুরু করে।এটি এমন একটি সমস্যা যার সাথে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই সংগ্রাম করতে হয়।তবে একটি ছোট্ট শিশুর ক্ষেত্রে তার সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এটি সত্যিই হতাশাজনক।যখন শরীরে প্রচুর পরিমাণে ঘাম হয়,ত্বকের লোমকূপগুলি অবরুদ্ধ হয়ে যায়,এবং সেগুলি আর দেহের অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ করতে পারে না যা ত্বকের উপরে ফুসকুড়িগুলিকে গড়ে তোলে।এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দেখতে পাওয়া যায়,বিশেষত যখন তারা উষ্ণ এবং আদ্র পরিবেশের মধ্যে থাকে।
ত্বকের ফুসকুড়িগুলি নানা রূপে দেখা যেতে পারে।এর লক্ষণগুলি হতে পারে লালচে দাগ বিশেষ,ফুলে ওঠা,চুলকানি এবং ছোট ছোট ফোঁড়া বিশেষ।বেশীরভাগ ক্ষেত্রে যে অঞ্চলগুলিতে এই ফুসকুড়ি বা ত্বকের র্যাশ প্রভাব বিস্তার করে সেগুলি হল ত্বকের ভাঁজ অঞ্চলগুলি যেমন গলা–ঘাড়ের জায়গাগুলিতে,হাত অথবা পায়ের ভাঁজ অঞ্চলগুলি ইত্যাদি।এছাড়াও আপনি লক্ষ্য করবেন যে তাপজনিত ফুসকুড়িগুলির প্রাদুর্ভাব বেশি হয় যখন আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়।আর ছোট শিশুদের ত্বক সংবেদনশীল হওয়ার কারণে তা জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সহজে সামাঞ্জস্য গড়ে তুলতে পারে না যার পরিণামে তাদের ত্বকে র্যাশ জনিত সমস্যাগুলি ফুটে ওঠে।
আপনার প্রাথমিক চিন্তায় অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখানো দরকার,তবে যখন আপনি ফুসকুড়িগুলিকে লক্ষ্য করেন,বস্তুত আপনি তার জন্য কিছু সতর্কতামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন এবং এছাড়াও আপনি আবার বেশ কিছু অত্যাশ্চর্য ঘরোয়া প্রতিকারগুলি অনুসরণ করতে পারেন যেগুলি এটির জন্য সম্পূর্ণরূপে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
গৃহে শিশুর তাপজনিত ফুসকুড়ি বা হিট র্যাশের প্রতিকারগুলি
1. ঠাণ্ডা কম্প্রেস
যদি আপনার সন্তান র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলির সাথে সংগ্রাম করে চলে তবে সেক্ষেত্রে দ্রুত উপশমের জন্য আপনি একটি জিনিস করতে পারেন।আপনি একটি নরম কাপড়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি বরফের টুকরোকে জড়িয়ে নিতে পারেন,যেটি আপনার বচ্চার পক্ষে আরামদায়ক হবে এবং সেটিকে প্রভাবিত এলাকাগুলির উপর হালকা করে চেপে ধরে রাখুন।এটি আপনার সন্তানকে বেশ আরামবোধ করাবে।প্রখর গ্রীষ্মে,একটা ঠাণ্ডা কম্প্রেস বাস্তবিকই আপনাকে এবং আপনার শিশুকে স্বস্তি এনে দেবে এবং আপনার শিশুকে বেশ ভাল বোধ করাতে সহায়তা করবে।
2. শসা
তাপজনিত ফুসকুড়ি থেকে শসাও খুব দ্রুত স্বস্তি দিতে পারে।একটা ভাল জিনিস হল আপনি সরাসরি শসাকে আপনার সন্তানের দেহে ত্বকের উপর রাখতে পারেন।শসাতেও রয়েছে এর শীতলকারী বৈশিষ্ট্য,এবং এই গুণটিই শিশুকে সাহায্য করে যখন তার মধ্যে র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলি হয়ে থাকে।র্যাশ অথবা ফুসকুড়িগুলির উপরে শসা প্রয়োগ করার অথবা ঘষে দেওয়ার পর আপনি সেই অঞ্চলটি ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে দিতে পারেন,এবং তাতে আপনার ছোট্ট সোনাটি উপশম পাবে।
