In this Article
অপরিহার্য তেলেগুলির অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এবং গর্ভাবস্থায় সেগুলির ব্যবহার উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।এরকমই একটি অত্যাবশ্যকীয় তেল যা একজন গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী হতে পারে, তা হল ইউক্যালিপটাস তেল।এই গুরুত্বপূর্ণ তেলটির উপকারীতাগুলি আমরা এখানে অণ্বেষণ করব এবং তারই সাথে আবার এটি ব্যবহারের সময় অনুসরণ করা উচিত এমন কিছু সতর্কতামূলক পরামর্শগুলিও আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব।
গর্ভাবস্থায় ইউক্যালিপটাস তেলের ব্যবহার এবং সুবিধাগুলি
অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় উদ্ভিদ ইউক্যালিপটাসের সন্ধান এখন বিশ্বের অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলেও পাওয়া যায়।অনেক ধরণের ইউক্যালিপটাস হয়ে থাকে, যার পরিধি লম্বা বৃক্ষ থেকে ছোট গুল্মের মধ্যে বিস্তৃত।তবে এর অনেক ধরণের মধ্যে ব্লু গাম কিম্বা অস্ট্রেলিয়ান ফিভারের মধ্যে থাকা এর ঔষধি এবং নিরাময়কারী বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে এটি হল ইউক্যালিপটাসগুলির মধ্যে সর্বাধিক পছন্দের একটি।এই অলৌকিক গাছটির পাতা থেকে এই বিশেষ থেরাপিউটিক তেলটি নিঃসৃত করা হয়।এই তেলটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এবং এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি থাকায় তা বহুলাংশে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।এই বিস্ময়কর তেলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মহিলা প্রচুর উপকার পেতে পারেন।গর্ভাবস্থায় এটি একাধিক উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল মহিলাই তাদের ডায়েট, জীবনযাপন, অনুশীলন ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের শরীর সম্পর্কে বাস্তবেই সতর্ক হয়ে ওঠেন।তবে আপনি যদি ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করতে চান এবং গর্ভাবস্থায় এটি কীভাবে আপনার শরীরে প্রভাব ফেলবে সে ব্যাপারে সংশয়প্রবণ থাকে, তবে ইউক্যালিপটাস তেলের এই সকল সুবিধাগুলির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিন।
1. স্ট্রেস থেকে মুক্তি আনার জন্য চমৎকার
আপনার এক গোছা আনন্দের ছোট্ট ডালিটিকে এই পৃথিবীতে স্বাগত জানানোর আনন্দে আপনি হয়ত অবিশ্বাস্যভাবে অভিভূত, আনন্দিত এবং উত্তেজিত হয়ে উঠবেন, কিন্তু তারই সাথে আপনি আবার হয়ত আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও বেশ উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারেন।এই সকল চিন্তা এবং উদ্বেগগুলি গর্ভাবস্থায় আপনার মধ্যে হয়ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, আর স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আপনার এবং আপনার অনাগত শিশুর পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।এটি বিশ্বাস করবেন কিনা জানা নেই, তবে এই তেলটি গর্ভাবস্থায় গড়ে ওঠা স্ট্রেস বা মানসিক চাপের লক্ষণগুলি থেকে উপশম বা মুক্তি আনার জন্য ভীষণ মাত্রায় উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল একটি অয়েল ডিফিউজারের মধ্যে এই তেল কয়েক ফোঁটা যোগ করুন এবং এর সুগন্ধি বাতাসটির ঘ্রাণ নেওয়ার সময় একটা স্বস্তির বিশ্রাম নিন।আপনার ইন্দ্রিয়গুলিকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তোলার জন্য আপনার হাতের কবজির উপর, ললটের পার্শ্বদেশে, পায়ের পাতার তলায় অথবা আপনার কান দু‘টির পিছনে এই অত্যাবশ্যকীয় তেলটি কয়েক ফোঁটা আপনি সরাসরি ঘষে দিতে পারেন।বিকল্প রূপে, আপনি যে কোনও ধরণের চাপ কাটাতে এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার জন্য বোতল থেকে সরাসরি এই অপরিহার্য তেলের সুবাস নিতে পারেন।
