শিক্ষাই হল আধুনিক সমজের ভিত্তিপ্রস্তর,আর সেইজন্য প্রতিটি শিশুকেই শিক্ষিত করে তোলা উচিত।শিশুদের বিনা বেতনে এবং আবশ্যিক শিক্ষা লাভের অধিকার অথবা ‘শিক্ষার অধিকার’ ভারতের সংসদ অনুসৃত একটি আইন।এই আইনটি শিক্ষাক্ষেত্রে 6-14 বছর বয়সের মধ্যে থাকা সকল শিশুরই মৌলিক অধিকার হিসেবে পরিগণিত।ভারতের সংবিধানে এই বিধানটি ভারতবর্ষের শিশুদের আরও বেশি কর্মসংস্থানমুখী,স্বাবলম্বী এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার ক্ষমতা প্রদান করে।
শিক্ষার অধিকার হল সংসদের একটি বিল যা প্রতিটি শিশুর প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণকে নিশ্চিত করে।এই আইনটি শিশুদের শুধুমাত্র শিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযোগই দেয় না এটি আবার শিশুদের একটি উন্নত গুণমানসম্পন্ন বিনা মূল্যে শিক্ষা দেওয়াও নিশ্চিত করে।এই আইন অনুযায়ী 6-14 বছরের মধ্যে থাকা শিশুরা বিনা-মূল্যে শিক্ষা লাভের অধিকারের আওতায় পড়ে।
শিক্ষাকে প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার হিসাবে গড়ে তোলার জন্য 135 টি দেশের মধ্যে একটি হয়ে ওঠে ভারত,2009 সালের 26 শে আগস্ট এই বিলটি পাশ হয়,আর এই আইনটি কার্যকর হয় 2010 সালের 1 লা এপ্রিল থেকে।
RTE এর ধারা অনুযায়ী প্রথাগত শিক্ষার জন্য এই পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনও মা-বাবারই এই RTE এর বৈশিষ্ট্যগুলিকে বুঝে নেওয়া জরুরী।যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে,এই আইনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি এবং আইনের নিয়মবিধিগুলি,যার মধ্যে আবার রয়েছে RTE-এ প্রবেশের বয়সসীমা এবং অন্যান্য আরও অনেক কিছু।
RTE আইনের আওতায় ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা বিষয়ক কিছু বিষয় এখানে উলেকিহ করা হলঃ
মা-বাবারা অনলাইনের মাধ্যমে RTE আইনের অধীনে ভর্তির জন্য সুবিধাগুলি নিতে পারবেন।সেটি কীভাবে এখানে তা জানানো হলঃ
RTE কোটার আওতায় থাকা বিদ্যালয়গুলির জন্য আবেদনের প্রথম পদক্ষেপটি হল আপনার আশেপাশের যোগ্য বিদ্যালয়গুলির সন্ধান করা। আপনি অনলাইনের সাহায্যেও আপনার রাজ্যের বিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন।আপনি যদি কর্ণাটকের বাসিন্দা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি এই লিঙ্কটি পরীক্ষা করতে পারেন।
মা-বাবাদের তাদের শিশুদের বিদ্যালয়ে প্রবেশের বিকল্পটি বেছে নেওয়ার সময় কোটা ব্যবহার করে সরকারী পোর্টালে লগঅন করতে হবে এবং প্রদত্ত নথিটি পূরণ করতে হবে।একবার আপনার ফর্মটি পূরণ করা হয়ে গেলে সেটি প্রিন্ট করে নিন।
এরপর আপনি প্রাসঙ্গিক নথিপত্রের সাথে আপনার পূরণ করা ফর্মটিকে আপনার মনোনীত বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে জমা দিতে পারেন।এই আইনের অধীনে কোনও শিশুকে সরকারী বিদ্যালয়ে প্রবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়,আর বেসরকারী বিদ্যালয়গুলিকেও এই আইনের আওতায় 25% শিক্ষার্থী গ্রহণ করতে হবে।
RTE এর অধীনে বিদ্যালয়ে শিশুর নাম নথিভুক্ত করার আরও কিছু খোঁজখবর এখানে দেওয়া হল।
রাজ্য শিক্ষা সংস্থা এবং নবোদয় নামে পরিচিত বিশেষ বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের ভর্তি করানোর সময় কোনও স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নেই।তবে বেসরকারী কিছু বিদ্যালয়গুলি হয়ত শিশুদের ভর্তির আগে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে তবে সেক্ষেত্রে যাতে লিঙ্গ,ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে শিশুদের মধ্যে কোনও বৈষম্য না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই প্রশাসনিক সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মের অধীনে পরীক্ষাগুলি নেওয়া বা করা উচিত।
