In this Article
সর্দি লাগা এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া আপনার বাচ্চাকে কাঁদুনে এবং অস্বস্তিময় করে তুলতে পারে এবং আপনাদের উভয়েরই রাতে ঘুম না হতে পারে। আপনি যদি এখনই কোনও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে না চান তবে তাকে নাক বন্ধ হওয়া থেকে মুক্তি দিতে এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি প্রয়োগের চেষ্টা করুন।
শিশুদের নাক বন্ধ হওয়ার প্রাকৃতিক প্রতিকার
ভারতে, অনেক বাবা–মা ঘরোয়া প্রতিকারের পথ বেছে নেন কারণ এগুলি শুধুমাত্র সস্তাই নয় নিরাপদও, এগুলি অ্যান্টিবায়োটিক (যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে) এবং ওভার–দ্য কাউন্টার ওষুধ (যা শিশুকে দেওয়া উচিত নয়) এর মতো নয়। এখানে শিশুদের নাক জমে যাওয়ার সেরা ঘরোয়া প্রতিকারগুলির কয়েকটি রয়েছে।
১. আপনার শিশুকে বুক দুধ খাওয়ানোর দিকে মনোযোগ দিন। বুকের দুধে অপরিহার্য পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডি থাকে যা আপনার শিশুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিকাশ করে এবং শক্তিশালী করে। একটি ভাল ইমিউন সিস্টেম আপনার শিশুকে সর্দি এবং কাশির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করবে।
২. আপনি বুকের দুধের কয়েকটি ড্রপ আপনার শিশুর নাসারন্ধ্রেও দিয়ে দিতে পারেন যাতে তার বন্ধ নাসাপথটি খুলে যায়।
৩. আপনি বাড়িতে আপনার শিশুর জন্য নাকের ড্রপ বানাতে পারেন। 8 চা চামচ ফোটানো জলে, ½ চা চামচ লবণ যোগ করুন এবং একটি নির্বীজনকৃত চামচ দিয়ে ভালভাবে মিশ্রিত করুন। দ্রবণটি পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনার শিশুর নাকের মধ্যে কয়েকটি ড্রপ ঢেলে দিন।
৪. ইউক্যালিপটাস তেল সর্দির চিকিৎসা করতে এবং নাকের বন্ধভাব খোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। আপনার শিশুর বালিশ এবং বিছানার উপর তেলের কয়েক ড্রপ ছিটিয়ে দিন। গন্ধটি শিশুদের পক্ষে খুবই উগ্র হওয়ার কারণে, ইউক্যালিপটাস তেল ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ করা উচিত নয়।
৫. বালিশের সাহায্যে আপনার শিশুর মাথাটিকে উপরে উঠিয়ে রাখলে মিউকাস বা শ্লেষ্মাকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে, যার ফলে নাকের পথটি খুলে যায়।
৬. আপনার শিশুকে হাইড্রেটেড রাখা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন সে সর্দিতে কাবু। তরল পদার্থ মিউকাসকে পাতলা করে এবং নাকের বন্ধভাব কমায়। 6 মাসের বেশি বয়সী হলে আপনি তাকে উষ্ণ এবং চিনি ছাড়া আপেলের রস এবং ক্যামোমিল চা (মধু ছাড়া) খাওয়াতে পারেন।
৭. সাধারণ পরিষ্কার চিকেন স্যুপ হল সর্দি ও কাশির জন্য আর একটি উপযোগী ঘরোয়া প্রতিকার। চিকেনে প্রদাহ বিরোধী গুণ রয়েছে যা নাকের পথ পরিষ্কার করে এবং আপনার শিশুর অনাক্রম্যতাকে উন্নত করে তোলে।
৮. যদি নাকের জমাভাব গুরুতর হয়, তাহলে সাওয়ার চালিয়ে দিয়ে বাথরুমে গরম জলের বাষ্প তৈরি হতে দিন। তারপর, কয়েক মিনিটের জন্য আপনার বাচ্চাকে বাথরুমে নিয়ে যান। আপনি তাকে গরম জল দিয়ে স্নানও করাতে পারেন।
৯. একটি ন্যাসাল অ্যাসপিরেটর একটি বন্ধ নাকের জন্য বিস্ময়কর কাজ করতে পারে। শুধু অ্যাসপিটারের মধ্যেকার বায়ুকে চাপ দিয়ে বের করে দিন এবং এটির ডগাকে আস্তে আস্তে আপনার শিশুর নাসারন্ধ্রে ঢোকান। তারপর ধীরে ধীরে বাল্বটি ছেড়ে দিন যাতে মিউকাস এতে ঢুকে যায়। উভয় নাকে একই জিনিস করুন। প্রতিবার ব্যবহারের পরে, অ্যাসপিটারেটি ধুয়ে নিন এবং এটিকে নির্বীজিত করুন।
