In this Article
42 সপ্তাহে,আপনার সন্তান এখন একজন টডলার অর্থাৎ একজন টলমলমান শিশু হওয়ারই পথে।এই পর্যায়ে সে তার খাদ্যাভ্যাসের ব্যস্ততা প্রদর্শন করাতে শুরু করতে পারে অথবা শীঘ্রই দেখাতে শুরু করতে পারে তার রাগ, যখন সে কোনো কিছু চাওয়ার পরেও সেটা পেয়ে ওঠেনা।এই বয়সে আবার আপনার শিশু একজন মহান সমস্যা সমাধানকারী–ও হয়ে উঠতে শুরু করবে। কিছু বাচ্চা আবার চেষ্টা করে কোনো সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করে ফেলবে(যেমন তার নাগালের বাইরে থেকে খেলনাটাকে আদায় করে নিতে পারবে), আবার তারা কিছু সাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করবে এবং সেই কাজটা করা তারা ত্যাগ করবে না চালিয়ে যেতেই থাকবে যতক্ষণ না তাদের লক্ষ্যবস্তুটিকে পায়।আপনার সন্তানের জ্ঞানীয় বিকাশ একটা উচ্চতর মাত্রায় পৌঁছাবে তার 42 সপ্তাহ বয়সে এবং সে তার বিশ্বের আরও বেশী অণ্বেষণ করা শুরু করবে।
আপনার 42 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ
এই বয়সেও অনেক বাচ্চার মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হওয়ার উদ্বিগ্নতা–টি বজায় থাকবে যা রাত্রে তাদের অনিদ্রার কারণ হয়ে উঠবে।কিন্তু এই একই সময়ে,সে যথাসম্ভব দক্ষতার সাথে তার চারপাশের অণ্বেষণ করার মধ্য দিয়ে এক মহান আনন্দ উপভোগ করবে।প্রস্তুত থাকুন সারা ঘরে অনেক বস্তুর বাক্স,জিনিসপত্র ছড়িয়ে থাকতে দেখার জন্য।যেহেতু আপনার বাচ্চা অনবরত সারা ঘরে ঘুরে বেড়াতে থাকে,আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে তার পিছনে ছুটে তাকে ধরার জন্য,যখন তার খাওয়ার মাঝে, জামাকাপড় বদলানোর সময় অথবা স্নানের সময় সে ছুটে পালাবে।এই বয়সে আপনার বাচ্চা দৃঢ়তার সাথে উঠে বসতে সক্ষম হবে,দ্রুত হাঁটতে পারবে,যখন সে কিছু ধরে থাকবে এবং কোনো অবলম্বন ছাড়াই উঠে দাঁড়াবার সম্ভাবনাও থাকে।সে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে নীচু হয়ে তার খেলনাটিকেও তুলতে সক্ষম হবে।যদি আপনার বাচ্চা এখনো হাঁটতে না শেখে,ভয় পাবেন না।অনেক শিশুই প্রথম হাঁটতে শেখে তাদের 12 মাসের আশে পাশে অথবা আরো কিছুটা পরে।42 সপ্তাহে আপনার সন্তান আরও বেশী দক্ষ হয়ে উঠবে এবং সে দূরত্ব,গভীরতা,সময়,কারণ এবং তার ফলাফল সম্পর্কে ধারণা করতে সক্ষম হয়ে ওঠে।কিছু বস্তুকে এক জায়গায় জড়ো করা তারপর আবার সেগুলো ছড়িয়ে ফেলা,বলকে গড়িয়ে দেওয়া অথবা তার খাবার থালায় ফলের টুকরোর মধ্য থেকে কর্নফ্লেক্সগুলোকে বেছে আলাদা করার মত বিষয়গুলোকেও সে তার খেলার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করবে।
আপনার 42 সপ্তাহ বয়সী শিশুর উন্নয়ণমূলক মাইলস্টোনগুলি
নিম্নোল্লিখিত 42 সপ্তাহ বয়সী মাইলস্টোনগুলি আপনি আপনার সন্তানের মধ্যে দেখার আশা করতে পারেন।
- আপনার বাচ্চা উপুড় হয়ে শোয়ার অবস্থা থেকে উঠে বসতে সক্ষম হবে।
- কিছু আসবাবপত্র ধরে সে দ্রুত হাঁটতে পারবে।
- আপনার বাচ্চা এটিও বুঝতে পারবে যে কখন আপনি তাকে কোনো কিছুতে ‘না‘ বলে উঠবেন, যদিও সে তা মান্য নাও করতে পারে।
