বাচ্চাদের র্যাশ হওয়ার প্রবণতা থাকে এবং বস্তুতই আপনার বাচ্চার র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলি হয়ে থাকলে আপনি চিন্তিত হবেন।কিন্তু আপনাকে চিন্তা করতে হবে না কারণ র্যাশগুলির চিকিৎসা করা যায়।মা-বাবা হওয়ার কারণে আমরা জানি যে এই র্যাশগুলির সমাধান করতে আপনি কখনই আপনার সন্তানের মুখের উপরে রাসায়নিক ভিত্তিক ক্রীম বা লোশনগুলিকে ব্যবহার করতে চাইবেন না,ঠিক সেই কারণেই আপনার সন্তানের ত্বকের যত্ন নিতে আমরা আপনার জন্য এখানে নিয়ে হাজির হয়েছি বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার।
শিশুদের মুখমণ্ডলের উপরে র্যাশের নিরাময় কীভাবে বাড়িতেই করা যেতে পারে
এখানে কিছু বিষয়ের উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনি নিরাপদে বাচ্চার মুখমণ্ডলের র্যাশের যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেনঃ
১. ওটমিলের মিশ্রণ
ওটমিল ত্বকে চুলকানির কারণে জ্বালাভাব দূর করতে সাহায্য করে। এর পেছনের কারণটি হল ওটমিলটিতে রয়েছে আভেনানথ্রামাইড যা একটি প্রদাহ বিরোধী হিসেবে পরিচিত।এটি ব্যবহারের উপায় হল প্রায় এক বাটি মত জৈব ওটমিল নিয়ে তার সহিত জল যোগ করুন। তারপরে, এটি একটি ব্লেন্ডারে নিয়ে সেটি একটি পেস্ট হয়ে না ওঠা পর্যন্ত ব্লেন্ড করুন।এবার এটি ত্বকের উপর লাগান এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।তবে এটি সরাসরি আপনার শিশুর মুখে লাগানোর আগে অ্যালার্জি পরীক্ষা করার জন্য এটি তার বাহুতে প্রয়োগ করুন। যদি আপনার বাচ্চা ওটে কোনও অ্যালার্জির ধাঁচের প্রতিক্রিয়া না প্রকাশ করে থাকে তবে আপনি ফুসকুড়ির জন্য এটিকে ব্যবহার করতে পারেন।
২. ক্যামোমাইল চা
এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি থাকে যা ক্ষতকে নির্বীজিত করে ত্বকের র্যাশকে দূর করতে সহায়তা করে।র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলির আকারের উপর নির্ভর করে ব্যবহারের জন্য আপনার এক বা তার বেশি টি-ব্যাগগুলির প্রয়োজন হতে পারে।গরম জলের মধ্যে এগুলিকে রেখে ফোটানর পর সেটিকে ঠাণ্ডা হতে দিন।তাপ কমে যখন জলটি হালকা গরম হয়ে যাবে,টি-ব্যাগগুলিকে জল থেকে তুলে বের করে নিয়ে সেগুলিকে আপনার বাচ্চার মুখের উপরে প্রতিস্থাপন করুন।টি-ব্যাগগুলি যে খুব বেশি গরম থাকবে না সেই বিষয়টিকে নিশ্চিত করুন।
৩. দই
শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও বিকাশের পর্যায়ে থাকার কারণে ত্বকে একজিমার মত র্যাশ হয়ে থাকে।দইয়ের মধ্যে উপস্থিত ভাল ব্যাকটেরিয়াগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করতে পারে এবং সেই সাথে চুলকানির মত র্যাশের উপসর্গগুলিকে দূর করে।
৪. কলার খোসা
অনেক কার্টুনে মজাদার দৃশ্য হিসেবে হয়ত কলার খোসাগুলি ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে,কিন্তু এটি আবার ত্বকের র্যাশের চিকিৎসায় চমৎকার সরঞ্জামও বটে। প্রথমে,কলার খোসাটিকে এক ঘন্টা বা তার বেশি সময়ের জন্য ফ্রীজের ভিতরে রেখে দিন।এরপর এটিকে ছোট ছোট টুকরো করে প্রভাবিত এলাকার উপর প্রয়োগ করুন এবং এর যাদুটি ক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে দিন!কলার খোসা কেবল ত্বককে পরিষ্কার করতেই সাহায্য করে না এটিকে সঠিকভাবে আদ্রও করে তোলে,তবে আপনার বাচ্চাকে সতেজ এবং উজ্জীবিত করে তুলতে কিছু সময়ের জন্য তার মনকে এই বিরক্তিদায়ক র্যাশগুলি থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
