বাবা মা হিসাবে, আমরা বাচ্চাদের খাবার উগরে দেওয়া এবং কাশি হওয়ার সাথে অভ্যস্ত। এসিড রিফ্লাক্সও অদ্ভুতভাবে একই রকম লাগতে পারে কিন্তু সাধারণত, আপনার বাচ্চা কষ্টে আছে বলে মনে হবে অথবা এমনকি কাঁদতেও পারে। বেশির ভাগ বাচ্চারই এটি মাঝে মাঝে হয় তবে আপনার বাচ্চার যদি এটি ঘন ঘন ঘন হতে থাকে তবে এই সমস্যাটি সমাধান করার প্রয়োজন আছে। কয়েকটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিকার রয়েছে যা প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ।
কিভাবে শিশুর অ্যাসিড রিফ্লাক্স স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা করা যায়?
এখানে আপনার ছোট্টটির অ্যাসিড রিফ্লাক্সের চিকিৎসা করার কিছু প্রাকৃতিক উপায় দেওয়া হয়েছে।
1. জিরা বীজ
জিরা বীজ হজম প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করার জন্য পরিচিত, ফলে অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে। বাচ্চাদের জিরা বীজের জল দেওয়া যেতে পারে। কয়েক চামচ জিরা বীজ জলে ফুটিয়ে তা ছেঁকে নিলে যে দ্রবণটি পাওয়া যায় তা শিশুরা খেতে পারে। প্রতিদিন এই জলের কয়েকচামচ খাওয়ালে তা অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকে মুক্তি আনতে পারে।
2. ক্যাস্টর তেল
এই তেলের উপাদানগুলিতে দূষণ মুক্তির ক্ষমতা থাকে, যা শিশুর শরীরের কোনও সমস্যা সৃষ্টিকারী বস্তুকে সরাসরি বের করে দিতে পারে। একটি কাপড় নিন এবং এটি ক্যাস্টর তেলে ডোবান। বাচ্চাটির পেটের উপর কাপড়টি রাখুন এবং প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে দিন যাতে তেল অন্যত্র ঝরে না পড়ে। কাপড় দিয়ে এটি ঢেকে দিন এবং কাপড়টি এক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে দিন। পরে, আপনার বাচ্চাকে একটি চমৎকার উষ্ণ স্নান দিন এবং সে আরও বেশি আরাম পাবে।
3. নারকেল তেল
নারকেল তেলে প্রদাহ বিরোধী উপাদান দিয়ে গঠিত। এটি সরাসরি সেই উপদ্রবটিকে প্রভাবিত করে যা শিশুর অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণ। তদ্ব্যতীত, তেলটি পরিপাক তন্ত্রের তৈলাক্তকরণের জন্য পরিচিত, ফলে এটি আরো বেশি দক্ষতার সাথে কাজ করে। তেলে লরিক অ্যাসিডও রয়েছে। এটি একটি জীবাণু বিরোধী ফ্যাটি অ্যাসিড যা নবজাতকদের অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গরম জলের সাথে এক চামচ অতিরিক্ত ভার্জিন নারকেল তেল দিনে তিনবার করে শিশুকে খাওয়ানোর আগে দেওয়া উচিত।আবার সামান্য নারকেল তেলের সাথে কিছুটা জল মিশিয়ে তা শিশুর পেটের উপর বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হালকা করে মালিশ করে দিলেও এই অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকে হওয়া পেটে ব্যথা থেকে শিশু সাময়িক কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
4. বেকিং সোডা
প্রথম নজরে এটি অদ্ভুত মনে হতে পারে কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাষায় এটির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা যায়। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য, বেকিং সোডা দেওয়ার চটজলদি সুপারিশ অনেকেই করেন। অ্যাসিড রিফ্লাক্স হল আপনার শিশুর পিএইচ এর মান নিম্ন প্রান্তে থাকার একটি চিহ্ন। বেকিং সোডা যা মূলত ক্ষারজাতীয়, তা গ্রহণ করলে এটি পিএইচ উপাদানকে উচ্চতর দিকে নিয়ে যায়, ফলে পেটের অ্যাসিডিক প্রকৃতি হ্রাস করে। এটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকে মুক্তি দেয় এবং পাচন তন্ত্রের কার্যকারিতাকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।
5. মেন্থল
পেপারমিন্ট বা মেন্থল তেলের আকারে পাওয়া যায় যা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য একটি কার্যকর প্রতিকার। পেপারমিন্টে বেশ কয়েকটি শীতল বৈশিষ্ট্য থাকে যা যে কোনও খিঁচুনি থেকে পরিত্রাণ দেয়। এছাড়া পেপারমিন্ট তেল বদহজম এবং প্রদাহ থেকে ত্রাণ প্রদান করার জন্যও পরিচিত, যা এসিড রিফ্লাক্স হ্রাসেও কাজ করে।
একটি ছোট চামচে জলপাই তেলের সাথে পেপারমিন্ট তেলের কয়েকটি ড্রপ মিশিয়ে শিশুকে দেওয়া যেতে পারে। রিফ্লাক্স থেকে ত্রাণ সরবরাহের জন্য, এই মিশ্রণটি শিশুর পেটের উপর ঘষা যেতে পারে।এক দিনে দুবার করা উচিত। পেপারমিন্ট ক্যাপসুল খাওয়ানো যেতে পারে কিনা বা পেপারমিন্ট চা তৈরি করে দিনে দুবার বা তিনবার খাওয়ানো যেতে পারে কিনা সে বিষয়ে মায়েরা ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন।
6. বাচ্চাদের জন্য প্রোবায়োটিকস
