শিশুরা যখন হাসে,দারুণ মিষ্টি ও আকর্ষণীয় লাগে,আর সেই আকর্ষণীয়তা আরও বেশি মাত্রায় বেড়ে ওঠে যখন তাদের মুখের ভিতরে ছোট্ট দুধেল সাদা একটা দাঁত উঁকি দিতে শুরু করে।যখন কোনও শিশুর প্রথম দাঁতটি তার মাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা শুরু করে,তখন সেই প্রক্রিয়াটিই দন্তোদ্গম বা দাঁত ওঠা নামে অভিহিত হয়ে থাকে।যাইহোক,তবে এই প্রক্রিয়াটি ছোট্টটির জন্য মোটেই যন্ত্রণাশূণ্য কোনও প্রক্রিয়া নয়।এর সঠিক লক্ষণগুলি একবার আপনি জেনে গেলে,পরবর্তী যা হবে তা সামাল দেওয়ার ব্যাপারে আপনি প্রস্তুত থাকতে পারেন।
ছোট্ট শিশুদের দাঁত ওঠার লক্ষণ এবং চিহ্নগুলি
এখানে ছোট্ট শিশুদের দাঁত ওঠার লক্ষণ এবং চিহ্নগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
1. কামড়ানোর স্বভাবটি বৃদ্ধি পায়
মাড়ি থেকে দাঁত বেরিয়ে আসতে শুরু করায় যে চাপ পড়ে তা মাড়ির পৃষ্ঠে একটা অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে,আর সেটিকে সামলে উঠার চেষ্টায় শিশু পাল্লা দিয়ে তার প্রিয় খেলনাগুলিকে কামড়ানো শুরু করে অথবা তার নিজের হাতের আঙ্গুলগুলির উপরেই কামড় দিয়ে চিবানোর চেষ্টা শুরু করে।
2. খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়
দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াটি ভীষণই যন্ত্রণাদায়ক,যা হয়ত শিশুকে বিপর্যস্ত করে তোলার কারণ হয়ে উঠতে পারে।তারা সেই সময় যা ভাবতে পারে তা হল যেকোনও ভাবেই সেই যন্ত্রণার উপশম করা।যার পরিণতিতে শিশু একেবারেই কোনও কিছু খেতে বা পান করতে অস্বীকার করে।
3. মুখ থেকে লালা ঝরা বেড়ে যায়
শিশুদের দাঁত ওঠা বুঝতে পারার এটি একটি দারুণ লক্ষণ।এই সময় প্রায়ই তাদের মুখ থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় লালার নিঃসরণ শুরু হয়।যার পরিণতিতে আপনার সন্তানের আবার ডায়রিয়াও হতে পারে।আর এই সকল ঘন ঘন মলের কারণে ব্যবহৃত ডায়পার থেকে আবার ছোট্টটির মধ্যে ডায়পারজনিত র্যাশও দেখা দিতে পারে,যা তাকে আরও বেশি মর্মাহত এবং বিপর্যস্ত করে তোলে।নিয়ম করে ডায়পারগুলি পরিষ্কার করুন এবং আপনি যদি তার মলের মধ্যে কোনও পূঁজ লক্ষ্য করেন অবিলম্বে ডাক্তারকে জানান।
4. মুখে র্যাশ বা ফুসকুড়ি
অত্যধিক মাত্রায় অনবরত লালা ঝরার আরেকটি ফল হল মুখের চারপাশের অঞ্চলটি সমানে ভিজে থাকা।এর ফলে ঐ অঞ্চলে শিশুর সূক্ষ্ম কোমল ত্বকে জ্বলন হতে শুরু করে এবং পরিণামে র্যাশ বা ফুসকুড়িগুলি দেখা দেয়।এটি মুখের চারপাশে,থুঁতনির উপরে এবং এমনকি গলা ও বুকের জায়গাতেও,যেখানে যেখানে লালা ঝরে গড়িয়ে পড়ে,সেই সকল জায়গাগুলিতেই হতে পারে।এই অত্যধিক মাত্রায় ঝরে পড়া লালা অসংখ্যবার মুছিয়ে দেওয়াটাও আবার র্যাশগুলিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে,সুতরাং বাচ্চার লালা গড়িয়ে পড়ার জায়গাগুলিকে শুকনো রাখার জন্য নরম শিশু ওয়াইপগুলি ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
5. চোষণ প্রবণতার বৃদ্ধি
আপনার ছোট্টটি তার মাড়িতে অনুভূত হওয়া অদ্ভুত ধরণের অত্যধিক চাপ লাঘব করার জন্য তার অবগত সবরকম চেষ্টাই প্রয়োগ করতে চাইবে।কামড়ানোর সাথে সাথে আবার অনেক শিশুরই প্রবণতা থাকে তাদের হাতের নাগালে যা কিছুই পায় সেগুলি নিয়ে চোষার।শুধু একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন যে আপনার ছোট্টটি যা কিছুই মুখে দিক না কেন সেটা যেন পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে থাকে এবং অতীব ক্ষুদ্র এমন কিছু না হয় যা তার বিষম লাগার মত বিপত্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে অথবা তার মুখের ভিতরে ভেঙ্গে গিয়ে সেগুলি সে গিলে ফেলতে পারে।