2.দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল
কিছু মহিলা হয়ত তাদের গর্ভাবস্থায় দাঁতের সমস্যায় ভুগতে পারেন।যদিও গর্ভাবস্থা নিজে কোনওরকম দাঁতের সমস্যার কারণ নাও হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু আপনার মধ্যে যদি এর মধ্যেই কোনও ধরণের দাঁতের সমস্যা হয়ে থাকে, তবে গর্ভাবস্থায় সেটি আরও বাড়াবাড়ি হয়ে উঠতে পারে।এটি হয়ে থাকতে পারে গর্ভাবস্থায় আপনার দুর্বল অনাক্রম্যতার কারণে।ইউক্যালিপটাস তেল নানা ধরণের দাঁতের সমস্যার চিকিৎসায় উপকারী হিসেবে প্রমাণিত।মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে এবং দুরূহ ডেন্টাল প্লাক হওয়াকে দূরে রাখতে আপনি এই তেলটিকে ব্যবহার করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় দাঁতে ব্যথা এবং মাড়ির সমস্যার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এই তেলটি ভীষণ ভাবে উপকারী।এছাড়াও ইউক্যালিপটাস তেল সমন্বিত যেসকল টুথপেস্ট, মাউথ ওয়াশ এবং অন্যান্য আরও যেসব ডেন্টাল বা দাঁতের জন্য ব্যবহৃত পণ্যগুলি পাওয়া যায় সেগুলিকেও আপনি ব্যবহারের জন্য বেছে নিতে পারেন।কিছু মহিলার মধ্যে আবার তাদের গর্ভাবস্থায় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মত অভিজ্ঞতাও হয়ে থাকে অথবা আবার খাবার খেতে গিয়ে তাদের মাড়িতে আঘাত লাগতে পারে।এসব ক্ষেত্রে, ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করলে তা দাঁত এবং মাড়ি সংক্রান্ত এই সকল ব্যথা–যন্ত্রণা এবং অস্বস্তিগুলি লাঘব করতে সহায়তা করতে পারে।
3.নাক বন্ধ, জমে থাকা এবং সর্দি নিরাময়ে সহায়ককারী
গর্ভাবস্থায় নাক জমে থাকা, সর্দি হওয়াটা একটা সাধারণ ঘটনা।তবে গর্ভাবস্থায় ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধগুলিকে বেছে নেওয়াটা আপনার জন্য সঠিক পছন্দ নাও হয়ে থাকতে পারে।সুতরাং এর জন্য আপনি কিছু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকারের সন্ধান করতে পারেন, আর ইউক্যালিপটাস তেল এধরণেরই একটা অবলম্বন হয়ে উঠতে পারে।অনেক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ইউক্যালিপটাস তেলের তীব্র কড়া গন্ধটা ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়া, নাক জমে যাওয়ার মোকাবিলায় ভীষণভাবে কার্যকর। এটা কেবল বুকে সর্দি জমা থেকে উপশম আনার ক্ষেত্রেই সাহায্য করে না, এটি কফ বা শ্লেষ্মা কমাতেও সাহায্য করে এবং ব্রঙ্কাইটিসের মত আরও গুরুতর অবস্থার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সহায়ক– একথা প্রমাণিত।একটি ডিফিউজারের মধ্যে নিয়ে আপনি এই তেলটিকে ব্যবহার করতে পারেন এবং দিনে–রাতে তার ধোঁয়াটির শ্বাস নিতে পারেন।বিকল্পভাবে, আপনি এক বাটি গরম জলের মধ্যে কয়েক ফোঁটা এই তেল নিয়ে তার বাষ্প–শ্বাস গ্রহণ করতে পারেন।
4. মাসল পেইন বা পেশি ব্যথা থেকে মুক্তি আনে