- আপনার সোনা এখন হাততালি–ও দিতে পারবে যা আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে।
- সে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে নীচু হয়ে ঝুঁকে তার হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে চিমটি দিয়ে কোনো বস্তু তুলতে পারবে।
- সে মেঝের মধ্যে কোনো জিনিসকে গড়িয়ে দিতেও পারবে।
- যদি আপনি উপযুক্ত অঙ্গভঙ্গীর দ্বারা তাকে কিছু নির্দেশ দেন যেমন,’মায়ের কাছে এসো‘, অথবা ‘বলটাকে বাক্সের মধ্যে ভরে রাখো‘-এগুলি সে বুঝতে পারবে।
- আপনার ছোট্ট সোনার নাগালের বাইরের বস্তু,যেগুলি তার প্রয়োজন সেগুলিকে সে হাতে পাওয়ার সমাধান খুঁজেও বের করতে পারবে।
খাওয়ানো
যেহেতু এই সময়ে আপনার সন্তানের খাওয়ার অভ্যাসের প্রায়ই পরিবর্তন ঘটে তাই সে মাঝে মধ্যেই তার অনিয়মিত খাওয়ার ধরণ প্রদর্শন করাতে পারে।এর কারণ হল সে এখনও এই সময়ে তার খাদ্যতালিকায় বুকের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাসেও নিজেকে রপ্ত করার চেষ্টা করতে থাকে।সুতরাং এটা তার কাছে খুবই স্বাভাবিক যে একদিন সে পুরোপুরি শক্ত খাবার ও কিছু হালকা খাবার খেলে তার পরবর্তী দিনে বুকের দুধ ছাড়া আর কিছুই খেতে না চাইতেই পারে।সাধারণত,রাত্রি বেলায়,দাঁত ওঠার যন্ত্রণার কারণে সে উঠে পরতে পারে এবং সেই যন্ত্রণা প্রশমিত করার জন্য সে নিজেকে ঘুমে আচ্ছন্ন করতে আপনার স্তন চাইতে পারে।এটা জানা যে,42 সপ্তাহ বয়সেও মায়ের বুকের দুধই শিশুদের প্রতিদিনের বেশীর ভাগ পুষ্টির যোগান দেয় এবং সেক্ষেত্রে শক্ত খাবারের ভূমিকা দ্বিতীয়। সুতরাং যখন যেমন প্রয়োজন হবে তাকে স্তনদুগ্ধ পান করান এবং যখন আপনি বাইরে যাবেন আপনার বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বুকের দুধের পরিমাণের প্রাথমিক স্তরে গড়ে সে কতবার খায় তার হিসাব করে সেই অনুযায়ী তার ব্যবস্থা নেওয়া ভাল।42 সপ্তাহে আপনার শিশুর আর বোতলের প্রয়োজন হয় না,সে কাপ ব্যবহার করবে।সুতরাং যদি আপনি বাইরে যান তবে সেক্ষেত্রে আপনি আপনার সন্তানের তত্ত্বাবধায়কের কাছে আপনার বাচ্চার জন্য তার প্রয়োজন মত বুকের দুধ পাম্প করে রেখে যাবেন এবং তাকে বলবেন সেটিকে অল্প অল্প করে আপনার সন্তানকে খাওয়াতে।তাকে এটিও বলবেন যে বাচ্চার এই দুধ গ্রহণের একটি নথি রাখতে যাতে আপনি সেইমত তার জন্য বুকের দুধ পাম্প করে মজুত রেখে যেতে পারেন।
ঘুমানো
42 সপ্তাহ বয়সে আপনার সন্তান আরো ভালোভাবেও বেশী করে হামা দিতে থাকবে।গবেষণায় দেখা যায় যে,শিশুদের ঘুমের মধ্যে হামা দেওয়ার প্রবণতায় তাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে,এবং তাদের হামা দেওয়া শুরু করা থেকে প্রায় তিন মাস ধরে তারা তাদের ঘুমের মধ্যেও সেটা প্রদর্শন করাতে থাকে।ডাক্তাররা বলে থাকেন যে,হামা দেওয়া আপনার বাচ্চার কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং তার সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার উপরও প্রভাব ফেলে।এই অস্থিরতার কারণের জন্যই রাত্রি বেলায় অনিদ্রার পরিমাণ বেড়ে যায়। এই সময় পর্বটি অভিভাবকের কাছে বিশেষ কঠিন মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারে যেহেতু শিশুর সঞ্চালন দক্ষতার এবং দাঁত ওঠার যন্ত্রণা তার ভীষণ ভাবে ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হয়ে উঠতে পারে।তার একটানা ঘুমের পরিমাণ ক্রমশ উচ্চে পৌঁছায় এবং পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে তা পূর্ণতা অর্জন করে।