3. চা গাছের তেল
এটি হল অন্য একটি বিকল্প যেটি সত্যই আপনার বাচ্চাকে আরামদায়ক এবং ভাল অনুভব করাতে সাহায্য করবে।চা গাছের তেলের মধ্যে রয়েছে এর প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি এবং এটি আপনার সন্তানের ত্বকের ফুসকুড়িগুলিকে প্রশমিত করার জন্য ভীষণভাবে সহায়ক।
4. ধনে
শিশুদের ত্বকের প্রভাবিত এলাকাগুলিতে আবার ধনে গুঁড়োও প্রয়োগ করা যেতে পারে।এটি শিশুর স্নানের পূর্বে তার ত্বকে প্রয়োগ করতে পারেন।
5. ছোলার ব্যাসন
ছোলার ব্যাসনকে কিছুটা জলের সাথে মিশ্রিত করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন এবার বিলম্বহীন ফলাফল প্রদর্শনের জন্য সেটিকে প্রভাবিত এলাকাগুলির উপর প্রয়োগ করুন।এটি ভীষণ কার্যকর এবং অতি সাধারণ একটা জিনিস যেটি আপনার ছোট্ট সোনাটিকে সাহায্য করবে।এটি আপনার শিশুর জন্য নিরাপদও বটে।
6. ক্যামোমাইল
ক্যমোমাইল হল আরোগ্যকর বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপর আরেকটি অত্যন্ত শীতলকারী উপাদান।এটি জ্বলন এবং চুলকানির অস্বস্তি হ্রাসে খুব ভালভাবে সহা্য়তা করে থাকে। 1-2 ড্রপ ক্যামোমাইলকে 2 চা–চামচ নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে সেটিকে পাতলা করার মাধ্যমে আপনি ত্বকে প্রয়োগের উপযুক্ত একটি তেল প্রস্তুত করে নিতে পারেন।এবার প্রভাবিত এলাকার উপর প্রস্তুত করা তেলটিকে প্রয়োগ করুন।আপনি ধীরে ধীরে সেগুলিকে উধাও হয়ে যেতে লক্ষ্য করা শুরু করবেন।
7. মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটিতে রয়েছে নিরাময়কারী বৈশিষ্ট্যাবলী।এটির মধ্যে রয়েছে অত্যাশ্চার্যজনক বহু উপাদান।এটি এমনকি আবার ম্যাগনেসিয়াম,কোয়ার্টজ,ক্যালসাইট এবং ডলোমাইট দ্বারাও সমৃদ্ধ।এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।এটি আবার একটি অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবেও কাজ করে থাকে।আপনি এটিকে গোলাপ জলের সাথে মিশ্রিত করে নিয়ে সেটিকে শিশুর ত্বকে হয়ে থাকা র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলির উপরে প্রয়োগ করতে পারেন।ত্বকের উপর পেস্টটি একবার শুকিয়ে গেলেই সেটিকে ঠাণ্ডা জলের সাহায্যে মুছে তুলে দিন।
8. মধু
মধুর মধ্যে এমন বেশ কিছু গুণ রয়েছে যা শিশুর ত্বকের ফুসকুড়ি বা র্যাশগুলিকে অল্প সময়ের মধ্যেই সারিয়ে তোলে।আপনার সন্তানকে স্নান করানোর পূর্বে মাঝে মধ্যে তার ত্বকের উপর আপনি মধুর প্রলেপ প্রয়োগ করতে পারেন।
9. ওটমিল বা জইচূর্ণ