6. কান ধরে টানাটানি
কান,নাক এবং গলা দেহের এই তিনটি অংশই প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে যুক্ত।যখন শিশুদের দাঁত উঠতে শুরু করে তখন তারা তাদের মাড়িতে বেশ ভালমত একটা যন্ত্রণা অনুভব করে,যা আবার মাঝেমধ্যে তাদের কানের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে।সেই সময় কান ধরে টানলে সাময়িকভাবে যন্ত্রণা লাঘব হতে পারে,আর শিশু সেটিই প্রয়োগ করার চেষ্টা করে।আর এর ফল হিসেবে তারা অনবরতই তাদের কানগুলি ধরে টানতে চেষ্টা করে।
7. ঘুমের অভাব দেখা দেয়
মাড়ির উপর আরোপিত অদ্ভুত চাপ এবং মুখের ভিতরে হওয়া তীব্র যন্ত্রণা শিশুটির সহজে ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে একদমই সহায়ক হয়ে ওঠে না।তার দিবা নিদ্রা এবং রাতের ঘুম সবকিছুই ভণ্ডুল হয়ে যায়।আর ঘুম না হওয়ার কারণে সে সমানে অস্থির হয়ে ওঠে এবং বিমর্ষ হয়ে পড়ে।
8. অস্বস্তিতে ভোগে এবং মর্মাহত হয়ে পড়ে
প্রথম অবস্থায় যখন শিশুটি যন্ত্রণা লাঘবের জন্য তার সম্ভাব্য প্রায় সকল প্রয়াস করা সত্ত্বেও তা করে উঠতে পারে না এবং বুঝতে অক্ষম হয় যে কি কারণে সেটি হচ্ছে, তখন সে কোনও কারণ ছাড়াই ঘ্যান ঘ্যান করতে এবং কাঁদতে শুরু করে।ছোট খটো সামান্য জিনিসও তাকে বিরক্ত করে তুলতে পারে এমনকি তারা তাদের চারপাশের খেলনাগুলিকেও ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে।ব্যথা,যন্ত্রণা এবং ঠিক মত ঘুম না হওয়ায় আপনার ছোট্টটি অস্থির ও বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে,আর তাই আপনার ভালবাসা দিয়ে তাকে শান্ত করে তোলার চেষ্টা করুন।
9. দাঁত ওঠার কারণে জ্বর
যখন শিশুর দাঁত ওঠার লক্ষণের প্রসঙ্গ আসে,জ্বর হল সেগুলির মধ্যে এমন এক লক্ষণ যা বাবা–মায়েরা সচারচারই লক্ষ্য করে থাকেন তাদের সন্তানের দাঁত ওঠার ক্ষেত্রে। যদিও সেটিকে কোনওভাবেই প্রকৃত জ্বর বলা চলে না এবং দেহের তাপমাত্রা কেবল সামান্যই বেশি হয়।শিশুর দেহের তাপমাত্রা নিরাপদ সীমার মধ্যে আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি থার্মোমিটার ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন।যদি তাপমাত্রা 100.4 ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি হয়ে থাকে কিম্বা প্রলম্বিত সময়ের জন্য জ্বরটি অব্যহত রয়ে যায়,তবে সেটি অন্য কোনও অসুস্থতা বা সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকতে পারে এবং তার সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনতিবিলম্বে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করাই হল সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা।
শিশুর দাঁত ওঠার বিভিন্ন লক্ষণগুলি তিন মাস ধরে আপনাকে একটা এমন ধারণা দিতে পারে যার দ্বারা আপনি বুঝতে সক্ষম হবেন যে এর পরবর্তী কোন দাঁতটি তার আসতে চলেছে।আপনার ছোট্টটি এখন থেকে উপলব্ধি করতে শুরু করবে যে তার দাঁত আছে এবং সে সবকিছুই ধরে ধরে চিবোতে ও নতুন নতুন জিনিস করতে চাইবে।এই দাঁত ওঠার যাত্রা পথের দিকটি কিছুটা ব্যথা–যন্ত্রণা এবং প্রচুর অস্বস্তির সাথে ধাঁধায় ভরা একটি প্রহেলিকা মাত্র।সামান্য কিছু সাবধানতা অবলম্বন এবং যন্ত্রণা ভোলাতে তা থেকে শিশুর মনকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে শিশুদের দাঁত ওঠার এই যন্ত্রণাময় বিভীষিকার দিনগুলিকে কাটিয়ে আপনি দ্রুতই সেগুলি পিছনে ফেলে ছোট্ট মুখে মুক্তো হাসির বর্ষণে আপনার সোনামণিটির ভোগ করা সব কষ্ট ভুলে মোহিত হয়ে যাবেন।