ভর্তি করানোর প্রাসঙ্গিক ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার পর,আপনার শিশুটি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের একটি পোশাক পাবে।এবং বিদ্যালয় তার জন্য কোনও মূল্য ধার্য করবে না।
গুণমান সম্পন্ন শিক্ষার অধিকার আপনার শিশুর আছে।এর অর্থ হল বিদ্যালয়ে ভর্তি করার প্রক্রিয়ার সময় বিদ্যালয় প্রশাসকমণ্ডলীরা প্রাসঙ্গিক পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে আপনাকে গাইড করবেন যার মধ্যে রয়েছে নোটবুক, পাঠ্যপুস্তক এবং স্টেশনারী জিনিসগুলিও।প্রতিটি বিদ্যালয়েই এই সমস্ত কিছুই স্কুলে বিনা মূল্যে দেওয়া হবে এবং এর জন্য কোনও অতিরিক্ত চার্জ করা হবে না।
বিভিন্ন পরিমণ্ডলী থেকে আসা শিশুদের প্রতি স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার বজায় রাখতে,নবোদয় বিদ্যালয় এবং সরকারী বিদ্যালয়গুলি কোনওরকম শংসাপত্র ছাড়াই শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তির স্বীকারোক্তি দেয়।যেসব শিশু প্রাসঙ্গিক নথিপত্র জমা দিতে পারে না বা যাদের কাছে সেগুলির কোনওটি কখনওই নেই তারাও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যোগ্য এবং এর জন্য পদ্ধতিটি কিছুটা আলাদা হয়ে থাকে এবং তা নাম নথিভূক্তকরণ কর্তৃপক্ষের বিবেচনার অন্তর্ভুক্ত হয়। আরও তথ্যের জন্য স্থানীয় সরকারী অফিসে যোগাযোগ করুন।
RTE আইনের মাধ্যমে শিশুর জন্য আবেদনকারী মা-বাবারা আশেপাশের সর্বাধিক 5 টি স্কুলে আবেদন করতে পারবেন।এটি মা-বাবার পছন্দানুযায়ী হতে পারে।যদি কোনও কারণে আবেদনটি ব্যর্থ হয়,সেক্ষেত্রে সরকার আপনার বাচ্চাকে আপনার বাসভবনের নিকটবর্তী একটি নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ে বা আপনার তরফে কোনও বেসরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর আবেদন জানাতে পারবেন।
উপরের উলেখ অনুযায়ী,এক্ষেত্রে এমন কিছু নথিপত্র রয়েছে যেগুলি আপনার RTE এর ভর্তি ফর্মের সাথে জমা দেওয়া প্রয়োজন হয়। এগুলি সরকারী পোর্টালের জন্য সহায়ক হতে পারে।সেরকমই কিছু প্রয়োজনীয় নথিগুলির উল্লেখ এখানে করা হলঃ
কর্ণাটক | |
মহারষ্ট্র | |
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ | |
অন্ধ্র প্রদেশ | |
অরুণাচল প্রদেশ | |
অসম | |
বিহার | |
চন্ডিগড় | |
ছত্তিশগড় | |
দিল্লী | |
গোয়া | |
গুজরাট | |
হরিয়ানা | |
হিমাচল প্রদেশ | |
জম্মু ও কাশ্মীর | |
ঝাড়খন্ড | |
কেরালা | |
লাক্ষাদ্বীপ | |
মধ্যপ্রদেশ | |
মণিপুর | |
মেঘালয় | |
মিজোরাম | |
নাগাল্যান্ড | |
উড়িষ্যা | |
পন্ডিচেরী | |
পাঞ্জাব | |
রাজস্থান | |
সিকিম | |
তামিলনাড়ু | |
ত্রিপুরা | |
উত্তরপ্রদেশ | |
উত্তরাখন্ড | |
পশ্চিমবঙ্গ | |
দমন ও দিউ | |
দাদরা ও নগর হাভেলি |
নবোদয় বিদ্যালয়গুলিকে RTE আইনে ছাড় দেওয়া হয়েছে।নবোদয় বিদ্যালয়ে, 75% আসন গ্রামীণ শিশুদের জন্য সংরক্ষিত। যারা হয়ত কাগজ-কলমের কাজটি অর্ধেক করে থাকেন,সে সকল অভিভাবক সেগুলি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়ে ওঠেন না। বেশিরভাগ নবোদয় বিদ্যালয়গুলিই কোনও রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ভর্তির গ্যারান্টি দেয়। বালিকাদের জন্য এইসব বিদ্যালয়গুলিতে 3% সংরক্ষণ আছে এবং আসনগুলি SC/ST শিশুদের জন্য সংরক্ষিত।