গর্ভাবস্থা আপনার শরীরে বহুবিধ পরিবর্তন নিয়ে আসে।এই পরিবর্তনগুলি কেবল আপনার শরীরের আভ্যন্তরেই হয় না, পাশাপাশি বাইরেও অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে।এই সময় যেহেতু আপনার ওজন বেড়ে যায়, তাই আপনি আপনার পা এবং পিঠের পেশীগুলিতেও আরও বেশি চাপ অনুভব করতে পারেন।এটা গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা খুবই সাধারণ একটা ঘটনা, তবে যন্ত্রণাটা খুবই অস্বস্তি এবং কষ্টকারক হয়ে উঠতে পারে।আপনি যদি এধরণের যন্ত্রণায় ভুগে থাকেন এবং কাহিল হয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে এই অত্যাবশ্যকীয় তেলটি ব্যবহার করাটা একটা ভাল ধারণা হয়ে উঠতে পারে, কারণ ইউক্যালিপটাস তেলে রয়েছে প্রদাহ–বিরোধী বৈশিষ্ট্যাবলী যা গর্ভাবস্থায় ব্যথা–বেদনাগুলি হ্রাস করার ক্ষেত্রে বেশ উপকারী হিসেবে প্রমাণিত।এই তেল কয়েক ফোঁটা নিয়ে প্রভাবিত এলাকার উপর আলতো করে ধীরে ধীরে আপনার মালিশ করা উচিত।এটি কেবল আপনার যন্ত্রণা দূর করতেই সাহায্য করে না তার সাথে আপনাকে আবার বেশ হালকা এবং স্বস্তিও বোধ করাতে পারে।
5.ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থা আপনাকে এই সময় হয়ত আপনার মুখে সেই সুন্দর আভাটি পেতে সহায়তা করে। তবে গর্ভাবস্থায় কখনও কখনও আবার শরীরের হরমোনীয় ওঠানামার কারণেও ব্রণ দেখা দিতে পারে।আপনার এই অবস্থা নিরাময়ের জন্য নিজে থেকে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য সাময়িক মলমগুলি ব্যবহার না করার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হচ্ছে। তবে গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত ব্রণগুলি থেকে আপনার ত্বককে পরিষ্কার রাখতে মাঝে মাঝে আপনি অবশ্যই ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করতে পারেন। 3: 1 অনুপাতে জল এবং ইউক্যালিপটাস তেল মিশ্রিত করে সেই দ্রবণে তুলার বলগুলি ভিজিয়ে নিন।এবার এই দ্রবণটি প্রভাবিত অঞ্চলের ওপর ভালভাবে প্রয়োগ করুন এবং সেটি কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন।এই তেলটি ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়াগুলি হত্যার জন্য খুবই কার্যকর। এটি কেবল লোমকূপের মুখগুলিকে আনলক করতে বা খুলে দিতেই সহায়তা করে না, তবে এটি পরবর্তী আরও কোনও বাড়াবাড়ি হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে।এই তেলের ব্যাকটেরিয়া এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি ব্রণ হওয়াকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে উপকারী।
6.ত্বকের সমস্যাগুলি নিরাময় করে
গর্ভাবস্থায় হয়ত আপনি ব্যবহারের জন্য সকল প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকেই বেছে নিতে চাইবেন, যেহেতু সেগুলি অন্যান্য রাসায়নিক পণ্যগুলির থেকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হয়ে থাকে।সুতরাং গর্ভাবস্থায় যদি আপনি আপনার ত্বকের যত্ন নিতে সক্ষম না হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ইউক্যালিপটাস তেলটি হল এমন একটি জিনিস যেটিকে আপনি ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারেন।এই অসাধারণ তেলটি কেবল ঔষধি বৈশিষ্ট্যতে পরিপূর্ণই নয়, ত্বকের ক্ষেত্রে এর বিভিন্ন উপকারিতার জন্যও এটি ব্যবহার হয়ে আসছে।আপনার শুষ্ক ত্বককে আদ্র করে তোলার জন্য আপনি কিছুটা জোজোবা তেল বা আমন্ড তেলের সাথে এটিকে মিশিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।আপনি এই অত্যাবশ্যকীয় তেলটিকে যদি কিছুটা অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলের সাথে মিশিয়ে নেন তবে তা একটা চমৎকার গৃহনিমৃত সানস্ক্রীন ময়েশ্চেরাইজারের কাজ করবে। আপনার সৌন্দর্যের দিকে যত্ন নেওয়া ছাড়াও এই তেলটি ছোটখাটো আঘাত, কাঁটাছেঁড়া অথবা ক্ষত নিরাময়ের জন্যও দুর্দান্ত।এই তেলের প্রাকৃতিক অ্যান্টি–ফাঙ্গাল, অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ের জন্য ভীষণভাবে কার্যকর।
