In this Article
আপনার সুখের ধারণাটি এমন এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনকে ঘিরে আবর্তিত হতে পারে যা প্রচুর ইতিবাচক কথা বলে।কিন্তু যখন আপনি গর্ভবতী, এই দৃশ্যকল্পটি সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।এই সময় আপনার কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় এ ব্যাপারে অবিরত আপনার চারপাশের মানুষজনের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়ার সাথে আপনি হয়ত প্রতিটি ছোটখাটো ব্যাপারগুলিতেও সচেতনতা বোধ করতে পারেন।আপনার গর্ভদশা এবং রোদ পোহানো এমনভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত যা জানতে চাওয়া আপনি এড়াতে চাইবেন না।এ ব্যাপারে আরও জানতে হলে পড়তে থাকুন।
গর্ভাবস্থায় সূর্যালোক কি উপকারী?
এটা সবসময়েই আমরা জেনে এসেছি যে, রোদ পোহানোটা একটা ভাল ব্যাপার যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিনের D এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।অতএব, রোদে বসা গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও জরুরী যেহেতু এটি ভ্রূণের হাড় গঠণে সহায়তা করে। তদুপোরি আবার এটি একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আপনার এবং গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে গড়ে তোলাকে নিশ্চিত করে।
উপরোক্ত বিষয়টির বিপরীতে আবার, গর্ভবতী হওয়ার কারণে আপনার হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, পরিণতিতে যা আপনার ত্বককে অন্য সময়ের থেকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তোলে।সুতরাং দীর্ঘ সময়ের জন্য রোদে বসে থাকা একেবারেই নয়, বিশেষত যখন আপনি গর্ভবতী।
গর্ভাবস্থায় রোদ পোহানোর ঝুঁকিগুলি
গর্ভাবস্থায় রৌদ্র সংবেদনশীলতাটি বেড়ে যায় এবং আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য তা সম্পূর্ণ রূপে ঝুঁকিময় হয়ে উঠতে পারে।সুতরাং গর্ভাবস্থায় রোদ পোহানোর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি কি সে সম্পর্কে অবগত হতে পড়তে থাকুন।
- স্কিন বা ত্বকের ক্যান্সার
এটি মহিলাদের কাছে একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যারা গর্ভবতী।একটি সমীক্ষা এই বিষয়টি নির্দেশ করে যে, একটি বর্ধিত সময়ের জন্য সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে আসা মহিলাদের মধ্যে স্কিন ক্যান্সার বিকাশ পেতে পারে।এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য রৌদ্রস্নান করার পর সাননার্ন বা রোদে পুড়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে।আমাদের ইতিমধ্যের আলোচনা মত, গর্ভবতী মহিলাদের ত্বক যেহেতু সংবেদনশীলপ্রবণ হয়ে থাকে, সেহেতু তাদের সানবার্নের সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
- মেলাসমা
সাধারণত ‘প্রেগনেন্সি মাস্ক’ বা ‘গর্ভাবস্থাকালীন মুখোশ’ নামে পরিচিত এটি হল এমন এক অবস্থা যা ত্বকের বর্ণ পরিবর্তন করে দিতে পারে।গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনগুলি অতিরিক্ত মেলানিন উৎপন্ন করতে পারে।এ জাতীয় পরিস্থিতিটি সংবেদনশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে যার ফলে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসার সময় আপনার ত্বক তার রঙ হারিয়ে ফেলতে পারে।
- ডিহাইড্রেশন
সূর্যস্নান উপভোগ করার সময় আপনি হয়ত পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করার কথা ভুলে যেতে পারেন।এটি কিন্তু আপনার ডিহাইড্রেশনকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদিও আপনি গর্ভবতী না হয়ে থাকা কালেও এটি হয়ে থাকা একটি সাধারণ ঘটনা, তবে গর্ভাবস্থায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি অবিলম্বে দেখা দিতে শুরু করতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মধ্যে ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে তা তাদের হৃদ-স্পন্দনের হারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং তার সাথে আবার ভ্রূণের ক্ষেত্রে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস করতে পারে।
- ফোলিক অ্যাসিডের ভাঙ্গন
বেশ কয়েকটি গবেষণা এই বিষয়টি উল্লেখ করে যে, খুব বেশি সূর্যের সংস্পর্শে আসলে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে তা ফোলেটের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।আর যদি এরকম কোনও ব্যাপার ঘটে থাকে, তবে তা গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে অথবা শিশুদের মধ্যে নিউরাল টিউবের ত্রুটি দেখা দিতে পারে।গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে ফোলিক অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সুতরাং এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কালটিতে রোদের সংস্পর্শে আপনার থাকার সময়টিকে খর্ব করার পরামর্শই দেওয়া হয়।
গর্ভাবস্থায় সানস্ক্রীন ব্যবহার করা কি নিরাপদ?
