যমজ অথবা ততোধিক সন্তান সহ 34 সপ্তাহের গর্ভবতী

যমজ অথবা ততোধিক সন্তান সহ 34 সপ্তাহের গর্ভবতী

আপনি অবশেষে আপনার গর্ভদশার 34 সপ্তাহে প্রবেশ করেছেন এবং খুব শীগগিরই যেকোনও সময় আপনার যমজ কিম্বা তার বেশি সন্তানের আগমনের প্রত্যাশা নিশ্চই আপনি করে চলেছেন।আপনার বাচ্চাদের দেখার চিন্তা অবশ্যই আপনাকে অধীর করে তুলবে, কিন্তু অস্থির হবেন না।কয়েকবার গভীর শ্বাস নিন এবং শান্ত হন।গর্ভাবস্থার প্রতিটি পর্যায়েই কিছু না কিছু পরিবর্তন হতেই থাকবে।এর মধ্যে কিছু পরিবর্তনগুলি আগে থেকেই আন্দাজ করা যাবে, যখন কিছু আবার আশ্চর্যজনক অদ্ভুত হয়ে উঠতে পারে।আপনি যদি 34 সপ্তাহের গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং গর্ভে যমজ কিম্বা একাধিক সন্তান ধারণ করেন, সেক্ষেত্রে আপনার সাবধান হওয়া উচিত এমন কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব।আরও জানতে হলে পড়ুন।

গর্ভাবস্থার 34 সপ্তাহে যমজ/ততোধিক শিশুর বৃদ্ধি

আপনার গর্ভের ভিতরে আপনার শিশুদের পরিমাপ করা হবে আলট্রাসাউন্ডের চিত্রগুলির সহায়তার সাথে।আপনার ডাক্তারবাবু আপনার বাচ্চাদের বিকাশ পরীক্ষা করবেন এবং পর্যবেক্ষণ করবেন যে তাদের কোনও রকম জন্মগত ত্রুটি রয়েছে কিনা। 34 তম সপ্তাহে অকাল প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তুঙ্গে।অতএব, আপনার বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ওজন লাভ এবং স্বাভাবিক ভাবে বিকাশ লাভ করা ভীষণ মাত্রায় জরুরি।

এর উপর, ডাক্তারবাবু নিয়মিত অবিচ্ছিন্ন ভাবে আপনার গর্ভের ভিতর বাচ্চাদের অবস্থানও পরীক্ষা করবেন।বাচ্চাদের একটা আদর্শগত অবস্থান স্বাভাবিক প্রসবের জন্য আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথটিকে সুগম করে তোলে।তবে তারা যদি যথাযথ আদর্শ অবস্থানে না থাকে, সেক্ষেত্রে ডাক্তারবাবু সিজারিয়ান বা অস্ত্রপচারের(সি-সেকশন)  মাধ্যমে প্রসবের পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারেন।

34 সপ্তাহে শিশুদের জ্ঞানেন্দ্রিয়ের উন্নতি বিলক্ষণ হবে।যদিও তারা এই সময় এখনও দেখতে পারে না, তারা আগের থেকেও আরও ভালভাবে শুনতে পারে।সুতরাং তাদের সাথে কথা বলা, গান গাওয়া, বই পড়ার ব্যাপারটিকে আপনি নিশ্চিত করুন।মাঝামধ্যে বাচ্চারা আবার তাদের পদাঘাতগুলিও করবে।এটি হল তাদের আপনাকে প্রতিক্রিয়া জানানোর বা আপনার সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যম।

তবে এই সপ্তাহের আশেপাশে আবার তাদের পদাঘাতের পুনরাবৃত্তিটি কমে যেতে পারে কিম্বা তার তীব্রতাটি হ্রাস পেতে পারে।এটি অধিকাংশ সময়েই হয়ে থাকে শিশুদের ক্রমবর্ধিত আকার এবং গর্ভের ভিতর জায়গার স্বল্পতা বা অভাবের কারণে।তাদের পদাঘাতগুলি হ্রাস পাওয়ার প্রত্যাশা করতে পারেন কিন্তু একেবারে পুরোপুরি থেমে যাওয়ার নয়।কিছু মায়েরা আবার তাদের বাচ্চাদের আন্দোলনগুলিকে উৎসাহিত করতে পারেন তাদের নিজেদের পেটে আলতো করে ঘষার মাধ্যমে।

34 সপ্তাহে শিশুদের আকার কীরকম হবে?