১০. একটি কুল মিস্ট হিউমিডিফায়ার বাতাসে আর্দ্রতা তৈরি করবে এবং আপনার শিশুর নাকের পথের জমাভাব পরিষ্কার করে দেবে।
১১. যদি আপনার হিউমিডিফায়ার না থাকে, তাহলে সে ঘুমানোর সময় তার ঘরে উষ্ণ জল ভর্তি একটি বালতি রাখুন। উষ্ণ জল আপনার শিশুর বন্ধ নাকে আরাম পেতে সাহায্য করবে।
১২. সরিষা তেলের মালিশ সর্দি এবং নাক বন্ধের চিকিৎসার আরেকটি কার্যকর উপায়। 1/4 কাপ সরিষা তেলে, 3-4 কোয়া প্রায় চূর্ণ রসুন এবং মেথি (মেথী) বীজ যোগ করুন এবং এটি গরম করুন। তেলটি ঠান্ডা হয়ে গেলে, আপনার শিশুকে এটি দিয়ে মালিশ করুন। নাকের মাঝখানের সেতু, কপাল, গালের হাড়, বুক এবং পিঠে নরম এবং মৃদুভাবে হাত বুলিয়ে তেলটি লাগান।
১৩. শুকিয়ে যাওয়া মিউকাস হল নাক বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রধান অপরাধী। আপনার শিশুর নাকের ভিতরটি পরিষ্কার করার জন্য উষ্ণ জলে একটি তুলোর টুকরো ভেজান। আপনার ছোট্টটির যাতে আঘাত না লেগে যায় সে জন্য আলতোভাবে এবং যত্নের সাথে কাজটি করুন।
১৪. আপনার হাঁটুর উপর আপনার শিশুকে শোওয়ান এবং আস্তে আস্তে তার পিঠ চাপড়ে দিন। এর ফলে বুক থেকে মিউকাস উঠে আসে এবং সে সহজেই কেশে এটি বের করতে পারে।
১৫. আপনার শিশুকে একটি উষ্ণ কম্প্রেস দিন। উষ্ণ জলে একটি কাপড়ের ছোট টুকরো ভিজিয়ে নিন, অতিরিক্ত জল নিংড়ে বের করে দিন এবং তার নাক এবং গালের উপর এটি রাখুন। এটি কয়েক বার পুনরাবৃত্তি করুন।
১৬. জোয়ানের সাথে কয়েকটি রসুনের কোয়া রোস্ট করুন যতক্ষণ না সুগন্ধ বেরোতে শুরু করে। একটি পুঁটলির মধ্যে এটিকে বেঁধে নিন এবং এটি আপনার ছোট্টটির থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখুন। এর ধোঁয়া বন্ধ নাক থেকে আরাম প্রদান করবে।
কখন আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করা উচিত?
ঘরোয়া প্রতিকারগুলি আপনার শিশুর জন্য কাজ না করলে, তার একটি মেডিকেল চেক–আপের প্রয়োজন হতে পারে। একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে দেখা করার কথা বিবেচনা করুন, যদি:
- তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্দি না কমে
- আপনার শিশু দ্রুত শ্বাস নেয়
- তার একটি উচ্চ তাপমাত্রা থাকে
- তার কাশির সাথে রক্ত বেরোয়
- আপনার শিশুর অবস্থা খারাপ হচ্ছে বলে মনে হয়
- আপনার শিশুর ক্রমাগত গলা ব্যথা থাকে
- আপনি তাকে শোঁ শোঁ করে শ্বাস নিতে দেখেন এবং যদি তার ত্বক ফ্যাকাশে বা নীল হয়ে যায়
কিভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়?
একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার শিশুর তাপমাত্রা পরীক্ষা করবেন এবং তার শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়ার ধরণ লক্ষ্য করবেন। তার স্বাস্থ্যের অবস্থার আরো পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য, এক্স–রে করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
সর্দি, কাশি এবং নাক বন্ধ হওয়ার ঘরোয়া প্রতিকার প্রতিটি ভারতীয় পরিবারেরই ব্যবহার করা হয়। তবে, আমাদের বুঝতে হবে যে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্ত ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে নিরাময় করা যায় না। বিশেষ করে, শিশুদের ক্ষেত্রে যত্ন এবং সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত। এই ক্ষেত্রে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের কাছে যাওয়া আবশ্যক।