7.কাশির জন্য কার্যকর প্রতিকার
গর্ভাবস্থায় কাশি হওয়ার থেকে মারাত্মক অস্বস্তিকারক এবং বিরক্তিকারক আর কিছু হয়ত হতে পারে না।এর কারণ হল কাশি ওঠার অবিরত ক্রম বা প্রকোপগুলি আপনার মূত্রাশয়ের উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করে, আর তার ফলে আপনাকে বারে বারে বাথরুমের দিকে যেতে হবে, যা অন্যান্য অস্বস্তিগুলির থেকেও আরও বেশি কষ্টকর হয়ে ওঠে, এবং কাশির মত সমস্যাটি একাই তার সাথে করে সেটি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।তবে দীর্ঘকাল ধরে কাশির চিকিৎসায় ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার হয়ে আসছে এবং এটি কাশির একটা বেশ কার্যকর প্রতিকার।এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, এই তেলটির ব্যবহারে কফ বা শ্লেষ্মা পাতলা এবং শিথিল বা আলগা হয়ে তা হালকা করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।অনেক কাশির ওষুধেই এই তেলটি অন্যতম একটি উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কাশির লক্ষণ ও উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পেতে আপনি বাড়িতে একটি সম্পূর্ণ–প্রাকৃতিক মালিশও করতে পারেন, তবে এটি ওষুধগুলির মধ্যে কেবল একটি সংযোজন হওয়ার কারণে, গুরুতর সংক্রমণগুলি এড়াতে আপনার অবশ্যই চিকিৎসা তদারকির অধীনে এটি ব্যবহার করা উচিত।
8.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে
গর্ভাবস্থা হল আপনার জীবনের একটি অতি সূক্ষ্ম সময় এবং আপনার শরীরের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন কারণ এই সময় আপনার অনাক্রম্যতা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, যা আপনাকে আরও বেশি করে নানা ধরণের সংক্রমণ এবং অসুস্থতার প্রতি সংবেদনশীল করে তোলে।তবে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই তেলে এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে এবং বিভিন্ন ধরণের শারিরীক অসুস্থতাগুলিকে আপনার থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে।বিভিন্ন সংক্রমণগুলি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়গুলিতে, আপনি কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেলকে একটি ডিফিউজারের মধ্যে রেখে তা থেকে নিরাময়কারী ধোঁয়ার শ্বাস নিতে পারেন।এছাড়াও আপনি আবার সম পরিমাণে ল্যাভেন্ডার এবং চা গাছের তেল মিশ্রিত করে সেটি ইউক্যালিপটাস তেলের সাথে মিশিয়ে তার পরিমাণকে দ্বিগুণ করে নিয়ে একটি হাত স্যানিটাইজারও তৈরী করতে পারেন।
9.অ্যাজমা বা হাঁপানির চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে
অ্যাজমা এমন একটি চিকিৎসা জনিত শর্ত যা সারা পৃথিবী ব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে।আপনি যদি গর্ভবতী হন আর তার মধ্যে আপনার অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ইউক্যালিপটাস তেলের ব্যবহার উপকারী বলে প্রমাণিত হতে পারে। অ্যাজমার ফলে শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, যা বুকে চাপ সৃষ্টি হওয়া, টনটন করা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাস–প্রশ্বাসে সমস্যা, কাশি কিম্বা এই জাতীয় অন্যান্য লক্ষণগুলির কারণ হয়ে ওঠে।এই তেলটি ব্যবহার করলে তা রক্তনালীগুলিকে প্রশস্ত হতে সহায়তা করে যাতে ফুসফুস দ্বারা শ্বাস নেওয়ার সময় তা আরও বেশি অক্সিজেন নিতে পারে।এছাড়াও এই তেলে রয়েছে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি যা নাসাপথ থেকে কফ বা শ্লেষ্মা পাতলা করতে সহায়তা করে এবং পরিণামে তা শ্বাস প্রশ্বাসকে আরও সহজতর করতে এবং অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে।এই তেলটি ডিকনজেস্ট্যান্ট হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং বুকের ওপর সরাসরি প্রয়োগ করা যায়।আপনি কিছুটা গরম জলের মধ্যে কয়েক ফোঁটা এই তেলে যুক্ত করতে পারেন এবং সেই ধোঁয়ায় বাষ্প–শ্বাস নিতে পারেন।