এই সময়র মধ্যে আপনার গর্ভের ভিতর আপনার যমজ কিম্বা সন্তান ত্রয়ী যতটা বড় হয়ে উঠবে তা হল একটি সুন্দর পাকা স্কোয়াশ ফলের মত।তাদের ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণটি বাড়তে থাকে, যা বেশ ভালভাবেই তাদের ওজনে প্রতিফলিত হয়।বেশিরভাগ শিশুদেরই এই সময়ের মধ্যে ওজন হয়ে থাকে প্রায় 2 কিলোগ্রামের কাছাকাছি, যার জন্য তাদেরকে বহন করা বেশ কঠিন হয়ে ওঠে।তারা দৈর্ঘ্যে প্রায় 43-45 সেন্টিমিটার মত হয়ে ওঠে, সুতরাং তাদের জন্য জরায়ুতে আর খুব বেশি জায়গা থাকে না।

গর্ভাবস্থার 34 সপ্তাহে লক্ষণ/পরিবর্তনগুলি

আপনার মধ্যে আপনার শিশুরা বেড়ে ওঠার কারণে, গর্ভদশার 34 তম সপ্তাহে, আপনার দেহে বেশ আরওকিছু শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনগুলি হয়ে চলে।আসুন সেগুলির সন্ধান করা যাক-