আপনার 42 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের পরামর্শ
এখানে আপনার 42 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্ন নেওয়ার কিছু উপায় বর্ণিত হল।
- একটা বড় প্লাস্টিকের গামলায় আপনার সোনাটিকে রোজ স্নান করান।যদি একটি অনেক বড় গামলায় তাকে স্নান করাতে চান তবে তার পাশে প্রতিরক্ষা মূলক বাম্পার এবং অপিচ্ছিলকারী মাদুর ব্যবহার করা নিশ্চিত করুন তার সুরক্ষার স্বার্থে।
- আপনার বাচ্চার চুলে কাঁটা এবং ক্লিপ ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন,এগুলি তাদের সম্ভাব্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।আপনার শিশুর চুলে আলাদা কোনো কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তার জন্য টিয়ার ফ্রী অর্থাৎ চোখ জ্বালা না করা এবং চুলে জট না পাকার একটি শ্যাম্পু ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
- আপনি যদি আপনার শিশুর প্রথম চুল কাটার পরিকল্পনা করেন, একটা স্টাইলিস্ট চুলের কাট তার জন্য পছন্দ করুন।যখন আপনার বাচ্চা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্থ থাকবে না সে সময়ের জন্যই এটি করার পরিকল্পনা করুন।এই প্রক্রিয়াটি করার সময় সেটির থেকে তার মনযোগ সরাতে তার হাতে তারই সবচেয়ে প্রিয় খেলনাটি প্রদান করুন।
- যখন আপনার বাচ্চার দাঁত মাজাবেন কেবলমাত্র দানা–শষ্যের পরিমাণের মতই সামান্য পরিমাণ টুথপেস্টের প্রলেপ ব্যবহার করুন।খুব বেশী ফ্লুওরাইড তার ক্ষেত্রে বিষাক্ত হতে পারে।
- সে যখন ঘুমাবে তার নোখ গুলো ছোট করে কেটে দিন।এটি তার আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কমাবে অনেক সময় যা তার তীক্ষ্ণ নোখের দ্বারাই চোট লাগার কারণে হয়ে থাকে।
- বোতল থেকে দুধ খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করতে তাকে একটা সিপি কাপের সাথে পরিচয় করান এবং তাকে দেখান সেটির হাতল কীভাবে ধরতে হয় ও কীভাবে ব্যবহার করে সেটি থেকে পান করতে হয়।
- সেই সকল শিশু খাদ্যগুলি এড়িয়ে চলুন যেগুলি তাকে খাওয়ানোর সময় তার শ্বাসরোধ হয়ে যায়,যেমন গোটা আঙুর অথবা কাঁচা গাজর।সব সময় টুকরো করে কাটা এবং রান্না করা ফল,চীজ এবং সবজি যেগুলি খোসা ছাড়ানো সেগুলিই আপনার বাচ্চাকে খাওয়ান।
পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকাকরণ
বেশীরভাগ ডাক্তারই এই দশ মাস বয়সে কোনো নিয়মিত চেকআপের নির্দিষ্ট সময়সূচী নির্ধারণ করেন না।
1.পরীক্ষা
আপনার সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধির বিকাশকে ট্র্যাক করার জন্য ডাক্তারবাবু তার উচ্চতা এবং ওজন পরিমাপ করবেন।যদি তার মধ্যে অ্যানিমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে তিনি আপনার শিশুর রক্ত পরীক্ষা করাতে পারেন রক্তে হিমোগ্লোবিন,আয়রন ও সীসার মাত্রা নিরূপণ করে দেখার জন্য।