এই সময়ে আপনার ছোট্টটিকে সাহায্য করবে এমন একটি অত্যন্ত উপযোগী দানা শস্য হল ওটমিল।ওটমিলের মধ্যে থাকা এর সকল অত্যাশ্চার্যজনক উপাদানগুলি ছাড়াও এটি আবার এর প্রদাহ বিরোধী গুণাগুণের জন্যও পরিচিত।এছাড়াও ওটমিলে আছে ত্বকের চুলকানি হ্রাস করার বৈশিষ্ট্য,আর এটিই রূপান্তরিত হয়ে আপনার ছোট্ট সোনাকে দ্রুত নিরাময় করে তুলবে এবং তাকে ভাল অনুভব করাবে।
10. অ্যালোভেরা বা ঘৃত কুমারী
অ্যালোভেরা প্রকৃতই একটি যদুকরী উদ্ভিদ।এটি একটি বিস্ময়কর উপাদানে পূর্ণ এবং সমৃদ্ধ যা আসলে ত্বককে শীতল করে এবং নিরাময় করে তোলে।আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে র্যাশের সাথে সংগ্রাম করতে দেখেন,আপনি তবে তার প্রভাবিত এলাকার উপর সামাণ্য পরিমাণে অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করতে পারেন।আপনি এটি করতে পারেন ঠিক আপনার বাচ্চাকে স্নান করানোর আগে।অ্যালোভেরা সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত এবং র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলির সাথে আসা অস্বস্তিকর অনুভূতিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহায়তা করতে সক্ষম।
ছোট শিশুদের মূলত তাদের সূক্ষ্ম ত্বকের কারণে ছোটখাট বহু অসুবিধার মধ্যে পড়ার প্রবণতা থাকে।তবে যখন আপনি আপনার ছোট্ট সোনাটিকে এটির সাথে সংগ্রাম করতে দেখেন,আপনি এটি সম্পর্কে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাকে সাহায্য করতে পারেন।শিশুদের জন্য ঘামাচির ঘরোয়া প্রতিকারগুলির ব্যবহার সবসময়ের জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ বিকল্প।
যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে এবং ঘাম হয়,আপনার ছোট্ট সোনাটি বাস্তবিকই ভীষণ অস্বস্তি বোধ করে।প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে হয়ে থাকা র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলিই হল এমন একটা জিনিস যা আমাদের সকলকে বিরক্ত করে তোলে,সুতরাং সেটি যখন শিশুদের কাছে আসে,সেটি শুধু খারাপই একটা কিছু।উপরে তালিকাবদ্ধ উপকরণগুলি থেকে আপনি এক বা একাধিক চয়ন করতে পারেন অনুসরণের জন্য যেহেতু এগুলি বেশ নিরাপদ এবং কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।আরও একটি জিনিস যেটি আপনাকে করতে হবে তা হল,আপনার সন্তানকে সূর্য রশ্মি এবং তাপ থেকে রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত রাখা নিশ্চিত করুন।
আপনার সন্তানকে শীতল তাপমাত্রায় রাখুন কারণ এটি বাস্তবকিই তাপ এবং তাপজনিত ফুসকুড়িগুলির ছড়িয়ে পড়া এড়াতে সহায়তা করে।এমনকি আপনি যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকে নিয়ে সরাসরি সূর্যালোকের তলায় খোলা জায়গায় বের হন,এটি তাপজনিত সুসকুড়ির কারণ হয়ে উঠতে পারে এবং সেটি জিনিসটিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।খুব আঁটসাঁট এবং গরম হয় এমন ধরনের পোশাক ব্যবহার করা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।আপনার শিশুর ত্বকে বায়ু চলাচল করতে দিন কারণ এটি তাদের শিথিল হতে এবং স্বস্তি বোধ করে ভাল অনুভব করাতে সহায়তা করবে।