সানবার্ন এবং ত্বকের অন্যান্য ক্ষতির ক্ষেত্রে সানস্ক্রীনগুলি একদম যথার্থ একটি সহায়ক হিসেবে কাজ করে।কিন্তু গর্ভবতী মহিলারা কি এটি ব্যবহার করতে পারেন?এর উত্তর হল, হ্যাঁ- সানস্ক্রীনগুলি গর্ভবতী মহিলারাও ব্যবহার করতে পারেন।তবে কোন সানস্ক্রীনগুলি ব্যবহার করতে পারেন এটিই হল এর পরবর্তী প্রশ্ন।
সানস্ক্রীনগুলিকে সাধারণত দুই ধরণে ভাগ করা হয়েছে, সেগুলি হল শারীরিক ব্লকার এবং রাসায়নিক ব্লকার।শারীরিক ব্লকারগুলি ব্যবহার করার জন্য নিরাপদ যেহেতু এগুলি হল টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড এবং জিঙ্ক অক্সাইডের একটি মিশ্রণ যা যৌথভাবে ক্ষতিকারক UV রশ্মিগুলিকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যেতে সহায়তা করে।
অন্যদিকে, রাসায়নিক ব্লকারগুলি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কোনওভাবেই সুপারিশ করা হয় না।এর কারণ হল, এই সকল ব্লকারগুলিতে এমন সকল উপাদান থাকে যেগুলি সূর্যের UV রশ্মিগুলিকে প্রতিফলিত করার পরিবর্তে সেগুলিকে শুষে নেয়। আর এই ধরণের একটি উপাদান হল অক্সিবেনজোন যা সাধারণত রাসায়নিক ব্লকারগুলিতেই পাওয়া যায়।অক্সিবেনজোন ত্বকের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করার জন্য পরিচিত এবং অ্যালার্জি, হরমোনের ব্যাঘাত এবং কম ওজনের শিশুর জন্মদানের, বিশেষ করে সদ্যজাত কন্যাশিশুদের মধ্যে এগুলির সম্ভাবনার কারণ হয়ে ওঠে।
অন্তঃসত্ত্বাকালে রোদে বসার সময় অবলম্বিত সতর্কতাগুলি
আপনার সময় কাটানোর ভীষণ পছন্দের একটি বিষয় হয়ে থাকতে পারে সৌরস্নান। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বাবস্থায় আপনার নিজের এবং তার সাথে আপনার গর্ভস্থ সন্তানের সুরক্ষার স্বার্থে আপনার কিছু বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
1.আরামদায়ক পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসগুলি পরিধান করুন
ঢিলেঢালা এবং হালকা রঙের পোশাক পরলে তা অত্যন্ত সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। সাদা, হলুদ, আকাশী রঙগুলি আলোক প্রতিফলনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ার কারণে এগুলি এক্ষেত্রে চমৎকার কার্যকরী হয়ে উঠবে।সাথে করে একটি বড় ছাতা বহন করা, এক জোড়া ভাল মানের রোদ-চশমা বা সানগ্লাস ব্যবহার করা এবং মুখাচ্ছাদিত করতে পারে এমন ধরণের একটা চওড়া ও বড় টুপি পরলে তা এক্ষেত্রে মঙ্গলকর প্রমাণিত হতে পারে।
2. নিজেকে হাইড্রেট রাখুন
যদিও আপনাকে হাইড্রেট রাখার সবচেয়ে সেরা তরল হল জল, তবে জ্যুস এবং বলবৃদ্ধিকারী পানীয়গুলিও এক্ষেত্রে আপনার তালিকায় রাখা যেতে পারে।রোদের মধ্যে আপনি যেখানেই যান না কেন আপনার প্রয়োজনীয় তরলটিকে কখনই হাতছাড়া না করার জন্য বেরোনোর সময় সর্বদা নিজের সাথে আপনার জলের বোতলটিকে নিয়ে যেতে ভুলবেন না।
3.রোদ পোহানো সীমিত করুন
আপনার যদি কোনও সানস্ক্রীন ব্যবহারের ইচ্ছে না থাকে, তবে 20 মিনিটের বেশি রোদ পোহানো এড়িয়ে চলুন।
4.উপযুক্ত পরিপূরকগুলি বেছে নিন
আপনি যদি রোদকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলার মতলব আঁটেন তবে সেক্ষেত্রে ভিটামিন D এর পরিপূরকগুলির জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।
5.জেনে নিন কখন আপনার বেরোনো উচিত
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, রোদ পোহানোর সবচেয়ে উত্তম সময় হল দুপুর বেলায় এবং খুব ভোর কিম্বা সন্ধ্যাবেলায় নয়।এর কারণ হল ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা হওয়ার নূণ্যতম ঝুঁকির সাথে এই সময় আপনার দেহ সবচেয়ে বেশি ভিটামিন D পায়।
6.মেঘলা দিনগুলিতেও সানস্ক্রীন ব্যবহার করুন
এটি ঠিক যে, ক্ষতিকারক UV রশ্মি যা সূর্য থেকে নির্গত হয়, তা এই মেঘলা দিনগুলিতেও আপনার ত্বকে এসে পৌঁছায়, শুধুমাত্র মেঘ, ধূলো অথবা এমনকি কুয়াশার কারণে এটি বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়।
হ্যাঁ, এটি এটুকুই ছিল! রোদের সংস্পর্শ কীভাবে গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে তা জানার পর আপনি এখন কীভাবে সেই ক্ষতিকারক রশ্মির প্রভাবকে খর্ব করা যায় সেটিও জেনে গিয়ে থাকবেন।তবে আপনার ত্বক যদি অতি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে থাকে, আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে সে ব্যাপারে কথা বলুন।