2.টিকাকরণ
42 সপ্তাহ বয়সে আপনার সন্তানকে দেওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে হেপাটাইটিস B ভ্যাক্সিনের চূড়ান্ত ডোজটি(3-4 টি ডোজের মধ্য থেকে) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিনের ডোজ (ডাক্তারবাবুর সুপারিশ অনুযায়ী)।আবার তাকে IPV (পোলিও) ভ্যাক্সিনের ডোজটিও দেওয়ানোর প্রয়োজন হতে পারে তার 6-18 মাসের মধ্যে।
খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ
আপনি নিম্নোলিখিত খেলা ও ক্রিয়াকলাপগুলো আপনার 42 সপ্তাহ বয়সী বাচ্চার সাথে প্রয়োগ করতে পারেন।
- এমন একটা খেলা নির্বাচন করুন যাতে খুব সাধারণ নির্দেশ গুলো সে শুনতে পায়।এক্ষেত্রে তাকে একটি বাক্স সহযোগে বল দিয়ে ঐ বাক্সের ভিতরে বলটিকে রাখতে বলুন অথবা তার টেডি–বিয়ারটিকে অন্য কোথাও রেখে দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করুন,’তোমার টেডিটা কোথায়?’এই কৌশলটি তার মাথায় সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
- সমস্ত খেলনাকে বাক্সের ভিতরে ভরে ফেলার মত একটা খেলা আপনি আপনার বাচ্চার সাথে খেলতে পারেন এটা তাকে অল্প বয়স থেকেই ঘর পরিষ্কার রাখা শেখাতে সাহায্য করে।
- ঘরের একপ্রান্তে বসে আপনার বাচ্চাকে আপনার কাছে আসতে ডাকুন।এই খেলাটি তার সঞ্চালন দক্ষতার বিকাশে সাহায্য করে যেহেতু সে কোনো কিছুকে ধরে ধরে অথবা হামা দিয়ে আপনার কাছে এসে পৌঁছায়।
কখন একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবেন
যখন নিম্নোলিখিত বিষয়গুলো আপনার সন্তানের মধ্যে লক্ষ্য করবেন তখন আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনার প্রয়োজন।
1.পোকামাকড় দংশন করলে বা কামড় দিলে
এই বয়সে এটি বাচ্চার পক্ষে খুব ক্ষতিকারক হতে পারে।যদি আপনি আপনার শিশুর দেহে কোনো হুল ফুটে থাকতে লক্ষ্য করেন,হুলটিকে চেঁচে বের করে দেবেন,সেই ক্ষতস্থানটি সাবান ও জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে দেবেন,এরপর ঐ ছিদ্রের জায়গাটিতে বরফ পট্টি বা বেকিং সোডা এবং জল দিন যন্ত্রণা উপশমের জন্য।যদি 24 ঘন্টা পরেও জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে থাকে এবং বমি হতে শুরু করে অথবা জ্বর আসে তবে ডাক্তারের সাথে আলোচনার প্রয়োজন আছে।
2.এলার্জি প্রতিক্রিয়া
যদি আপনার আপনার সন্তান শ্বাসকষ্টে ভোগে,র্যাশ হয়ে থাকে,তার জিভ,হাত অথবা মুখ ফুলে যায় অথবা কোনো আঘাত পেয়ে থাকে,ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন যেহেতু এসব ক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার কোনোরকম এলার্জির প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে অথবা কোনো কিছুতে সে অ্যানাফিলেক্টিক শক পেয়ে থাকার কারণেও হতে পারে।
একটি 42 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ বিস্ময়,আনন্দ,নিদ্রাহীনতা,আবেগ উপচে পড়া এবং জগাখিচুড়িতে পূর্ণ। যদিও এটি আপনাকে বিরক্ত করে তুলতে পারে তবুও শেষ পর্যন্ত এটি উপভোগ করেন।