অ্যাসিড রিফ্লাক্স অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়ার অনুপস্থিতির কারণেও হতে পারে, যার ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে খারাপ ব্যাকটেরিয়া দেখা দেয় যা থেকে পাচনে সমস্যা এবং আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ভাল ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে যা খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। আপনার ডাক্তার এই সমাধানে সম্মত হলে, আপনি আপনার শিশুকে প্রোবায়োটিকস দিতে পারেন। এগুলি পাউডারের আকারে আসে যা আপনার শিশুকে জলের সাথে দেওয়া যেতে পারে। পাউডারটি একটি বোতলে বুকের দুধের সাথেও মেশানো যেতে পারে এবং শিশুকে দেওয়া যেতে পারে। যদি আপনার শিশু শুধু বুকের দুধ খায় এবং সরাসরি খায়, তবে খাওয়ানোর আগে আপনার স্তনবৃন্তের চারপাশে পাউডার লাগিয়ে দেওয়া যেতে পারে যাতে এটি শিশু এটি চুষে নেয়।
7. অঙ্গ সঞ্চালনা করানোর ব্যায়াম সমূহ
বেশিরভাগ শিশুই কোনও রকম নড়াচড়া বা ব্যায়াম না করেই শুধু তাদের বিছানায় শুয়ে থাকে। এর থেকেও অযথাযথ পাচন বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স হতে পারে। অল্প পরিমাণে নড়াচড়া–ভিত্তিক ব্যায়াম করলে পাচন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে এবং পেটের ভিতরে কোনও গ্যাস হওয়া বা পেটফাঁপা বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। এটি, ফলস্বরূপ, অ্যাসিড রিফ্লাক্স হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে আপনার সন্তানকে চিত করে শুইয়ে দেওয়া এবং তার পাগুলিকে সাইকেল চালানোর মতো করে ঘোরানো। প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য এই ব্যায়ামটি করালে শিশুর জন্য মজাদার হবে, সাথে পাচনেও সহায়ক হবে। খাওয়ার ঠিক পরে এটি করাবেন না, বাচ্চাকে খাওয়ানোর অন্তত আধ ঘন্টা আগে এটি করাবেন।
8. ক্যামোমিল
ক্যামোমিল চা পেটের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি রাতে একটি ভাল ঘুমের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি সুপরিচিত প্রতিকার। শিশুদের অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্যও, ক্যামোমিল বিস্ময়কর কাজ করে বলে জানা গেছে। ক্যামোমিল ফুলের মধ্যে এমন উপাদান রয়েছে যা শরীরের খিঁচুনি কমাতে পারে এবং সেইসাথে হালকা ঘুম আনে। এটি একটি সংমিশ্রণে অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকে ত্রাণ সরবরাহ করে এবং শরীরকে বিশ্রাম দেয়। কয়েকটি ফুল জলে ফুটিয়ে নিয়ে এবং সেগুলোকে ছেঁকে নিয়ে একটি দ্রবণ তৈরি করা যায়, যার কয়েক চামচ প্রতিদিন শিশুকে দেওয়া যেতে পারে।
9. আপেল সীডার ভিনিগার
এটি আর একটি উপায় যা বিজ্ঞানের নীতিগুলির ভিত্তিতে কাজ করে এবং পেটের ভেতরে পিএইচ মান স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে। একবার অ্যাসিডের মাত্রার ব্যালান্স হয়ে গেলে, অ্যাসিড রিফ্লাক্স হ্রাস পায় এবং আপনার শিশু আর কোনো অস্বস্তি বোধ করবে না। উষ্ণ জলে অল্প পরিমাণে এই কাঁচা অপরিস্রুত ভিনিগার মিশিয়ে তার কয়েক চামচ আপনার সন্তানকে দিলে বেশ উপকারী হবে।
10. খাওয়ানো এবং ঘুমানোর অভ্যাস
ঘুমের অবস্থানের এবং খাওয়ানোর অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন করে, এসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনাগুলি অনেক হ্রাস করা যেতে পারে। খাওয়ানোর সময় শিশুটি যেন সর্বদা সোজা থাকে তা নিশ্চিত করা ভাল।এবং একদম ছোট শিশুদের খাওয়ানোর পরমুহূর্তেই তাকে শুইয়ে না দিয়ে তার পিঠের উপর আলতো করে চাপড়ে তার ঢেকুর তুলে দেওয়াটা এক্ষেত্রে ভাল একটা ধারণা হতে পারে।ঘুমের সময় যদি অ্যাসিড রিফ্লাক্স থাকে তবে শিশুর শরীরের উপরের অংশের জন্য 30 ডিগ্রী পর্যন্ত উচ্চতা প্রদান করার চেষ্টা করুন। এটি নিশ্চিত করে যে খাদ্য পেটেই থাকবে এবং শিশুর উগরে দেওয়া প্রতিহত করে।
শিশুদের অ্যাসিড রিফ্লাক্স খুব কম ক্ষেত্রেই হাতের বাইরে চলে যায় এবং সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। শিশুদের রিফ্লাক্সের জন্য উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মাধ্যমে, আপনি নিশ্চিতভাবে রিফ্লাক্স সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন এবং আপনার শিশুটি যদি এটির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে তবে তার থেকে তাকে দ্রুত আরাম দিতে পারবেন।এতদসত্ত্বেও যেকোনও গুরুতর পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এবং শিশুর সাথে নতুন কিছু প্রয়োগ করার পূর্বে একবার আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।