৫. নিম
ত্বকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক উপকারিতার দরুণ নিম বহু শতাব্দী ধরে ভারতবর্ষে ব্যবহার হয়ে আসছে।এর মধ্যে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী এবং ফাঙ্গাস বিরোধী বৈশিষ্ট্যাবলী যা র্যাশের চিকিৎসা করে সেগুলিকে দূর করতে সহায়তা করে।একজিমা হল এমন এক ধরনের ত্বকজনিত শর্ত যা নিমের সহায়তায় সফলভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে।আপনি কিছু নিম পাতা নিয়ে ভাল করে পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিয়ে সেগুলিকে কিছুটা জল সহযোগে থেঁতো করে নিমের একটি পেস্ট বানিয়ে নিতে পারেন।এবার সেই পেস্টটিকে আপনার বাচ্চার আক্রান্ত অঞ্চলগুলির উপর প্রয়োগ করতে পারেন তাকে উপশম দেওয়ার জন্য।
৬. অ্যালভেরা
অ্যালোভেরা হল ত্বকের চিকিৎসার জন্য একটি পবিত্র ঈপ্সিত বস্তু আর সেই কারণেই বহু ক্রীমের মধ্যে এই অত্যাবশ্যক উপকরণটি রয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল,অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটোরি এবং উপশমকারী বৈশিষ্ট্যগুলি।যদিও এর ক্রীমগুলি বাজারে সহজলভ্য তবে এগুলির মধ্যে কৃত্রিম মৌল এবং অতিরিক্ত কিছু রাসায়নিক সংযুক্ত থাকতে পারে,যেগুলি আপনার বাচ্চার সংবেদনশীল ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিকল্প হয়ে উঠবে যদি আপনি অ্যালোভেরার পাতা থেকে সরাসরি তার মধ্যস্থ জেলটি নির্যাসিত করে নিয়ে সেটিকে আপনার সন্তানের উপর প্রয়োগ করেন।এই পাতাগুলিকে যেকোনও শীর্ষস্থানীয় সুপার মার্কেটগুলি থেকে কিনে আনা যেতে পারে অথবা আপনার বাড়ির এক টুকরো বাগানে খুব সহজেই এই গাছটির চাষও করতে পারেন।
৭. জলপাই তেল
অনেকেই জলপাই তেলকে এর বিভিন্ন ভাল গুণাবলীর সাথে সাথে একটি দ্রুত প্রতিকারের সমাধান হিসেবেও দেখে থাকেন!জলপাই তেল হল একটি প্রাকৃতিক পরিশোধক এবং ত্বক থেকে অবাঞ্ছিত বিষাক্ত পদার্থগুলি ও অ্যালার্জেনগুলিকে অপসারিত করতে অতুলনীয় ভাবে কাজ করে।এটিতে ওলিয়োকান্থাল নামে একটি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের যে কোনও প্রদাহে স্বস্তি আনতে সহায়তা করে।এছাড়াও,এর মধ্যে থাকে ভিটামিন E এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি যা ত্বকের পুনর্নবীকরণ এবং নিরাময় প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
৮. শসা
এর মধ্যে প্রদাহ বিরোধী গুণাগুণ অন্তর্ভূক্ত থাকে যা মুখমন্ডলের উপর ত্বকের র্যাশগুলি হ্রাসে সহায়তা করে।শিশুদের ভীষণ সংবেদনশীল ত্বকের উপর শসার ধীর কার্যপ্রক্রিয়া
হওয়া সত্বেও,বহু মা-বাবাই এটিকে পছন্দ করেন।ওটমিলের সাথে শসাকে পিঁষে নিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরী করে নেওয়া যেতে পারে।এবার এটিকে শিশুর প্রভাবিত এলাকার উপর প্রয়োগ করতে পারেন যা র্যাশের উপসর্গগুলিকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
শিশুদের ত্বক সংবেদনশীল হয়ে থাকে সুতরাং অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিকগুলির সহিত যে সকল ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলি বাজারে পাওয়া যায় সেগুলিকে এড়িয়ে চলা হল বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ।তবে উপরে উল্লিখিত কোনও প্রতিকারই যদি কাজ না করে তবে তার চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা নিশ্চিত করুন।