10.সাইনাসের চিকিৎসার জন্য সহায়ক
সাইনাসাইটিস হল একটা ভীষণ অস্বস্তিকারক চিকিৎসা জনিত অবস্থা।আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এটিতে ভুগে থাকেন, তবে সেটি আপনার কাছে আরও মুশকিল বা কঠিন সমস্যা হয়ে উঠতে পারে, যেহেতু সাধারণত ব্যবহার করে থাকা সাইনাসাটিসের ওষুধগুলি এই সময় আপনি হয়ত ব্যবহার করতে পারবেন না।এ ধরণের পরিস্থিতিতে ইউক্যালিপটাস তেলটি বেশ সহায়ককারী প্রমাণিত হয়ে থাকতে পারে।এই তেলের অ্যান্টি–মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি–ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি–ভাইরাল বৈশিষ্ট্যগুলি বিভিন্ন শ্বাস–প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি, ফ্লু, সাইনাসাইটিস ইত্যাদিগুলিকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর।এই তেলটি নাসাপথ বা শ্বাসনালীর প্রদাহকে হ্রাস করে এবং কফ বা শ্লেষ্মাকে পাতলা হতে সাহায্য করে, আর এইভাবে সাইনাস অবরুদ্ধ হওয়া থেকে স্বস্তি আনে।আপনার রুমালের মধ্যে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল নিয়ে সাধারণ ঠাণ্ডা লাগার চিকিৎসায় তা কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারেন।তাছাড়াও বাষ্প–শ্বাস নেওয়ার জন্যও আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন।বিকল্পভাবে, গরম জলের মধ্যে কয়েক ফোঁটা এই তেল মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে একটি ওয়াশক্লথ কিম্বা তোয়ালেকে ডুবিয়ে তা উষ্ণ কমপ্রেশের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
11.জ্বর কমাতে সহায়ক
যখনই আপনার দেহ কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে আপনার জ্বর আসতে পারে, আর এটা গর্ভাবস্থাতেও হয়ে থাকতে পারে।যদিও আপনার দেহের তাপমাত্রা হ্রাস করার জন্য আপনি প্যারাসিটামল গ্রহণ করতে পারেন, তবে আপনি যদি চট করে তা গ্রহণ করাকে এড়াতে চান, তবে সেক্ষেত্রে এই অবিশ্বাস্যকর তেলটি ব্যবহার করাটা একটা ভাল ধারণা হতে পারে।এর মধ্যে জ্বর কমাবার বৈশিষ্ট্যগুলি থাকায় এটি আবার জ্বরের তেল হিসেবেও পরিচিত।এটি কেবলমাত্র হালকা তাপমাত্রার জন্য কাজ করে কারণ এটি জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় দেহকে সহায়তা করার জন্য রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করতে সহায়তা করে।আপনার হাত, পা এবং মাথায় কম্প্রেস করার জন্য আপনি কিছুটা হালকা গরম জলের সাথে এটি মিশিয়ে নিতে পারেন।এছাড়াও আবার এক চামচ আমন্ড বা জোজোবা তেলের সাথে এই তেল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিয়ে সেটিকে আপনার কপালের দু‘পাশের রগে, পায়ের তলায় কিম্বা ঘাড়ে প্রতি 15-20 মিনিটে লাগাতে পারেন জ্বরকে কমানোর জন্য।
বিঃদ্রঃ এই তেলটি কিন্তু কেবলমাত্র বাহ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্যই বিচার্য, সেবন করার জন্য।
12.চুলের পরিচর্যায় সাহায্য করে