শিক্ষাবোর্ডের ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম আলাদা আলাদা হয়ে থাকতে পারে। এটি কেবল RTE এর অধীনস্থ শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়,সকল প্রকার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। CBSE, ICSE,রাজ্য এবং NIOS এর মত প্রতিটি বোর্ডের পাঠ্যক্রমগুলি আলাদা।উপরন্তু আবার, IB এবং IGCSE আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়গুলি যারা RTE এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করে তাদেরও পৃথক পৃথক পাঠ্যক্রম থাকতে পারে।আরেকটি লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, আপনার শিশু যে রাজ্যে পড়াশোনা করছে তার উপর ভিত্তি করেও আবার রাজ্য বোর্ডে পাঠ্যক্রমটি পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
বিভিন্ন রাজ্যের পাঠ্যক্রম এবং মূল্যায়ন সম্পর্কিত পদ্ধতির দায়িত্বে রয়েছে সেই রাজ্যের রাজ্য শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের সাথে সাথে রাজ্য শিক্ষা মন্ত্রালয় এবং শিক্ষাব্রতীদের একটি প্যানেল পাঠ্যক্রমটির ডিজাইন করে এবং SSLC বোর্ড নিজ নিজ রাজ্যের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে।
শিক্ষকমণ্ডলী ছাত্র-ছাত্রীদের অগ্রগতির উপরে লক্ষ্য রাখেন,এবং যখন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার প্রয়োজনীয় পয়েন্টগুলি অর্জন করে তখন তাদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।এইভাবে ন্যায্যতার সাথে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ করা হয়ে থাকে।অপেক্ষাকৃত কম গুণমানের শিক্ষার্থীদের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের স্তরে নিয়ে আসেন।এই ধরণের অভিভাবকত্ব এবং শিক্ষা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা দূর করে।
শিক্ষার আইন অনুসারে,RTE এর আওতাভূক্ত শিশুরা এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সমস্ত শিশুদের ক্ষেত্রেই তাদের পিতামাতার সম্মতি ব্যতীত তাদের একই শ্রেণীতে রেখে দেওয়া যাবে না। যদি কোনও বাবা-মা রাজি হন,তবে সেক্ষেত্রে শিশুটিকে একই শ্রেণীতে রেখে দেওয়া যেতে পারে, তবে এটি কোনওভাবেই ব্যর্থতা হিসেবে ধার্য নয়।এর পাশাপাশি আবার এটিও সত্য যে, কোনও শিশুকেই আবার বিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করা যাবে না।
এই পরিস্থিতিটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে শিশুর উপর।তত্ত্ব অনুযায়ী,যদি শিশুটি তার শিক্ষা সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয়তার লক্ষ্য এবং কোটাগুলি পূরণ করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে শিশুটি 14 বছর বয়সে পদার্পণ করতে চলার কারণে তাকে একটি শ্রেণী ছেড়ে তার পরের শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য বলা হতে পারে।আর যদি তা না হয়,সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়টি সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে এটি অবশ্যই নিশ্চিত করে যে, শিক্ষার্থীটি তার সমকক্ষদের স্তরেই রয়েছে।
RTE আইনটি সমাজের কোনও বিশেষ অংশের জন্য নয়।এটির লক্ষ্য হল সীমিত বা কোন সংস্থান নেই এমন বাচ্চাদের পড়াশোনা করা্র ক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়া।সমাজে সমৃদ্ধশালী নন এমন সদস্যরা এই আইনের সুবিধা গ্রহণের আওতার মধ্যে পড়ে।RTE এর লক্ষ্য হল সমস্ত শিশুকে শিক্ষার গ্যারান্টি দেওয়া।যার অর্থ হল RTE এর আইনের অধীনে সমাজের বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে আসা শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ থাকবে।
শিশুদের শিক্ষার এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাওয়াকে RTE আইনটি নিশ্চিত করে।RTE নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনুগ্রহ করে রাজ্য স্তরের শিক্ষা দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করুন।এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে,আপনার শিশুর ভবিষ্যৎটি এই আইনের দ্বারা সুরক্ষিত।