  • আপনার গর্ভদশার 34 তম সপ্তাহ শেষ করার সময় আপনার মধ্যে কিছু চলমান লক্ষণ এবং কিছু আবার নতুন দেখা যায়।গর্ভাবস্থার 34 সপ্তাহে আপনার দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া শুরু হতে পারে।বেশ খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে, এই লক্ষণের পিছনে কোনও চূড়ান্ত ও স্থির কারণ নেই, তবে অনেক মহিলাই এই অবস্থাটি বিদ্যমান থাকার উল্লেখ করেছেন।গর্ভাবস্থার পরবর্তী মাসগুলিতে এই অবস্থাটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকে।হরমোনগুলি আপনার দেহের পুরো জায়গা জুড়ে থাকায় এবং বিভিন্ন স্নায়ুগুলি অনুভীতিহীন নিশ্চল হয়ে ওঠার কারণে এই লক্ষণটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • গর্ভাবস্থার একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে আপনার পাগুলিকে আপনার এবং আপনার যমজ কিম্বা ততোধিক সন্তানের ক্রমবর্ধিত ওজন পূর্ণ গরিমায় বহন করে চলতে হয়।ফুলে যাওয়ার কারণে হাঁটাচলা করাটাও কঠিন হয়ে উঠবে এবং তার সাথে আবার আপনি হয়ত নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সমস্যা বোধ করতে পারেন।এর সাথে আবার আপনি হয়ত বা আপনার পা এবং পায়ের পাতাতেও ব্যথা অনুভব করে থাকতে পারেন।
  • গর্ভদশাটি ক্রমশ এগিয়ে চলার কারণে আপনি আরও বেশি ক্লান্তি এবং অবসন্ন বোধ করবেন।এর প্রধান কারণ হল এই দশায় হয়ে থাকা প্রচুর পরিবর্তনগুলির সাথে আপনার দেহ মানিয়ে নেওয়ার জন্য।আবার এমনকি আপনি অত্যন্ত মানসিক চাপও অনুভব করতে পারেন শুধুমাত্র আপনার বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করার মাধ্যমেই।যাইহোক, তবে আপনার সকল শক্তি পুনরায় ফিরে আসবে একবার আপনার বাচ্চাদের প্রসব করা হয়ে গেলে।
  • অসংখ্য পরামর্শগুলি সত্ত্বেও, সর্বদাই এমন সময় আসবে, যখন আপনি যথাযথ ডায়েট মেনে চলতে অথবা এমন কোনও আহার পরিকল্পনার সাথে সংলগ্ন থাকতে ব্যর্থ হবেন যা এই সময় আপনার জন্য ভাল।আপনার সন্তানদের ক্রমবর্ধিত ওজন আপনার অন্ত্রের উপর চাপ প্রয়োগ করবে এবং তা কোষ্ঠকাঠিণ্যের দিকে পরিচালিত করবে এবং তা থেকে হেমারয়েড বা অর্শের পুনর্দশন লাভ হতে পারে।এই লক্ষণগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং সেগুলিকে প্রতিহত করতে তরল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ আহার গ্রহণের পরিমাণ বর্ধিত করুন।
  • গর্ভদশার 34 তম সপ্তাহটি অনিবার্যভাবেই বেশ আক্ষরিক অর্থে অধিকাংশ মহিলাকে জীবনের এক নতুন প্রশ্বাস গ্রহণের মত অনুভূতি অনুভব করাতে পারে।34 তম সপ্তাহে আপনার গর্ভস্থ যমজ অথবা সন্তান ত্রয়ী নীচে শ্রোণীর দিকে নেমে যেতে পারে।শিশুরা তাদের মাথা আপনার জন্মনালীর দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে, জরায়ুর উপরের অংশটি আকারে কমে যায়।এই হ্রাস তৎক্ষণাৎ ফুসফুস এবং মধ্যচ্ছদাকে সেই স্থানটি অধিগ্রহণ করার পথ করে দেয়, যা তাদের স্বাভাবিক অবস্থার কাছাকাছি পুনরায় ফিরিয়ে আনে।আর এর একটি ফল হিসেবে, আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি হবে এবং অনেকের ক্ষেত্রেই এটি একটি স্বাগত পরিবর্তন হয়ে উঠতে পারে।
  • আপনার প্রসবের আসন্ন তারিখের দিকে অভিগমন করার কারণে, আপনি হয়ত ব্র্যাক্সটন হিক্সের সঙ্কোচনগুলিকে অনুভব করে থাকতে পারেন, যা 34 সপ্তাহে হওয়া সাধারণ লক্ষণ।এই সঙ্কোচনগুলি যখন খুশি দেখা দিতে পারে এবং অযথা আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

যমজ/ততোধিক সন্তান সহ গর্ভাবস্থার পেট- 34 সপ্তাহে

গর্ভাবস্থার 34 সপ্তাহে যমজ কিম্বা ততোধিক শিশুগুলির ওজন ভীষণ মাত্রায় প্রকট হয়ে উঠবে, আর সেই কারণে আপনার নাভির নিম্নাঞ্চলে আপনার পেটটি অতিরিক্ত বৃহৎ এবং প্রসারিত বলায়াকৃতি হয়ে উঠবে।আপনার গর্ভের মধ্যে আপনার বাড়ন্ত শিশুদের অঙ্গ সঞ্চালনা এবং 34 সপ্তাহের মধ্যে তাদের বর্ধিত আকার আপনার বারে বারে অ্যাসিডিটি অনুভব করার কারণ হয়ে উঠবে।

34 সপ্তাহে যমজ/ততোধিক সন্তান গর্ভধারণের-আলট্রাসাউন্ড

বাচ্চাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং একটি নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন করানো নিশ্চিতকরণের জন্য একটি আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান পরিচালনা করা হয়।আলট্রাসাউন্ডের চিত্রগুলির সহায়তার সাথে আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার প্রসব প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।আপনার গর্ভস্থ যমজ কিম্বা ততোধিক সন্তানদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য এবং তাদের বিকাশ নিশ্চিত করতে উন্নত আলট্রাসাউন্ডের সাথে অসংখ্য পরীক্ষ-নিরীক্ষা করানো হবে।