গর্ভাবস্থা কখনও কখনও আপনার চুলকে খারাপ, শুষ্ক অথবা ভঙ্গুর করে তুলতে পারে এবং এর জন্য আপনি আপনার গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা হরমোনের পরিবর্তনকে দায়ী করতে পারেন।তবে এর জন্য আপনি আপনার নিস্তেজ এবং নিষ্প্রাণ চুলের পুষ্টি জোগাতে বিভিন্ন তেল ব্যবহার করতে পারেন এবং গর্ভাবস্থায় চুলের সমস্যাগুলি মোকাবিলার জন্য ইউক্যালিপটাস তেল হল সেরা ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি।এই তেলে উপস্থিত সক্রিয় উপাদানগুলি চুলের ফলিক্যলগুলিকে উদ্দীপিত করতে কার্যকর।এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায় যা ফলস্বরূপ চুলের আরও ভাল বৃদ্ধি এবং চুলের গুণমানকে উন্নত করতে সহায়তা করে।আপনার রোজের ব্যবহার করা মাথার তেলের সাথে এই তেলের কয়েক ফোঁটা যুক্ত করুন এবং সেটি দিয়ে আপনার চুল এবং স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন। সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য, এটি এই অবস্থায় সারা রাত রেখে দিন এবং পরের দিন সকালে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন আর স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল এক ঢাল চুলের অধিকারিণী হয়ে উঠুন।
13.মাথার উকুন থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক
এটি শুনতে যতটা বিব্রতকর লাগে, সেই একইভাবে আপনি আবার আপনার জীবনের যেকোনও সময়েই এই বিরক্তিকর সমস্যায় ভুগতে পারেন, আর সেটা আরও বেশি হয়ে ওঠে যদি আপনার বাড়িতে স্কুলে যাওয়ার মত কোনও ছোট বাচ্চা থাকে।যদিও মাথার উকুন নিরাময়ের জন্য অনেকগুলি ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ বাজারে সহজেই উপলভ্য, ইউক্যালিপটাস তেলটি কিন্তু চুলের কোনওরকম ক্ষতি বা সমস্যা না করেই উকুন নিরাময়ে যাদুমন্ত্রের মত কাজ করে।এটি একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক, আর তাই এই সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে কার্যকর।আপনার এর জন্য যা করণীয়, তা হল আপনার সবসময়ের ব্যবহারের চুলের তেলের সাথে কয়েক ফোঁটা এই তেল মিশিয়ে নিন এবং সেটি দিয়ে আপনার স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকে মালিশ করুন এবং চুলটি ধুয়ে ফেলার আগে কিছুক্ষণ এই অবস্থায় এটি রেখে দিন।বিকল্পভাবে, চুলকে রক্ষা করার জন্য আপনি আপনার চুল থেকে এই ক্ষুদ্র পতঙ্গগুলির থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনার নিয়মিত শ্যাম্পুতে কয়েক ফোঁটা নীম তেলের সাথে এই পোকা–তাড়ানোর তেল কয়েক ফোঁটা যুক্ত করতে পারেন।
14.ঠাণ্ডার ক্ষত নিরাময়ে কার্যকর
স্বাভাবিকের চেয়ে গর্ভাবস্থা হয়ত আপনার শরীরের অনেক বেশি কাজ করতে পারে এবং তার মধ্যে আপনার মধ্যে ক্লান্তি এবং অলসতা আসতে পারে। এবং সর্বোপরি, আপনি যদি কোনও ধরণের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন তবে এটি আপনার শরীরকে আরও নিঃশেষ করে দিতে পারে। ঠাণ্ডার ক্ষতগুলি এমনই একটি সমস্যা যা গর্ভাবস্থাকালে আপনাকে কষ্ট দিতে পারে এবং যদি আপনার হারপিস বা নারাঙ্গা হয়ে থাকে তবে ঠান্ডার ক্ষতগুলি হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।আপনি এই ঘা বা ক্ষতের চারপাশে ব্যথা, জ্বলন বা রণন অনুভূতিগুলি বোধ করতে পারেন।গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউক্যালিপটাস তেল HSV বা হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে হতে পারে এমন ঠান্ডা্র ক্ষতগুলির চিকিৎসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।তাছাড়াও এই তেলটি আবার ঠাণ্ডার ক্ষত চিকিৎসা করার জন্য উপলব্ধ বহু ওভার–দ্য–কাউন্টার ওষুধগুলির মধ্যে থাকা একটি সক্রিয় উপাদান।এই অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আপনি বাড়িতে এই তেলটি দিয়ে একটি দ্রবণ তৈ্রী করতে পারেন। তার জন্য, আপনাকে যা করতে হবে তা হল, চা গাছের তেল এবং ইউক্যালিপটাস তেল এক ফোঁটা করে নিয়ে সেগুলিকে দুই ফোঁটা নারকেল তেলের সাথে মিশ্রিত করুন।ঠাণ্ডার ক্ষতগুলি থেকে মুক্তি পেতে আপনি এই মিশ্রণটি দিনে 3 থেকে 4 বার প্রয়োগ করতে পারেন।
15.মানসিক শ্রান্তি দূর করে
গর্ভাবস্থায় আপনি যতই ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন না কেন, আপনার মধ্যে মাঝে মধ্যেই আপনার স্বাস্থ্য বা আপনার অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্য এবং সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলি আসবেই।যদিও এটি যেকোনও গর্ভবতী মহিলার পক্ষে অনুভব করাটা স্বাভাবিক, তবে এই জাতীয় উদ্বেগ কোনও মহিলাকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্লান্তি বোধ করাতে পারে।আপনি শারীরিকভাবে হয়ত কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন কিন্তু আপনার মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার জন্য আপনাকে হয়ত প্রচুর প্রচেষ্টা করতে হতে পারে, আর এইরকম পরিস্থিতিতে অ্যারোমাথেরাপি প্রভূত সহায়তা করে থাকে।মানসিক শান্তি প্রদানে সবচেয়ে ক্রিয়াশীল, দক্ষ এবং কার্যকর তেলগুলির মধ্যে একটি হল ইউক্যালিপটাস তেল।আপনি গর্ভাবস্থায় আপনার স্নানের ক্ষেত্রে ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করতে পারেন অথবা আপনার মনকে চনমনে করে তোলার জন্য একটি ডিফিউজারের মধ্যে নিয়েও এটি ব্যবহার করতে পারেন।
এগুলি হল এই সুগন্ধি অত্যাবশ্যকীয় তেলটির বহুবিধ উপকারিতার মধ্যে কয়েকটি। তবে গর্ভাবস্থায় ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করার পূর্বে সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা করে নেওয়ার পরামর্শই আমরা আপনাকে দিই।
ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি
গর্ভাবস্থায় ইউক্যালিপটাস তেল ব্যবহার করা নিরাপদ কিনা সে ব্যাপারে আপনি যদি চিন্তা করেন, তবে তার উত্তর হল হ্যাঁ, এটা নিরাপদ।তবে এই তেলটি ব্যবহারে কিছু পার্শ্বিপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে।নিম্নলিখিতগুলি হল কিছু সম্ভাব্য জটিলতা বা সমস্যা যেগুলি এই তেল ব্যবহারের ফলে দেখা দিতে পারেঃ
1.অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারে
এই তেলটি বাস্তবেই ভীষণ কড়া এবং তীব্র আর তাই গর্ভাবস্থায় কখনও কখনও এটি থেকে মারাত্মক অ্যালার্জি হতে পারে।
2.শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে
যদিও এই তেলটি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার চিকিৎসায় কার্যকর, তবে কখনও কখনও আবার এটি বিপরীত ক্রিয়াও ঘটাতে পারে।আর সেটি হতে পারে যদি আপনি এই তেলে অ্যালার্জি প্রবণ হয়ে থাকেন।
3.চুলকানি দেখা দিতে পারে
আপনার যদি সংবেদনশীল ত্বক হয়ে থাকে, তবে এই তেল ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকে চুলকানি বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
একথা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই যে, গর্ভবতী মহিলার জন্য ইউক্যালিপটাস তেলের অসংখ্য উপকারিতা আছে, তবে কেউ এর সম্ভাব্য জটিলতাগুলিকেও খর্ব করতে পারে না।সুতরাং গর্ভাবস্থায় যদি আপনি এই তেলটিকে ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে কোনওরকম জটিলতাগুলি এড়ানোর জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে আলোচনা মারফৎ তাঁর মতামত নেওয়ার পরামর্শই আপনাকে দেওয়া হচ্ছে।