যমজ/ততোধিক সন্তানের সাথে গর্ভবতীদের কি খেতে হবে

ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যের দিকে একটি ভালো মাত্রায় দৃষ্টি রাখার সাথে, আপনার খদ্য পরিকল্পনাটি অব্যহত রাখুন যেরকম চলছে সেরকমই।আপনার ওজন লাভটি যদি স্বাস্থ্যকর মাত্রা অতিক্রম করে যায়, আপনার ডাক্তারবাবু কিম্বা পুষ্টিবিদ আপনার ডায়েটে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন যা আপনার ওজনটিকে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সহায়তা করবে।আপনার বাচ্চাদের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে এটি করা দরকার। গর্ভাবস্থার 34 সপ্তাহে যত্ন নেওয়ার পরামর্শ বা টিপস আপনার গর্ভদশার মেয়াদকালটি সম্পন্ন হওয়ার কাছাকাছি সময়ে এসে যাওয়ার সাথে, কিছু চটপট অনুসরণকারী টিপস সমগ্র পর্বটিকে আপনার জন্য সহজ করে তুলতে পারে।   করণীয়

  • শিশুর স্টেম সেল সংরক্ষণের জন্য রেজিস্ট্রেশনটি করিয়ে রাখার চেষ্টা করুন।
  • যদি কোনও অপ্রত্যাশিত পরিণতি দেখা দেয় তবে আপনার প্রসব প্রক্রিয়াটির পরিচালনা করার জন্য যেকোনও আকস্মিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করুন।
  • আপনি যদি ইতিমধ্যেই যমজ কিম্বা ততোধিক সন্তান প্রসব সংক্রান্ত কোনওকিছুই না পড়ে বা জেনে থাকেন, তবে সে সংক্রান্ত বইগুলি পড়ুন।
  • মানসিক চাপ এবং অলীক কল্পনা করা এড়িয়ে চলুন এবং ধ্যান করুন।

করণীয় নয়

  • আপনার খাবারের সাথে কফি বা চা পান করা এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলি আয়রণ শোষণে অবদান রাখে।
  • আপনার ক্ষেত্রে নড়াচড়া করা কঠিণ হয়ে উঠতে পারে এ ধরণের পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন।

গর্ভদশার 34 সপ্তাহের মধ্যে আপনার কি কি কেনাকাটি করার প্রয়োজন পড়বে  34 সপ্তাহের মধ্যে আপনার নিশ্চই ইতিমধ্যে প্রায় সকল জিনিসগুলিই কেনা হয়ে গেছে যেগুলি শিশুর জন্মের পর আপনার প্রয়োজন হবে।এখানে এমন কিছু সামগ্রীর তালিকা দেওয়া হল যেগুলি হয়ত হবু মায়ের তালিকা থেকে বাদ চলে গিয়ে থাকতে পারেঃ ·        একটি সুন্দর মাতৃত্বকালীন গাউন·        আপনার প্রথম দুধ মজুত করে রাখার জন্য ব্রেস্ট পাম্প·        স্তনপান করানোর উপযোগী ব্রা·        ডায়াপার-প্রচুর প্রচুর, আপনার যমজ কিম্বা ততোধিক সন্তানদের জন্য।·        কয়েক জোড়া বাচ্চাদের জামা-কাপড়·        বেবি টিস্যু- আপনার এগুলি প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজন লাগবে। যদিও প্রতিটি হবু মায়েরই তাদের গর্ভদশার 34 তম সপ্তাহে হয়ে থাকা অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বিভিন্ন হয়ে থাকে, তবে প্রত্যেকেই কিন্তু বাচ্চাদের স্বাস্থ্য এবং বিকাশের দিকেই মূল লক্ষ্য রাখেন।আপনার ছোট্ট সোনাদের আগমনের প্রতীক্ষায় পর্যাপ্ত আহার গ্রহণ করুন, যথেষ্ট বিশ্রাম নিন এবং চেষ্টা করুন আনন্দে থাকতে।